এখানে প্রায় একই শিরোনামে আলোচনা হয়েছিলো নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ভয়াবহতা সম্পর্কে। লেখাটা শুরু করেছিলাম ক্ষোভে ক্রোধে অগ্নিগর্ভ হয়ে, কিন্তু নিজের অক্ষমতা বুঝতে পেরে লেখাটা শেষ করেছিলাম কিছুটা বেদনাহত অবস্থায়।
আজ শিরোনাম একটু বদল করে লিখছি শিশুনির্যাতনের ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে।
আগের শিরোনাম ছিলো, আমরা কি শেষ হয়ে যাচ্ছি? এবারের শিরোনাম হলো, ‘আমরা বোধহয় শেষ হয়ে যাচ্ছি!’
জানি, আমাদের কথা ও লেখা কত কমযোর, আমাদের কলম ও কণ্ঠস্বর কত দুর্বল। কিন্তু ক্ষতবিক্ষত বিবেকের সান্ত্বনার জন্য যদি কিছু না বলি, যদি কিছু না লিখি তাহলে বেঁচে থাকার যুক্তি খঁজে পাবো কীভাবে!
আমাদের ধর্মের তো সুষ্পষ্ট নির্দেশ, তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন অন্যায় দেখে, তাহলে সে যেন তা পরিবর্তনের চেষ্টা করে হাতের শক্তি দ্বারা, যদি তা না পারে তাহলে মুখের (ও কলমের) শক্তি দ্বারা। তাও যদি না পারে, তাহলে অন্তরের ঘৃণা দ্বারা। আর তা হলো ঈমানের দুর্বলতম স্তর।
হাতের শক্তি আমাদের নেই। তো আমরা কি মুখের ও কলমের শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি! আমরা কি ঈমানের দুর্বলতম স্তরে পৌঁছে গিয়েছি! বোধহয় না!
যতদিন সাহস আছে, সামর্থ্য আছে, লিখে যাই, যাতে বিবেকের ক্ষতে মলমের প্রলেপ দিতে পারি, আর হাশরে অন্তত মুখ দেখাতে পারি।
দেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, অভিজাত ও সাধারণ, ধনী ও গরীব সমস্ত স্তরে শিশু-নির্যাতনের হার ও ভয়াবহতা কী পরিমাণ বেড়েছে তার একটা চিত্র উঠেছে এসেছে কিছুদিন আগে পরিচালিত বেসরকারী পর্যায়ে পরিচালিত একটি জরীপে। তাতে দেখানো হয়েছে, দশবছর আগে শিশু-নির্যাতনের ধরন ছিলো কিলঘুষি ও চড়থাপ্পড়। তারপর শুরু হয় বিভিন্নভাবে গরম জিনিসের সেঁক দেয়া। সম্প্রতি শিশু- নির্যাতনের ধরনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। শুরু হয়েছে, চরম হিংস্রতা ও বর্বরতা, যা ভাষায় বর্ণনা করার মত নয়। সত্যি সত্যি তা ভাষায় বর্ণনা করার অযোগ্য, রীতিমত লোমহর্ষক।
জরীপের প্রতিবেদনে যদিও বলা হয়েছে ‘বর্ণনা করার মত নয়’, তবু বিভিন্ন লোমহর্ষক নমুনা উল্লেখ করে বর্ণনা দেয়া হয়েছে ‘কেস স্টাডি’র আবরণের আড়ালে। কোন আবরণেই আমরা তা বণর্না করতে সত্যি অক্ষম। জরীপের প্রতিবেদনে মোটা মোটা হরফে লেখা হয়েছে, আগে নির্যাতন করা হতো নিপীড়নের চিন্তায়, এখন নির্যাতন করা হয় পাশবিক উল্লাসে রীতিমত হত্যার উদ্দেশ্যে।
শিশুনির্যাতনের প্রসঙ্গ এলেই আমরা ভেবে নিই, ঘরে কাজের শিশু এবং বাইরে শ্রমিক শিশুদের উপর নির্যাতনের কথা, যা এখন প্রায়ই পৈশাচিকতার পর্যায়ে চলে যায়।
কিন্তু জরীপে দেখা যায়, ইদানিং মা-বাবার দ্বারাও শিশুসন্তান নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কারণে অকারণে মা-বাবা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে বেদম মারধোর করছেন। পরীক্ষার নামে যে ভীতিকর পরিস্থিতি শিশুশিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেটাও রীতিমত নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। পরীক্ষায় শিশু অকৃতকার্য হলে আর রক্ষা নেই! এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও কোন কোন শিক্ষক হিংস্রতার পরিচয় দিচ্ছেন, যা খবরে কমই আসে। পক্ষান্তরে মাদরাসায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও রীতিমত হৈচৈ পড়ে যায়। থানা পুলিশও বাদ যায় না।
পরিশেষে আমরা সেই প্রসিদ্ধ হাদীছের অংশবিশেষ উল্লেখ করতে চাই, ‘যারা আমাদের শিশুদের প্রতি দয়া করে না, তারা আমাদের উম্মতভুক্ত নয়।