কাশ্মীরসংখ্যা

টেকনাফ/তেতুলিয়া

ইতিহাসের কথা ইতিহাস বলছে!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

ইতিহাসের কথা

ইতিহাস বলছে!

কাশ্মীর কি ভারতের

আ ভ্য ন্ত রী ণ স ম স্যা?

কাশ্মীর উপত্যকা একনাগাড়ে জ্বলছে বছরের পর বছর এবং দশকের পর দশক। অনেক দিন ধিকি ধিকি জ্বলার পর এখন আবার জ্বলে উঠেছে দাউ দাউ করে। উপলক্ষ হলো, ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সাংবিধানিক বিশেষ সুবিধা বাতিল করেছে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করার মাধ্যমে।

ভারত বলছে, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অটুট অঙ্গ এবং এটা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়, সুতরাং পাকিস্তান বা অন্যকোন দেশের তাতে ‘নাক গলানোর’ কোন সুযোগ নেই।

গায়ের জোরে দাবী যেমন করা যায় তেমনি অস্বীকারও করা যায়। কিন্তু সভ্যপৃথিবী আশা করে সবকিছু যুক্তির মাধ্যমে স্থির হবে, শক্তির মাধ্যমে নয়।

তো আসুন দেখি, যুক্তি কী বলে।দলীল প্রমাণ এটাই দাবী করে যে, কাশ্মীর কখনো ভারতের ‘অটুটু’ তো নয়ই, সাধারণ অঙ্গও ছিলো না; ঐতিহাসিক বিচারেও যেমন নয়, তেমনি ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বিচারেও নয়। ভারতের অঙ্গই যদি হবে এবং অটুট, তাহলে রাজা হরি সিং-এর দস্তখত বা দাসখতের প্রয়োজন কেন হলো? এ দাবী তো শুধু মুসলমানদের নয়, ভারতে যুক্তিবাদী ও মুক্তবুদ্ধির যত মানুষ আছেন সবারই একই মত। প্রখ্যাত মানবতাবাদী কর্মী, ভারতের সাহসী কণ্ঠস্বর অরুন্ধতি রায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, কাশ্মীর কখনোই ভারতের অংশ ছিলো না।

এখন প্রশ্ন হলো, কাশ্মীরসমস্যা কি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়? আসুন দেখি, দলীল-পত্র ও যুক্তি প্রমাণ কী বলে?

দলীল ও যুক্তি তো অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, কাশ্মীর কোন-ভাবেই ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। সমস্যার যখন শুরু তখনই কাশ্মীর জাতিসঙ্ঘের তালিকায় চলে এসেছে। স্বয়ং ভারত অনন্যোপায় হয়ে সমস্যাটি জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করেছে। জাতিসঙ্ঘ সমস্যাটির সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে গণভোট অনুষ্ঠানের দিকনির্দেশনাও দিয়েছে, পাকিস্তান এবং তার আগে ভারত সেটা মেনেও নিয়েছে। বাকি এটা আলাদা কথা যে, ভারত আজ পর্যন্ত নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি, যদি করতো তাহলে

গণভোট অনুষ্ঠানের দিনই সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। কিন্তু ভারত গণভোট অনুষ্ঠানের সাহস করে না, কারণ নেহরু থেকে মোদি, সবারই জানা আছে, কাশ্মীরের মুসলিম জনগোষ্ঠী একদিনের জন্যও ভারতের সঙ্গে থাকতে রাজি হবে না, তাদের স্বতঃস্ফূর্ত রায় হবে পাকিস্তানে যোগ দেয়ার পক্ষে।

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জি-৭ গ্রুপের সদস্যদেশগুলোর বৈঠক হয়েছে প্যারিসে। ভারত এর সদস্য না হয়েও আমন্ত্রণ পেয়েছে শুধু কাশ্মীরবিষয়ে কথা বলার জন্য। ভারত সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি তাতে যোগ দিয়ে কথা বলেছেন। এর অর্থ কাশ্মীর আর বাস্তবে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় না, এটা ভারত মেনে নিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ দেশ বারবার পাকিস্তান ও ভারত উভয়কে আহ্বান জানাচ্ছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীরসমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার। অর্থাৎ সবার মতেই এটা ভারতের নিজস্ব সমস্যা নয়, অন্তত দ্বিপক্ষীয় সমস্যা তো বটেই। তাছাড়া, যখনই কোন তৃতীয় দেশ মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয় ভারত সঙ্গে সঙ্গে আওড়াতে শুরু করে, ‘এটা দ্বিপক্ষীয় সমস্যা, উভয় দেশ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান বের করবে।’ অর্থাৎ এটা ভারতের আভ্যন্তরীণ সমস্যা কিছুতেই নয়!

অথচ আশ্চার্যের বিষয় হলো, ভারতের বিদেশমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলেন এবং দিব্বি বলে দিলেন, কাশ্মীর ভারতের আভ্যন্তরীণ সমস্যা! বাংলাদেশের পক্ষ হতেও তাতে সায় দেয়া হলো। অথচ ভারতের ক্ষুদ্র ও শক্তিহীন প্রতিবেশীরা কাশ্মীর সম্পর্কে বোধগম্য কারণেই কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও মৌনতার মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের মনের কথা কী! সম্ভবত এ কারণেই অরুন্ধতি রায় তার ইংরেজি প্রবন্ধের নাম রেখেছেন, নীরবতা শব্দের চেয়ে সরব।

একমাত্র বাংলাদেশ, বলেছে ‘আভ্যন্তরীণ বিষয়’। কারো কারো ধারণা, হয়ত দিল্লীকে খুশী করার জন্য।

কাশ্মীরসঙ্কটের একেবারে শুরুতে তখনো পেঁয়াজের ঝাঁঝ নাকে লাগেনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ হলে বাংলাদেশ ভারতের পক্ষে অবস্থান নেবে।’ ধরে নিচ্ছি, এটা হলো, ‘মন্ত্রিসুলভ বাত কি বাত’। আসল কথা হচ্ছে ‘আভ্যন্তরীণ বিষয়’, গৌতমদাশ যেটকে বলেছেন, ‘আত্মঘাতী’। কারণ পরে আমাদের ক্ষেত্রেও এ তত্ত্বের প্রয়োগ হতে পারে।

আমরা অবশ্য এভাবে বলতে চাই না। আমরা বলতে চাই, হয়ত এতেই বাংলাদেশের স্বার্থ নিহিত। যেমন লন্ডনের আব্দুল গাফফার লিখেছেন, বন্ধুত্ব যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটাও দেখতে হয় বলে কাশ্মীরপ্রসঙ্গে তিনি এতদিন কিছু লেখেননি। হতে পারে! কত কিছুই তো হয়। তাছাড়া শাহসও একটা ফেক্টর। তাই ভারতেরই নাগরিক, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ কী সেন যেন, বলতে পেরেছেন, এখন আর তিনি একজন ভারতীয় হিসাবে গর্বিত নন।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচীব পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা ক্ষুণ্য হয়, এমন কোন পদক্ষেপ যেন গ্রহণ না করা হয়।’

ক্ষমতাসীন মহল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা এত বেশী বলে যে, স্বপ্ন তখন আর স্বপ্ন থাকে না। আসুন দেখি, কাশ্মীর সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর কী চিন্তাচেতনা? যদি বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থান বঙ্গবন্ধুর চিন্তাচেতনার সঙ্গে সঙ্ঘর্ষপূর্ণ হয় তখন বিষয়টা আমরা কীভাবে নেবো? বঙ্গবন্ধুর তো বিশ্বাস ছিলো, কাশ্মীর ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় না, বরং তিনি পরিষ্কার মতামত দিয়েছেন যে, গণতন্ত্র ও গণভোটই হচ্ছে কাশ্মীর সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘ভারতের উচিত ছিলো গুলির পরিবর্তে গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে নেয়া।’

তিনি আরো বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ভারত গণভোটের পথে যেতে রাজি নয় কেন? কারণ তারা জানে, কাশ্মীরের জনগণ ভোট দেবে না। তাই যুলুম করেই দখলে রাখতে হবে। আমার মনে হয়, ভারতের একগুঁয়েমিই দায়ী শান্তি না হওয়ার জন্য।’

অনেক কিছুই বলার ছিলো, কিন্তু বলার সুযোগ নেই। পরিশেষে আমরা জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে ঐ রাজ্যের হাইকোর্টের একটি ঐতিহাসিক রায় (২০১৫ সাল) উল্লেখ করছি

যার মর্মার্থ হলো, কাশ্মীর ভারতের অংশ নয়। ভারত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করতে পারে না। ...

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা