রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭)

তোমাদের পাতা

কিছু দিনের কিছু অনুভূতি!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

ইবনে রাবী, হাতিয়া

১৭-৭-৩৯ হি.

পুষ্পের দ্বিতীয় প্রকাশনায় আমার প্রকাশিত একটি লেখা পড়ছিলাম, এমন সময় আমার পুত্র না‘ঈম তার নিজস্ব ভঙ্গিতে আমার কাছে দৌড়ে এলো। ইচ্ছে হলো, প্রিয় সন্তানের কাছে প্রিয় পুষ্পের পরিচয় তুলে ধরি। ‘অর্ধদশক অতিক্রম করা আমার নাঈম প্রথমবারের মত পুষ্পের সঙ্গে পরিচিত হলো এবং খুশী হলো। ‘মাসিক আলকলম’ বেশ কসরত করে বানান করার মাধ্যমে এ পরিচয়। এ যোগ্যতাটুকু ওর এসেছে বাংলায় বিসমিল্লাহ-এর ওছিলায়। এখন সে ‘খ ও ঘ’ অংশটুকু পড়ছে। সঙ্গে রয়েছে সংশ্লিষ্ট শব্দাবলী এবং ছোট ছোট বাক্যের সুন্দর কিছু উপদেশ। হৃদয় দিয়ে লেখা বাক্যগুলো শিশুদের কোমল হৃদয়ে সহজেই গভীর রেখাপাত করে। অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে।

একবার ও মায়ের সঙ্গে খুব যিদ করছে। মা চেষ্টা করেও থামাতে পারছে না। ঘরের মুরুব্বিরাও না। তখন ওর ছোট ভাই বললো, ‘তুমি না পড়েছো, মা-বাবার কথা মান। মা-বাবার আদব কর! সঙ্গে সঙ্গে ও নরম হয়ে গেলো। আমার আম্মাও অবাক! তখন আমি বললাম।...

০০ আপনি ঠিকই বলেছেন, তবে পূর্ণ সত্য এই যে, গ্রহণকারী হৃদয়টির ‘রক্ত’ এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রভাবক ভূমিকা রাখে।

২০-৭-৩৯ হি. শনিবার

কুলিয়াদি ও দিঘুলিয়ার টেক হচ্ছে ধনীকে আরো ধনী এবং গরীবকে আরো গরীব বানানোর এক আদর্শ জনপদ! ভূমি দস্যু নামে পরিচিত শকুনদের আনাগোনা আবার শুরু হয়েছে। এবার বোধহয় অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো তাদের পূর্বপুরুষের বাস্তুভিটা আর রক্ষা করতে পারবে না। হে আল্লাহ একমাত্র তুমিই অসহায়ের সহায়।

২২-৭-৩৯ হি. মঙ্গলবার

ভোর না হতেই বেশ জমে ওঠে কল্যাণী বাজার। এটি শাক-সবজির পাইকারী বাজার। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার এবং মধ্যস্বত্ব-ভোগী পাইকারদের মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার বাজার! কবে হবে এমন ব্যবস্থা যেখানে গরীব কৃষক তার ঘামের ন্যায্য মূল্য পাবে, আর তার মুখে হাসি ফোটবে?!

০০ এখানে আপনার বেল-সমাচার (ক্রয় থেকে শরবত পরিবেশন পর্যন্ত) পুরোটাই ছিলো বড় চিত্তাকর্ষক! কিন্তু কী করি! স্থানের সীমাবদ্ধতা!

২৪-৭-৩৯ হি. বৃহস্পতিবার

রাস্তার উপর আরেক রাস্তা, যার নাম উড়াল সেতু! গ্রামের সহজ সরল মানুষ শহরে এসে ধাঁধায় পড়ে যায়, বিশেষ করে রাতের আলোর মধ্যে। ভাবে, গাড়ীগুলো শূন্যের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে! আমার সহজ সরল আম্মাও তাই ভাবলেন চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় এসে। আমার কাছে জানতেও চাইলেন শূন্যে উড়ে চলার রহস্য! সব শুনে বললেন, ‘আল্লায় মানুষরে কত বুজ-ব্যবস্থা দিছে!’

সবাই যদি এমন সরল হতো! এমন শিক্ষায় সমৃদ্ধ হতো!

২৮-৭-৩৯ হি. সোমবার

আজ বাইতুল্লাহর ছায়া থেকে ফিরে আসা একজন বয়োবৃদ্ধ বুযুর্গের যিয়ারাত লাভে ধন্য হলাম।

আল্লাহর ইচ্ছায় বাইতুল্লাহর ছায়া লাভ করে যারা ধন্য হন তারা যে দেশের, যে ভাষার এবং যে বর্ণ ও গোত্রেরই হোন, সবার একটি অভিন্ন অবস্থা হলো নূরানিয়াত। নূরানিয়াতের সান্নিধ্যে কিছু না কিছু নূরানিয়াত অবশ্যই আসে।

২৯-৭-৩৯ হি. মঙ্গলবার

ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার এক অবলা নারীর সারা জীবনের লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার কথা কেন জানি আজ মনে পড়লো, আর মনটা অত্যন্ত বিষণœ হয়ে উঠলো। এমন অবলা আমাদের ‘সবল’ সমাজে অসংখ্য।

জন্ম দিয়েই মা বিদায় নিলেন আখেরাতের পথে।

০০ আপনি লিখেছেন, ‘মা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।’ এটা মুবতাযাল তা‘বীর (তরল ও লঘু অভিপ্রকাশ) সব ক্ষেত্রে এর ব্যবহার মনে হয় ঠিক না।

বাবা ‘জীবনের প্রয়োজনে’ দ্বিতীয় বিবাহ করলেন। সৎ মা তার যাবতীয় অর্থ ও মর্ম নিয়ে এলো এতীম মেয়েটির জীবনে। তখন থেকেই শুরু হলো দুঃখ-কষ্ট ও লাঞ্ছনার জীবন। বাবার পিতৃ¯েœহ প্রায় অক্ষুণœ ছিলো বলে কিছুটা রক্ষা। এটা অবশ্য ব্যতিক্রম। আমাদের দেশের বাস্তবতা তো হলো, ‘সৎ মা ঘরে এলে বাবা হয় তালই।’

বাবাই বিয়ে দিলেন তার সাধ্যমত এবং বিবেচনা মত উপযুক্ত পাত্রের সঙ্গে। জীবনের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলা যায় ভালোই চলছিলো নতুন জীবন। বাবা জামাইকে লিখে দিলেন একখ- জমি। কিন্তু সৎ ভাইরা তা বুঝিয়ে দিলো না। তখন থেকেই শুরু হলো স্বামীর স্বরূপে আত্মপ্রকাশ। এ যেন আগাগোড়া স্ত্রীরই অপরাধ!

একপর্যায়ে স্ত্রী-সন্তান ফেলে দিয়ে স্বামী চলে গেলো ‘অন্য ঘরে’। এর পরের দীর্ঘ জীবন বর্ণনাকরার ভাষা আমার জানা নেই। শুধু বলা যায়, মহিলটি মরেনি। শুধু যে নিজেই বেঁচে ছিলো তা নয়, কলিজার টুকরো ছেলে মেয়েদেরও বাঁচিয়ে রেখেছিলো।

কয়েক দিন আগে মহিলাটির মরণাপন্ন অবস্থা। বড় ছেলে চিকিৎসার জন্য মাকে ঢাকা শহরে আনলো, যা ছিলো তার সাধ্যের অতীত।

আল্লাহর ইচ্ছায় তার মা তখন সুস্থতার পথে। এমন সময়...

হাঁ, এমন সময় খবর এলো ‘স্বামী’ ফিরে এসেছে ঘরে। ব্যস! ছেলের জোর আপত্তি উপেক্ষা তিনি গ্রামে ছুটে এলেন ‘মাজাযী খোদার’ খেদমতে! কাহিনী কিন্তু একই রয়ে গেলো। আসলে স্বামীর আগমন ছিলো জমানো অর্থের খোঁজ পেয়ে, যা চিকিৎসায় খরচ হয়ে উল্টো তৈরী হয়েছে ঋণের বোঝা। আর এটাই হয়ে গেলো নুতন নির্যাতনের নতুন উপলক্ষ ...

১-৮-৩৯ হি. বুধবার

আমাদের জামেয়া প্রধান মুফতি ... ছাহেবের নিজের কুশলী ও রুচিশীল হাতে তৈরী বাদাম নেহারী, সঙ্গে মাদরাসার উনূনে প্রস্তুতকৃত নানরুটি। এই ছিলো আজকের সকালে আমাদের নাস্তা।

০০ নেহারীর স্বাদের যে বিবরণ তাতে জিহ্বা যদি ‘সিক্ত’ হয় দোষের কী!

হযরত মুহতামিম ছাহেবের মেহমান আপ্যায়নের যে আভিজাত্যের কথা আপনি লিখেছেন, আমি অধমও এর সঙ্গে কিছু পরিচিত। আপনি ঠিকই বলেছেন, রান্না স্বাদের হয় কুশলী হাতের সঙ্গে যখন দিলের খুলূছ যুক্ত হয়। ...

১২-৮-৩৯ হি. শনিবার

যে দাওয়াতি মেহনতের বদৌলতে উম্মত লাভ করেছে নয়া যিন্দেগি, আজ সে মেহনতের এ কী করুণ অবস্থা! তাও নিজেদেরই হাতে! তাহলে এত দিন যারা এত মেহনত করেছে দাওয়াত ও তাবলীগের পথে দ্বীনের উদ্দেশ্যে তা সবই ছিলো...! নইলে এমন কেন হয়!

এত দিন তারা বেশ তৃপ্তি নিয়ে বলতেন মাদরাসার ভিতরের ফেতনা ফাসাদের কথা এবং বলতেন, মাদরাসায়ও দ্বীন নেই, দাওয়াতের আমল নেই। তাই এত ফেতনা ফাসাদ!

ভালো কথা! কিন্তু আজ যে খোদ দাওয়াতের মারকাযে ...!

আফসোস! আমাদের দিল কিন্তু কাঁদে যেমন মাদরাসার জন্য তেমনি দাওয়াত ও তাবলীগের মারকাযেরও জন্য। কারণ দু’টোই আমাদের এবং আমরা দু’টোরই। আরো আফসোস, যারা সমঝোতার মাধ্যম হতে পারতেন তারাও জড়িয়ে পড়েছেন পক্ষ বিপক্ষের ধাঁধায়।

২৪- ৮-৩৯ হি. বৃহস্পতিবার

‘কালি ও কলম’ কত সুন্দর ও আবেদপূর্ণ নাম! সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সাময়িকী। আফসোস, ‘কালি ও কলম’ ব্যবহৃত হচ্ছে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ, আর উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রচারের কাজে।

অবাক কা-! এরা আবার ফিলিস্তীনের প্রতি দরদী হয় কীভাবে?! পরে বুঝলাম, ফিলিস্তীনের নাকি দু’টি চেহারা রয়েছে। একটি হলো ইসলামী, বর্তমানে যার প্রতিনিধিত্ব করছে ‘কালো তালিকাভুক্ত হামাস! আরেকটি হলো জাতীয়তাবাদী, যার বর্তমান প্রতিনিধি আলফাতাহ ও মাহমূদ আব্বাস। আলফাতাহ একসময় ‘সাদা তালিকায়’ ছিলো। জেরুসালিম প্রশ্নে মাহমূদ আব্বাস কী কারণে যেন এখনো ট্রাম্পের ‘সহযোগী’ ও কুশনারের বন্ধু বিন সালমানের আদেশ মেনে নিতে প্রস্তুত নন! তাই আলফাতাহ এখন ...

 তো ‘কালি ও কলম’-এর পাতায় ফিলিস্তীনী কবি মাহমূদ দারবিশ ও তার কবিতার সগৌরব উপস্থিতি দেখে প্রথমে বিস্মিত হলেও, পরে আমার কাছে ‘সিসিম ফাঁক’ হলো। মাহমূদ দারবিশের প্রথম যোগ্যতা, তিনি ধর্মবিমুখ জাতীয়তাবাদী। দ্বিতীয় যোগ্যতা, ইয়াসির আরাফাতের মত তিনিও প্রকাশ্যে দু’টি এবং অপ্রকাশ্যে বহু ‘কিতাবী’ ললনার বিনোদন সঙ্গী।

আমাদের দেশেও রয়েছে এর নযীর। একসময় যিনি ‘তেতুল হুযূর’ এখন তিনি ...!

একসময় যে হেফাযত বাইতুল মুকাররামে ‘কোরআন জ্বালায়’ এখন ...!!

এক সময় যারা শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে বুকে গুলি খায়, তারা আবার...!!!

৯-৯-৩৯ হি. শুক্রবার

ভালো লাগে, আমার ছোট্ট ছেলে শুদ্ধভাষায় কথা বলার চেষ্টা করছে। আঞ্চলিক ভাষা এসে যায়, নিজেই আবার তা সংশোধন করে নেয় ...!

তার কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ‘আমারা দু’জন’ রীতিমত পেরেশান! প্রশ্নের উত্তর পেয়ে আবার একই প্রশ্ন, এটা কী? আবার! আবার! ...

মাঝে মধ্যে বিরক্ত হই না তা নয়, তবু চেষ্টা করে যাই এ কথা ভেবে যে, এটা তো মা-বাবার কাছে শিশুর অধিকার!

প্রশ্ন হলো বুড় মা-বাবার কি কোন হক নেই যুবক পুত্রের কাছে?!

মনে পড়ে প্রসিদ্ধ ঘটনা। বুড়ো বাবার একই প্রশ্নের বারবার উত্তর দিতে দিতে পুত্র বিরক্তি প্রকাশ করলো। বুড়ো বাবা তখন মৃদু স্বরে বললেন, বাবা রে, একই প্রশ্ন তুমি শিশুকালে আমারেদশবার করছিলা। আমি তো বিরক্ত হই নাই! ...

২৮-৯-৩৯ হি. বুধবার

আজ ঘর ও উঠান পরিচ্ছন্ন করার কাজে আমরা দু’জন যথেষ্ট পরিশ্রম করলাম। ছোটরাও উৎসাহের সঙ্গে শরীক হলো। পরে ছোট ছেলে বলে, আব্বু, ঘরটা আজ খুব সুন্দর লাগছে! বাইরের পরিচ্ছন্নতা আসলে হৃদয়কেও পরিচ্ছন্ন করে!...

পুরো পরিচ্ছন্নতার কাজে আমাদের সময় লেগেছে, কষ্টও কিছু হয়েছে, সত্য! তবে অন্তরে যে শান্তি অনুভূত হয়েছে তার সত্যি কোন তুলনা নেই।

০০ প্রিয় ইবনে রাবী! আপনার সুদীর্ঘ রোযনামচা শুরু হতে শেষ, অত্যন্ত নিবিষ্টতার সঙ্গে পাঠ করেছি। আপনার লেখা যথেষ্ট বিশদ ও বিস্তৃত এবং তাতে রয়েছে গভীরতা ও দূরদৃষ্টির ছাপ।

বোঝা যায়, প্রচুর মেধা শ্রম ও অধ্যবসায় রয়েছে এর পিছনে।

হায়, আপনার মত যত্ন ও পরিচর্যার সঙ্গে যদি আজকের তরুণরা রোযনামচা লিখতো তাহলে ...!

কিছু কিছু স্পর্শকাতর বিষয় ছিলো যা পত্রিকায় আসা ঠিক নয়, সেগুলো সম্পাদনার সময় বাদ দিয়েছি।

আশা করি, আপনার কাছ থেকে পুষ্প নতুন নতুন লেখা পেতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

রোযনামচা বা অন্য যে কোন লেখা আরেকটু ফাঁক করে লিখলে ভালো হয়! আমাদের জন্য সুবিধা হয়।

অন্তরের অন্তস্তল থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা