রবিউছ ছানী ১৪৪৫ হিঃ

তোমাদের পাতা

কাশ্মীরের ই তিহাস-৩

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

কা  শ্মী  রে  র  ই  তি  হা  স-৩

‘রিনচনা’ সম্পর্কে হিন্দু লেখক-বর্গ তাদের স্বভাবসুলভ যে মন্দ কাজটি করেছেন, তা হলো ইতিহাসের সত্যকে অর্ধসত্য রূপে পরিবেশন করা। এতে হিন্দুধর্ম বা হিন্দুসমাজের প্রকৃত লাভ কী তা বোঝা মুশকিল! তবে নিজেদের ইতিহাসের ক্ষেত্রে তো বটেই, মুসলিম ইতিহাসের ক্ষেত্রেও তারা এ কাজটি বেশ কুশলতার সঙ্গেই করে থাকেন সমকালীন সমাজ-পরিবেশের সঙ্গে মোটামুটি খাপ খাইয়ে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ভদ্রলোকেরা অর্ধসত্যের পরিবর্তে, সত্যকে সম্পূর্ণ বিকৃত করতেই বেশী পছন্দ করেন। বস্তুত এভাবেই হিন্দু লেখকদের হাতে এবং (একই ভাবে) ইউরোপীয় লেখকদের হাতে ইসলাম ও মুসলিম জাতির ইতিহাস বারবার আহত হয়েছে এবং হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। এ সম্পর্কে অন্যসুযোগে আরো কিছু তিক্ত সত্য সামনে আনার ইচ্ছা রয়েছে।এখানে এ বিষয়ের অবতারণা যে কারণে তা-ই বলার চেষ্টা করি, ইতিহাসচর্চার নামে হিন্দু লেখকবর্গ, বরাবর যে কথাটা বলার চেষ্টা করেন, তা হচ্ছে বলপূর্বক ইসলামপ্রচার। তাদের মতে শুরু থেকেই মুসলিম শাসকগণ ভারতে মানুষকে জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছেন। ইতিহাসের কথা থাক, বর্তমানেও সবদিক থেকে পর্যুদস্ত যে মুসলিম সমাজ, তাদের প্রতিও একই অপবাদ! ইসলামের প্রচারকার্যে নিযুক্ত নিরীহ দা‘ঈ, তাদের নামে খুব জোরেশোরে এ অপবাদ আরোপ করা হচ্ছে যে, লোভলালসা ও ভয়ভীতির মাধ্যমে নাকি হিন্দুকে মুসলিম বানানো হচ্ছে, যা শুধু ভিত্তিহীনই নয়, বরং প্রতিক‚ল সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গেও যার কোন মিল নেই। এমনকি বলা হচ্ছে, মুসলিম যুবকরা হিন্দু তরুণীদের ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে ইসলামধর্মে দীক্ষিত করছে, যার নাম হলো ‘লাভ জিহাদ’।রিনচেন, এর ক্ষেত্রে ‘জোরপূর্বক’ তত্ত¡ প্রয়োগ করা তো সম্ভব ছিলো না, তাই এ ক্ষেত্রে হিন্দুলেখক, যাদের অধিকাংশই আবার কাশ্মীরের পÐিৎসমাজের অন্তর্ভুক্ত, তারা ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বলতে চান, রিনচেন ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছেন তো স্বেচ্ছায়, তবে ইসলামের সত্যতা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নয়, বরং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে তাড়িত হয়ে। ইতিহাসের ঘটনা, বা ঘটনার ইতিহাস তারা এভাবে সাজিয়েছেন যে, মঙ্গোলীয়দের আক্রমণের মুখে কাশ্মীরের হিন্দু শাসক রাজা সুহাদেব সীমাহীন কাপুরুষতার পরিচয় দিয়ে সিংহাসন ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রাণভয়ে তিনি এমনই ভীত ছিলেন যে, জীবনরক্ষার জন্য রাজকোষ থেকে প্রয়োজনীয় সম্পদও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি। ফলে বিশাল রাজকোষ সম্পূর্ণটাই চলে যায় মঙ্গোল আক্রমণকারী জুলচোয়ের হাতে। জুলচোয়ের উদ্দেশ্য রাজ্যজয় ও রাজ্যশাসন মোটেই ছিলো না, তার উদ্দেশ্য ছিলো হত্যালুণ্ঠন ও ত্রাস সৃষ্টি করা। তো কিছুদিন ব্যাপক লুণ্ঠন, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর জুলচোর কাশ্মীর ত্যাগ করে চলে গেলো। কাশ্মীরের পুরো উপত্যকা তখন শাসকহীন অরক্ষিত এক ভ‚খÐ। তো যখন ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য কোন দাবীদার পাওয়া গেলো না, তখন লাদাখের অভিজাত পরিবার থেকে আগত রিনচেনকে সবাই মিলে সিংহাসনে বসিয়ে দেয়। তিনি যেহেতু জুম্মু ও কাশ্মীরের অধিবাসী ছিলেন না, ছিলেন লাদাখের অভিজাত পরিবারের সন্তান সেহেতু সিংহাসনে আরোহণের পর তীব্রভাবে যে সত্যটি তিনি অনুভব করেন তা হলো, জুম্মু ও কাশ্মীরের ভ‚মিপুত্র-দের সঙ্গে তার বিচ্ছিন্নতা। তাই তিনি স্থানীয়দের সমর্থন আদায়ের প্রয়োজন বোধ করেন। তো কী উপায়! তিনি উপায় বের করলেন এভাবে যে, লাদাখের সূত্রে তিনি তো ছিলেন বৌদ্ধ, অথচ কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হচ্ছে হিন্দু ও ব্রাহ্মণ। তাই হিন্দুধর্ম গ্রহণ করাই সিংহাসনের দখল পোক্ত করার জন্য সবদিক থেকে উপযুক্ত। তো সবদিক বিবেচনা করে রিনচেন ব্রাহ্মণসমাজের প্রধান দেবস্বামীর শরণাপন্ন হন এবং নিজেদের সম্প্রদায়ে তাকে বরণ বা গ্রহণ করে নেয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু দেবস্বামী তার অনুরোধ এই যুক্তিতে প্রত্যাখ্যান করেন যে, একমাত্র রক্তসূত্র ছাড়া আর কোন সূত্রে হিন্দুধর্মের উচ্চবর্ণে কারো প্রবেশের সুযোগ নেই; মেধা, বৈদগ্ধ্য ও আনুগত্য, কোন সূত্রেই না! তখন অনন্যোপায় হয়ে তিনি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে সপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করেন।হিন্দু লেখকদের বক্তব্য তো সহজেই বোঝা যায়, কিন্তু ভাবতে সত্যি অবাক লাগে যে, তাদের অনুরসরণে, বরং অনুকরণে কতিপয় মুসলিম কেন এই পাতা ফাঁদে পা রাখলেন! তাদের সামনে তো সুযোগ ছিলো অনুসন্ধান ও গবেষণার পথে চলার। খুব যুক্তিসঙ্গত-ভাবেই তো তারা কিছু প্রশ্ন তুলতে পারতেন। যেমন, রিনচেনের মত বুদ্ধিমান ব্যক্তি, যিনি লাদাখের অভিজাত পরিবারের সন্তান, ধর্মসূত্রে যিনি বৌদ্ধ, তার কি জানা ছিলো না, হিন্দুধর্মের বর্ণব্যবস্থার নিষ্ঠুর প্রকৃতি! তিনি কি জানতেন না যে, অবধারিতভাবেই তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবে! না যদি জানা থাকে, তাহলে তো রিনচেনের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও যোগ্যতা সম্পর্কেই প্রশ্ন জাগে। তাছাড়া নিছক সিংহাসনের স্বার্থেই যদি হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থনের প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাহলে উচ্চ বর্ণে প্রবেশের তো প্রয়োজন ছিলো না, শুধু হিন্দু ধর্ম গ্রহণই যথেষ্ট ছিলো, আর দেবস্বামীর পক্ষেও তা লুফে নেয়া সহজ ছিলো! কিন্তু না তিনি সে পথে গেলেন, না দেবস্বামী তাকে সে পথে প্ররোচিত করলেন! অথচ উভয় পক্ষেরই স্বার্থরক্ষার পথ ছিলো সেটি।আরো বড় প্রশ্ন, মুসলিমদের সংখ্যা বলুন, শক্তি বলুন, আর সামাজিক প্রভাবই বলুন, কোন অবস্থাতেই তো এমন ছিলো না যে, রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তিনি নিজের বৌদ্ধধর্ম ত্যাগ করে ইসলামধর্ম গ্রহণ করতে পারেন!অথচ যদি বলা হয় Ñএবং এটাই সত্যÑ যে, হযরত বুলবুল শাহের মাধ্যমে ইসলামের ধর্মসৌন্দর্য ও মানবিক ঔদার্যে মুগ্ধ হয়েই তিনি সপরিবারে ইসলামধর্মের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন, যা তার জন্য কোনদিক থেকেই অনুক‚ল ছিলো না।এটা এমনই যুক্তিসঙ্গত ও স্বভাবসিদ্ধ কথা যে, তার উপর আর কোন প্রশ্ন ওঠে না।যাই হোক আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সামাজিক ও রাজনৈতিক কোন প্রকার চাপ ছাড়া সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় রিনচেন ১৩৩৯ সালে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন, সম্পূর্ণরূপে আত্মার ডাকে এবং হৃদয়ের আহŸানে সাড়া দিয়ে।বস্তুত একারণেই শাসক রিনচেনের ইসলামগ্রহণ  কাশ্মীরের হিন্দু-বৌদ্ধসমাজে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো, আর হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সমাজের মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিলো।কাশ্মীরের ইতিহাসে এটাই সত্য এবং এটাই বাস্তব যে, যদিও কাশ্মীরে ইসলামের আগমন ঘটেছিলো আরবদের মাধ্যমে ইসলামের আবির্ভাবের কিছু পরে, তবে তখনই ইসলাম গ্রহণের ধারা শুরু হয়েছিলো বলে জানা যায় না। বহুশতাব্দী পরে, হযরত বুলবুল শাহের মাধ্যমে ইসলাম কাশ্মীরে একটি সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক অবকাঠামো লাভ করেছিলো। তবে একটি স্বতন্ত্র শক্তিরূপে ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে মূলত রিনচেন-এর ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে। বলা যায় তিনিই কাশ্মীরের প্রথম মুসলিম শাসক এবং তাঁর মাধ্যমেই শুরু হয় কাশ্মীরের সুলতানি আমল।রিনচেনের অনুরোধে হযরত বুলবুল শাহ তাঁর নাম রাখেন ছদরুদ্দীন। তিনি ১৩২০ থেকে ২৩ পর্যন্ত খুব অল্প সময়ের জন্য কাশ্মীর শাসন করতে পেরেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। তিনি যেমন ছিলেন সাহসী তেমনি ছিলেন উদার। প্রায় সমস্ত মানবিক স˜গুণের অধিকারী ছিলেন, ইসলামগ্রহণের মাধ্যমে যা আরো ঔজ্জ্বল্য অর্জন করেছিলো। প্রজারা তাঁর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলো। জুলচুর হাতে ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হওয়া কাশ্মীরকে তিনি তাঁর অল্প সময়ের শাসনে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে যথেষ্ট এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। সমাজসংস্কার ও রাজ্যশাসন উভয় ক্ষেত্রে রিনচেন ছদরুদ্দীন হযরত বুলবুল শাহের উপদেশ ও নির্দেশনা মান্য করে চলতেন। ফলে তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ এবং অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী শাসকরূপেই পরিচিত হন। অবশ্য হযরত বুলবুল সাহ স্বভাবগত কারণেই রাজার দরবার ও রাজপদবী সযতেœ এড়িয়ে চলতেন। কয়েকবারই তিনি সুলতানের উপহার বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কথিত আছে, তিনি নিজে কখনো রাজদরবারে উপস্থিত হননি, বরং যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সুলতান নিজে তাঁর খানকায় উপস্থিত হয়েছেন, বা তিনি তাঁকে ডাকিয়ে এনেছেন। হযরত বুলবুল শাহ মৃত্যু বরণ করেন, সুলতানের মৃত্যুর কয়েকবছর পর ১৩২৭ খৃস্টাব্দে।ইতিহাসে এমন একটি বর্ণনাও পাওয়া যায় যে, জুলচুয়ের আক্রমণের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পর তার সেনাপতি রামচন্দ্র শাসনভার গ্রহণ করে আত্মরক্ষার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তবে শেষ পর্যন্ত তাকেও আত্মগোপন করতে হয়।জুলচুয়ের কাশ্মীর ত্যাগের পর রামচন্দ্র শাসন-ক্ষমতা গ্রহণের উদ্যোগ নিলে রিনচেন তাকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করে নেন, অথচ শাসকবংশের সঙ্গে, বরং কাশ্মীরের সঙ্গেও তাঁর কোন সম্পর্ক ছিলো না। তাঁকে মনে করা হতো, বিদেশী এবং রাজসেনাপতিকে হত্যার মাধ্যমে অবৈধভাবে সিংহাসন দখলকারী। বস্তুত এজন্যই তার প্রয়োজন হয়েছিলো কাশ্মীরের ‘মাটি ও মানুষের সঙ্গে’ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার। একই কারণে কৌশলরূপে তিনি প্রধান সেনাপতির বিধবা কোটা রানীকে বিবাহ করেন।বিবাহের বিষয়টি সঠিক হলেও, নিরপেক্ষ ইতিহাসে এর প্রমাণ নেই যে, রিনচেন রামচন্দ্রকে হত্যা করে প্রথমে সিংহাসন দখল করেন, তারপর ভয় ও প্রলোভনের মাধ্যমে রামচন্দ্রের বিধবা কোটারানীকে বিবাহ করেন। সবদিক বিচার করলে এটাই সঠিক মনে হয় যে, রামচন্দ্রের মৃত্যু ঘটেছিলো, হয় স্বাভাবিকভাবে, না হয় অন্যকোন উপায়ে, তবে রিনচেনের হাতে কিছুতেই না। ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে তাকে তো বিশিষ্টজনদের অনুরোধে সিংহাসন গ্রহণ করতে হয়েছিলো। আর কোটাদেবীর সঙ্গে রিনচেনের বিবাহ তাঁরই অনুরোধে সম্পন্ন হয়েছিলো বলে বর্ণনা রয়েছে, যা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষত যখন দেখা যায়, উভয়ের দাম্পত্য জীবন ছিলো সুখের এবং তাদের একজন পুত্রসন্তানও হয়েছিলো। আর কোটারানীও স্বেচ্ছায় স্বামীর সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তখন সহজেই বৌদ্ধ ও হিন্দুসম্প্রদায়ের সাহায্যে বিদ্রোহের পথ গ্রহণ করতে পারতেন। পরবর্তী সময়ের তার যে স্বভাব ও চরিত্রের বর্ণনা হিন্দু লেখকগণ দিয়েছেন তা সত্য হলে তো ঐ সময় বিদ্রোহ করাই ছিলো তার জন্য উপযুক্ত! আসলে মিথ্যা সাজিয়ে বলার জন্যও একপ্রকার যোগ্যতার প্রয়োজন।সুলতান ছদরুদ্দীনের বিশ^স্ত উযীর ছিলেন শাহমীর নামে কাশ্মীরের একজন বিশিষ্ট মুসলিম, যদিও বলা হয় তিনি কাশ্মীরের ভ‚মিপুত্র ছিলেন না, বরং তার পিতা তাহের, মনে করা হয় একজন তুর্কী, যিনি কাশ্মীরে আগমন করে রাজা সাহাদেবের আনুক‚ল্য লাভ করেছিলেন। সাহাদেব তাকে (অথবা তার পুত্র শাহমীরকে) একটি বড় গ্রামও উপহার দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে।সুলতান ছদরুদ্দীন (রিনচেন) এর মৃত্যুর পর শাহমীরের জোরালো সমর্থনে সুলতানের বিধবা কোটারানী শাসন পরিচালনা করতে সক্ষম হন।উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বহিরাগত হানাদারদের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের জনসাধারণ একতাবদ্ধ হয়। ফলে সফলভাবে বাইরের হানাদারি রুখে দেয়া সম্ভব হয়।পরে অনিবার্য কিছু কারণে কোটারানীর সঙ্গে শাহমীরের মতান্তর ঘটে, যা ধীরে ধীরে বিস্তৃতই হতে থাকে। একটি কারণ সম্ভবত এই ছিলো যে, শাহমীর রানীকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা রানী ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। এপর্যায়ে কোটারানী শাহমীরকে এড়িয়ে কয়েকমাস নিজেই কাশ্মীর শাসন করতে থাকেন। ১৩২৩ থেকে ১৩৩৮ পর্যন্ত এভাবেই কৌশলের পর কৌশল অবলম্বন করে কোটা রানী ক্ষমতা রক্ষা করে চলেছেন। তবে শেষপর্যন্ত তিনি এ বাস্তবতা বুঝতে পারেন যে, নারীর দুর্বলতা নিয়ে সিংহাসন ও শাসনক্ষমতা আর বেশী সময় ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কোটারানী তখন শাহমীরের পরিবর্তে ভিকসানাকে উযীর নিযুক্ত করেন, যিনি শাহমীরের পরই ছিলেন দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। তবে তিনি ছিলেন হিন্দুসম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। রানী আরেকটি কাজ করেন, অর্থাৎ ইন্দর-কোটের মজবূত দুর্গে রাজধানী স্থানান্তর করেন।কোটারানীর প্রথম কৌশলটিকে ভুল বলা না গেলেও, দ্বিতীয় পদক্ষেপটি অবশ্যই আত্মঘাতী ছিলো।এ পদক্ষেপ শহমীরকে তো ক্রুদ্ধ করেছিলোই, সাধারণ কাশ্মীরীদের মধ্যেও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিলো। এই গণঅসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে শাহমীর কোটারানীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং বলতে গেলে কাশ্মীরী জনসাধারণের সমর্থনে রানীকে উৎখাত করে নিজেই সিংহাসনে আরোহণ করেন।

(চলবে ইনশাআল্লাহ্)

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা