আমার সালাম নাও। আল্লাহর শোকর, অল্প দিনের মধ্যেই দ্বিতীয়বার দেখা হলো! তোমাদের সঙ্গে দেখা হলে বড় ভালো লাগে! মনে শান্তি আসে। কষ্টগুলো সব কীভাবে যেন দূর হয়ে যায়! যতক্ষণ তোমাদের সঙ্গে থাকি, তোমাদের কথা ভাবি, আর তোমাদের জন্য কিছু লিখতে থাকি, মনের ভিতরে কে যেন শীতল একটা পরশ বুলিয়ে দেয়। নিজেকে তখন মনে হয়, কত যেন সুখী! ইচ্ছে হয় সারাটা দিন তোমাদের সঙ্গে থাকি, তোমাদের কথা ভাবি, আর তোমাদের জন্য কিছু না কিছু লিখি!! বড়দের জন্য দশপাতা লেখা, আর তোমাদের জন্য একপাতা লেখা, আমার কাছে একরকম মনে হয়। বরং তোমাদের জন্য লেখা একটি পাতার মূল্য অনেক বেশী।
এভাবে যদি অল্প দিন পরপর তোমাদের সঙ্গে দেখা হয় তাহলে তো খুব ভালো হয়! তোমরা খুশী হও, আমারও আনন্দ হয়। দু‘আ করো, সেটাই যেন হয়। তোমরা হলে মাসুম বাচ্চা, তোমরা দু‘আ করলে, মেহেরবান আল্লাহ সেটাই করবেন, সেটাই হবে ইনশাআল্লাহ।
তোমাদের সঙ্গে কথা তো অনেক, কিন্তু জায়গা হলো অল্প একটু! দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যায়। তো এসো, জরুরি কথাটা এখনই সেরে নিই।
তোমাদের কিন্তু এখন থেকেই ভালো করে লেখা শিখতে হবে। শৈশব থেকে যদি লেখা শিখতে শুরু করো বড় হতে হতে দেখবে, বড় লেখক হয়ে গেছো। তখন তোমার লেখা দ্বারা দ্বীনের অনেক খিদমত হবে, মানুষের অনেক উপকার হবে।
তো এই যে তোমাদের ছোটদের জন্য কয়েকটি পাতার জলসা, তোমরা যদি এই পাতাগুলোর জন্য লেখা না পাঠাও, আমাকেই লিখে লিখে সব জায়গা ভরাট করতে হয়। তোমাদের শুধু পড়ার ফায়দা হয়, লেখা শেখার যে ফায়দা সেটা তো হয় না। তো এখন থেকে আমি তোমাদের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। যেমনই হোক তোমাদের কচি হাতের কাঁচা লেখা আমার কাছে পাঠাও
***
তোমরা নিশ্চয় জানো, বড়দের কাছে নিশ্চয় শুনেছো, আমাদের প্রথম কেবলা আলআকছা নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তোমরা মাছুম বাচ্চা; তোমাদের দু‘আ কবুল হবে। দু‘আ করো, আল্লাহ যেন উম্মাহকে এবং উম্মাহর ইয্যত আবরুকে রক্ষা করেন। আল্লাহ যেন আলআকছাকে উদ্ধার করার তাওফীক দান করেন, আমীন।
জীবন কত সুন্দর!!
আজ দু’দিন হলো, একটি ছেলে আমাদের বাড়ীতে এসেছে। আব্বু নিয়ে এসেছেন। এতীম ছেলে। মায়ের মৃত্যু হয়েছে ওর জন্মের সময়। তাই মাকে দেখেনি। মায়ের মমতা কী জিনিস বুঝতেও পারেনি। বাবার ইনতিকাল হয়েছে কয়েক দিন হলো! এখন পৃথিবীতে ও একেবারে একা! আপন বলে ওর কেউ নেই।
কিন্তু কী আশ্চর্য! ছেলেটি বলে, আল্লাহর রহমতে আমি অনেক ভালো অছি। মাথার উপর ছাদ আছে। ক্ষুধার সময় দু’লোকমা ভাত আছে! আমার লেখাপড়া করার সুযোগ আছে। কিন্তু আরাকানে, ফিলিস্তীনে!!
একটু যদি চেষ্টা করি, আমার জীবন হতে পারে অনেক সুন্দর। বড় হয়ে আমি, আমার মত এতীম যারা, তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করবো, ইনশাআল্লাহ!
কে তিনি?
একটি বীজ হাতে নিলাম। মাটিতে বপন করবো। বৃষ্টি হবে, মাটি সিক্ত হবে। একদিন, দু’দিন, এভাবে কয়েকদিন পর মাটি ফুঁড়ে বীজ থেকে অঙ্কুর বের হবে, চারা হবে, ডালপালা হবে, সবুজ পাতা হবে। শীতল ছায়া হবে। অনেক ফুল হবে, ফল হবে।
এভাবেই তো হয়। এভাবেই তো হতে দেখেছি সবসময়!! কখনো ভাবিনি, কীভাবে হয়? কার হুকুমে, কার কুদরতে হয়?
আজ মনে হলো, বীজ যেন কথা বলতে পারে। বীজেরও যেন আছে কথা বলার ভাষা! আমার হাতের বীজটি যেন আমাকে বলতে চাইলো, একটু কী ভেবেছো, মাটির নীচে কীভাবে আমার প্রতিপালন হয়? কে আমার প্রতিপালক?! কে তিনি, যার আদেশে মাটি থেকে আমার মধ্যে শক্তি আসে, প্রাণ আসে? তিনি আল্লাহ! আমাকে বপন করো, আর আল্লøাহর শোকর কর।
একটি চিঠি
রহীমা বিনতে আকরাম -এর চিঠি।)
বাগেজান্নাত বালিকা মাদরাসা, হবিগঞ্জ
০ হুযুর! আমাদের বাড়ীতে আজ অনেক আনন্দ। এমন আনন্দ আমি জীবনে দেখিনি। আম্মু বলেন, তোমার জীবনটা তো অনেক ছোট, তাই এত আনন্দ দেখতে পাওনি। তুমি যখন দুনিয়াতে ছিলে না, থাকলেও খুব ছোট্ট ছিলে তখন আমাদের ঘরে পুষ্প আসতো। অনেক দিন পরপর হলেও আসতো। যখন আসতো তখন আমাদের এমনই আনন্দ হতো! মনে হতো আজ আমাদের ঈদ!!
এই দেখো দশবছর আগের পুষ্প। এই যে দেখো আমার লেখা!
হুযূর, পুষ্পে আমার আম্মুর লেখা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। খুব খুশী লেগেছে। আম্মু তো তখন আম্মু ছিলেন না, তাই লিখতে পারতেন। আম্মু তো এখন আম্মু! দিন রাত তার কত কাজ! আমার জন্য তার কত কষ্ট! সবার জন্য তার কত ব্যস্ততা! তাই আম্মু এখন আর লিখতে পারেন না। আম্মু বলেন, তুমি তো আমার ছোট্টমনি, চাঁদমণি!! এখন থেকে তাই আমার লেখা তুমি লিখবে। তোমার লেখার মধ্যে আমি আবার ছোট্ট মেয়েটি হয়ে যাবো ..
হুযূর, আরাকানের এবং ফিলিস্তীনের ছোট ছোট ছেলে মেয়ের জন্য আমার অনেক কষ্ট হয়, অনেক কান্না পায় ....
ভালো লাগে এবং মনে পড়ে
আজ আব্বু আমাদের শুনালেন মহান মুজাহিদ গাজী ছালাহুদ্দীনের জীবনের অনেক ঘটনা। তার অন্তরে জিহাদের এবং শাহাদাতের কত আকাক্সক্ষা ছিলো! তিনি যখন মিশরের শাসক হলেন তখন মুসলমানদের প্রথম কিবলা আলআকছা ...। আব্বুকে জিজ্ঞাসা করলাম প্রথম কেবলা মানে কী, আব্বু?
আব্বু বুঝিয়ে বললেন, এখন যে আমরা কা‘বা শরীফের দিকে দাঁড়িয়ে নামায পড়ি, ইসলামের শুরুর সময় নবীজী ও ছাহাবা কেরাম আল্লাহর হুকুমে বাইতুল মাকদিসের মসজিদুল আকছার দিকে দাঁড়িয়ে নামায পড়তেন। প্রায় ষোল মাস এ হুকুম ছিলো। তারপর কা‘বা শরীফের দিকে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার হুকুম হয়েছে। তো ঐ মসজিদুল আকছা হচ্ছে আমাদের প্রথম কেবলা। সেই কিবলা খৃস্টানদের দখলে ছিলো। গাজী ছালাহুদ্দীন প্রতিজ্ঞা করলেন, জীবন দিয়ে হলেও মসজিদুল আকছা উদ্ধার করার।
আব্বু আমাদের মসজিদুল আকছার ছবি দেখিয়ে বললেন, এই যে দেখো, এটা হলো মসজিদুল আকছা।
গাজী ছালাহুদ্দীন এবং মুসলিম মুজাহিদীন ঐ শহরটি অবরোধ করলেন যেখানে রয়েছে মসজিদুল আকছা। ঐ শহর তখন খৃস্টানদের দখলে।
ঐ শহরের নাম কি আব্বু?
ঐ শহরের নাম হলো বাইতুল মাকদিস, আরেক নাম হলো জেরুসালেম।
অনেক লড়াই হলো। আল্লাহ তা‘আলা গাজী ছালাহুদ্দীনকে বিজয় দান করলেন। মুসজিদুল আকছা খৃস্টানদের দখল থেকে মুক্ত হলো ...
এখন আবার আমাদের প্রিয় আল-আকছা ইহুদীরা দখল করে রেখেছে।... আব্বুর কথা শুনতে আমার ভালো লাগলো,আর মনে পড়লো মহান মুজাহিদ গাীজ ছালাহুদ্দীনের কথা। বড় হয়ে আমি হতে চাই তাঁর মত!