রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

কাশগর ও কায়রো

হনুমানের দেশ লঙ্কায়ও বৌদ্ধ নৃশংসতা!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

অহিংসাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুসমাজের নৃশংসতায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমজনগোষ্ঠীর জাতিগত নিধনযজ্ঞ, বলা চলে এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। হয়ত নাটকের পরবর্তী অঙ্কের দৃশ্যায়নের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে প্রত্যাবাসন সমঝোতাস্মারক বা চুক্তি সম্পন্ন করার মাধ্যমে। প্রত্যাবাসন মানে মিয়ানমার বাহিনী ও উগ্রবৌদ্ধদের নৃশংসতার মুখে যে দশলাখ বনি আদম প্রাণরক্ষার তাগিদে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়া বা ফিরিয়ে নেয়া। আমরা শুধু উৎকণ্ঠার সঙ্গে তাকিয়ে আছি নাটকের এ অঙ্কেরও পরিণতি দেখার জন্য!

***

একই ট্রাজেডি কি এবার শুরু হতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কায়? ২০১৫ সালের যে নির্বাচনে রাজা পাকসেসরকারের পতন ঘটেছিলো তাতে অন্যান্য অনুঘটকের সঙ্গে তামিল ও মুসলিম ভোটেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা ভোট দিয়েছিলো বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাকে। মুসলিম ভোটের সিঁড়ি বেয়েই, বলা চলে প্রেসিডেন্টের আসনে সমাসীন হতে পেরেছেন সিরিসেনা। তখন তার একটি প্রতিশ্রুতি ছিলো অন্যান্য ধর্মের লোকদের বঞ্চনার অবসান ঘটানো; আর এ জন্য প্রয়োজন হলো নতুন সংবিধান প্রণয়ন, কিংবা অন্তত বর্তমান সংবিধানের আমূল সংশোধন।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার সদিচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়েও বলা যায়, শ্রীলঙ্কায় মুসলিম চেতনা গুরুতরভাবে হোঁচট খেয়েছে। ইতিমধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুসমাজ শ্রীলঙ্কায় আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের উপর সহিংস হামলা চালিয়েছে। কিন্তু সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। মনে হচ্ছে, বৌদ্ধভিক্ষুদের সামনে এ সরকার একেবারে অসহায়। এখন মনে হয়, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা সংবিধান প্রণয়ন বা সংশোধনের পদক্ষেপ থেকেও পিছিয়ে আসবেন।

কারণ শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধদের শীর্ষ সংগঠন এ বিষয়ে জোরালো আপত্তি জানিয়ে বলেছে, ‘এ জন্য যত দূর যাওয়া প্রয়োজন তত দূর যাওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত।’

্রশ্রীলঙ্কায় সিংহলীরা বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। সুতরাং সেখানে জাতীয়তাবাদের উত্থানের মানেই হবে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের উত্থান! আর বৌদ্ধজাতীয়তাবাদ কী চিজ তার নমুনা তো আমরা এবং যদি চোখ-কান খোলা থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও প্রত্যক্ষ করেছে।

বৌদ্ধভিক্ষুদের এক কথা, বর্তমান সংবিধানে বৌদ্ধদের জন্য সাংবিধানিক সুরক্ষা ‘সর্বোচ্চ মর্যাদা’ এর হানি ঘটানো যাবে না কিছুতেই। অন্যরা ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার ভোগ করলেও  থাকতে হবে ‘সাইড লাইনে’ ¯্রফে অতিরিক্ত অংশ হিসাবে।

এরও বেশ কিছু আগে শ্রীলঙ্কার শীর্ষতম ভিক্ষু ঘোষণা করেছিলেন, দেশের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন বা সংশোধনের কোন প্রয়োজন নেই।

ধারণা করা হচ্ছিলো, নতুন সংবিধান প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করা হবে। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে এ বিষয়ে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সংবিধান সম্পর্কে বৌদ্ধভিক্ষুদের কথাই হচ্ছে শেষ কথা। প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনাও এখন বলতে শুরু করেছেন, বৌদ্ধভিক্ষুদের মতামতকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ তারাই জনগণের ধর্মীয় প্রতিনিধি। সুতরাং বৌদ্ধভিক্ষুরা অনুমোদন না করলে তিনি সংবিধানে হাত দেবেন না, দিতে পারেন না। কেউ অবশ্য প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করেনি যে, ধর্মীয় প্রতিনিধি রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অধিকার কীভাবে পেতে পারে? *

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা