একটি নদীকে বলা হয় (বা বলা হতো) চীনের দুঃখ। সব দেখে শুনে দীর্ঘ ও তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে আজ বলতেই হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহর দুঃখ হচ্ছে জাতিসঙ্ঘ। কারণ এ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘ দ্বারা মুসলিম উম্মাহর দুর্ভোগই শুধু বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তো রীতিমত বিতর্ক শুরু হয়েছে, জাতিসঙ্ঘ আসলেই সক্ষম কোন প্রতিষ্ঠান কি না!অনেকে বলেন, জাতিসঙ্ঘকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ জাতিসঙ্ঘ আছে বলেই আফ্রিকার গৃহযুদ্ধকবলিত দেশগুলোতে জাতিগত সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। জাতিসঙ্ঘ আছে বলেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহাধ্বংসযজ্ঞ হতে এই গ্রহটি এখনো নিরাপদ রয়েছে। কিছুটা সত্যতা অবশ্যই আছে এ বক্তব্যে।অনেকে বলেন, জাতিসঙ্ঘ একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান। এর কোন ক্ষমতাই নেই। জাতিসঙ্ঘ এখন বৃহৎ শক্তিবর্গের ক্রীড়নক। এ বক্তব্যেরও কিছু সত্যতা রয়েছে। তবে দু’টো সত্যই প্রান্তিক। মাঝখানের সত্যটি এই যে, যখন হিন্দু-ইহুদি-খৃস্টান স্বার্থের প্রশ্ন আসে, জাতিসঙ্ঘ তখন সক্ষম, শক্তিশালী ও গতিশীল একটি প্রতিষ্ঠান। তার প্রতিটি পদক্ষেপে তখন দেখা যায় খরগোশের ক্ষিপ্রতা। উদাহরণ হিসাবে আসতে পারে পূর্বতিমূর এবং দক্ষিণ সুদানের নাম।পক্ষান্তরে যখন সামনে আসে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন বিষয় তখন জাতিসঙ্ঘ হয়ে পড়ে একটি অক্ষম প্রতিষ্ঠান, যার কাজকর্ম চলে কচ্ছপের গতিতে। কাশ্মীর ও ফিলিস্তীনের নাম উল্লেখ করাই কি যথেষ্ট নয়?!হাঁ, কসোভা ও বসোনিয়ার নামটাও স্মরণ করিয়ে দেয়া যায়। ওখানে সার্ববাহিনীর হাতে ভয়ঙ্কর গণহত্যা সঙ্ঘটিত হলেও জাতিসঙ্ঘ কিছুই করতে পারেনি, বা করেনি। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তাবাহিনীর সেল্টারে থাকা বসোনিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে সার্বপশুরা ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করেছিলো। জাতিসঙ্ঘ শুধু বলেছিলো, ‘স্যরি’!প্রশ্ন হলো মুসলিম উম্মাহ কি চিরকাল হিন্দু-ইহুদি-খৃস্টান প্রভাবিত জাতিসঙ্ঘের করুণার উপরই নির্ভরশীল থাকবে, না নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করবে। উম্মাহ যদি চায় মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকতে তাহলে আজ তাকে পারস্পরিক বিবাদ ভুলে গিয়ে গড়ে তুলতে হবে সিসাঢালা প্রাচীরের ঐক্য। মুসলিম জাতি-সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা আজ সময়ের দাবী। তখন আমরা নিজেরাই নিতে পারবো নিজেদের সিদ্ধান্ত। তখন অন্যের সিদ্ধান্ত আমাদের উপর কার্যকর হবে না, বরং আমাদের ‘ন্যায় সিদ্ধান্ত’ কার্যকর হবে অন্যের উপর।মনে হচ্ছে অবাস্তব স্বপ্ন! শহীদ বাদশাহ ফায়ছাল আজ বেঁচে থাকলে হয়ত এতদিন ... কিংবা Ñ চশমে বদ দূরÑ আজকের রাজাব তাইয়েব এরদোগান যদি আর কিছু দিন ‘সুস্থসালামত’ বেঁচে থাকেন তাহলে হয়ত উম্মাহর এ স্বপ্ন ...অবাস্তব হবে কেন?! কী নেই মুসলিম উম্মাহর হাতে, ঐক্য ছাড়া?! আর ঐক্য কেন সম্ভব হবে না, যদি প্রতিটি বিষয়ে আমরা কোরআনের নির্দেশ অনুসরণ করি এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিঃশর্ত আনুগত্য করি?!যিল্লতি, লাঞ্ছনা তো আর কম হলো না। দুর্গতি ও দুর্দশারও তো কোন শেষ থাকলো না। আর কত?! একবার অন্তত দেখি না কোরআনের কাছে ফিরে এসে! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য গ্রহণ করে!! আমাদের তো বিশ্বাস, শুধু যদি উদ্যোগটুকুই গ্রহণ করতে পারি, বিশ্বসভায় মুসলিম উম্মাহর ‘ওজন’ ইনশাআল্লাহ বেড়ে যাবে বহু গুণ!!