সফর ১৪৩১ হি:(১৫)

কাশগর ও কায়রো

অসহায় মাহমূদ আববাস

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

ফিলিস্তিনের একসময়ের বিপ্লবী নেতা ইয়াসির আরাফাতের রহস্যজনক মৃত্যুর পর মাহমূদ আববাস ইসরাইল ও আমেরিকার একটি গোপন শর্ত মেনে নিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। নির্মম রসিকতা এই যে, তাকে ফিলিস্তি-নের প্রেসিডেন্ট বলা হয় না, বলা হয় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট।

মাহমূদ আববাস ‘প্রেসিডেন্ট’ হয়েছেন এই গোপন শর্তে যে, ইসলামপন্থী হামাসকে যে কোন মূল্যে তিনি দমন করবেন। কারণ বিপ্লবী ও জিহাদী হামাসের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ছিলো ইহুদি-মার্কিন স্বার্থের জন্য মরণাঘাত।

সবরকম দমন নিপীড়নের পরও ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে হামাসকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর হামাস সরকার গঠন করে। কিন্তু ইহুদীদের ক্রীড়নক মাহমূদ আববাস হামাস সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেন। তবে সকল প্রতিকূলতার মুখেও হামাস গাজায় তার নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখে। এরপর ইসরাইল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে। তাতেও যখন হামাস নতি স্বীকার করলো না তখন ইহুদি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজায় ইতিহাসের বর্বরতম আগ্রাসন চালায়। তারপরো গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। এ থেকেই বোঝা যায়, হামাসের প্রতি ফিলিস্তিনী জনগণের সমর্থন কতটা সংহত।

মাহমূদ আববাস ফিলিস্তিনের স্বার্থ পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েও ইহুদি-মার্কিন প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারেন নি। নামমাত্র একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়েও ইসরাইল রাজী নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা বলেছেন, ইসরাইল তা আমলেই আনছে না, বরং ইহুদিবসতির সম্প্রসারণ জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত পঁচিশে জানুয়ারি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, তিনি এমন কোন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হতে দেবেন না, যা চারদিক থেকে ইসরাইলের নিরাপত্তাবাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে না।’

এমনকি তিনি প্রস্তাবিত ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রের নিজস্ব সামরিক বাহিনী থাকার ধারণাও প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইহুদি-মার্কিন পক্ষকে ছাড় দিতে দিতে মাহমূদ আববাস এখন এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছেন যে, তার হাতে দেয়ার মত আর কিছু নেই। তাই ইসরাইল ও আমেরিকা এখন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের জন্য নতুন নেতা খুঁজতে শুরু করেছে, যিনি ইহুদিস্বার্থ আরো ভালোভাবে রক্ষা করতে পারবেন এবং নির্মম হাতে হামাস ও হামাসসমর্থক ফিলিস্তিনীদের দমন করতে সক্ষম হবেন। মাহমূদ আববাসদের জন্য সত্যি বড় করুণা হয় যে, এর পরো কেন তাদের বোধোদয় ঘটে না!

মাহমূদ আববাসের ভাগ্যে কী আছে তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। তবে ইতিহাস থেকে আমরা এ শিক্ষাই পাই যে, জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যারা ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায় তাদের পরিণতি হয় বড় করুণ। একসময় ফিলিস্তিনের জাতীয় বীর ইয়াসির আরাফাত যে করুণ পরিণতি ভোগ করেছেন, মাহমূদ আববাসের পরিণতি তার থেকে ভিন্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।

মাহমূদ আববাস যদি বাঁচতে চান তাহলে তার এখন একটাই করণীয়, হামাসের সাথে সমঝোতায় এসে ফিলিস্তিনী স্বার্থের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করা। হামাসের পায়ে বারবার তিনি কুড়ালের আঘাত হেনেছেন, তার পরো হামাস তার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে কণ্ঠিত নয়। কিন্তু তিনি কি তা করবেন?! 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা