কাশ্মীরসংখ্যা

শেষের পাতা

এ ম নকে ন হ য় না!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

এ ম নকে ন হ য় না!

কাশ্মীরের উপত্যকায় প্রত্যেক তরুণ ও যুবকের বুকে এখন আগুন, চোখে আগুন, সর্বসত্তায় যেন আগুন! কাশ্মীর এখন জ¦লছে হিন্দুভারতের ছুঁড়ে দেয়া আগুনে! কাশ্মীরের প্রতিটি তরুণ ও যুবক জ¦লছে স্বাধীনতার বহ্নিশিখায়। মৃত্যুভয়হীন তেমনি এক কাশ্মীরী তরুণের ঘটনা। হানাদার বাহিনীর বুযদিল সৈনিক নিরস্ত্র তরুণের বুকের উপর বন্দুকের নল চেপে ধরে জানতে চায়, বলো, কোথায় জঙ্গী, সন্ত্রাসী! মৃত্যুভয়হীন তরুণের জবাব, স্বাধীনতার জন্য যারা লড়াই করে, জান দেয়, তারা সন্ত্রাসী! তাহলে যারা স্বাধীনতা হরণ করে? নিরপরাধ মানুষের বুক গুলিতে ঝাঁঝরা করে? বুযদিল সৈনিকের গর্জন, ‘তাহলে গুলি খাওয়ার আগে বলো, তোমার শেষ ইচ্ছা কী?’ তরুণের নির্ভীক জবার কাশ্মীরের, আমার পিতৃভূমির স্বাধীনতা!

(বন্দুকের গর্জন এবং তাকবীরের হুঙ্কার একসঙ্গে শোনা গেলো।)

 

সেই চেতনার জন্য

একটি চেতনা ছিলো তাঁদের বুকে, আমাদের আগে যারা বাস করেছে এই পৃথিবীতে দূর অতীতে। সত্যের জন্য, শান্তির জন্য, অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মৃত্যুকে জয় করার এবং জীবনকে উৎসর্গ করার চেতনা।

এই চেতনারই কল্যাণে পৃথিবীতে তখন সত্যের প্রতাপ ছিলো এবং জীবনে স্বাধীনতার উত্তাপ ছিলো। আমাদের সকল জনপদে শুধু শান্তি, আর শান্তি ছিলো। তাঁদের চেতনায় একটি সত্য জাগ্রত ছিলো, শান্তির জন্য শক্তির প্রয়োজন। তারা শক্তি অর্জন করেছিলেন এবং শান্তি নিশ্চিত করেছিলেন, নিজেদের জন্য এবং চারপাশের সবার জন্য। তাঁদের অধিকার ছিলো নির্বিঘ্ন এবং তাঁদের স্বাধীনতা ছিলো সুরক্ষিত।

আমরা তাঁদেরই উত্তরসূরী! কিন্তু আমাদের বুকে কোথায় আজ সেই চেতনা!! আমাদের জনপদে কোথায় শান্তি, কোথায় শক্তি!! আমাদের অধিকার, আমাদের স্বাধীনতা কেন আজ লুণ্ঠিত!! সেই চেতনার অভাবে, মৃত্যুকে জয় করার  এবং জীবনকে উৎসর্গ করার চেতনা!

এসো আবার আমরা সেই চেতনা অর্জন করি, প্রতিটি জনপদে, ফিলিস্তীনে, কাশ্মীরে, আরাকানে সবার মধ্যে সেই চেতনা জাগ্রত করি।

এ  ক  টি  দু  ‘আ

হে আল্লাহ, আর কত আগুন জ¦লবে এখানে ওখানে আমাদের বিভিন্ন জনপদে!

বুকের শুকনো পাঁজরগুলো, হে আল্লাহ্, আর কত ঝাঁঝরা হবে দুশমনে গুলিতে!

আর কত নারী বিধবা হবে, আর কত শিশু এতীম হবে, আর কত মায়ের বুক খালি হবে!!

জান-মাল ও ইজ্জত-আবরুর আর কত কোরবানি, হে আল্লাহ্ দিতে হবে!!

তোমার সাহায্য হে আল্লাহ্, আর কত দূর? কাশ্মীরে স্বাধীনতার সূয উদিত হওয়ার আর কত দেরী?

তোমার মযলূম বান্দাদের ফরিয়াদ শোনো হে আল্লাহ্! দুশমনের শক্তি ও দম্ভ গুঁড়িয়ে দাও হে আল্লাহ্! দুশমনের মুকাবেলায় আমাদের সাহস দাও, শক্তি দাও হে আল্লাহ্!

আর কোন উন্দুলুসের ভার বইবার শক্তি আমাদের নেই হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের প্রতিটি জনপদ রক্ষা করো হে আল্লাহ্! আমাদের জানমাল, ইজ্জত আবরু এবং আমাদের ঈমান রক্ষা করো হে আল্লাহ্!

 

ন ফ সে র সং শো ধ ন

 

নফস যদি এই ধোকায় তোমাকে ফেলে রাখতে চায় যে, এখন তো জীবনের যৌবনকাল, এখন তো ভোগের সময় উপভোগের মৌসুম! এখনই তো জীবনের রঙতামাশা দেখার এবং মৌজমাস্তি করার মোক্ষম সুযোগ!

নফসের এই ধোকাবাজির এলাজ ও চিকিৎসা এই যে, নফসকে তুমি জিজ্ঞাসা করো, হে নফস, তুমি কি আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারো যে, যৌবন কখনো ফুরোবে না! যৌবনের রঙতামাশা ও মৌজমাস্তি কখনো শেষ হবে না! যদি এ নিশ্চয়তা দিতে না পারো তাহলে তোমার কথায় কেন আমি জোয়ানির ধোকায় পড়ে থাকবো?

এবার যদি নফস বলে, ঠিক আছে, এখন তো মৌজ করো, যখন জোয়ানি চলে যাবে, বার্ধক্য এসে পড়বে তখন তাওবা করে ভালো হয়ে যাবে এবং নেক আমলে লেগে যাবে!

তখন নফসকে বলো, হে নফস, তুমি কি নিশ্চয়তা দিতে পারো যে, বার্ধক্যের আগে আমার মৃত্যু হবে না, আর আমি তাওবা করার সুযোগ পাবো?! নিশ্চয়তা যদি দিতে না পারো তাহলে তোমার কথায় বার্ধক্যের ইনতিযারে কেন পড়ে থাকবো?! কেন আমি আমার খালিক ও মালিকের নাফরমানিতে ডুবে থাকবো?!

শেষ কথা

যখন যুবক ছিলাম, বুকের মধ্যে স্বপ্ন ছিলো, একদিন আমি কাশ্মীরে যাবো; দু’চোখ ভরে কাশ্মীরের সৌন্দর্য উপভোগ করবো। তখন সবাই বলতো, কাশ্মীর হলো ভূস্বর্গ, দুনিয়ার জান্নাত। সবাই বলতো, পৃথিবীর সবচে’ সুন্দর ফুলগুলো কাশ্মীরে ফোটে। সবাই বলতো, পৃথিবীর সবচে’ সহজ সরল ও সুন্দর মানুষগুলো কাশ্মীরে বাস করে। মানুষকে তারা ভালোবাসতে জানে; মানুষকে তারা আপন করে নিতে পারে। শুনে অবাক হতাম, এত সুন্দর দেশ হতে পারে! এত সুন্দর মনের মানুষ থাকতে পারে!

ঝিলামনদীর কথা শুনেছি, যারা কাশ্মীর দেখে এসেছে তাদের মুখে। এমন টলটলে, এমন স্বচ্ছ পানি নাকি পৃথিবীর কোন নদীতে নেই!

যতই শুনেছি কাশ্মীরের কথা, ফুলে ফলে ভরা সবুজ উপত্যকার কথা; ঝিলামনদীর স্বচ্ছ পানির কথা! শুভ্র তুষারে ঢাকা পর্বতচূড়ার কথা এবং যতই শুনেছি কাশ্মীরের সহজ সরল ও সুন্দর মনের মানুষগুলোর কথা, কল্পনার ডানা মেলে মন উড়ে যেতো কাশ্মীরে। উড়ে বেড়াতো কাশ্মীরের সবুজ উপত্যকায়, তুষারাবৃত পর্বতচূড়ায়।

কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। কাশ্মীরে যাওয়ার কোন পথ খুঁজে পাওয়া গেলো না। জীবন জীবনের মতই এগিয়ে গেলো এখানে এবং ওখানে।

যৌবন গেলো, বার্ধক্য এলো। এদিকে আমার বুকের সুন্দর স্বপ্ন পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে। কারণ সবাই বলছে, কাশ্মীরে এখন তুমি সবুজের দেখা পাবে না এবং পাখীর গান শুনতে পাবে না। কাশ্মীরে এখন ফুল ফোটে না, আগুন ঝরে এবং রক্ত ঝরে। ঝিলামনদীর পানি এখন লাল, তাতে ভেসে যায় লাশের পর লাশ। ঐ সব সহজ সরল মানুষের লাশ যারা কখনো কাউকে ঘৃণা করেনি, সবাইকে শুধু ভালোবেসেছে, আর সবার ভালোবাসা পেতে চেয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে? পেয়েছে আগুনের ধোঁয়া, বেয়নেটের খোঁচা, আর গুলির আঘাত!

এখন আমি কাশ্মীরে যেতে চাই না! আগুনের ধোঁয়া ও লাল রক্তকে আমার বড় ভয়। লোকে বলে, আমি ভীরু! হয়ত ...! *

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা