মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬)

কচি ও কাঁচা

কীভাবে যাপন করি আমার দিন? -আলী মিয়াঁ রহ.-এর লেখা অবলম্বনে

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

১-আজ এত দিন পরে মনে পড়ে আমার শৈশবের সুন্দর দিনগুলোর কথা। আব্বা একদিন বললেন, ‘শৃঙ্খলাই জীবন। তুমি যদি চাও, তোমার জীবন সুন্দর হোক তাহলে এখন থেকেই সব কাজ শৃঙ্খলার সঙ্গে করো এবং সময় মত করো। দিনের প্রতিটি কাজের জন্য সময় ঠিক করে নাও। দেখবে, প্রতিটি কাজ কত সুন্দর হয় এবং সময়ের মধ্যে কত বরকত হয়!!’ 


২-আমি খুশী হয়ে বললাম, আব্বু, আমি তোমার কথা শোনবো। সব কাজ শৃঙ্খলার সঙ্গে করবো এবং সময়মত করবো। আব্বা খুশী হয়ে বললেন, আমি জানতাম, তুমি তাই করবে। তুমি তো অনেক ভালো ছেলে। আব্বা আমাকে দিনের সময় ও কাজ লিখে দিলেন। তখন থেকে প্রতিটি কাজ আমি সময়মত করতে লাগলাম। আমার প্রতিটি কাজ সুন্দরভাবে শৃঙ্খলার সঙ্গে হতে লাগলো এবং সময়ের মধ্যে খুব বরকত হলো। শোনবে আমার শৈশবের দিন যাপনের কথা! শোনো তবে।
৩-রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তাম, দশটার মধ্যে। আবার ভোরে তাড়াতাড়ি উঠতাম। ঘুমের দু‘আ এবং ঘুম থেকে ওঠার দু‘আ আমার ভুল হতো না। নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে আব্বার সঙ্গে মসজিদে যেতাম। বাড়ীর কাছেই ছিলো মসজিদ। আমার খুব ভালো লাগতো। 
৪-ফজরের পর কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করতাম। তারপর বাড়ীর বাগানে বেড়াতাম। ঝির ঝির বাতাসের মধ্যে ফুলের বাগানে বেড়াতে কী যে ভালো লাগতো! হালকা নাশতা করে মাদরাসার জন্য প্রস্তুত হতাম এবং সময়মত মাদরাসায় উপস্থিত হতাম। শিক্ষকের সামনে আদবের সঙ্গে বসতাম এবং মনোযোগের সঙ্গে পড়া শুনতাম। ছয়ঘণ্টা মাদরাসায় থাকা হতো। ছুটির পর বাড়ী ফিরে আসতাম। 
৫-আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত পড়া-লেখা করতাম না। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধূলা ও হাসি-আনন্দ করতাম। কখনো বাড়ীর প্রয়োজনীয় জিনিস আনার জন্য আম্মা বাজারে পাঠাতেন। তালিকা দেখে ঠিকমত সব জিনিস আনতাম। আম্মা খুব খুশী হতেন। কখনো কোন আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যেতাম আব্বার সঙ্গে। সবাই খুব খুশী হতো।
৬- মাগরিবের পর সময় নষ্ট না করে পড়তে বসে যেতাম। আজকের পড়া ইয়াদ করতাম, আবার আগামী দিনের পড়া প্রস্তুত করতাম। এশার পর ‘বাড়ীর কাজ’ শেষ করে সবার সঙ্গে রাতের দস্তরখানে শরীক হতাম। কিছুক্ষণ পায়চারী করতাম। তারপর অযু করে ঘুমের দু‘আ পড়ে আল্লাহর নামে শুয়ে পড়তাম। আমার খুব সুন্দর ঘুম হতো।
৭-মাদরাসার পড়া পূর্ণ করার পর অবসর সময়ে ছোটদের জন্য লেখা সুন্দর কোন বই পড়তাম। তাতে অনেক সুন্দর বিষয় জানা হতো। বন্ধুরা অবাক হয়ে বলতো, তুমি এত কিছু জানো কীভাবে! বন্ধুরা আমার থেকে বই নিয়ে পড়তো; আবার সময় মত ফেরত দিতো। তাদের সাহায্য করতে পেরে আমার ভালো লাগতো।


৮-শুক্রবার হলো ছুটির দিন। ছুটির দিনও শোয়া এবং ওঠা তাড়াতাড়ি হতো। আব্বার সঙ্গে জুমার জামাতে যেতাম। বড় জামাত হতো। খুব ভালো লাগতো। ছুটির দিনে নিজের কাপড় নিজে ধুয়ে নিতাম, জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতাম। বই পড়ে, গল্প লিখে, আম্মার সঙ্গে, ভাইবোনদের সঙ্গে কথা বলে অবসর সময় যাপন করতাম। কেউ অসুস্থ হলে দেখতে যেতাম।

৯- আমার সুন্দর খাতা ছিলো রোযনামচা লেখার জন্য। আমি নিয়মিত রোযনামচা লিখতাম, আছরের আগে মাদরাসা থেকে ফিরে। এখন সেই রোযনামচার পাতা-গুলো দেখে কী যে আনন্দ লাগে! কত কথা, কত ঘটনা ভুলে গিয়েছি, কিন্তু রোযনামচার পাতায় সেগুলো লেখা আছে। দেখে বড় ভালো লাগে। শৈশব যেন আমার সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে। এখনো আমি রোযনামচা লিখি নিয়মিত।এভাবে আমি আমার শৈশবের দিন-রাত যাপন করেছি।আমার সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসতো।

১০-আজ মনে পড়ে আব্বার কথা! আব্বার জন্য অনেক দু‘আ করি। আব্বার জন্যই তো আমার জীবন এত সুন্দর হয়েছে! এত সুশৃঙ্খল হয়েছে এবং সময়ের মধ্যে এত বরকত হয়েছে। আব্বা আজ কবরে শুয়ে আছেন। আল্লাহ যেন আব্বাকে...!!


শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা