মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

কিশোর পাতা

মাদরাসাতুল মাদীনায় ঈদুল ফিতর , ধনী-গরীবের সাহরী-ইফতার!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

জীবন সবসময় মানুষকে সুন্দর কিছু না কিছু দিতেই থাকে; হয়ত আমরা তা ঠিকমত গ্রহণ করতে পারি না। ... এই প্রথম আমি মাদরাসায় ঈদ করলাম, যদিও কিছুটা শূন্যতা ছিলো, তবে হৃদয়ে আনন্দ ও পবিত্রতার এমন শুভমিলন ঘটেছিলো যে,...যিম্মাদার হুযূর চাঁদের খোশখবর দিলেন, তারপর ঈদ মোবারক জানিয়ে এমন কিছু কথা বললেন যে, মাদরাসার গম্ভীর পরিবেশে আনন্দের শুভপ্রবেশ ঘটলো। মসজিদের দরজার সামনে তালিবানে ইলম ভাইয়েরা সুন্দর একটি কাজ করলেন। ফুলের গাছ দিয়ে চাঁদ-তারার চিত্রায়ণ করলেন। মাশা‘আল্লাহ্ ঈদের আনন্দ প্রকাশের কত সুন্দর উপায়! আদীব হুযূর খুব পছন্দ করলেন।

ভোরের রাঙা সূর্য যখন উদিত হলো তখন মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখি, প্রতিটি গাছে যেন ফুলের মেলা বসেছে! বিভিন্ন রঙের ফুল! প্রতিটি ফুল যেন আমাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে! সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য, যিনি ঈদের দিনে এত সুন্দর একটি ‘উদ্বোধন’ দান করলেন।

ভোরে ঈদের প্রথম আপ্যায়ন, সেমাই গ্রহণ করলাম। স্বাদ, আম্মুকে মনে করিয়ে দিলো। যিম্মাদার হুযূরের ইমামতিতে ছালাত হলো, খোতবা হলো। সবকিছুই যেন নতুন।

মহল্লার মেহমানদের জন্য সুন্দর মুছল্লা বিছানো হলো। বিদায়ের সময় তাদের হাতে পরিবারের জন্য ঈদের মিষ্টির ‘প্যাকেট’ তুলে দেয়া হলো। তারা খুশী হলেন। বেশী খুশী হলো শিশুরা ঈদের চাকোলেট পেয়ে। যাকে বলে সত্যিকার ঈদের খুশি! ঈদের এমন আনন্দের দৃশ্য, তাও মাদারাসার পরিবেশে, আগে কখনো দেখেছি, মনে পড়ে না।ছালাতের পর আসাতিযায়ে কেরামের সঙ্গে দেখা করলাম, বরং বলা উচিত, তারাই আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন। মনে হলো, বাবা-মা... জাওয়ালে আম্মু-আব্বুর সঙ্গে কথা হলো, তারা আমার সালাম থেকেই বুঝলেন আমি কেমন আছি... তারা খুশী হয়ে দু‘আ দিলেন।

ঈদের দস্তরখান! মাদরাসাও হতে পারে এমন... শুরুটা হলো আদীব হুযূরের প্রিয় শরবত দিয়ে; খেজুর, টকদই, চিড়া ও রূহআফযার মিশ্রনে তৈরী, আহা! যোহরের পরে দুপুরের দস্তরখান! এবং প্রায় ঈদের...!

মাগরিবের পর, ঈদের দিন অস্ত গেলেও আবার ঈদের আপ্যায়ন, হালিম! নাহ্ মাদরাসাকে আদীব হুযূর মা-বাবার বাড়ী বানিয়ে ফেললেন দেখি! এমন স্বাদের হালিম! তাও আবার তালিবানে ইলমের রান্না!

এশার পর দেখি সুস্বাদু কেক! আসাতিযা কেরাম আমাদের জন্য ভালোবেসে বানিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ্! 

আমরা সবাই জানি, আদীব হুযূর নিজে যা পছন্দ করেন বা করতেন (এখন চিনিরোগের কারণে গ্রহণ করতে পারেন না) তা আমাদের জন্যও ব্যবস্থা করেন।

আদীব হুযূর পুরো মাদরাসাকে একটি পরিবার বানিয়ে রেখেছেন, বরং বানিয়ে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সবকিছুৃতেই অন্তরের মমতার ছায়া ও ছোঁয়া। আমরা বোধহয় আদীব হুযূরকে কষ্ট ছাড়া আর কিছু দিতে চাই না!

ঈদের পুরো দিনটি অবশ্য শুধু খেয়েই যাপন করিনি। ‘মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো’ বইটি পডেছি এবং উপলব্ধির সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করেছি।

নাঈমুর-রহমান বিন মুখলিছুর রহমান, মাদরাসাতুল মাদীনাহ

০০ ভালো, ইচ্ছে করলে তুমি অনেক ভালো হতে পারো চিন্তায় ও কর্মে। ইচ্ছেটা করেছো তো! করবে তো!

***

যাকিয়া বিনতে মুতীউর রহমান,

আদর্শনগর, সিদ্দিরগঞ্জ, এনগঞ্জ  ২/১/৪০ হি.

ছোট্ট আঙ্গিনায় একটি পেপের চারা লাগিয়েছিলাম। বেশ বড় হয়েছে। ফল এসেছে। প্রায় ত্রিশটি পেপে ধরেছে। 

গাছের ফল এবং বসন্তের ফুল দেখতে সবারই ভালো লাগে। সবারই কামনা, তার লাগানো বীজটি অঙ্কুরিত হোক, চারা হোক, সবুজ বৃক্ষ হোক, ফল দিক, ছায়া দিক। 

সবারই কামনা, তার বাগানে বসন্ত আসুক! ফুলে ফুলে রঙ্গিন হোক। কোকিল, বুলবুলির গানে বাগান মুখরিত হোক! সবার কামনা কি পূর্ণ হয়! পুষ্পের দরদী মালীও তো স্বপ্ন দেখেছেন! স্বপ্নের সুন্দর বাস্তবায়ন কামনা করেছেন, কিন্তু  কোথায়, তার স্বপ্ন, কোথায় তার কামনা!

আমার কোন স্বপ্ন পূর্ণ না হয়েও যদি তাঁর স্বপ্নগুলো পূর্ণ হতো, খুশী হতাম।

৫/১/৪৪ হি.

এখন যদি না লিখি, আজ আর লেখার সুযোগ হবে না। অথচ ছোট ছেলেটি কোল থেকে নামতে চাচ্ছে না। তাই তাকে কোলে নিয়েই লিখতে বসেছি। কোলের মধ্যে এত ছটফট করলে কি লেখা যায়! তবু চেষ্টা করছি। বুঝতে পরিনি, কখন আমার বুকের মানিক শান্ত হয়ে গিয়েছে! লেখার শেষের দিকে বুঝতে পারলাম, আর ভাবলাম, ঘুমিয়ে পড়েছে। লেখা শেষ করে তাকিয়ে দেখি, আমার ছেলে তো তার মায়ের লেখার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! আমার কী যে ভালো লাগলো। মাতৃহৃদয় প্রশান্তিতে যেন পরিপূর্ণ হয়ে গেলো! এত কষ্টের জীবনেও এত সুখ, এত শান্তি হতে পারে! হোক না অবুঝ ছেলে, তবু কিছু একটা ভাবছে নিশ্চয়! যদি জানা যেতো ওর ছোট্ট হৃদয়ের ভাবনা-কলিগুলোর কথা!

০০ ছোট্ট শিশুর ছোট্ট হৃদয়ের ছোট্ট ভাবনাগুলোকে ফুলের কলির সঙ্গে উপমা! অতুলনীয়!

০ পুষ্পের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ আমার ‘অবলা’ হাতে কলম তুলে দেয়ার জন্য, আমাকে রোযনামচার পাতায় স্বপ্ন দেখানোর জন্য! এখন ভাবি কলম ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব হতো কীভাবে!

***

মুহম্মদ খালিদ বিন মুশতাক

সুধন্যপুর, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

গ্রামের উন্মুক্ত প্রান্তরে ভোরের হিমেল হাওয়া কী যে ভালো লাগে! এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার শৈশবের বহু সুখের স্মৃতি! অনেক দিন পর গ্রামে আসা হলো। আজ ফজরের পর হাঁটতে বের হলাম। গ্রামের বন্ধুরা সঙ্গে আসতে চেয়েছিলো; আমি ইচ্ছা করেই একা বের হলাম। প্রথমে গেলাম সেই বিলের ধারে যেখানে পানির ছোট ছোট ঢেউয়ের মধে লুকিয়ে আছে আমার শৈশবের বহু স্মৃতি....

ধনী-গরীবের সাহরী-ইফতার!  ৮/৯/৪৪ হি. রোববার

আমাদের জীবন এখন রামাযানের পবিত্রতার ছায়ায় যাপিত হচ্ছে। ধনী-গরীব সবাই ছিয়াম পালন  করছে। সবার উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তবে তাদের সাহরী-ইফতারে কত পার্থক্য! গরীবের ইফতার ও সাহরী কত সামান্য, আর ধনীর সাহরী যেমন ভরপুর, ইফতারেও তেমন বিপুল আয়োজন। গাছতলার ইফতারও সাহরী হলো কারো করুণার দান, সাততলার সাহরী ইফতার হলো আলীশান। কোথাও সামান্য কিছু পানি খেজুরের ইফতার, কোথাও জমকালো ইফতার পার্টি/ মহফিল।

তবে দেখতে যত সামান্য হোক, বা বিপুল; আল্লাহর কাছে তা মর্যাদাপূর্ণ হবে নিয়তের বিশুদ্ধতা দ্বারা এবং ছবর ও শোকর দ্বারা। ছবরে সঙ্গে সামান্যও হবে অসামান্য, আর নাশোকরির সঙ্গে অসামান্যও হয়ে যায় সামান্য এবং তুচ্ছ। 

আফনান, আদীব হুযূরের তালিবে ইলম

০০ তোমার চিন্তা ও লেখা সুন্দর। এখন কর্মও যেন সুন্দর হয়, কামনা করি। জীবনের সঙ্গে আমরাও যেন অগ্রসর হতে পারি। জীবন থেকে আমরা যেন পিছিয়ে..

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা