মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬)

কচি ও কাঁচা

তোমাদের লেখা পেয়েছি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

০ জারীর সা‘দ, তোমার লেখা বেশ সুন্দর। আরো সুন্দর হতে থাকবে আশা করি। তুমি লিখেছো, ‘সবাই পড়া ছেড়ে জানালার দিকে ছুটে গেলো। আমিও পড়া ছেড়ে উঠে যেতে চচ্ছিলাম, কিন্তু গেলাম না, কারণ এতে শৃঙ্খলা নষ্ট হয় ...! কত সুন্দর চিন্তা তোমার, হে আগামী দিনের মালী! (ইনশাআল্লাহ)০ রিদওয়ানুল বারী ফাহীম, তুমি লিখেছো, ‘আগে আমি গাছের পাতা ছিঁড়তাম। পাতা ছিঁড়লে গাছের কষ্ট হয় আমার জানা ছিলো না। হুযূর বলেছেন, গাছেরও প্রাণ আছে।... এখন আমি গাছের পাতা ছিঁড়ি না। পাতা ছুঁয়ে গাছকে আদর করি। ...’ সুন্দর লিখেছো, লিখতে থাকো।০ খালেদ নূর,  তুমি ইস্তিগফার করেছো, আর ঝগড়া থেমে গিয়েছে, কত আনন্দের কথা! আলহামদু লিল্লাহ! তুমি বড় হতে থাকবে, তোমার লেখাও সুন্দর হতে থাকবে, আশা করি। তুমি চেষ্টা করো, আমরা দু‘আ করি।০ ও নাম নাজানা পাখী! তুমি লিখেছো, ‘আজ বিকেলে আমার খুব কান্না পেলো। কারণ আমাদের প্রিয় হুযূর আমাদের ছেড়ে হজ্বের সফরে গিয়েছেন। ... বোকা ছেলে, এটা বুঝি কান্নার কথা হলো! আমি হলে তো অনেক খুশী হতাম! তুমি নাম লেখোনি কেন?!০ রিয়াযুল ইসলাম, তুমি কৃষকের প্রতি তোমার মনের দরদ-মায়ার কথা লিখেছো। সুন্দর হয়েছে। তুমি ঠিকই লিখেছো, ‘কৃষক যদি আমাদের জন্য কষ্ট না করতো; যদি রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফসল না ফলাতো তাহলে ক্ষুধার সময় কোথায় খাদ্য পেতাম?০ তামীম হাসান, রাতের আকাশে তারার মেলা দেখে তুমি আল্লাহর শোকর আদায় করেছো। তোমার লেখা এবং তোমার চিন্তা খুব ভালো। তুমি নিয়মিত লিখতে থাকো। আল্লাহ সবাইকে সাহায্য...! এই বিরতিতে আমি মাদরাসায় ছিলাম; বাসায় যাইনি। বিরতিতে বাসায় যেতে খুব ইচ্ছে করে। আবার মাদরাসায় থাকতেও ভালো লাগে।আগে আমাদের বাসা ছিলোকাছে, এখন হয়েছে দূরে। বাসায় যেতে না পারলে কষ্ট হয়। কষ্ট তো করতেই হবে। হুযূর বলেন, কষ্ট ছাড়া কেউ জীবনকে সুন্দর-ভাবে গড়তে পারে না। যারা জীবনকে সুন্দরভাবে গড়েছেন এবং অনেক বড় আলেম হয়েছেন তারা ইলমের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।হুযূরের কথা শুনে মনে অনেক শান্তি হয়েছে। (আব্দুল গাজীপুর, ৬-২-৩৯ হি.)আজ সকালে দেখি, মাদরাসার বাগানে একটি বড় গাছের ডালে পাখীর বাসা। বাসায় পাখীর ছানাগুলো চিঁ চিঁ করছে। মনে হয় ক্ষুধা পেয়েছে। তাই মাকে ডাকছে। কিছুক্ষণ পর একটি পাখী এলো, আর ..আমাদের মাদারাসায় মসজিদের সামনে একটি শিউলীফুলের গাছ আছে। ফুলের মৌসুমে তাতে নাকি অনেক ফুল আসে। একবার নাকি আদীব হুযূর দস্তরখানে সবাইকে শিউলীফুল হাদিয়া দিয়েছেন। শুনে অনেক খুশী লাগলো। আমি যদি তখন থাকতাম তাহলে তো আমিও পেতাম। ...নাম লেখা নেই৫ - ১২ - ৩৯ হি.


আমি ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দেবো। নিজে না খেয়ে তাদের খাওয়াবো। আল্লাহ খুশী হবেন।তুমি আকাশ থেকে বৃষ্টি নামাতে পারো? পারো না। আল্লাহর হুকুমে বৃষ্টি হয়।আমার মনে পড়ে এবং ভালো লাগেশৈশবের একটি সুন্দর দিনের কথা এখনো আমার মনে পড়ে। মনে পড়ে এবং ভালো লাগে। তখন কত হবে বয়স! তোমাদেরই মত, সাত কি আট। মক্তবে যাই, এখন যেমন তোমরা যাও। বাড়ীর কাছেই ছিলো মক্তব। আর এখনকার মত তখন এত গাড়ী ছিলো না, এত ভিড় ছিলো না এবং মানুষের ভয় ছিলো না! তাই একা যেতে, আসতে সমস্যা হতো না।পথে দেখা হতো, কার সঙ্গে জানো?! একটা কুকুরের সঙ্গে। মানুষের সঙ্গে কি দেখা হতো না?! হতো কিন্তু কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো না। কুকুরটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। দূর থেকে দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসতো, যেন আমার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলো! কুকুরটা আমার কাছে আসতো, তবে খুব কাছে না! কীভাবে যেন বুঝতো, গায়ে লাগা আমার পছন্দ না! কাছে এসে লেজ নাড়তো, যেন খুশী ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।কুকুরটার সঙ্গে এমন মায়ার সম্পর্ক কীভাবে হলো?! একদিন মক্তবে যাওয়ার পথে। দেখি একটা কুকুর! তখন ছিলো গরমকাল। কুকুরটা জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। খুব বুঝি পিপাসা পেয়েছে! দেখে বড় মায়া হলো। কাছে কোথাও পানি ছিলো না। আমার বোতলে পানি ছিলো। আম্মা দিয়ে দেন, যদি পিপাসা পায়!আমার তো পিপাসা ছিলো না, কুকুরটার পিপাসা ছিলো। ...সামান্য পানি পেয়ে কুকুরটা আমার প্রতি এমন কৃতজ্ঞ হলো যে, দেখলেই এগিয়ে আসে; লেজ নাড়ে। কিছু দিলে খায়, আর আমার দিকে তাকায়। যেন বলে, তুমি খুব ভালো ছেলে! কুকুরটার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার খুব ভালো লাগে।এই জীবনে কত মানুষের কত উপকার করেছি! আল্লাহর জন্য করেছি। আল্লাহর কাছে আজর পাবো, আশা করি। মানুষ কিন্তু কৃতজ্ঞতা জানায়নি। একটু মৃদু হাসি দিয়েও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। কুকুর হাসতে জানে না। লেজ নাড়তে জানে। তাই লেজ নেড়ে কৃতজ্ঞতা জানায়।অনেক দিন পর কুকুরটা মারা গিয়েছিলো। যখন মনে পড়ে খুব কষ্ট হয়, তবু ভালো লাগে। কারণ মনে পড়ে, কুকুরকে পানি পান করিয়ে একজন জান্নাত পেয়েছে!



মাদানী মাক্তাবের ছোট ফুলকলিরা, শোনো! তোমাদের কচি হাতের কাঁচা কাঁচা লেখা পেয়েছি। পড়েছি। খুব ভালো লেগেছে। এক বছর পর তোমাদের লেখা আরো কত ভালো হতে পারে, ভাবো তো!!একজন একজন করে সবার লেখা যদি এখানে দিতে যাই, অনেক জায়গা দরকার! তাই সবার তরফ থেকে একজনের নিজের হাতের লেখা এখানে তুলে দিলাম। সবাই খুশী হও। সবাই আমার দু‘আ নাও। সবার জীবন যেন চাঁদের মত হয়, ফুলের মত হয়, এই দু‘আ করি।আমরা দুনিয়া থেকে বিদায় নেবো, তোমাদের রেখে যাবো। তোমরা অনেক মেহনত করে অনেক বড় হবে, তারপর অনেক কাজ করবে, কলম দিয়ে ভালো ভালো কথা লিখবে, এই আশা বুকে রাখলাম।নাও এবার দেখো, তোমাদের সবার তরফ থেকে একজনের হাতের লেখা-

আজ তোমাকে আমরা বলি ‘শিশু’। বলো তো কাকে বলে শিশু? শিশু মানে মানব-উদ্যানের ছোট্ট কলি, ধীরে ধীরে বড় হয় এবং ফুল হয়ে ফোটে, আর পৃথিবীর বাগানে সুবাস ছড়ায়, জ্ঞানের সুবাস এবং আখলাক ও চরিত্রের...। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো তো!)মাদরাসার প্রতি আমার ভালোবাসা।অসুস্থতার কারণে অনেক দিন হলো বাসায় পড়ে আছি, মাদরাসায় যাওয়া হয় না।কবে আবার ফিরে যেতে পারবো মাদধপ মাদরাসার জন্য আমার মন অনেক কাঁদে। সবসময় শুধু মাদরাসার কথা ভাবি। কেন আমাকে অসুস্থ হয়ে বাসায় চলে আসতে হলো, এ সম্পর্কেও ভাবি। আমার মনে হয়, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে আমার জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ দেখছেন আমি ছবর করি কি না, ইস্তিগফার করি কি না এবং আল্লাহর কাছে তাড়াতাড়ি সুস্থতার জন্য দু‘আ করি কি না। এটা মনে করে আমি ছবর করছি, ইস্তিগফার করছি, আর দু‘আ করছি, আল্লাহ যেন আমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন, আর আমি মাদরাসায় ফিরে যেতে পারি। এখন আমি আর কাঁদি না। রাতে চুপি চুপি কেঁদেছি। কেউ দেখেনি, কিন্তু আল্লাহ দেখেছেন। আল্লাহ তো আমার ছবরের ইমতিহান করছেন, এটা মনে করে আমি আর কাঁদি না। আল্লাহ তো জানেন, আল্লাহকে আমি কত ভালোবাসি! আল্লাহ তো জানেন, আমি সব কাজ শুধু আল্লাহর জন্য করি!শুক্রবার আমাদের হুযূর মাদরাসা থেকে জাওয়াল করেছেন। আমার খবর নিয়েছেন। তখন মাদরাসার জন্য আমার খুব কান্না পেলো, হুযূরদের জন্য খুব কান্না পেলো, সহপাঠীদের জন্য খুব কান্না পেলো। তবু আমি কাঁদলাম না। খুব কষ্ট করে কান্না থামিয়ে রাখলাম। আল্লাহ যে আমার ছবরের ইমতিহান করছেন! কয়েকদিন থেকে আমি বুঝতে পারছি, মাদরাসার প্রতি আমার অন্তরে গভীর টান সৃষ্টি হয়েছে। তাই আল্লাহর শোকর আদায় করলাম এবং বাসায়ও মাদরাসার পরিবেশ করার নিয়ত করলাম। আমি শুধু আল্লাহর জন্য এই কাজটা করবো, ইনশাআল্লাহ। হে মাদরাসাতুল মাদীনাহ, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আবার আমি তোমার কোলে ফিরে আসতে চাই।(শাহ মামনূনুর-রহমান, প্রথম বর্ষ)

মাহদী হাসান, তোমার চিঠি তো খুব সুন্দর! কলম-ঘড়ি তো ছিলো, কিন্তু আমি আমানতদার হলে কী হবে! আমার চারপাশে যারা ছিলো তাদের মধ্যে কোন একজনের পছন্দ হয়েছে, আর নিয়ে গিয়েছে! তবে জায়নামাযটি এখনো আছে। তুমি চাইলে আমার কামরায় এসে দেখে যেতে পারো। তুমি নিয়মিত লিখতে থাকো।মুহাম্মাদ আফফান,ঢাকা০০ তোমার লেখা পেয়েছি। ফুল তুমি খুব ভালোবাসো, আমিও বাসি। ফুলের সুবাস তোমাকে মুগ্ধ করে, আমাকেও করে। তুমি ফুলের মত সুন্দর হতে চাও, আমিও চাই। ফুলের প্রতি তুমি কৃতজ্ঞ, আমিও কৃতজ্ঞ। তোমার বাড়ীতে ছোট্ট একটি ফুলবাগান আছে, আমার বাড়ীতেও ছিলো।তাহলে তো তোমার সঙ্গে আমার এবং আমার সঙ্গে তোমার অনেক মিল! একটাই শুধু অমিল। তুমি হলে পূর্ব দিগন্তে উদিত সূর্য, আমি হলাম পশ্চিম দিগন্তে অস্তগামী সূর্য; তোমার জীবন শুরু, আমার জীবন প্রায় শেষ। আমি তোমার জন্য দু‘আ করি; তুমিও আমার জন্য দু‘আ করো।
বললেই হলো! তোমার নানার দেখি নাক আছে, ঘুমায় ডেকে ডেকে! তোমার নানার দেখি চোখ আছে, ঘুমুলে কিচ্ছু দেখে না! তোমার নানার দেখি মুখ আছে, খায় গপাগপ!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা