গত ২০শে এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো উপকূলে একটি তেলকূপ প্লাটফর্মে বিস্ফোরণের পর সাগরের পানিতে যে তেল নিঃসরণ শুরু হয়েছে তা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তেল নিঃসরণের মাত্রা আগের সব হিসাব ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে এখন তেল নিঃসৃত হচ্ছে আগের চেয়ে পাঁচগুণ বেশী হারে, অর্থাত দিনে পাঁচহাজার ব্যারেল। খবরে প্রকাশ তেলের গালিচা ইতিমধ্যেই মিসিসিপি নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে এসে গেছে। পরিবেশবিদগণ আশঙ্কা করছেন, তেল নিঃসরণের ফলে লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, আলাবামা ও ফ্লোরিডা-এই চারটি রাজ্যের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলের বন্যপ্রাণীর জীবন, সমুদ্রসৈকত ও নদীমোহনায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে হবে নযিরবিহীন, যার আলামত ইতিমধ্যেই দেখা দিতে শুরু করেছে। আবহাওয়াবিদগণ বলেছন, বাতাসের গতি পরিবর্তনের ফলে তেল লুইজিয়ানা উপকূল বরাবর প্রায় তেইশ মাইল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দু’একদিনের মধ্যেই তা সমগ্র লুইজিয়ানা উপকূলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তেলকূপবিস্ফোরণে সৃষ্ট পরিসি'তিকে প্রেসিডেন্ট ওবামা জাতীয় বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেছেন। পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ওবামাপ্রশাসন সেনাবাহিনী নিযুক্ত করার আদেশ জারি করেছে। পরিসি'তি সরেজমিনে দেখার জন্য ওবামা তার মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে উপকূলীয় অঞ্চলে পাঠানোর পর বলেন, জীববৈচিত্র, পরিবেশ ও অর্থনীতি সবকিছুতেই এর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে। তবে মার্কিন জাতি সাহসিকতার সঙ্গে পরিসি'তি মুকাবেলা করতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তেল নিঃসরণ বন্ধের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্নমুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে নামানো হয়েছে রোবোটিক সাবমেরিন, কিন' তাতে তেল নিঃসরণের পরিমাণ কিছুটা কমলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অন্যান্য চেষ্টাও সামগ্রিকভাবে ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়েছে। কূপের উপর গম্বুজ আকারের বিশাল একটা কাঠামো বসিয়ে নিঃসরণ বন্ধের উচ্চাভিলাষী চেষ্টাও সফলতার মুখ দেখেনি। এখন শেষ চেষ্টা হিসাবে তেলের বিস-ার একটি নির্দিষ্ট স'ানে সীমিত রেখে আগুন ধরিয়ে ভাসমান তেল পুড়িয়ে ফেলার কথা চিন-া করা হচ্ছে। এজন্য তেলের পুরো গালিচাটিকে মিসিসিপি নদীর মোহনার পঞ্চাশ মাইল দক্ষিণে টেনে নিয়ে যেতে হবে। যুক্তরাষ্টের অর্থবল, লোকবল ও প্রযুক্তিবলের দিকে তাকিয়ে বলা যায়, হয়ত কিছু দিনের মধ্যেই পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। কিন' আমরা মনে করি, উপকূলীয় তেলকূপদুর্ঘটনা সারা বিশ্বকে এ সতর্কবাতা দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের দুর্ঘটনাজনিত বিপর্যয় রোধ করার ক্ষমতা সীমাহীন নয়। সেখানেও যে কোন সময় যে কোন ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সুতরাং পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটাও অসম্ভব নয়, যেমন বেশ ক’বছর আগে রাশিয়ার চেরনোবিলে পারমাণবিক চুল্লিতে ঘটেছিলো। অথচ যুক্তরাষ্ট্র এই খোঁড়া অজুহাতে পাকিস-ানের পারমাণবিক বোমা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় যে, পাকিস-ানের হাতে তা নিরাপদ নয়। বিশ্বকে আরো ভেবে দেখতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এখন যে পাঁচহাজার একশ তেরটি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, বিশ্বসমপ্রদায়ের জন্য সেগুলো বেশী ভয়ের কারণ, নাকি ইরানের কল্পিত পারমাণবিক অস্ত্র! এখানে ইহুদিরাষ্ট্র ইসরাইলের অস্ত্রভাণ্ডারে মজুদ বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসঙ্গ অবশ্য আসা উচিত নয়; কারণ ক্ষুদ্র ইহুদিরাষ্ট্রটির নিরাপত্তার জন্য নাকি এর প্রয়োজন রয়েছে!