আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

আল কুদসসংখ্যা (বিশেষ).

আমরা কী করেছি, ওরা কী করেছে?!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

্ইহুদি, খৃস্টান ও মুসলিম তিনটি সম্প্রদায়ই আলকুদস বা জেরুসালেমকে পবিত্র শহর বলে মনে করে, কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য এই পবিত্র শহরের নিয়ন্ত্রণ হাতে পেয়ে ইহুদি-খৃস্টান কোন সম্প্রদায় শহরের পবিত্রতা রক্ষা করেনি, বরং হিং¯্র উল্লাসে মেতে উঠেছিলো প্রতিপক্ষের নিধনযজ্ঞে। পক্ষান্তরে মুসলিম সম্প্রদায় ইতিহাসের সুদীর্ঘ সময় এই শহরের তত্ত্বাবধানে থেকে এর পূর্ণ মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করেছে। এমনকি শহরজয়ের নাযুক সময়েও তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে রক্তপাত এড়াতে। খৃস্টানসম্প্রদায় শর্ত আরোপ করেছিলো সন্ধিচুক্তি সম্পাদনের জন্য স্বয়ং খলীফাতুল মুসলিমীনকে আসতে হবে শামে। তিনি তা মেনে নিয়েছেন। ইতিাহসে ‘উমরসন্ধি-চুক্তি’ নামে খ্যাত চুক্তিপত্রে তিনি প্রতিপক্ষের প্রায় সব দাবী রক্ষা করেছেন শুধু রক্তপাত এড়াতে। ইহুদীদের বিষয়টি তিনি এতদূর খেয়াল রেখেছেন যে, জেরুসালে-মের প্রধান বিশপ আরফানোস স্বয়ং দাবী করেছিলেন যে, ইহুদীদের জন্য কুদসে বসবাস নিষিদ্ধ করতে হবে। হযরত ওমর রা. ‘আল্লাহর কিতাব এটা সমর্থন করে না’ বলে তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, এতটুকু করা হবে যে, ইহুদিরা তোমাদের বস্তিতে বাস করবে না।

ইতিহাস সাক্ষী, মুসলিম সম্প্রদায় ইহুদিদের সঙ্গে যে, উদার আচরণ করেছে ইহুদিদের প্রতি খৃস্টানদের আচরণ ছিলো এর সম্পূর্ণ বিপরীত।  ক্রুশেডারদের হাতে আলকুদসের পতনের পর ইহুদীদের জড়ো করা হয়েছিলো তাদের উপাসনালয়ে তারপর দরজা বন্ধ করে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো। আলকুদসে তাদের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিলো যতদিন কুদস খৃস্টানদের (১০৯৯ -১১৮৭) দখলে ছিলো। যখন সুলতান ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী ক্রুশেডারদের দখল থেকে কুদস উদ্ধার করেন তারপরই শুধু ইহুদীরা সেখানে প্রবেশের অনুমতি লাভ করে। অন্যদিকে ইসলামপূর্বযুগে পারস্যের হাতে কুদসের পতনের পর যখন খৃস্টানদের উপর লোমহর্ষক গণহত্যা নেমে আসে তখন ইহুদীরা এই সুযোগে ইরানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলো খৃস্টানদের উপর  আক্রোশ চরিতার্থ করার কাজে।

পক্ষান্তরে ইহুদিদের প্রতি মুসলিম জাতির এই পরিমাণ সদাচারের পরো এই অভিশপ্ত সম্প্রদায়, প্রতারণা, কপটতা, যুলম-অবিচার ও হিং¯্রতা হচ্ছে যাদের  মজ্জাগত, ইসলাম ও মুসলিমউম্মাহর প্রতি তাদের বিদ্বেষে সামান্য পরিমাণও ভাটা পড়েনি। একইভাবে ইতিহাসের প্রতিটি মোড়ে খৃস্টানস্প্রদায়ের প্রতি মুসলিম জাতির এত মহানুভবতা সত্ত্বেও ক্রুশেডচেতনা থেকে তারা কখনো মুক্ত হতে পারেনি। আর ক্রুশেডচেতনা মানেই হলো হিং¯্রতা ও নৃশংসতা।

হযরত উমর রাহ,-এর আদর্শ অনুসরণ করে মহান গাজী ছালাহুদ্দীন আাইয়ূবী রহ.ও বাইতুল মাকদিস-বিজয়ের পর খৃস্টান-ইহুদী উভয় সম্প্রদায়ের প্রতি উদার আচরণ ও মাহনুভবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

কিন্তু সতের শতকের শুরু থেকেই ক্রুশেড ও ইহুদীবাদ নিজেদের মধ্যকার সমস্ত শত্রুতা ভুলে ফিলিস্তীন ও বাইতুল মাকদিস প্রশ্নে গোপন আতাতের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং শুধু মুসলিমবিদ্বেষের কারণে ফিলিস্তীনে ইহুদীদের বাসভূমি প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট যা কিছু করছেন তা ক্রুশেড -চেতনারই বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। অন্যরা কপটকার আশ্রয় নিয়েছেন, তিনি মুখোশ খুলে ফেলেছেন, এই যা পার্থক্য।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা