বহু দিন থেকেই তুরস্কের স্বনামধন্য প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান, যার জন্য তার দেশের মানুষ টেঙ্কের নীচে শুয়ে পড়তেও দ্বিধা করেনি, বহু দিন থেকে বিভিন্ন দুর্যোগের মুহূর্তে প্রমাণ করেছেন, তিনিই হচ্ছেন বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর একমাত্র দরদী বন্ধু! তিনিই একমাত্র সাহসী কণ্ঠ ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। কিছুদিন আগে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিপদে তিনিই শুধু দৌড়ঝাঁপ করেছেন! তিনিই শুধু তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সান্ত¦না দিয়েছেন। সাহস যুগিয়েছেন এবং তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। পদাধিকারবলে যারা ছিলেন উম্মাহর অভিভাবকের অবস্থানে তারা কিছুই করেননি ‘ঠোঁটের সেবা’ ছাড়া। আরাকানবিপর্যয় এখনো বন্ধ হয়নি; রোহিঙ্গাসঙ্কট এখনো সমাধানের মুখ দেখেনি, এর মধ্যেই দেখা দিয়েছে নতুন ঝড়ের আলামত, বরং ঝড়ই শুরু হয়ে গেছে প্রবল বেগে, যার নাম ‘জেরুসালেমবিপর্যয়’। এখানেও সবাই নীরব! শুধু কি নীরবতা! যাদের দায়িত্ব ছিলো দিকভ্রান্ত উম্মাহকে অভিভাবকের অবস্থান থেকে সঠিক নেতৃত্ব দেয়া, তারাই আজ হাত মিলায় শত্রুর সঙ্গে, গোপনে নয় প্রকাশ্যে!!
এখানেও সবার আগে এবং খুব দ্রুত এগিয়ে এসেছেন দরদী এরদোগান, সহসী এরদোগান!!
শুরু থেকেই তিনি শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। মুসলিম উম্মাহ থেকে তারই কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে প্রথম প্রতিবাদ!
পর্দা সরিয়ে ঘটনার শুরু ৬ই আগস্টের কয়েকদিন আগে থেকে। শোনা যাচ্ছিলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানীরূপে স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়ার চিন্তা করছেন! সঙ্গে জুড়ে দেয়া হলো, ‘যদিও এটা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, তবে এবারও তিনি এর বাস্তবায়ন পিছিয়ে দিতে পারেন। আরো বলা হলো, পরিকল্পনাটি এখনো পূর্ণতা লাভ করেনি এবং শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট তাতে পরিবর্তন আনতে পারেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অজানা ছিলো না, এরূপ ঘোষণায় মুসলিমবিশ্বের কোন্ নেতা নিরাপোশ ও বিদ্রোহী অবস্থানে দাঁড়াতে পারেন। তাই রজব তৈয়ব এরদোগানকে চাপে রাখার কৌশল হিসাবে মার্কিন আদালতে তার বিরুদ্ধে ভুয়া ও ভিত্তিহীন একটা মামলা দায়ের করা হলো। বলা হলো, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্য লাখ লাখ ডলার বিদেশে পাচার করার যে অভিযোগ তুর্কী পেসিডেন্টের পরিবারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা খাতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরদোগান অবশ্য, দৃঢ়তার সঙ্গে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিযোগ উত্থাপনকারী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণ করুন। বিদেশে যদি আমার একটি মুদ্রাও থাকে আমি একমিনিটের জন্য পেসিডেন্ট পদে থাকবো না।
তুর্কী প্রেডেন্টকে বিপদে ফেলার জন্য দ্বিতীয় যে মামলাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তা হলো, তুর্কী বংশোদ্ভূত ইরানি স্বর্ণব্যবসায়ী রোজ জারাবের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। বলা হচ্ছে, জারাব তথ্য দিয়েছেন, মার্কিন অবরোধ এড়িয়ে ইরানের সঙ্গে একটি স্কিমে তার জড়িত হওয়ার বিষয়টি এরদোগান জানতেন। মার্কিন আদালতে জারাবের বিরুদ্ধে মামলাটি চলছে, এরদোগান এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুরষ্ক মানতে বধ্য নয়। মার্কিন আদালতের কোন অধিকার নেই তুরষ্কের বিচার করার। এ মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তুরস্কের ইমেজ ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করাই এর উদ্দেশ্য।
এরদোগানের এই একটি মাত্র সাহসী উচ্চারণের পর মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুর্কী লিরার লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে।
যাই হোক, সম্ভাব্য সতর্কতা হিসাবে তুর্কী পোসিডেন্টকে চাপের মধ্যে রেখে হোয়াইট হ্উাজ থেকে জেরুসালেমবিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক খবরটা প্রচার করা হলো। প্রথমে মনে করা হলো, এটা অসমর্থিত খবর। সবাই ভাবলেন, দেখি কী হয়! কিন্তু রজব তৈয়ব এরদোগান সে অপেক্ষা না করে ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে কড়া সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেন, এ ভুল যেন তিনি না করেন। এরদোগান বললেন, দোহাই, নরকের দুয়ার খোলার ভুলটা করেন না। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ হবে।
একই দিনে তিনি সউদী আরবের দিক থেকে প্রবল চাপের মধ্যে থাকা ফিলিস্তীনী প্রেসিডেন্ট মাহমূদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলেন। তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ফিলিস্তীনের জনগণের পক্ষে তিনি সবসময় রয়েছেন।
এরদোগানের ফোন পাওয়ার পর মাহমূদ আব্বাস বিবৃতি দিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন ঘোষণা দিলে তার পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। ট্রাম্পের জামাতা এবং তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা কুশনার সঙ্গে সঙ্গে কুশলী বক্তব্য রাখলেন। তিনি বললেন, এখনো এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
একই ভাবে মার্কিন পেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তাউপদেষ্টা ম্যাকমাস্টার বললেন, তিনি এখনো জানেন না, এমন কোন সিদ্ধান্ত হচ্ছে কি না।
তুর্কী পেসিডেন্টের অজানা ছিলো না যে, এগুলো সবই মুসলিম বিশ্বকে অন্ধকারে রাখার কৌশল। তাই ভিতরে ভিতরে তিনি ওআইসির জরুরি সম্মেলনের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখলেন।
৬ই ডিসেম্বরের আগের দিন চূড়ান্ত বিভ্রান্তিমূলক খবর ছড়ানো হলো যে, প্রবল কূটনৈতিক চাপের মুখে মার্কিন দূতাবাস তেলআবীব থেকে জেরুসালেমে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থেকে প্রেসিডেন্ট সরে এসেছেন। মর্কিন কর্মকর্তারা জানালেন, ‘আইন মেনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দূতাবাস স্থানান্তরবিষয়ক ঘোষণা প্রেসিডেন্ট দেননি। ফলে দ্বিতীয়বারের মত তিনি বিগত সরকারগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেন।’
বালাবাহুল্য, চূড়ান্ত ঘোষণা প্রদানের জন্য নির্ধারণকৃত তারিখের একদিন আগে এটা ছিলো মুসলিমবিশ্বের নেতৃবৃন্দকে অপ্রস্তুত অবস্থায় রাখার এক ঘৃণ্য অপকৌশল। এর মধ্যে মুসলিম-বিশ্বের ‘মুরুব্বি’ দেশটি উপরোক্ত সিদ্ধান্ত স্থগিতের পুরো কৃতিত্ব নিজের ঝুলিতে নেয়ার কোশেশ শুরু করে দিলো যে, দেশটির কূটনৈতিক উদ্যোগেরই সুফল এটা।
এরদোগান পুরো পরিস্থিতি এবং মার্কিন উদ্দেশ্য সম্পর্কে ছিলেন ওয়াকিবহাল। তাই তিনি বিভ্রান্তির জবাবে আবারো হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বললেন, এরূপ সিদ্ধান্ত হলে সেটা হবে মুসলিমদের জন্য ‘রেডলাইন’ বা বিপদসীমা। যুক্তরাষ্ট্র যদি এ সীমা অতিক্রম করে তাহলে তিনি ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। ৫ই ডিসেম্বর তুর্কী পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ঐ পার্লামেন্টারি ভাষণে এরদোগান প্রথম প্রকাশ করেন যে, সম্ভাব্য মার্কিন ঘোষণার প্রেক্ষিতে তিনি ওআইসির জরুরি শীর্ষ সম্মেলন ডাকতে পারেন।
৬ই ডিসেম্বর ঠিকই ঘোষণা এসে গেলো মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ হতে। পরদিন ছাপা হলো ঘোষণার স্মারকে স্বাক্ষর করা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গর্বিত ছবি।
তুর্কী প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান মুহূর্ত বিলম্ব না করে ডাক দিলেন ওআইসির জরুরি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের। একই সঙ্গে তারিখও ঘোষণা করা হলো ১৩ই ডিসেম্বর।
তুর্কী প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহীম কালিন বললেন, বাইতুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে স্পর্শকাতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণে এই জরুরি সম্মেল ডাকা হয়েছে এবং কোন কারণেই তা স্থগিত করা, বা তারিখ পিছিয়ে দেয়া সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, জোরদার গুঞ্জন ছিলো যে, সম্মেলন অন্তত কিছুদিন পিছানোর জন্য পর্দার আড়ালে সউদী আরব সম্ভাব্য সকল উপায়ে চেষ্টা করছে। তুর্কী প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র হয়ত সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
পরে দেখা গেলো, রাজপ্রাসাদ থেকে ঘোষণা এসেছে, বাদশাহ এবং ক্রাউন প্রিন্স সম্মেলনে যাচ্ছেন না। না যাওয়ার কারণ অবশ্য জানানো হয়নি। হতে পারে সর্দি, বা উচ্চ রক্তচাপ, বা মার্কিন চাপ, যা তুর্কী প্রেসিডেন্ট আমলে নিয়ে সম্মেলন পিছানো সঙ্গত মনে করেননি, আর রাজপ্রাসাদ তা ভালোভাবে নেয়নি।
তুর্কী প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণের বাইরে ব্যক্তিগভাবেও সউদী বাদশাহের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি তাকে বলেন, ‘জেরুসালেম মুসলিম উম্মাহর জন্য মর্যাদা ও অস্তিত্বের প্রশ্ন এবং মুসলিনেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে এক্যবদ্ধ’, এ বার্তা বিশ্বকে পৌঁছে দেয়ার জন্য এ সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, চলমান সঙ্কটে তুরস্কের ভূমিকা দুর্বল হয়ে গেলে ফিলিস্তীনের মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদের আশাবাদ হারিয়ে ফেলবে।
৭ই ডিসেম্বর গ্রিসসফরের উদ্দেশ্যে আঙ্কারা ত্যাগ করার প্রাক্কালে বিমানবন্দরে তুর্কী প্রেসিডেন্ট মার্কিন সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে আগুনের গোলার মধ্যে নিক্ষেপ করবে।
উল্লেখ্য, তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগান সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদবী উল্লেখ না করে শুধু নাম উচ্চারণ করেন। তুর্কী প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, যারা বিশ্বের নেতৃত্ব দেবেন তাদের উচিত পরিস্থিতি শান্ত রাখা, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং আগুন জ্বালিয়ে না দেয়া।
জেরুসালেম খৃস্টানদেরও পবিত্র স্থান উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে কথা বলবো। শেষদিকে তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে ট্রাম্প, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আপনি আসলে কী করতে চাচ্ছেন? আপনার ধারণা আছে, আপনি কী করতে যাচ্ছেন?!
প্রেসিডেন্ট এরদোগান আবারো মর্কিন প্রেসিডেন্টের হঠকারী সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ফিলিস্তীন মুসলিম বিশ্বের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ।
ফিলিস্তীনের মুসলিমরা পূর্বজেরুসালেমকে তাদের ভবিষ্যত রাজধানী মনে করে। এটি কোনভাবেই উপেক্ষিত হওয়া উচিত নয়।
ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান হিসাবে ট্রাম্পের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে জরুরি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বানের ব্যখ্যা দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, ইসরাইলের রাজধানীরূপে জেরুসালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার হঠকারী মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুসিলম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো অনিশ্চিত হওয়ার কারণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বর্তমান সঙ্কটে সামনে থেকে মুসলিমবিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে চান।
তাছাড়া শুরু থেকেই তিনি ফিলিস্তীন প্রশ্নে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে সবচে’ সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন।
২০১০ সালে গার্জায় ইসরাইলী অবরোধ ভাঙ্গার পদক্ষেপরূপে তুর্কী প্রেসিডেন্ট ত্রাণবাহী জাহায পাঠিয়েছিলেন। ঐ জাহাযে ইসরাইলের কমান্ডো হামলার কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিলো।
ওআইসির শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে এরদোগান ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চান। এরই অংশ হচ্ছে বিশ্বনেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার ফোনালাপ, যাকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফোন-কূটনীতি বলে অভিহিত করছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোকে ফোন করে তিনি কুশল বিনিময় করেন। তিনি বলেন, জেরুসালেমের স্থিতাবস্থা রক্ষা করা বিশ্বমানবতার দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, একটা ভুল পদক্ষেপের নেতিবাচক প্রভাব পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, ইসরাইল দখলদার রাষ্ট্র। বেসামরিক মানুষ, এমনকি শিশু-নারী-বৃদ্ধদের উপর এফ-১৬ দ্বারা হামলা চালাচ্ছে। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শক্তিশালী রাষ্ট্র হওয়া মানে এ নয় যে, তার অবস্থানই সঠিক হবে।
ফোনের আলোচনায় দুই নেতা জেরুসালেম ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান।
আরাকানট্রাজেডি ও রোহিঙ্গাইস্যুতে চীনের ভূমিকায় চরম ক্ষুব্ধ তুর্কী প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন। চীনা প্রেসিডেন্ট তাকে জানান এ বিষয়ে তিনি এরদোগানের সঙ্গে পূর্ণ একমত। বিশ্বফোরামে তিনি তুরস্ককে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
রাশিয়ার প্রেনিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তিনি ফোনে যোগাযোগ করেন। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী পূর্বজেরুসালেমকে রাজধানী করে সার্বভৌম ফিলিস্তীনরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা বিশ্বশান্তির জন্য অপরিহার্য। এর আগে তিনি বিষয়টি নিয়ে ক্যাথলিক খৃস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন। ‘জেরুসালেম খৃস্টানদের নিকটও পবিত্র’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে পোপকে তিনি এ বিষয়ে তার ধর্মীয় অবস্থান কাজে লাগানোর জন্য অনুরোধ করেন।
১২ই ডিসেম্বর এক ঝটিকা সফরে তুরস্কে আসেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। আঙ্কারায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে উভয় নেতা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হন।
যৌথ সম্মেলনে পুতিন বলেন, জেরুসালেমের মর্যাদার বিষয়টি ফিলিস্তীন-ইসরাইল আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া উাচিত ছিলো।
তিনি আরো বলেন, তুরস্ক ও রাশিয়া উভয়ে এ বিষয়ে একমত হয়েছে যে, জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে মার্কিন স্বীকৃতি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য কোন সুফল বয়ে আনবে না। বরং অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করে তোলবে এবং শান্তির সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেবে।
যৌথসংবাদ সম্মেলনে এরদোগান বলেন, রুশপ্রেসিডেন্ট পুতিনের অবস্থানে তিনি সন্তুষ্ট।
১৩ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ওআইসির জরুরি শীর্ষ সম্মেলন, বাদশাহ সালমান ও তার পুত্রের অংশগ্রহণ ছাড়াই। সম্মেলনে এরদোগানের বক্তব্য ছিলো খুবই জোরালো ও দ্বীধাহীন।
এরদোগানের মতে চলমান সঙ্কটনিরসনে ওআইসির সম্মেলন হবে মোড়পরিবর্তনকারী। এই সম্মেলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, এরদোগানের জোরালো উদ্যোগের কারণেই চীন জেরুসালেম ইস্যুতে এত দ্রুত এবং এত জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেছে। *
মুসলিমবিশ্বের মানচিত্র বদলের ষড়যন্ত্র হচ্ছে - এরদোগান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, অন্যদের সুবিধার জন্য মুসলিমবিশ্বের মানচিত্র বদলের ষড়যন্ত্র চলছে। জিহাদের সুমহান চেতনায় বলীয়ান হয়ে এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে আজ আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
ইস্তাম্বুলের এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘একশ বছর আগের মত আবারো চ্যালেঞ্জের মুখে মুসলিমবিশ্ব। ভায়ে ভায়ে বিভেদ ও রক্তপাতের মাধ্যমে আমাদের ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের আত্মকলহেরই সুযোগ নেয় শত্রুরা এবং ইসরাইল সেটাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কাজে লাগায়। তিনি প্রশ্নের সুরে বলেন, এমন কী কঠিন কাজ, আত্মকলহ দূর করে পরস্পর সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করা!
ইস্তাম্বুলে সপ্তম হাদীছ ও সীরাত অধ্যয়ন পুরস্কারবিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে তুর্কী প্রেসিডেন্ট বলেন, কুদস হাতছাড়া হলে আমরা মদীনা মুনাওয়ারাও রক্ষা করতে পারবো না। আর মদীনা মুনাওয়ারা হারালে আমরা মক্কা মুকাররামাও রক্ষা করতে না পারবো না। তখন আমাদের কোন অস্তিত্বই থাকবে না।
তিনি বলেন, জেরুসালেমকে রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে বোমা ফেলেছেন। এর মোকাবেলায় আমরা সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নিতে থাকবো। জেরুসালেম মুসলিম উম্মাহর মর্যাদার জায়গা এটা রক্ষার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সবকিছূই করবো। আমরা প্রথমে নিরাপত্তাপরিষদে যবো। যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিলে আমরা জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে যাবো। আমরা আমৃত্যু আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত রাখবো।