মুখে গণতন্ত্র, আচরণে শক্তিতন্ত্র!
১৯৬৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দীরা গান্ধীকে জয়প্রকাশ নারায়ণ যে পত্র লেখেন তাতে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করে কাশ্মীরকে শাসন করি এবং নিয়ন্ত্রণে রাখি। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলি, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে কাশ্মীরে হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত নির্যাতন ও নিপীড়নের খবর আমাদের ঘোষিত নীতিকে মিথ্যা প্রমাণ করে।
আমার মতে, পাকিস্তান কাশ্মীরের দখল নিতে চায়, এটা সমস্যার মূল কেন্দ্র নয়। আসল সমস্যা রয়ে গিয়েছে ভারতের অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে, যার বিরুদ্ধে কাশ্মীরে সুগভীর ও ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ...
জয়প্রকাশ নারায়ণ শ্রীমতী ইন্দীরা গান্ধীকে যা বলেছেন, মূলত এটাই আগের এবং পরের হিন্দুভারতের বড় বড় প্রায় সমস্ত নেতার নীতি ও আচরণ। এর শুরু হয়েছে মহাত্মা নামে পরিচিত ও নন্দিত স্বয়ং করমচাঁদ গান্ধীর জীবন থেকে। নেহরু ও প্যাটেল আসলে এ ধারাবাহিকতাই রক্ষা করে চলেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, আজ বিজেপির হাতে সেটাই উগ্রতম রূপ ধারণ করেছে। অহিংসার বাণী আওড়াতে আওড়াতে যিনি মুখে ফেনা তুলতেন, গান্ধী, তার একটা মাত্র বক্তব্য এখানে তুলে ধরি। করদ রাজ্যগুলোর শাসকদের হুমকি দিয়ে গান্ধী বলেছিলেন, যারা ভারত ইউনিয়নে যোগ দিবে না, তারা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে ধরে নেয়া হবে!...
কী চমৎকার অহিংসা! এরপর ভারত ইউনিয়নে যোগ দেবে না এমন বুকের পাটা....!
গণহত্যার পর কাশ্মীরীদের
গণকবরে দাফন করা হচ্ছে!
এক সাংবাদিক সম্মেলনে আযাদ কাশ্মীরের প্রেসিডেন্ট সরদার মাসঊদ খান অভিযোগ করে বলেছেন, ‘৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার অনুগত বাহিনী কাশ্মীরউপত্যকায় রীতিমত গণহত্যা শুরু করেছে।
তল্লাসির নামে রাতের অন্ধকারে যুবকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যারা বর্তমানে নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছে।তিনি বলেন, সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আমি বলছি যে, জম্মু-কাশ্মীরে গণহত্যা শুরু হয়েছে। নারীদের উপর কলঙ্কজনক যুলুম করা হচ্ছে।
নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।হাজার হাজার লাশ অচিহ্নিত স্থানে মাটিচাপা দেয়া হচ্ছে বলেও আজাদ কাশ্মীরের প্রেসিডেন্ট দাবী করেন।আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাশ্মীরের সঠিক চিত্র আসছে না, অভিযোগ করে তিনি বলেন, উপত্যকায় কী ঘটছে, তার একতরফা বিবরণই শুধু পাওয়া যাচ্ছে। কারণ ভারত শুধু ঐসব রিপোর্টই পাঠানোর অনুমতি দিচ্ছে যা তাদের দেয়া তথ্য অনুসরণ করে তৈরী করা হচ্ছে।
কাশ্মীরপরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ-পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এর মধ্যে হুমকি দিয়ে বলেছেন, এতদিন ভারত যে নীতি অনুসরণ করেছে তা হলো, ভারত কখনো আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না।
কিন্তু এ নীতি অব্যাহত নাও থাকতে পারে...এর পরপর পাল্টা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘হিন্দুত্ববাদী চরমপন্থী মোদি সরকারের হাতে পরমাণু অস্ত্র নিরাপদ নয়। আমি এ বিষয়ে জরুরিভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে যে কোন কিছুই ঘটতে পারে এবং তার প্রভাব থেকে বিশসম্প্রদায়ও মুক্ত থাকতে পারবে না।...
নয়াদিল্লীভিত্তিক কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ, রাতে তল্লাশির নামে ঘরে ঘরে নারীদের উপর যৌনহয়রানির ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেই চলেছে। তাছাড়া শত শত কিশোর ও যুবককে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনেও এ তথ্য উঠে আসছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, কাশ্মীরে পুরোপুরিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। আমি বিজেপি সরকারের এ সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ কিছুতেই মানবো না।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মুহম্মদ কোরাইশী এবং আন্তবাহিনী গণসংযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেছেন, ‘অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য পাকিস্তান শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক সহকারী ড. ফিরদাউস আশিক কারবালা দিবসের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কারবালার হৃদয়বিদারক ইতিহাসের কথা আমরা জানি, কিন্তু জানি না, আধুনিক বিশের নতুন কারবালা কাশ্মীরে এখন কী ঘটছে। তিনি আরো বলেন, কারবালার মত কাশ্মীরেও সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় অবধারিত। *
ভারত ছেড়ে পালাতে পারে
লাখ লাখ মুসলিম,ইমরান
১৮ই ডিসেম্বর, বুধবার
গতকাল মঙ্গলবার জেনেভায় বিশ শরণার্থী ফোরামে ভাষণ দিতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ভারতের নাগরিকত্ব আইন এবং কাশ্মীরপরিস্থিতির কারণে লাখ লাখ মুসলিম ভারত ছেড়ে পালাতে পারে। এভাবে নতুন একটি ‘শরণার্থী সঙ্কট’ তৈরী হতে পারে, আর তা পিছনের সব সঙ্কটকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইমরান বিশকে সতর্ক করে সম্প্রতি এই টুইটে বলেছিলেন, ভারত মোদির নেতৃত্বে হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদী কর্মসূচী নিয়ে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীর অবৈধ-ভাবে অধিগ্রহণ থেকে তা শুরু হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) দ্বারা তা আরো অগ্রসর হয়েছে। তারপর আটককেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, আর এখন নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন করার মধ্য দিয়ে তা অব্যাহত রয়েছে।
জেনেভা ফোরামে ইমরান খান আরো বলেছেন, আমরা শুধু শরণার্থীসঙ্কট নিয়েই নয়, বরং এর পরিণতিতে দু’টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নিয়েও শঙ্কিত।জেনেভা ফোরামে ভাষণের এক পর্যায়ে পাকপ্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনদিক থেকেই বর্তমানে পাকিস্তান আরো শরণার্থীর জন্য জায়গা করে দেয়ার মত অবস্থায় নেই। সুতরাং বিশকে এখনই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে।
অন্য এক খবরে জানা যায়, বাইরাইন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর এবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেও সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননায় ভূষিত করেছে। গত ১৬ই ডিসেম্বর বাহরাইনের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে পাকপ্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।
০০ সত্যি আমরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছি জাতিসঙ্ঘে এমন জা¦লাময়ী ও ‘গায়রতপূর্ণ’ ভাষণ যিনি দিতে পারেন, তার মনে কেন এ প্রশ্ন এলো না যে, গুজরাট ও কাশ্মীরে মুসলিম নিধনের হোতা নরেন্দ্রমোদিকে বাহরাইন যে সম্মাননা দিয়েছে সেটা বাহরাইনের বাদশাহর কাছ থেকে কাশ্মীরের ‘প্রতিনিধি’ কীভাবে গ্রহণ করতে পারে?!
কাশ্মীরী নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করো
শিখ নেতা গৈনি হারপিট সিং
ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ‘বিজয়োল্লাসে উন্মত্ত’ নেতা ও কর্মীরা যখন কাশ্মীরী তরুণীদের সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্যের সায়লাব বইয়ে দিয়েছেন তখন শিখনেতৃবৃন্দ বলেছেন, কাশ্মীরী নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য ধর্মীয় দায়িত্ব হিসাবে আমাদের সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
শিখ অকাল তখতের জাঠেদার গৈনি হারপিট সিং এক বিবৃতিতে বলেন, বিজেপির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাশ্মীরী তরুণীদের সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করছেন, আর ভারতীয় তরুণদের যেভাবে উস্কে দিচ্ছেন তা শুধু লজ্জাজনকই নয়, ক্ষমার অযোগ্য।
তিনি আরো বলেন, সবার মনে রাখা উচিত, ভারতের যে কোন নারীর মত কাশ্মীরী নারীও কারো মা, কারো মেয়ে এবং কারো বোন।
উল্লেখ্য, শিখদের সর্বোচ্চ পার্থিব আসন হচ্ছে অকাল তখত। আর জাঠেদার হচ্ছেন অকাল তখতের মুখপাত্র।
প্রসঙ্গত, দিল্লীতে বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের এক হৃদয়বান ব্যক্তি কয়েকদিন আগে মহারাষ্ট্রে আটকা পড়া চৌত্রিশজন কাশ্মীরী নারীকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে কাশ্মীরে নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এজন্য প্রায় পাঁচলাখটাকার প্রয়োজন ছিলো, যা তিনি সাহায্য আকারে বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন। শিখকর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। *