রবিউছ ছানী ১৪৪৫ হিঃ

কিশোর পাতা

শিশুর প্রতি কৃতজ্ঞতা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

শিশুর প্রতি কৃতজ্ঞতা

বাগানে একটি ফুলের কলি থেকে যেমন ধীরে ধীরে বর্ণে গন্ধে পরিপূর্ণ একটি ফুল হয় তেমনি মানব-উদ্যানে একটি শিশু থেকে ধীরে ধীরে জ্ঞানে গুণে, চিন্তায় চেতনায়, কর্মে ও চরিত্রে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়।একটি পরিপূর্ণ ফুলের জন্য যেমন ছ্ট্টো কলিটির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, একজন পরিপূর্ণ মানুষের জন্য তেমনি আমরা কৃতজ্ঞ ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটির কাছে।পৃথিবীর যেখানেই আমি কোন নিষ্পাপ শিশুকে দেখি, আমার ঘরে, আমার সমাজে, আমার দেশে, পৃথিবীর যে কোন দেশে, একটি নিষ্পাপ শিশুকে যখন দেখি আমার মনে তখন একটি ইচ্ছাই শুধু জাগে, আমার জীবন যেন হয় এই শিশুটির মত নিষ্পাপ। তাই কাছের এবং দূরের প্রতিটি শিশুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।একটি শিশুর সবকিছু, তার হাসি, কান্না; তার অবাক চাহনি এবং অবুঝ হাতছানি শুধু যে তার মায়ের মমতার সাগরে জোয়ার আনে তাই নয়, আমারো অন্তরে এক পবিত্র অনুভ‚তির জোয়ার সৃষ্টি করে! আমার ইচ্ছে হয় শিশুর হাসি যেন আমরা সবাই হাসতে পারি! শিশুর কান্না যেন আমরা সবাই কাঁদতে পারি! শিশুর মত অবাক দৃষ্টিতে আমরা যেন চারপাশের সবকিছু এবং চারপাশের সবাইকে দেখতে পারি! আমাদের দৃষ্টিতে যেন কোন মলিনতা না থাকে এবং না থাকে কোন অপবিত্রতা! শিশুর অবুঝ হাতছানির মত আমরা যেন সবার প্রতি প্রসারিত করতে পারি প্রীতির হাতছানি! এই অনুভ‚তির জন্য পৃথিবীর প্রতিটি শিশুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।দোলনায় ঘুমন্ত শিশুটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, কারণ তার দোলখাওয়া ঘুম দেখে আমার ইচ্ছে হয়, এমন শান্তির ঘুম যেন চিরকাল আমি এবং আমার চারপাশের সমস্ত মানুষ ঘুমুতে পারি।ক্ষুধার্ত শিশুর কান্নায় যখন মা  জেগে ওঠেন, ছুটে এসে কোলে তুলে নেন এবং বুকের দুধে তার ক্ষুধা দূর করেন, তাকে শান্ত করেন, তখনো আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ বোধ করি, কারণ আমার তখন ইচ্ছে হয়, পৃথিবীর সব ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে ছুটে যাই, একটুকরো রুটি দিয়ে, এককাতরা পানি দিয়ে তাদের ক্ষুধা ও পিপাসা দূর করি। পথের ধূলোবালিতে পড়ে থাকা শিশুকে যখন কোলে নেই, আর সে হাসিমুখে আমার দিকে তাকায়, তখন আমার মনে হয়, মিষ্টি হাসিটি  দিয়ে সে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সামান্য একটু কোলে নেয়ার জন্য এমন শুভ্র সুন্দর কৃতজ্ঞতা! আমার তখন ইচ্ছে হয়, আমার প্রতি এত দয়া ও দান যার, এত মায়া ও করুণা যার তাঁর প্রতি আমি যেন এই শিশুটির মত কৃতজ্ঞ হতে পারি! এই সুন্দর ইচ্ছেটুকুর জন্য ধূলোয় পড়ে থাকা শিশুটির প্রতি এবং পৃথিবীর সবশিশুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।যখন দূরের বা কাছের কোন শিশুকে দেখি, তখন মনে পড়ে আমার নিজের শৈশবের কথা! তখন আমার মন যেন কেমন করে! এই মনকেমনকরা সময়টুকুর জন্যও আমি কৃতজ্ঞ দূরের ও কাছের প্রতিটি শিশুর প্রতি।মায়ের কোলে যখন কোন শিশুকে দেখি, মনে পড়ে আমার মায়ের কথা! আমিও তো ছিলাম আমার মায়ের কোলের ছোট্ট শিশুটি! এই শিশুটির মায়ের মত আমার মাও তো কত কষ্ট করেছেন আমার জন্য! তখন আমার ইচ্ছে হয় মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হই, মায়ের জীবন থেকে সমস্ত কষ্ট দূর করি, মায়ের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাই এবং মায়ের মুখে একটু হাসি ফুটাই! এই শুভ্র কোমল অনুভ‚তির জন্য মায়ের কোলের শিশুটির প্রতি এবং পৃথিবীর প্রতিটি শিশুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।শিশুর কোন শত্রæ নেই। শিশুরা সবার প্রিয়, শিশুর কাছেও সবাই প্রিয়। শিশু তো কোল বাছে না। বস্তির দুঃখী ও বঞ্চিত শিশুটিকে কোলে নিতে চাও, হাসতে হাসতে তোমার কোলে আসে! প্রাসাদের সুখী সচ্ছল শিশুটিকে কোলে নিতে চাও সেও তোমার কোলে আসবে। আমার তখন ইচ্ছে করে, শিশুর মত আমি যেন সবার প্রিয় হই, সবাই যেন আমার প্রিয় হয়। আমি যেন সবার হাসি আনন্দের কারণ হতে পারি, আমি যেন কারো দুঃখের, কষ্টের কারণ না হই।পৃথিবীর যেখানে যত শিশু আছে, গরীবের ঘরে, ধনীর ঘরে, বস্তির ধূলিশয্যায় এবং প্রাসাদে ফুলের শয্যায়! যত শিশু আছে ভারতে এবং কাশ্মীরে, যত শিশু আছে মিয়ানমারে এবং আরাকানে, যত শিশু আছে ইসরাইলে ও ফিলিস্তীনে, যত শিশু আছে সিরিয়ায় ও ইউক্রেনে! প্রতিটি শিশুকে যেন আমরা নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ এবং বাসযোগ্য একটি পৃথিবী দিয়ে যেতে পারি!যখন যেখানে কোন শিশুকে দেখি, আমার অন্তরের গভীরে এমন ইচ্ছে জাগ্রত হয়, পৃথিবীর সকল শিশুর জন্য, এমনকি যে নিষ্ঠুর সৈনিকের ছোঁড়া গুলিতে কোন শিশুর বুক ঝাঁঝরা হয় তার ঘরের শিশুটির প্রতিও আমার একই রকম ইচ্ছা পাপড়ি মেলে। যদিও তা খুব সামান্য সময়ের জন্য, তারপরই নিজেকে বড় অসহায় বোধ করি!হে আমার ঘরের শিশু! হে আমার শত্রæর শিশু! তোমাকে সালাম! তোমার প্রতি আমি...

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা