জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮)

শেষের পাতা

শেষ কথা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

শেষ কথা

একদিন সন্ধ্যাবেলা, সূর্য যখন অস্ত যায় যায়, প্রকৃতির সবকিছুর উপর সূর্যের বিষণ লাল আভা যখন শেষ পরশটুকু বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন একটি পরম সত্য আমার হৃদয়ে উদ্ভাসিত হলো। আমার অন্তর্সত্তা আমাকে যেন সম্বোধন করে বললো, ‘আমার সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সবই তো তোমার সঙ্গে জড়িত, আমার এ সতর্কবাণী চিরকালের জন্য মনে রেখো; প্রতিটি অন্যায় আনন্দভোগের বিনিময়ে মৃত্যুযন্ত্রণা বেড়ে যায় এবং ন্যায় ও সত্যের জন্য প্রতিটি ত্যাগ ও আত্মত্যাগ মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘব করে, এমনকি একসময় মৃত্যু হয় শান্তির এবং প্রশান্তির।

অস্তগামী সূর্যের বিষণœতার মধ্যে আমার অন্তর্সত্তার কাছ থেকে যে বাণী ও বার্তা আমি পেলাম, প্রার্থনা করি পরম সত্তার সান্নিধ্যে, চিরকাল যেন তা মনে রাখতে পারি অনুভব ও উপলব্ধির সঙ্গে এবং চিরকাল যেন তা পালন করতে পারি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে।

যখনই প্রয়োজন হয়, মানুষের অন্তর্সত্তা মানুষকে সতর্ক করে, পথ দেখায় এবং বলতে থাকে, এ পথে নয়, ও পথে; এভাবে নয়, ওভাবে।

আমাদের বড় দুর্ভাগ্য এই যে, অন্তর্সত্তার সঙ্গে, আমার ভিতরের ‘আমি’-এর সঙ্গে আমাদের কোন পরিচয় থাকে না; ফলে আমার যিনি প্রতিপালক, তার সঙ্গেও কোন পরিচয় আমাদের গড়ে ওঠে না। জীবনের সঙ্গে এবং জীবনদাতার সঙ্গে সাধারণ পরিচয়টুকু ছাড়াই আমরা মৃত্যুর সামনে এসে পড়ি এবং মৃত্যু হয় তখন

অতি ভয়ঙ্কর।

বড় ভাগ্যবান তারা, অন্তর্সত্তার পরিচয় যারা অর্জন করেছে এবং ভিতরের ‘আমি’র সঙ্গে যারা একাত্ম হতে পেরেছে।

সেদিন থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, দিনের কোলাহলে নাও যদি পারি, অন্তত রাতের নির্জনতায় কিছুটা সময় আমি যাপন করবো আমার অন্তর্সত্তার কোমল সান্নিধ্যে; আমার ভিতরের ‘আমি’র সঙ্গে পরিচিত হওয়ার, তারপর একাত্ম হওয়ার চেষ্টা আমি করবো।

এখন মনে হয়, ধীরে ধীরে ভিতরের ‘আমি’কে বাইরের আমি কিছুটা যেন চিন্তে শুরু করেছি এবং কিছুটা যেন ভালোবাসতে শুরু করেছি। নিজেকে এখন অন্তত আগের চেয়ে কিছুটা যেন পবিত্র অনুভব করি।

এ  ক  টি  দু  ‘আ

হে আল্লাহ্, পানি তোমার কত বড় নেয়ামত! পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। পানি ছাড়া সুন্দরভাবে জীবনযাপন করা অকল্পনীয়। আমাদেরই ভুলে, আমাদেরই অপরাধে সেই পানির অভাব দেখা দিয়েছে সরা পৃথিবীতে। আমাদের নদী-নালার পানি আজ দূষিত। মাটির নীচের পানিতে মিশেছে বিষ! ভূগর্ভের পনি চলে যাচ্ছে আরো নীচে।

হে আল্লাহ্, তুমি ছাড়া কে ফিরিয়ে আনতে পারে ভূগর্ভের পানি! তুমি ছাড়া কে আমাদের দান করতে পারে পিপাসার পানি! তুমি ছাড়া কার কাছে আমরা পাবো পবিত্রতা অর্জনের পানি!

হে আল্লাহ্, তুমি আমাদের সব অন্যায় অপরাধ মাফ করে দাও। আকাশ থেকে, ভূমি থেকে আমাদের দান করো পিপাসার পানি, পবিত্রতার পানি। তাওফীক দাও হে আল্লাহ্, আমরা যেন পানির মূল্য বুঝি! আমরা যেন পানির অপচয় না করি! আমরা যেন তোমার সমস্ত নেয়ামতের শোকর করি!  

 

এমন কেন হয়না! এমন কি হতে পারেনা!

এতিম ছেলেটি আমাদের সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতো, তোমরা যাকে বলো, খারাপ ছেলে, শুভ্র সুন্দর পথের যাত্রী সেও ছিলো, সেও সুন্দর করে হাসতো! তার মুখের হাসিতেও চাঁদের আলো ঝরতো। সেও ছিলো ফুলের মত নিষ্পাপ। তারো কানে আযান-ইকামাত দেয়া হয়েছে। সেও কায়দা- কোরআন পড়েছে। .. সোজা সরল পথে চলতে চলতে কারো না কারো ভুল সংস্পর্শে হঠাৎ সে পথ হারিয়ে ফেলেছে। কখনো কখনো সুন্দর পথেও অসুন্দরের ছায়া পড়ে। ... আমরা শুধু অবাক হয়ে শুনতাম তার কথা।

একটি ছেলে এমন খবিছ ছিলো যে, খারাপ ছেলেরাও তাকে এড়িয়ে চলতো। আমাদের এতীম ছেলেটি তার সঙ্গে স্বচ্ছন্দে ওঠাবসা করতো। আমরা সবাই অবাক হয়ে দেখলাম, ধীরে ধীরে ছেলেটির মধ্যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে! ভাবতে পারিনি, এমনও হতে পারে। এমন নষ্ট ছেলেও হয়ে যেতে পারে এমন ভালো!

 

 

নফসের সংশোধন 

নফস-এর পরিচয় কি, সাধারণত নফস দ্বারা বোঝানো হয় মানুষের ভিতরের এমন এক শক্তি যা মানুষকে মন্দের প্রতি প্ররোচিত করে। মানুষের আখলাক ও স্বভাবের মধ্যে যতগুলো মন্দ ঝোঁক ও প্রবণতা রয়েছে তার উৎস হচ্ছে নফস। নফস হচ্ছে শয়তানের সহযোগী শক্তি। শয়তান যখন নফসের সঙ্গে সংযোগ তৈরী করতে সক্ষম হয় তখন নফস অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে।

মানুষ এত দুর্বল যে, নফসের প্ররোচনা ও সম্মোহন থেকে নিজেকে সে রক্ষা করতে পারে না, বরং কোন না কোন-ভাবে নফসের ধোকায় সে পড়েই যায়। এজন্যই আল্লাহ্র নবী হযরত ইউসুফ আ. বলেছেন, ‘নফসের পক্ষে আমি সাফাই দিতে চাই না, কারণ নফস তো মন্দের প্রতি প্ররোচনা দিতেই থাকে, তবে আমার প্রতিপালক যার প্রতি সদয় হন। ...

এটাই হলো একমাত্র কথা, ‘আল্লাহ্ যার প্রতি সদয় হন’। তো আমাদের কর্তব্য হলো, নফস ও শয়তানের হামলা থেকে বাঁচার জন্য সবসময় ইস্তিগফার করা এবং আল্লাহর পানাহ্ চাওয়া।

বান্দা যখন আল্লাহ্র হিফাযাতে থাকে, নফস ও শয়তান বান্দার কোন ক্ষতি করতে পারে না।

সেই চেতনার জন্য

প্রাণসূত্রে মানুষ ও পশু একই গোত্রের। উভয়েরই ক্ষুধা আছে এবং চাহিদা আছে। উভয়ের মধ্যেই ক্রোধ আছে এবং হিং¯্রতা আছে। তাহলে পার্থক্য কোথায় মানুষে ও পশুতে?

পার্থক্য এই যে, পশুর মধ্যে চিন্তা নেই, চেতনা নেই; মানুষের মধ্যে চিন্তা ও চেতনা রয়েছে।

চিন্তাহীন জীবন জীবনই নয়। চেতনাহীন জীবন পশুর চেয়ে অধম।

পশুর মত আমরাও ক্ষুধা ও চাহিদা জন্মের সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসি, কিন্তু চিন্তা ও চেতনা! এটা আমাদের অর্জন করতে হয়, ধীরে ধীরে এবং ধাপে ধাপে। চিন্তা ও চেতনা যেতেতু আমরা অর্জন করি সেহেতু প্রয়োজন পড়ে সতর্কতা অবলম্বনের, যেন ভুল চিন্তা এবং ভুল চেতনা দ্বারা বিচ্যুতির পথে চলে না যাই।

ভুল চিন্তা এবং সঠিক চিন্তা বোঝার উপায় কী? কল্যাণকর চেতনা এবং অনিষ্টকর চেতনার মধ্যে পার্থক্য করার পন্থা কী?

যা নফস ও প্রবৃত্তিকে তৃপ্ত করে সেটাই হলো ভুল চিন্তা এবং ভ্রান্ত চেতনা। যা হৃদয় ও আত্মাকে প্রশান্তি দান করে সেটাই হলো সঠিক চিন্তা এবং নির্ভুল চেতনা। সেই চিন্তা ও চেতনা অর্জনের জন্য, এসো আমরা একসঙ্গে সাধনা করি।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা