পূর্বজেরুযালিমে ইহুদিদের নতুন বসতি স'াপন প্রশ্নে অনড় ইসরাইল সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সব অনুরোধ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরাইলের নীতি ওয়াশিংটনে তৈরী হয় না। প্রতিউত্তরে ইসরাইলকে ‘মৃদু তিরস্কার’ করা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কিছুই করার ছিলো না। কিন' ইরান ও সিরিয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র স্বমূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করেছে। ওয়াশিংটনে এক ইহুদিসমাবেশে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা হচ্ছে মার্কিন প্রতিশ্রুতি। সুতরাং ইসরাইলকে হুমকি দেয়ার পরিণতি কী হতে পারে তা ইরান ও সিরিয়াকে অনুধাবন করতে হবে। এমন চরম হুঁশিয়ারির ভিত্তি হলো ভিত্তিহীন একটি পশ্চিমা গোয়েন্দা খবর যে, ইরান ও সিরিয়া হিযবুল্লাহর কাছে বিপুল পরিমাণে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং হিযবুল্লাহর কাছে এখন এত পরিমাণ স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র আছে যা কোন কোন রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর কাছেও নেই। ইরান, সিরিয়া, লেবান ও হিযবুল্লাহ এ অভিযোগ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অস্বীকার করেছে। কিন' যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত মনে করে, কোন মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ উত্থাপন করাই অভিযোগের প্রামাণ্যতার জন্য যথেষ্ট। ইরাক আগ্রাসনের সময় এমনই ঘটেছিলো। সাদ্দাম যতই বলেছেন, তার কাছে জীবাণু অস্ত্র নেই, তদুপরি ইরাকের সার্বভৌমৌত্ব ও জাতীয় মর্যাদা পদদলিত করে নিজেদের খেয়ালখুশি মত তদন- চালিয়েও জীবাণু অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি, তারপরো ইরাকে আগ্রাসন চালানো হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ ইরাকী শিশু-নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, একই কৌশলে একই পাঁয়তারা এখন শুরু হতে যাচ্ছে সিরিয়ার বিরুদ্ধেও। ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ‘হোসেন’ ওবামা সিরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধের আরো চরম অবরোধ আরোপের প্রস'তি প্রায় সম্পন্ন করে আনা হয়েছে। ইরানের ক্ষেত্রেও বহু কথিত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরীর অভিযোগের পাশাপাশি সমপ্রতি এই অভিযোগটি প্রাধান্যে আনা হয়েছে। ইরানী প্রেসিডেন্ট মাহমূদ আহমাদি নেজাদ এখন নিউইয়র্কে রয়েছেন। জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে এখন পরমাণু অস্ত্র বিস-ার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-বিষয়ক জাতিসঙ্ঘসম্মেলন চলছে। সম্মেলনে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র তীব্র বাকযুদ্ধ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আহমাদি নেজাদ তীব্র আক্রমণাত্মক ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচানা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মত যে সব দেশ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেয় তাদেরকে শায়েস-া করার লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘের কাজ করা উচিত। আহমাদি নেজাদের আক্রমণাত্মক ভাষণের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো সম্মেলনকক্ষ ত্যাগ করেছে। পাল্টা জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন বলেন, ইরানী প্রেসিডেন্টের বক্তব্য যুক্তিহীন ও ভিত্তিহীন। হিলারী অবশ্য কোন তথ্য ও যুক্তি উপস'াপন করেননি, শুধু দাবী করেছেন। কিন' প্রশ্ন হলো, হিলারী কীভাবে অস্বীকার করবেন যে, পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র পারমাণবিক অপরাধী দেশ, যে পারমাণবিক বোমা ফেলে কয়েক লক্ষ নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে এবং এখনো পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের সম্ভাবনা নাকচ করে না? ইসরাইলের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের বিষয়টি পাশ কেটে হিলারি বলেন, ‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচী গোটা বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সুতরাং বিশ্বকে এখন একযোগে ইরানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এখনই আন-র্জাতিকভাবে কঠিন ও চরম জবাব দেয়ার সময়।’ বিশ্ববাসী জানে, ইরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ বহুবছর ধরে জাতিসঙ্ঘের অবরোধ চলছে এবং ইরান সাফল্যের সঙ্গে তা মুকাবেলা করে আসছে, যা আন--র্জাতিক বিশ্লেষক মহলকে বিস্মিত করেছে। তবে সম্ভাব্য চূড়ান- অবরোধটি যে হবে ইরানের অর্থনীতি ও সামরিক শক্তির উপর এক মারাত্মক আঘাত তা বলাই বাহুল্য। আমরা জানি না আমেরিকার জবরদসি-র কাছে নতিস্বীকার- কারী জাতিসঙ্ঘের এ অন্যায় অবরোধ কার্যকর হলে তা ইরান ও বিশ্বের জন্য, এমনকি খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। দৃঢ়চেতা, স্পষ্টবাদী, সাহসী ও বিচক্ষণ বলে পরিচিত ইরানের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট আহমাদি নেজাদ অবশ্য পূর্ণ আস'ার সঙ্গে বলেছেন, ‘কোন অন্যায় অবরোধ ইরানকে তার পরমাণুলক্ষ্য অর্জন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। ইরান একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি, কোন অন্যায় চাপের মুখে সে তার জাতীয় অধিকার বিসর্জন দিতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি-ধমকির মুকাবেলা করেই এ জাতি টিকে থাকবে।’ সব মিলিয়ে বলা যায়, পরিসি'তি এখন খুবই ভয়াবহ পরিণতির দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। পারমাণবিক শক্তি ও প্রযুক্তি অর্জনের এ যুদ্ধে হয়ত ইরান মুসলিম বিশ্বকেও পাশে পাবে না। বিশ্বমুসলিম নেতৃবৃন্দ হয়ত এবারও আত্মঘাতী পথেই চলবেন, তবে ইরানকে ইরাকের মত সহজ ‘লোকমা’ মনে করলে যে বিশ্বসাম্রাজ্যবাদী শক্তিটি বড় ধরনের ভুল করবে তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া য়ায়। আমরা তো শুধু দেখেই যেতে পারি!