রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

পুষ্পকলি

পুষ্পকলি - ২

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

কাকে বলে জীবন?

১- দাদুকে আমার খুব ভালো লাগে। দাদুর সঙ্গে আমার অনেক গল্প হয়। দাদুর কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারি, শিখতে পারি।

আমি যতই প্রশ্ন করি, দাদু বিরক্ত হন না। হাসি মুখে  উত্তর দেন। দাদুর মুখের হাসি দেখে মনে হয়, আমার প্রশ্ন শুনে তিনি খুব মজা পান। আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া দাদুর যেন কোন কাজ নেই!

২- একদিন দাদুর কাছে জানতে চাইলাম, আকাশ কেন নীল, ঘাস কেন সবুজ? দাদু এমন খুশী হলেন, কী আর বলবো! দাদুর হাসি যেন থামতেই চায় না। শেষে হাসি থামিয়ে বললেন, এ তো সোজা প্রশ্ন! সবাই জানে! চাঁদের বুড়ির কাছে নীলের ইয়া বড়া একটা কৌটা ছিলো। একদিন হলো কী! বুড়ি রাগ করে কৌটার সব নীল ঢেলে দিলো আকাশের গায়ে!

বুড়ি তো রাগ করে ঢাললো, কিন্তু ফলটা হয়ে গেলো ভালো! আকাশ হয়ে গেলো কী সুন্দর নীল!!

৩- ঘাস কেন সবুজ?! সে তো আরো সোজা! সবুজের সঙ্গে গরুর হলো মিতালি। এখন ঘাস যদি সবুজ না হয়, গরু তো ঘাস খাবে না! তাহলে!? ওলানে তো আর দুধ হবে না! তাহলে!? শিশুরা সব দুধের অভাবে শুকিয়ে হবে কঙ্কাল! তাহলে!? মায়েদের হবে কষ্ট! তাহলে!? বেচারা ঘাসকে হতেই হলো সবুজ। শিশুরা যেন দুধ পায় ঠিকঠাক!

৪- আজ দাদুকে করলাম এমন এক প্রশ্ন যে, দাদু অবাক! একফোঁটা হাসলেন না। শুধু তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে! আমার প্রশ্ন ছিলো, কাকে বলে জীবন?! দাদু বললেন, এসো ভাই! তোমাকে দেখাই, কাকে বলে জীবন!

৫- দাদু আমাকে নিয়ে গেলেন বাড়ীর পিছনের বড় বাগানটায়, যেখানে আছে বড় বড় গাছ। গাছের উুঁচু ডালগুলোতে আছে বাবুই পাখীর অনেক বাসা। বাসাগুলো এত সুন্দর ঝুলে থাকে যে, দেখেই থাকতে ইচ্ছে করে!

 ৬- দাদু বড় একটা গাছের সামনে এসে থামলেন। নীচু একটা ডালে পাখীর বাসা। মা ও তার ছানাকে বেশ দেখা যায়।

দাদু বললেন, এই যে মা-পাখীটা উড়ে গিয়ে ঠোঁটে করে খাবার আনছে, ছানাগুলোর ঠোঁটে খাবার তুলে দিচ্ছে। আবার উড়ে যাচ্ছে, আবার ঠেঁটে করে ... তো দাদু ভাই, এরই নাম জীবন!

 ৭- মা-পাখীটা একসময় আরেকটা মা-পাখীর ছানা ছিলো। সেই মা-পাখীটা এমন করেই তার ছানাকে খাবার এনে ঠোঁটে তুলে দিতো। কোথায় এখন সেই মা-পাখী!!

এই যে ছানাগুলো! একদিন বড় হবে, মা হবে। ওদেরও ছানা হবে। ওরাও ঠোঁটে করে খাবার এনে ছানাদের ঠোঁটে ... কোথায় থাকবে তখন এই মা-পাখীট? দাদুভাই, এরই নাম জীবন!

 ৮- সকালে পাখীরা নীড় ছেড়ে উড়ে যায় খাদ্যের তালাশে। সন্ধ্যায় ফিরে আসে আপন নীড়ে ভরা পেটে।

এই যে পাখীরা সকাল-সন্ধ্যা কিচির মিচির করে। ওরা কিন্তু ¯্রষ্টার গুণ গায়। দাদু ভাই, এরই নাম জীবন!

 ৯- দাদু আমার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ীর পাশে যে কবরস্তান সেখানে গেলেন, আর বললেন, এই যে দেখো দাদু ভাই! এটা আমার বাবার কবর! তুমি তাকে দেখোনি। তোমার আব্বু দেখেছেন। তোমার আব্বু তখন ছোট। ঠিক তোমার মত। ঐ সময় আমার বাবার মৃত্যু হয়। এই কবরে এখন তিনি শুয়ে আছেন। আমারও একদিন মৃত্যু হবে। আমারও একটি কবর হবে। তোমার আব্বুরও। দাদু ভাই, তোমারও একদিন মৃত্যু হবে। তোমারও কবর হবে। তখন নতুন নতুন শিশু পৃথিবীতে আসবে। বড় হবে। পৃথিবীতে বিচরণ করবে। তারপর তাদেরও মৃত্যু হবে। তাদেরও কবর হবে।

দাদু ভাই! এরই নাম জীবন!!

 ১০- যিনি তোমাকে জীবন দান করেছেন তুমি যদি তার কথা মেনে চলো। তার ইবাদত করো, তোমার জীবনটা হবে সুন্দর। কবরে হবে শান্তি। তারপর জান্নাতে থাকা হবে চিরকাল। সেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি!!

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা