শত্রুরা বন্ধু হয়ে আমাদের সবক দেয় উদার ও আধুনিক হওয়ার এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকা বহন করার। আমরা অনুগত ছাত্রের মতই তাদের আদেশ পালন করলাম এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকা উত্তোলন করলাম।
শত্রু তার নিজের জন্য কিন্তু শুরু থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছে ধর্মের পথ। হাজার বছর আগে যেমন ফিলিস্তীন তাদের কাছে ছিলো ‘প্রতিশ্রুত ভূমি, আজ একুশ শতকে প্রবেশ করেও ফিলিস্তীন তাদের কাছে প্রতিশ্রুত ভূমি, ‘সদাপ্রভুর দান’! হাজার বছর আগেও তারা প্রতিশ্রুত ভূমির জন্য ‘ক্রন্দন’ করেছে, এখনো তারা কাঁদে ‘ক্রন্দনপ্রাচীর’-এর নিকট গিয়ে! ইহুদীরা বিশ্বাস করে, যা কিছু তারা করছে, তা ধর্মীয় পবিত্র কর্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। একটা শর্ষের দানা দিয়ে যে অংশগ্রহণ করবে তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত। পবিত্র ভূমির জন্য মানবিক ও অমানবিক যে কোন কাজ করতে তাদের কোন দ্বিধা নেই। কারণ তাদের দৃষ্টিতে মানুষ হচ্ছে ইহুদীজনগোষ্ঠী! শুধু ইহুদীজনগোষ্ঠী!! অন্যরা, বিশেষ করে আরবরা তো মানুষই নয় যে, মানবীয় আচরণ তাদের পাওনা হবে!
প্রতিটি ইহুদী বিশ্বাস করে যে, নীল ও ফুরাতের মধ্যবর্তী প্রতি ইঞ্চি ভূমি প্রতিশ্রুতি ভূমির অন্তর্ভুক্ত, যে কোন মূল্যে, যে কোন কিছুর বিনিময়ে তা অর্জন করতে হবে। কেননা সদাপ্রভু স্বয়ং এ আদেশ করেছেন।
***
পক্ষান্তরে আমরা দুশমনের কাছ থেকে পাওয়া সবক এমনভাবে শিক্ষা করেছি যে, তা থেকে একচুলও নড়তে রাজী না। আমরা যখন ফিলিস্তীনের কথা ভাবি, মসজিদুল আকছার কথা খুব কমই উচ্চারণ করি। ভয় হলো, ‘পাছে লোকে কিছু বলে’! যদি ধর্মান্ধ বলে উপহাস করে। শুরু থেকেই ফিলিস্তীনের বিপর্যয়কে আমরা নিছক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে আসাছি। আর প্রত্যেক দেশের, প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ। সুতরাং আমাদের দৃষ্টিকোণ অভিন্ন হতে পারে না। দৃষ্টিকোণ অভিন্ন না হলে তা থেকে উৎসারিত চিন্তা কীভাবে অভিন্ন হবে?
ফিলিস্তীনসঙ্কটে ইহুদিদের মোকাবেলায় তখনই আমরা জয়ী হতে পারবো যখন বিষয়টিকে সর্বোতভাবে দ্বীনী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবো। তখনই শুধু আমরা একতাবদ্ধ হতে পারবো। আমাদের দিল এক হবে, আমাদের চিন্তা অভিন্ন হবে এবং আমাদের পদক্ষেপও অভিন্ন হবে।
ধর্মের ভাষা ও আবেদন হৃদয়ে হৃদয়ে বন্ধন সৃষ্টি করে এবং বিভেদ দূর করে। পক্ষান্তরে রাজনীতির ভাষা ও আবেদন হৃদয়ে হৃদয়ে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।
আরব নেতৃবৃন্দ প্রথম থেকেই যে ভুলটি করেছে তা হলো, ফিলিস্তীনের সমস্যাকে তারা শত্রুর সঙ্গে আমাদের ‘ভূমিদখলের সঙ্কট, বা অধিকার হরণের সঙ্কট বা রাজনৈতিক সঙ্কট বলে ধরে নিয়েছে। ইসলামকে এবং পবিত্রভূমির মর্যাদাকে তারা কখনো হিসাবে আনেনি।