অপরাধ উদ্ঘাটন ও শনাক্তকরণের জন্য অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা খুব স্বাভাবিক এবং সেজন্য সুনির্দিষ্ট আইনও রয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্বীকারোক্তি আদায় করার জন্য তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক ও দৈহিক নির্যাতন চালানো কোন সভ্য আইনে কীভাবে বৈধ হতে পারে?
বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির বহু নেতা এই কিছুদিন আগে রিমান্ডে ছিলেন। তারা নিশ্চয় জানেন, পুলিশি রিমান্ড কী ভয়াবহ জিনিস! তাদের প্রায় সবারই তো রিমান্ডের গা-শিউরে ওঠা অভিজ্ঞতা রয়েছে! যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন রিমান্ডের লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন, তার আমলেও রিমান্ড নামের পাশবিকতা ছিলো, কিন্তু আমাদের আলোচনা সম্পূর্ণ মানবিক। এখানে পক্ষপ্রতিপক্ষ চিন্তার অবকাশ নেই। রাষ্ট্রপক্ষকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করতে গিয়ে মহামান্য আদালত যা বলেছেন, আমরা মনে করি সকল পক্ষেরই তা মনে রাখা কর্তব্য। রাষ্ট্রনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে আদালতের বক্তব্য ছিলো, আপনাদের (ক্ষমতা) আছে তো আমাদেরও ধরে নিয়ে পেটান। এভাবে চালাতে চাইলে হাইকোট উঠিয়ে দেন। আপনি আজ রাষ্ট্রপক্ষে আছেন, কাল অন্যপক্ষে থাকতে পারেন। আপনাকেও টর্চার করা হতে পারে। এটা ভালো নয়।’
একজন মানুষ অভিযুক্ত হলে, এমনকি অপরাধী হলেও তার আত্মীয় স্বজনের তাতে দোষ কোথায়? নিছক সন্দেহবশত যদি তাদের উপর রিমান্ডের পাশবিকতা নেমে আসে, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? বিশেষ করে কোন নারী বা শিশুসন্তানের মাকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়া তো রীতিমত অমানবিক, এটা বন্ধ হওয়ার দরকার। অপরাধীকে অবশ্যই শাস্তি দিন, অভিযুক্তকে অবশ্যই নিয়মের ভিতরে জিজ্ঞাসাবদ করুন, কিন্তু নির্যাতনের পাশবিকতা আল্লাহর দোহাই বন্ধ করুন। ভাই-বোন-ছোলে-মেয়ে-মা-বাবা আমাদের সবার আছে, কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় জাতির বিবেক আজ মরে গেছে, তাই নির্বিবাদে এমনকি নারীদের উপরও চলতে পারছে রিমান্ডের পাশবিকতা।