বোরহান মুযাফ্ফার ওয়ানী
একজন অমর শহীদ
নামঃ বোরহান মুযাফ্ফার ওয়ানী
পিতাঃ মুযাফ্ফার ওয়ানী; মাতাঃ মুছাম্মাত মায়মূনা
জন্মঃ ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪
জন্মস্থানঃ তেরাল, গ্রাম করীমাবাদ
পরিচয়ঃ কামান্ডার হিযবুল মুজাহিদীন
হিযবুল মুজাহিদীনে অংশগ্রহণঃ ২০১১ মার্চ
শাহাদাতঃ ৮ই জুলাই, ২০১৬
শাহাদাতস্থলঃ অনন্তনাগ, কূকরনাগ, বামূদা।
শাহাদাতের সময় রাত তিনটা
অপারেশনের সময়কালঃ দুই ঘণ্টা
বোরহান মুযাফ্ফার ওয়ানী, এখন একটি নাম, একটি ইতিহাস। ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মিডিয়ার কাছে বোরহানের পরিচয় সন্ত্রাসী ও আতংকবাদী। পক্ষান্তরে কাশ্মীর ও সারা বিশ্বের মুসলমানের কাছে বোরহান একজন নির্ভীক মুজাহিদ ও স্বাধীনতাকামী। কাশ্মীরী যুবসমাজের জন্য বোরহান সর্বোত্তম আদর্শ। কাশ্মীরী জোয়ানদের মুখে মুখে আজ একই শ্লোগান উচ্চারিত হয়, ‘আমরা হবো বোরহান’।
***
বোরহান ওয়ানী একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার বাবা মুযাফ্ফার একটি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। জন্মের পর থেকে তিনি দেখেছেন, কাশ্মীরে শুধু আগুন জ¦লে, শুধু রক্ত ঝরে। যখন তখন ঘরে ঘরে তল্লাশীর নামে যুলুম-নির্যাতন ও ইজ্জত আবরু লুণ্ঠনের উল্লাস চলে। এসব দেখে দেখে শিশু বোরহানে মধ্যে ক্রোধ ও প্রতিশোধের আগুন তৈরী হতে থাকে। কাউকে সে কিছু বলে না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে জ্বলতে থাকে। স্কুল জীবন শেষ হতে না হতেই ২০১০ সালে
বোরহান সশস্ত্র জিহাদী দল হিযবুল মুজাহিদীনে শামিল হয়ে যান এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, বোহানের মত শান্তশিষ্ট তরুণ কী কারণে বইখাতা ও কলম ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে স্বয়ংভারতীয় মিডিয়ার মন্তব্য হলো, ‘বোরহান এবং তার মত সশস্ত্র তরুণরা আসলে আমাদেরই তৈরী। আমাদের কাশ্মীরনীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমরা ভুলে গিয়েছি, সন্ত্রাস সন্ত্রাসেরই জন্ম দেয়।’
ভারতের বয়োবৃদ্ধ রাজনৈতিক নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দীরা গান্ধীকে একথা বলেছেন। কিন্তু ভারতীয় নেতৃত্ব ও সেনাবাহিনী এখনো শক্তিপ্রয়োগের সেই একই নীতি অনুসরণ করে চলেছে, বরং দিন দিন তা চরম আকার ধারণ করেছে। এখন তো অবস্থা এই যে, এতদিন যারা ভারতবান্ধব বলে পরিচিত ছিলো তারাও চরম ভারতবিরোধী হয়ে উঠেছে। প্রতিটি কাশ্মীরী আজ মুজাহিদীনের প্রতি হামদর্দ ও সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছে। বোরহান ওয়ানীর শাহাদাত নতুন করে ভারতকে এবং সরা বিশ্বকে যেন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
***
বোরহান ওয়ানীর মত সামান্য একজন যুবক ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য কী ভয়ঙ্কর ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন তা বোঝার জন্য এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, ভারতীয় বাহিনী তার মাথার মূল্য ঘোষণা করেছিলো দশলাখ রুপি। কিন্তু এত বড় প্রলোভনের পরো অভাব দারিদ্র্যে জর্জরিত কোন কাশ্মীরী বোরহান ওয়ানীর বিপক্ষে যেতে প্রস্তুত হয়নি; বরং বোহান ওয়ানীর শাহাদাতের ঘটনা কাশ্মীরের সশস্ত্র জিহাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে ভারতীয় মিডিয়া স্বীকার করছে। মিডিয়ার বয়ানমতে, এর আগে যখন সেনাবাহিনী কোন এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করতো তখন সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ী ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতো। বোরহান ওয়ানী ও তার সঙ্গীদের যখন একটি গ্রামে ঘেরাও করা হলো তখন দেখা গেলো সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। শত শত মানুষ খোদ সেনাবাহিনীকেই ঘেরাও করে প্রস্তরবর্ষণ শুরু করেছে, যেন জানের বিনিময়ে হলেও তারা তাদের প্রিয় মুজাহিদ বেটাকে ছিনিয়ে নেবে, যদিও মারমুখী নিরস্ত্র জনতার পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।
ভারতীয় মিডিয়ার মতে এরপর থেকে প্রতিটি অপারেশনের ক্ষেত্রে একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এমনো হয়েছে যে, নিরস্ত্র জনতার প্রতিরোধের সুযোগে মুজাহিদীন সেনাবেষ্টনী ভেঙ্গে বের হয়ে গিয়েছেন।
***
২০১৫ সালের শুরুর দিকে বোরহান ওয়ানীর বড় ভাই খালিদ মুযাফ্ফার ওয়ানী যিনি মেডিকেলের সম্ভাবনাময় ছাত্র ছিলেন ভারতীয় বাহিনীর হাতে তার দু’জন সঙ্গীসহ গ্রেফতার হন। ভারতীয় সেনারা বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে শহীদ করে। অথচ জিহাদের সঙ্গে তার সক্রিয় যোগাযোগ ছিলো না। এই ঘটনার পর বোরহান আরো নির্ভয় হয়ে পড়েন এবং সেনাচৌকী ও টহল দলের উপর হামলার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেন। তদুপরি এই সাহসী যুবক মুখের নেকাব খুলে প্রকাশ্যে চলে আসেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্রসহ নিজের বিভিন্ন ছবি পোস্ট করেন। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরী জোয়ানদের উদ্দেশ্যে জিহাদে শরীক হওয়ার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানাতে থাকেন। একটি বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মত নিরস্ত্র অবস্থায় গুলি খেয়ে মরার চেয়ে অস্ত্র হাতে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করা অনেক উত্তম।’
বোরহান ওয়ানীর এই নির্ভীকতা একদিকে যেমন কাশ্মীরী যুবকদের মধ্যে অপরিসীম জোশ উদ্দীপনা এবং শাহাদাতের উন্মাদনা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে ভারতীয় বাহিনীর ঘুম হারাম করে দেয়। ভারতীয় বাহিনী তাকে জীবিত বা মৃত ধরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কারণ সামাজিক মাধ্যমে তিনি ‘ওয়ার্দি ও হাতিয়ার’সহ যে সকল ছবি পোস্ট করতেন তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যেতো। তার ডাকে ততদিনে বহু কাশ্মীরী তরুণ হিযবুল মুজাহিদীনে শরীক হয়েছে এবং কাশ্মীর উপত্যকায় সশস্ত্র জিহাদ এক নতুন মাত্রা লাভ করেছে। তার আগে কোন মুজাহিদ সতর্কতার রীতি উপেক্ষা করে নিজের ছবি এভাবে সামাজিক অঙ্গনে প্রকাশের সাহস করেননি। বোরহান ওয়ানীর এই অসম সাহসই কাশ্মীরী যুবকদের তার প্রতি বেশী আকৃষ্ট করেছে। বস্তুত তিনি হয়ে উঠেছিলেন কাশ্মীরী জোয়ানদের হিরো। কোন এক সূত্রে খবর পেয়ে
৮ই জুলাই মধ্যরাতের বেশ পরে ভারতীয় বাহিনী ঐ গ্রামটি ঘেরাও করে ফেলে যেখানে তিনি মাত্র কিছুক্ষণ আগে এসে অবস্থান করছিলেন। ভারতীয় বাহিনীর কয়েকশ জোয়ান গ্রাম ও বাড়ী ঘেরাও করার পর বারবার বোরহান ওয়ানীর উদ্দেশ্যে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতে থাকে। বোরহান ওয়ানী সে আহ্বান ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে দু’ঘণ্টার প্রচ- গোলাবিনিময়ের পর বোরহান ও তার দুই সঙ্গী শাহাদাত বরণ করেন।
উল্লেখ্য, ঐ অপারেশনে ভারতীয় বাহিনী হেলিকপ্টার পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষে পাঁচজন নিহত এবং ১৯জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
বোরহান ওয়ানীর শাহাদাতের খবর দাবানলের মত সমগ্র জম্মু-কাশ্মীরে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং ভারতবিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
তার জানাযায় কয়েক লাখ মানুষ শরীক হয়। সংবাদ পত্রের মতে, স্মরণকালের মধ্যে এমন বিশাল জানাযা কাশ্মীরে আর হয়নি।
এর পর যে লাগাতার বিক্ষোভ শুরু হয় তাতে ভারতীয় বাহিনী কতকটা যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে। কয়েকদিনের বিক্ষোভে নিরস্ত্র জনতার উপর ভারতীয় সেনা নির্বিচার গুলি বর্ষণ করে। ফলে একশ’রও বেশী কাশ্মীরী মুসলিম শাহাদাত বরণ করে এবং কয়েক শ আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটানা বহুদিন পুরো উপত্যকায় কারফিউ জারি করা হয় এবং ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতকিছুর পরো বিক্ষোভ দমন করা সম্ভব হয়নি। *
কে বিশ্বাসঘাতক?
এটা তো শুরুতেই জানা হয়েছিলো যে, বোরহান ওয়ানির উপস্থিতির তথ্য ভারতীয় বাহিনী যথাসময়ে পেয়েছিলো, কিন্তু জানা ছিলো না, কে ছিলো সেই সূত্র। প্রথমে স্বাভাবিক কারণেই ধারণা করা হয়েছিলো, কোন হিন্দু বা শিখ হবে! কিন্তু বোরহানের শাহাদাতের দু’বছর পর বিস্ফোরক তথ্য পরিবেশন করেছেন সুপরিচিত সাংবাদিক ইরফান ছিদ্দীকী। দৈনিক জং-এর তিনি
লিখেছেন। ২০১৬-এর ৭ই জুলাই দিবাগত মধ্যরাতে অধিকৃত কাশ্মীরের জেলা অনন্তনাগ (ইসলামাবাদ)-এর কূকরনাগ তহশীলের বামদূরা গ্রামে আসেন বোরহান তার সহযোদ্ধা সরতাজ আহমদের সঙ্গে। বোরহানের পূর্ণ ভরসা ছিলো সহযোদ্ধা সরতাজের উপর। আর সরতাজের ভরসা ছিলো তার মামা এবং ঘরের সবার উপর।
বোরহান ওয়ানীর নামে দশলাখ টাকার পুরস্কারের ঘোষাণা ছিলো ভারতীয় ফৌজের পক্ষ হতে। এটা যে কোন গরীব কাশ্মীরীর জন্য লোভনীয় অঙ্ক ছিলো। এ লোভ শুধু ঈমানের বলেই দমন করা সম্ভব। কিন্তু এখানে ঈমান দুর্বল ছিলো, বা ছিলোই না।
সরতাজের মামাত বোন আমাল দরজা খুলে দিয়েছিলো। তার বহুদিনের আকাক্সক্ষা ছিলো বেরাহান ওয়ানীর মত তরুণ মুজাহিদকে নিজের চোখে দেখার। আজ তার সে স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে বলে সে খুব আনন্দিত ছিলো। কিন্ত তার জানা ছিলো না, বোরহান ওয়ানীর জন্য সে আসলে মউতেরই দুয়ার খুলে দিয়েছে। শেষ রাতে হঠাৎ ফৌজী গাড়ী ও হুইসেলের আওয়াযে বোরহান ও সরতাজের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ততক্ষণে কয়েকশ ফৌজ বাড়ী ঘিরে ফেলেছে। হেলিকপ্টারের আওয়াযও পাওয়া গেলো। তাদের তখনও বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে ‘প্রতারণা’ হয়েছে। প্রথম সন্দেহ হলো যখন দেখা গেলো সরতাজের মামা-মামানী তাদের দিকে যেন চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।
এর মধ্যে লাউড স্পীকার থেকে বোরহান ওয়ানীকে ঘোষণা হলো, বোরহান, তোমার বাঁচার একমাত্র উপায় হলো আত্মসমর্পণ করা। বোরহান কোন উত্তর দিলেন না, শুধু মৃদু হেসে অনুচ্চ কণ্ঠে বললেন, নাদান, আমাদের তো বাঁচার পথ, বরং কামিয়াবির পথ হলো শাহাদাত!
এবার লাউড স্পীকার থেকে সরতাজের মামার নামে ঘোষণা হলো ঘরে ছেড়ে বের হওয়ার। তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো। আমার অবিশ্বাসের চোখে আতঙ্কিত দৃষ্টিতে একবার তাকালো বাবার দিকে একবার মায়ের দিকে।
সরতাজ নিজের হাতে মামাকে তার গাদ্দারির সাজা দিতে চাইলো। তখন বোরহান যা বললেন এবং যা করলেন তা জিহাদের ইতিহাসে এবং মুজাহিদীনের যিন্দেগিতে অমর হয়ে থাকলো। আসলে এই মহত্তের কারণেই বোরহান চিরকাল বোরহান হয়ে থাকেন। তিনি বললেন, যেতে দাও! যেন তিনি বলতে চাইলেন, আমরা তো আমাদের পুরস্কার পেয়ে যাচ্ছি শাহাদাতের মাধ্যমে, এই হতভাগাকে তার গাদ্দারির পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করে কী লাভ!
সরতাজের মামা ও মামানি যখন মাথা নীচু করে বের হয়ে যাচ্ছে তখন...
তখন যা ঘটলো তা কল্পনা করা কঠিন বইকি! আমাল মা-বাবার সঙ্গে বের হতে অস্বীকার করলো। বোরহান তখন বললেন, তুমি তো আমাকে ভালোবাসো, এটা আমার আদেশ!
আমাল অশ্রুসিক্ত চোখে বোরহানের দিকে তাকালো, আর বললো, আফসোস, আমি আপনার জন্য দরজা খুলে দিয়েছিলাম। আপনি আমার স্বপ্নের শাহযাদা! আর আমি আপনার মৃত্যুর কারণ হলাম!
***
বোরহান ওয়ানী এখন শহীদ। তার কবরের পাশে প্রতিদিন শত শত মানুষ একত্র হয় চোখের পানিতে কবরের মাটি ভেজানোর জন্য।
পক্ষান্তরে সেই ঘরের সামনেও কিছু না কিছু মানুষ প্রতিদিন জড়ো হয়, আর চিৎকার শোনা যায়, আয় লালচী, আয় গাদ্দার, আয় বে-ঈমান, লা‘নাত হ্যায় তুঝপ্যর! এ পর্যন্ত কয়েকবার হামলার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে ফৌজি নিরাত্তার কারণে এখনো জানে বেঁচে আছে।
একটি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্যরতাজের মামা বলেছে, আমাদের যিন্দেগি এখন মউতের চেয়ে খারাপ হয়ে গিয়েছে। মনে হয় মউতও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। প্রতিদিনই গাদ্দাদ, লালচী শব্দগুলো কানের ভিতরে বিষ ঢেলে দিয়ে যায়। তবে সবচে’ বেদনার বিষয় হলো, আমাল, যার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি বাবা, আর মা শামীমা, এটা করেছি, তার নযর থেকে চিরকালের জন্য আমরা পড়ে গিয়েছি। সে যদি কঠিন থেকে কঠিন গালি দিতো, মনের বোঝা হয়ত হালকা হতো। কিন্তু সেদিন থেকে সে নির্বাক! ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে থাকে, আমাদের দিকে নয়, শূন্যের দিকে। একবার শুধু মাকে বলেছিলো, ওয়ানীর কবরের কাছে আমাকে নিয়ে যাবে!
(মুসলিম এটা বড় ভাগ্য ও দুর্ভাগ্য যে, যুগে যুগে বোরহান ওয়ানি জন্ম গ্রহণ করেন, তেমনি জন্মগ্রহণ করে সারতাজরে ...। আবার তাদেরই ঘরে জন্মগ্রহণ করে আমালের মত মেয়ে!)
ওয়ানীর বাবা বললেন
এক নারী সাংবাদিক শহীদ বোরহান ওয়ানীর একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণে সক্ষম হয়েছিলেন, যা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি বা পরিবারের কেউ কি ধারণা করতে পেরেছিলেন যে, বোরহান ‘সশস্ত্র’ দলে যোগদান করবেন?
না, কারণ সে ছোট থেকেই ছিলো চুপচাপ। লেখাপড়ায় যেমন ছিলো মনোযোগী তেমনি মেধাবী। প্রতিটি পরীক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে। লেখাপড়ার বাইরে সে ছিলো একেবারে চুপচাপ।
যখন তিনি ঘর ছেড়ে গেলেন, আপনার বা তার মায়ের অনুভূতি কেমন ছিলো?
প্রথম দিকে তো মনে হয়েছে, কাজটা সে ভালো করেনি। কিন্তু হিন্দুস্তানী ফৌজের যুলুম নির্যাতন এবং খানাতল্লাশির নামে অপমানজনক আচরণ এত বেড়ে গেলো যে, ভাবলাম, বোরহান ঠিকই করেছে। প্রত্যেক কাশ্মীরী যুবকেরই তা করা উচিত, কারণ ইয্যত যদি না থাকে তাহলে আর কী থাকলো!
ফৌজের পক্ষ হতে আপনাকে কোন পেরেশানি...?
থানায় কয়েকবারই ডেকে নেয়া হয়েছে। হুমকি ধমকি দিয়েছে! ওরা তো আমার বয়স এবং পেশাগত পরিচয়েরও কোন লেহায করেনি। তবে এগুলোতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। গোলাম যখন হয়েছি, যিল্লতি তো বরদাশত করতেই হবে।
হিযবুল মুজাহিদীনে যোগ দেয়ার পর ছেলের সঙ্গে...?
আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ও নিজেই যোগাযোগ করতো না, একবার বোধহয় এসেছিলো। তবে আমার বড় ছেলে দু’বার কোথায় যেন গিয়ে দেখা করেছে। শেষবার তো দেখা করতে গিয়েই গেরেফতার হলো, আর ফিরলো না!
আপনার কী আফসোস হচ্ছে?
মোটেই না! আমার দুই ছেলে শহীদ হয়েছে। প্রয়োজন হলে আমিও শহীদ হবো। এমনকি আমার মেয়ে যদি অস্ত্র তুলে নিতে চায়, নিষেধ করবো না...!