অস্বাভাবিক মনে হলেও এটা সত্য যে, ভ্রমণভীতি ও ভ্রমণপিপাসা, এ দু’টো আমার ভিতরে সহ-অবস্থান করে। তাই বিভিন্ন সুযোগে আমি যেমন পতেঙ্গা, কক্সবাজার, হিমছড়ি, জাফলংসহ বহু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করেছি, তেমনি শুধু ভ্রমণভীতির কারণে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বহু স্থানে আমার যাওয়া হয়নি।
বরিশালের চরমোনাই পরিদর্শনের ইচ্ছা আমার বহুদিনের। ওখানে বছরে দু’টি মাহফিল হয়। ফাল্গুনের মাহফিলে আমাদের মাদরাস থেকে অনেকেই যায়। এবার আমিও কাফেলায় শামিল হলাম।
সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়বে রাত আটটায়, চরমোনাই ঘাটে ভিড়বে ভোর চারটায়। এটা আমার জীবনের প্রথম লঞ্চভ্রমণ, তাই ভীতি ও রোমাঞ্চের অদ্ভুত একটা মিশ্র অনুভূতি আমার মধ্যে ছিলো। রাতের লঞ্চ ভ্রমণে যদিও প্রাকৃতিক দৃশ্য ছিলো না, তবু বেশ উপভোগ্য হয়েছিলো। রেলিঙ-এর পাশে দাঁড়িয়ে নদীর বিশুদ্ধ বায়ুসেবনের সঙ্গে নদীর বুকে রাতের অন্ধকার এবং নদী-তীরের জনপদের ছায়া-রহস্য উপভোগ করেছি।
চাঁদপুরের কাছে চৌমুখী মোহনার কথা এত দিন শুনে এসেছি সেটা আজ পার হলাম। বর্ষাকালে বড় বড় লঞ্চ ও জাহাজ এখানে যেন ভয়ে কাঁপতে ও দুলতে থাকে। অতি সাহসী সারেঙ-এরও তখন হৃৎকম্প শুরু হয়। এখানে এমন ভয়ঙ্কর ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয় যে, অতি বড় জাহাজও তলিয়ে যায়। দূর ও নিকট অতীতে বহু দুর্ঘটনা এখানে ঘটেছে।
লঞ্চ ভিড়লো চরমোনাই ঘাটে ইস্তিকবালের লোকেরা সম্মিলিত যিকিরের সুরে যাত্রিদের স্বাগত জানালো। যিকিরের আত্মিকতা এবং ইস্তিকবালের আন্তরিকতা আমাদের ভিতরটাকে ছুঁয়ে গেলো। শেষরাতের ফরসা আঁধারে শীতের আমেজে মেঠো পথ ধরে হাটতে গিয়ে আশ্চর্য এক ভালো লাগায় আমরা অভিভূত ছিলাম।
মাদরাসা-প্রাঙ্গনে যখন পৌঁছলাম তখনো আযান হয়নি। অযু-তাহারাত সেরে পূর্ণ প্রস্ত্তত হয়ে আমরা ফজরের জামাতে শামিল হলাম। বিশাল ময়দানে অনুষ্ঠিত জামাতের সে অপূর্ব দৃশ্য সত্যি জীবনে কখনো ভোলার মত নয়।
নামাযের পর দীর্ঘ বয়ান হলো, যার সারকথা ছিলো এই যে, বাইরের অবয়বের নাম মানুষ নয়, ভিতরে যার মনুষ্যত্ব আছে সেই প্রকৃত মানুষ, আর যার অন্তরে ঈমান আছে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ঈমানের দাবী অনুযায়ী আমল আছে সেই হলো আদর্শ মানুষ।
বয়ানের পর মুনাজাত হলো। সেই মুনাজাতে হায়রে মানুষের কান্না! এমন বুকফাটা আহাজারি কি আসমানে আরশে কম্পন সৃষ্টি না করে পারে! ভাবতে অবাক লাগে, এই মানুষগুলোই ফেরার পথে লঞ্চঘাটে করে হুড়াহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কি! কে কার আগে ওঠবে এবং সবচে’ ভালো জায়গাটা দখল করবে, শুধু সেই প্রতিযোগিতা!
পুরো মাদরাসা ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং ....।
এবার ফেরার পালা। তবে তার আগে দেখতে যাবো সেই বিখ্যাত সান্টু সাহেবের মসজিদ। নদীপথে বরিশাল শহর পর্যন্ত। সেখান থেকে টেম্পু, তারপর বাসে করে পর্যটন এলাকায় (মসজিদে) পৌঁছা হলো। কষ্ট হলেও পর্যটন শব্দটাই লিখতে হলো। কারণ সেখানে পরিবেশ যা ছিলো তা কোন মসজিদের হতে পারে না। আর সকল বয়সের, সকল স্তরের নারী-পুরুষ সেখানে গিয়েছে শুধু মসজিদ পরিদর্শন করতে, নামায পড়তে নয়। ....
তবে দেখার মত মসজিদ বটে, যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে আখেরি যামানার মসজিদ সম্পর্কে। আমেরিকা প্রবাসী সান্টু সাহেব তের কোটি টাকা ব্যয় করে তার দেশের বাড়ীতে এ মসজিদ তৈরী করেছেন। মসজিদের পাশে তার কবরের স্থানও তৈরী করে রাখা হয়েছে। ....
(সম্পাদকঃ সানীম হাসান, দুঃখিত, তোমার জন্য বরাদ্দ স্থান শেষ!)