টিপাইমুখের কথা ভুলে গেছি!
সরকার ও জনগণ এখন নিজ নিজ সমস্যা নিয়ে এতই ব্যতিব্যস- যে, কোন পক্ষেরই দেশের স্বার্থ চিন-া করার মত ফুরসত নেই। সরকার পেরেশান একবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য, আরেকবার অসি'র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের বিচার করার বিষয়ে। তার উপর আবার সরকারের ভিতর থেকে তদন-কমিশনের প্রধান সম্পর্কে ইস্যু খাড়া করে সরকারকে কঠিন পরিসি'তিতে ফেলে দেয়া হয়েছে।
পক্ষান-রে দেশের মানুষের এখন নাভিশ্বাস জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তা- হীনতা এবং দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্ব- গর্তির কারণে। আর গ্যাস ও বিদ্যুৎসঙ্কটের কথা যত কম বলা যায় তত ভালো।
আসলে অত্যন- সচেতনভাবেই দেশের ভিতরে এ পরিসি'তি সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে বিপর্যস- জনগণ অন্য কোনদিকে নযর দেয়ার অবস'ায় না থাকে।
এই ফাঁকে খুব নীরবে এবং খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কাজ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারতসফর- কালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ‘আশ্বাস’ দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের স্বার্থ যাতে ক্ষতিগ্রস- না হয় সেদিকটা ভারত দেখবে। সমপ্রতি ভারতের পরিবেশ -মন্ত্রী বলেছেন, টিপাইমুখে বাঁধ তৈরী করা হবেই। কারণ এটা ভারতের প্রয়োজন। তবে তিনিও তার দেশের প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক আশ্বাসটি উচ্চারণ করেছেন।
কিন' আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় রয়েছে ফারাক্কা চালু করাকালে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি এবং বেরুবাড়ীর বিনিময়ে করিডোর দেয়ার ওয়াদা, যা রক্ষা হয়নি এত দীর্ঘ বছরেও। ফলে ফারাক্কা আজ শাব্দিক অর্থেই বাংলাদেশের জন্য মরণ ফাঁদ, আর ছিটমহলের মানুষগুলো যাপন করছে প্রায় বন্দীজীবন।
তাছাড়া ১৯৯৬ সনে ফারাক্কার উপর যে পানিচুক্তি হয়েছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগের ‘টার্মে’, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দেবগৌড়া। সে চুক্তি ভারত রক্ষা করেনি। ঐ চুক্তিতে একে তো চাহিদা ও প্রাপ্যের চেয়ে অনেক কম পানি বাংলাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিলো, তদুপরি বাংলাদেশকে কখনোই চুক্তি অনুযায়ী পানি দেয়া হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবের আমলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী চুক্তি করেছিলেন বেরুবাড়ির বিনিময়ে করিডোর দেয়ার। আমাদের অতিসরল জাতির পিতা সঙ্গে সঙ্গে বেরুবাড়ি দিয়ে দিয়েছেন, কিন' করিডোর আমরা এখনো পাইনি, রোযহাশরের আগে পাওয়া যাবে, তেমন আলামতও দেখা যাচ্ছে না। উল্টো সীমানে- বিভিন্ন অজুহাতে বন্ধুদেশটি ভূমিদখলের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। সাগরে জেগে ওঠা তালপট্টি তো একরকম শক্তির জোরে দখল করেই নিয়েছে। এদিকে সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে গোলমাল শুরু হয়েছে।
যাই হোক, ভারতের বিগত দুই প্রধানমন্ত্রী যেখানে লিখিত চুক্তি রক্ষা করেননি, অতীতের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আজকের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর নিছক মৌখিক আশ্বাসে কীভাবে বাংলাদেশ আশ্বস- হতে পারে!
বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এ বিষয়ে এখন কোন সন্দেহ নেই যে, অদূর ভবিষ্যতে টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য হতে চলেছে ফারাক্কার চেয়েও ভয়াবহ জাতীয় বিপর্যয়ের কারণ। সকলেই আশঙ্কা করছেন, ফারাক্কার মাধ্যমে মরুভূমি হয়েছে দেশের অর্ধেক ভূখণ্ড, এখন টিপাইমুখ বাঁধ হলে নিশ্চিতভাবেই মরুভূমিতে পরিণত হবে দেশের বাকি অর্ধেক। কিন' সরকার যেন বিষয়টি বুঝেও বুঝতে চাচ্ছে না। মন্ত্রীবাবুরা যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে তো বোঝাই যায় না, তারা কোন্ দেশের মন্ত্রী!