একটি নামের উদ্দেশ্য কী? সহজ উত্তর। নামের উদ্দেশ্য হলো পরিচয়! মাটির নাম, মানুষের নাম, ফুলের নাম, ফলের নাম। সম্পর্কের নাম। নামের উদ্দেশ্য হলো পরিচয় তুলে ধরা! কথাটা সত্য! তবে প্রশ্ন করা যায়, নামের উদ্দেশ্য শুধুই কি পরিচয় তুলে ধরা!
মাটির নাম ভারত, মাটির নাম পাকিস্তান এবং মাটির নাম বাংলাদেশ! একই রকমের অনুভূতি কি হলো আমার তোমার অন্তরে! মাটির নাম ইয়ামান, মাটির নাম হিজায এবং মাটির নাম নজদ! তিনটি মাটির তিনটি নামের সঙ্গে হৃদয়ের স্পন্দন কি ওঠা নামা করেনি! মানুষের নাম আবূ জেহেল, মানুষের নাম আবূ বকর এবং মানুষের নাম আবূ তালিব! তিনটি ‘আবূ’ তোমার ভাব ও ভাবনার জগতে কি একই রকম তরঙ্গ সৃষ্টি করলো!
এবার আমি সমকালের তিনটি নাম বলতে চাই। প্রতিটি নাম একজন ব্যক্তির পরিচয় বহন করবে, কিন্তু এ পর্যন্তই! নাকি পরিচয়ের সঙ্গে আছে আরো কিছু বিষয়, ঘৃণা, শ্রদ্ধা! সন্তোষ, অসন্তোষ!...আচ্ছা, সমকাল তো বড় ঝুঁকি -পূর্ণ বিষয়। আমি না হয় নীরব থাকি, তুমিও মনে মনে তিনটি নাম স্মরণ করো। আমি দেখতে থাকি তোমার মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তি! এই তো তুমি প্রথম নামটি স্মরণ করেছো, তোমার মুখমণ্ডলে আমি দেখতে পাচ্ছি আনন্দ ও শ্রদ্ধার অভিপ্রকাশ! এবার তুমি দ্বিতীয় নাম স্মরণ করেছো। মুখ যদি হয় মনের আয়না তাহলে আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমার ভিতরটা যেন ঘৃণায়...! এবার তৃতীয় নাম...! থাক জায়গা ফুরিয়ে আসছে! মূল কথা এখনো তো রয়ে গিয়েছে।
তেঁতুল একটি ফল তো! ফলের পরিচয় পেলাম, ভালো কথা, কিন্তু জিভে জল আসে কেন! মাকাল ফলও তো খাঁটি ফল! কিন্তু তোমার চেহারাটা এমন হলো কেন! আচ্ছা, এবার তোমার পক্ষ হতে আমি একটি ফলের নাম বলি! ড্রাগন! ফলটা তো চিনলে, ভয় পেলে কেন! আম, জাম, লিচু! আঙুর, আনার, আপেল!ফুলের নাম! গোলাব, বেলী, শিউলী, তিনটি ফুলের তিনরকম সুবাস পেলে না! এবার ঐ ফুলের নামটা বলি যার গন্ধটা হলো পচা...! তিনবার তাওবা পড়েছো তো!
এবার শোনো, সম্পর্কের নাম! মা! মামা! বাবা! চাচা! বন্ধু! শত্রু! তাহলে আমি কি বলতে পারি, নাম শুধু পরিচয় বহন করে না, অনুভূতিও ধারণ করে! কোন নাম আনন্দের, শান্তির, শ্রদ্ধার, ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টি করে; কোন নাম মনের দুয়ারে দস্তক দিলেই বিরক্তিতে, অসন্তোষে, ঘৃণায় ক্রোধে ইচ্ছে করে দুয়ারটা বন্ধ করে দিই! মনের দুয়ার থেকে নামটা বিদায় হলেই যেন বাঁচি!
নামের যেমন আনন্দ আছে তেমনি আছে নামের ব্যথা। আবার ব্যথারও আছে বিভিন্ন নাম! দাঁতের ব্যথাকে বলে দন্তশূল। বিচ্ছেদের ব্যথাকে বলে বিরহবেদনা! আর আপনজনের মৃত্যুতে যে ব্যথা হয় তার নাম মৃত্যুশোক!
***
এত কথা কেন মনে পড়লো জানো! জায়াগাটা খালি ছিলো। কিছু না কিছু লিখে পূর্ণ করতে হবে। আর এখানে একটা নাম ছিলো। হঠাৎ করে নামটা আমার অন্তর্জগতে ব্যথার বিরাট এক ঢেউ সৃষ্টি করলো! আর নামের ব্যথাকে অবলম্বন করে এই লেখাটি আকাশ থেকে ঝরলো ঝিরঝির বৃষ্টির মত। নামটার কাছে কৃতজ্ঞ হতেই হয়!