রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

শেষের পাতা

শেষের পাতা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

এমন যেন হয় আমাদের আমল

একটি ছোট্ট ছেলে। বয়স দশের উপরে হবে না! বড় জোর এগারো। এক পথিকের ‘মানিব্যাগ’ পড়ে গেলো। ছেলেটি দেখলো। ব্যাগটি তুলে নিয়ে পথিকের উদ্দেশ্যে দৌড়ে গেলো। হাঁপাতে হাঁপাতে ব্যাগটি মালিকের হাতে তুলে দিলো। তার মুখে দেখা দিলো একটুকরো তৃপ্তির হাসি! সততার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারার হাসি!

পথিক অবাক হয়ে ছেলেটির দিকে তাকায়! ফিরে পাওয়া ‘মানিব্যগের’ দিকে হাত বাড়াতেও যেন ভুলে যায়। সততার জীবন্ত মূর্তিটি চোখের সামনে দেখতে পাওয়ার আনন্দে যেন উদ্বেলিত! পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিলো। ছেলেটিকে এক হাজার টাকা দিতে চাইলো সততার পুরস্কাররূপে। সততার এত অল্প মূল্য!! ছেলেটি নিলো না। সততার মর্যাদাকে সে সমুচ্চই রাখলো!!

কত ভালো হয় যদি প্রতিটি ঘরে হয় এমন আলোর টুকরো ছেলে!!

 

একটি দুআ

 হে আল্লাহ, কত নেয়ামত তুমি আমাকে দান করেছো! জীবনে কত সচ্ছলতা দিয়েছো! আরাম আয়েশের কত উপকরণ দিয়েছো! তোমার শোকর হে আল্লাহ!

আজ তোমার কাছে আমি একটি জিনিস চাইবো হে আল্লাহ! আমাকে যেমন সুন্দর চেহারা দান করেছো, সুন্দর পোশাক দান করেছো, আমাকে তুমি সুন্দর আখলাক দান করো হে আল্লাহ! বিনয় ও উদারতা, ক্ষমা ও সহনশীলতা এবং মানুষের প্রতি দয়া ও মমতা দান করো হে আল্লাহ!

আমার আখলাক দেখেই যেন মানুষ বুঝতে পারে, এ-ই হলো ইসলাম, এ-ই হলো কোরআনের জীবন্ত নমুনা! আমার পরে যারা দুনিয়াতে আসবে, আমি যেন তাদেরকে উত্তম চরিত্রের উপর রেখে যেতে পারি হে আল্লাহ!! ...

 সেই চেতনার জন্য

জীবনের সবচে’ বড় শিক্ষা পেয়েছিলাম একদিন খুব সাধারণ একজন মানুষের কাছে। বাজারে খুব সামান্য জিনিস বিক্রি করতো, তাতে কোনরকমে তার জীবনের এবং সংসারের চাকা সচল ছিলো। একদিন বাজারে গেলাম। ঐ লোকটির দোকানে গিয়ে দাঁড়ালাম কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয়ের জন্য। যে দাম সে বললো তা বেশী মনে হলো, আমি দশ টাকা কম বললাম। সে বললো, আচ্ছা নেন। আমি বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পথে একজন কথাপ্রসঙ্গে বললো, দু’দিন আগেও এর দাম এই ছিলো, এখন দাম বেড়ে গেছে।

আমার তখন হুঁশ হলো, দোকানদার তো তাহলে দাম বেশী বলেনি! তাড়াতাড়ি ফিরে গেলাম। তাকে বললাম, ভাই, তুমি বললে না কেন যে, জিনিসটার দাম বেড়ে গেছে?!

তিনি মৃদু হেসে বললেন, খুব বেশী প্রয়োজন না হলে আমি ক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করি না। আমার ভালো লাগে না, একজন ভাইয়ের সঙ্গে এরূপ আচরণ করতে। আমার ক্রেতা তো, হয় ইসলামসূত্রে আমর ভাই, না হয় ইনসানসূত্রে! আমি শুধু নির্বাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। (জনৈক পাঠক)

 

নফসের সংশোধন

যদি আমরা দুনিয়াতে শান্তির জীবন চাই, তাহলে খুলুকে হাসান বা মহৎ চরিত্র অর্জনের কোন বিকল্প নেই। আমাদের পরিবারে শান্তি নেই, কারণ আমাদের চরিত্রে সুন্দর কিছু নেই। বিনয় ও বদান্যতা নেই। সহনশীলতা ও ক্ষমাশীলতা নেই। পক্ষান্তরে হিংসা-বিদ্বেষ আছে, ক্রোধ ও অহঙ্কার আছে। সুতরাং কথায় কথায় অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। আর একবার জ্বলে ওঠার পর আর নিভতে চায় না, যতক্ষণ না সবকিছু জ্বলে পুড়ে সারখার হয়ে যায়।

আমাদের সমাজজীবনেরও একই অবস্থা। যদি আমরা একটু বিনয়, একটু উদারতা, একটু সহনশীলতা, একটু সংযম অর্জন করতে পারি অন্যের প্রতি আমাদের আচরণে তাহলেই আমাদের সমাজজীবন হতে পারে আগাগোড়া শান্তির জীবন।

যে কোন সংশোধনের কাজ নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয়। যদি আমি আমাকে দিকে শুরু করতে চাই তাহলে আজই শুরু করতে পারি। ...

 

 শেষ কথা

একটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি। বেশ কিছু দিন ধরে একে একে বেশ কিছু মানুষকে, বিভিন্ন বয়সের মানুষকে প্রশ্ন করলাম, সত্য ও মিথ্যা সম্পর্কে আপনার নীতি ও চিন্তা কী? অবাক হয়ে দেখি, ব্যতিক্রমহীনভাবে সব বয়সের সবার উত্তর এক ও অভিন্ন। শব্দের সামান্য পার্থক্য আছে, বব্যে কোন পার্থক্য নেই। আরো বড় চিন্তার বিষয়, উত্তর দেয়ার সময় সবাই খুব নির্লিপ্ত ছিলেন; যেন বাজারে বেগুনের দর সম্পর্কে কথা বলছেন! তরুণ থেকে বৃদ্ধ কারো মধ্যেই  সঙ্কোচ বা অনুতাপের ছায়া পর্যন্ত দেখা গেলো না।

সব উত্তরের মূল কথা হলো, সত্য বলার মধ্যে ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই। মিথ্যা না বলে উপায় নেই!

এটা হলো আমাদের জীবনের বর্তমান! জীবনের অতীতটা কেমন ছিলো?! শৈশবে বর্ণমালা শিখতে গিয়ে যে নীতিবাক্যটি মনের মধ্যে, চিন্তার মধ্যে এবং আচরণের মধ্যে গেঁথে দেয়া হতো তা হলো, সদা সত্য কথা বলিও, কখনো মিথ্যা বলিও না।

আমাদের সামনে যারা ছিলেন আয়নার মত, তাদের জীবন ছিলো সত্যের আলোতে উদ্ভাসিত। মিথ্যার কোন দাগ ছিলো না তাতে। অতীতের শিশু সত্য বলে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে, তবে তার মধ্যেও তৃপ্তি-বোধা ছিলো, ‘আমি সত্য বলেছি।’

সত্য বলা এখন রীতিমত বুদ্ধিহীনতা। মিথ্যা বলা এখন আর্ট ও শিল্প!

কেমন হতে পারে আমাদের  জীবনের ভবিষ্যত?! যদি নিজেকে দিয়ে আমি শুরু করি সত্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার সাধনা! সত্যের ক্ষতি ক্ষতি নয়, মিথ্যার লাভ লাভ নয়। সুতরাং পরিণতি যাই হয়, অবিচলভাবে আমি সত্য বলবো, মিথ্যাকে ঘৃণাভরে আমি এড়িয়ে যাবো।

আমাকে দিয়েই যদি শুরু করি তাহলেই হতে পারে জীবন সম্পর্কে হতাশার অন্ধকার দূর!!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা