মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮)

কাশগর ও কায়রো

কাশ্মীরে ভারত জয়ী হতে পারবে না

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

গত সেপ্টেম্বরে লন্ডনে Democracy now-এর প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ভারতের সাহসী প্রতিবাদী কণ্ঠ অরুন্ধতী রায় বলেছেন, আমেরিকা জয় পায়নি ভিয়েতনামে, জয় পাচ্ছে না আফগানিস্তানে, ইরাকে। আমার মনে হয় এখান থেকে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের শিক্ষা নেয়ার বিষয় রয়েছে। বিশ্বের সবচে’ ক্ষমতাধর দেশ যেখানে বিদেশের মাটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েও জয়ী হতে পারছে না, সেখানে ভারত নিজের দেশে কাশ্মীরে নিজের জনগণের বিরুদ্ধে কীভাবে জয়ী হতে পারে? তাই ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমার সতর্কবাণী, কাশ্মীরে আপনারা কখনো জয়ী হতে পারবেন না।  

অরুন্ধতী রায় আরো বলেন, ওবামা বড় অপরাধী, কারণ আফগানিস্তানের যুদ্ধকে সম্প্রসারিত করে তিনি নিয়ে গেছেন পাকিস্তানে। সেখানে এখন শুরু হতে যাচ্ছে গৃহযুদ্ধ। আমি বলতে চাই, ওবামা ধ্বংস করেছেন পাকিস্তানকে, এখন তিনি ধ্বংস করতে চাচ্ছেন ভারতকে, যদি না ভারত তার মেরুদন্ডের শক্তি দেখাতে পারে। কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতকে অবশ্যই বাস্তব- বাদী হতে হবে। যুদ্ধের পথ ছেড়ে তাকে সমঝোতার পথে আসতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, আমেরিকা কোন যুদ্ধেই জয়ী হতে পারেনি, এমনকি যদি সে ইরানে যুদ্ধ শুরু করে, সেখানেও জয়ী হতে পারবে না। তো আমেরিকা যেখানে জাতিসঙ্ঘের ঘাড়ে সওয়ার হয়েও তেলস্বার্থের যুদ্ধে জয়ী হতে পারছে না সেখানে ভারত শুধু নিজের দেশের সম্পদ ও সেনাবাহিনী ব্যবহার করে কীভাবে জয়ী হতে পারে?

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর এক প্রশ্নের উত্তরে অরুন্ধতী রায় বলেন, আরো আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ভারত শুধু কাশ্মীরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছে না, বরং যুদ্ধ চলছে আরো বহু স্থানে। ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে যেমন পাশবিক নির্যাতন তথা হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন চালাচ্ছে তেমনি উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতেও একই ঘটনা ঘটছে। সেখানে দু’লাখের মত আধাসামরিক বাহিনী উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু না কাশ্মীরে, না উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে, কোথাও যুদ্ধজয়ের আলামত দেখা যাচ্ছে না। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস, ভারত যদি স্বাধীনতাকামীদের অস্ত্রের কাছে পরাজিত নাও হয়, তাকে আরো ভয়ঙ্কর একটি শত্রুর হাতে পরাজিত হতে হবে, যার নাম দারিদ্র্য।

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার কাছে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবৃদ্ধির দেশ হিসাবে পরিচিত, কিন্তু বাস্তব চিত্র হচ্ছে, আফ্রিকার সবচে’ গরীব দেশগুলোর গরীব মানুষের সংখ্যার চেয়ে ভারতে গরীবের সংখ্যা বেশী। ৮৩ কোটি ভারতীয়কে দিনে বিশ রুপি আয়ের উপর বেঁচে থাকতে হয়। সুতরাং লড়াইটা এখানেই এবং এ ভয়ঙ্কর শত্রুই ভারতকে গ্রাস করবে।

অরুন্ধতী রায় বলেন, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে শুরুতে সমস্যাটি তত জটিল ছিলো না। সেখানে দাবী ছিলো শুধু সাংবিধানিক অধিকারের। সরকারের কর্তব্য ছিলো সে অধিকার মেনে নেয়া। অথবা সরকার যদি সংবিধান মানতে না চায় তাহলে সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে! সংবিধানের ভূমিকায় বলা হয়েছে, We are secular democratic socialistic republic  তো সংবিধান পরিবর্তন করে সরকার লিখতে পারে, We are  a corporate, hindu satellite state

 সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হচ্ছে, কারণ এক সেমিনারে তিনি ঘোষণা করেছেন, কাশ্মীর কখনো ভারতের অংশ ছিলো না। এটা ইতিহাসের সত্য।

গণতান্ত্রিক ভারত তার দেশের এক নাগরিকের বিরুদ্ধে যুক্তির ভাষায় কথা বলতেও এখন ভয় পায়!

অরুন্ধতী রায় মামলার খবর শুনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লিখেছেন, আমি যা বলেছি, নেহরু বহু আগে ভারতের বিধানসভায় এবং জাতিসঙ্ঘে তা বলেছেন, সুতরাং আমার বিরুদ্ধে মামলা হলে তার বিরুদ্ধেও মরণোত্তর মামলা হতে পারে, হওয়া উচিত। ১৯৪৭ সালের তেসরা নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বেতার ভাষণে পন্ডিতজী বলেছেন, আমরা ঘোষণা করেছি যে, কাশ্মীরের ভাগ্য চূড়ান্তভাবে সেখানকার জনগণই নির্ধারণ করবে। শুধু কাশ্মীরীদের কাছে নয়, সারা বিশ্বের কাছেই আমার এ অঙ্গীকার। তিনি আরো বলেছেন, আমাদের একথা মনে রাখতে হবে যে, কাশ্মীর পাকিস্তান বা ভারত কারো সম্পত্তি নয়, এর মালিক কাশ্মীরের জনগণ। তারা যদি আমাদের চলে যেতে বলে, আমরা নির্দ্বিধায় চলে...

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা