গত ৬ই ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আলকুদস (জেরুসালেম)কে ইসরাইলের রাজধানীরূপে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ ধারণ করে পুরো ফিলিস্তীন। এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ফিলিস্তীনী কিশোরী আহেদ তামীমী-এর পরিবারও বিক্ষোভে শামিল হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তামীমীর পরিবারের এক সদস্যকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলী সেনারা।
ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। তামীমীর পরিবার যখন শোকে মুহ্যমান, তখন সম্পূর্ণ উসকানি -মূলক উদ্দেশ্যে দু’জন ইসরাইলী সেনা তামীমীদের বাড়ীর দরজা পার হয়ে ভিতরে অবস্থান গ্রহণ করে। সেনারা বাড়ীর দিকে লক্ষ্য করে নিজেদের মধ্যে হাস্যপরিহাস করতে থাকে। দৃশ্যটি দেখে আহেদ তামীমীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। তিনি ধীর পদক্ষেপে ইসরাইলী সেনাদের দিকে এগিয়ে যান। ঝড়ের পূর্বমুহূর্তের শান্তভাব ধারণ করে তিনি ইসরাইলী সেনাদের বাড়ীর সীমানা ত্যাগ করতে বলেন। ইসরাইলী সেনারা তার কথায় কর্ণপাত না করে একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হাস্যপরিহাসে মেতে থাকে। আহেদ তামীমী আর কিছু না বলে এক ইসরাইলী সেনার গালে সজোরে চপেটাঘাত করেন। এ সময় তার মধ্যে কোন ভয়ভীতির চিহ্নমাত্র ছিলো না। তার পুরো মুখম-লে ছিলো শুধু ক্রোধ ও ঘৃণার প্রকাশ।
ঘটনার আকস্মিকতায় ইসরাইলী সেনারাও স্তব্ধ হয়ে যায়।
এ দৃশ্যটি আড়াল থেকে কেউ একজন ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ভিডিওটি খুব দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। ইহুদিবাদী সংবাদ মাধ্যমগুলো এই ভিডিওটিকে ভিত্তি করে ফিলিস্তীনী কিশোরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইসরাইলী কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানায়।
ঘটনার দু’দিন পর ইসরাইলী সেনারা ফিলিস্তীনী কিশোরী আহেদ তামীমীদের বাড়িতে মধ্যরাতে ঝটিকা অভিযান চালায়। এসময় সেনারা এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে
রাখে। পরিবারের সদস্যদের তারা শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করেছে বলে জানা যায়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ইসরাইলি সেনারা আহেদ তামীমী এবং তার খালাতো বোন নূরনাজি আল-তামীমীকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে ইসরাইলি সেনাদের উপর হামলার অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে দশদিনের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। আর ইসরাইলের শিক্ষামন্ত্রী আর্মি রেডিওতে এক ঘোষণায় বলেছেন, ‘অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে জড়িত দুই ফিলিস্তীনী কিশোরী জেলেই পচে মরবে।
না, হে দখলদার সন্ত্রাসী, হে ইহুদিবাদী হায়েনা! ওরা ফিলিস্তীনের মুক্তির জন্য লড়াই করছে, ওরা কখনো মরবে না। জেলের বাইরেও না, ভিতরেও না। ওরা হবে অমর। ফিলিস্তীনের পবিত্র ভূমি চিরকাল ওদের শহিদী জানাযার আমানত আপন বুকে ধারণ করে রাখবে। মরবে তোমরা, পচবে তোমরা, প্রকৃতির অভিশাপ বহন করে, ফিলিস্তীনের পবিত্র ভূমির ঘৃণা বহন করে, সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের ধিক্কার কুড়িয়ে।
এই দেখো না, লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তীনী কীভাবে প্রতিরোধের প্রতীকরূপে, সাহস ও নির্ভীকতার প্রতীকরূপে বরণ করে নিয়েছে তাকে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটু চোখ বুলিয়ে দেখো, মাত্র ষোলবছরের ফিলিস্তীনী কিশোরী আহেদ তামীমী সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের অভিনন্দনে কেমন সিক্ত হচ্ছে!
০০ আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে আমি অবশ্য বলবো, এটা বিক্ষোভ প্রতিবাদের সঠিক পদ্ধতি নয়। এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে অযথা প্রাণের অপচয় হয়। গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। শক্তি অর্জনের চেষ্টায় আমাদের আত্মনিয়োগ করা উচিত, সর্বপ্রকার শক্তি। শক্তিক্ষয় করে আমরা লাভবান হবো না, শত্রুই লাভবান হবে।