আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের পরিবর্তনে অবশ্যই রয়েছে বহু নিদর্শন চিন্তাশীলদের জন্য।
সুতরাং আল্লাহর কুদরত অনুধাবনের জন্য এবং বিশ্বজগতের পরতে পরতে গচ্ছিত শক্তিসমূহ দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্য চিন্তা-গবেষণা করা অবশ্যই একটি উত্তম ইবাদত এবং উম্মাহর অনেক বড় খিদমত। চিন্তাশীল তথা, জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ-এর কাছে এটাই শরী‘আতের দাবী ও নির্দেশ এবং একই সঙ্গে পথনির্দেশ।
পৃথিবীর বাইরে যাওয়ার উপদেশ
‘সদ্যপ্রয়াত’ বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিং বলেছেন, ‘মানুষের উচিৎ হবে পৃথিবীর বাইরে অন্যকোন গ্রহে উপনিবেশ গড়ে তোলা। কারণ অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠবে।’
তাত্ত্বিক পদার্থবিদ হকিং যদি এটা বলে থাকেন মানবজাতির ‘অপদার্থতা’র প্রতি তির্যক মন্তব্যরূপে তাহলে তার এ উপদেশ অবশ্যই চিত্তাকর্ষক।
পক্ষান্তরে যদি এটা হয় তার ‘সিরিয়াস’ মন্তব্য তাহলে অবশ্য
আমাদের অবাক হতেই হবে। সর্বশেষ পর্যবেক্ষণের ফল তো এটাই যে, সৌরজগতে একমাত্র পৃথিবী ছাড়া আর কোন গ্রহ মানুষের বসবাসের উপযোগী নয়। আর সৌরজগতের বাইরে যদি কোথাও উপযুক্ত নক্ষত্র বা গ্রহ থেকেও থাকে, সেখানে মানবজাতিকে উপনিবিষ্ট করার কথা চিন্তা করা...
আচ্ছা, তা না হয় সম্ভব হলো, কিন্তু সেই নক্ষত্র বা গ্রহ কতদিন মানব-জাতির বসবাসের উপযুক্ত থাকবে, কেউ কি বলতে পারে? মানুষ তো সেই দূর নক্ষত্রলোকে তার স্বভাব-চরিত্রসহই যাবে!
তার চেয়ে যুক্তিসঙ্গত ও বুদ্ধিদীপ্ত পরামর্শ তো হবে, মানুষ যেন এই পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী রাখার চেষ্টা করে। আর তা সম্ভব হবে শুধু তখনই যখন মানুষ জানতে চাইবে পৃথিবীতে তাকে প্রেরণের মধ্যে স্রষ্টার আসল উদ্দেশ্য কী? এবং সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য স্রষ্টা-নির্দেশিত পথ ও পন্থা কী? চিন্তার ঋজুতা, সরলতা ও ঋদ্ধতা আসলেই আল্লাহর পক্ষ হতে বড় দান।
আমাদের অবলোকন এবং আলোর গতি
আমরা আলোর সাহায্যে দেখি। সুতরাং আমাদের দেখা নির্ভর করে আলোর গতির উপর। যেমন, আলোর গতি সেকেন্ডে ৩০০০০০ কিলোমিটার। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে লাগে আট মিনিট প্রায় আঠারো সেকেন্ড। সুতরাং বাস্তবতা এই যে, সূর্যকে আমরা যখন যেখানে যে অবস্থায় দেখি সেটা বর্তমান সময় থেকে আট মিনিট আঠারো সেকেন্ড আগের অবস্থা। সূর্যের বর্তমান অবস্থা কখনোই আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।
দূর আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের দূরত্ব পরিমাপ করা হয় আলোকবর্ষ দ্বারা। অর্থাৎ আলো তার উৎস থেকে তার নিজস্ব গতিতে পৃথিবীর সময় হিসাবে একবছরে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করে সেটা হবে এক আলোকবর্ষ। পৃথবী থেকে কোন কোন তারকার দূরত্ব এক আলোকবর্ষ, একশ, একহাজার, একলাখ, এককোটি, এমনকি কোটি কোটি আলোকবর্ষ। তো খালি চোখে, বা দূরবীনের সাহায্যে আমরা কোন নক্ষত্রের যে অবস্থা দেখতে পাই তা ঐ নক্ষত্রের বর্তমান অবস্থা কিছুতেই নয়; বরং যত আলোকবর্ষ দূরত্বে ঐ নক্ষত্রের অবস্থান, আমরা আসলে ঐ নক্ষত্রের অত আলোকবর্ষ অতীতের অবস্থা দেখতে পাই। বর্তমান অবস্থা হয়ত অনেক ভিন্ন হয়ে পড়েছে, যা দেখতে পাবে (হয়ত) বহু কোটি বছর পরের মানুষ।
আলোর পরিচয় এবং আলোর গতি সম্পর্কে মুসলিম বিজ্ঞানিগণ অনেক আগেই গবেষণা শুরু করেছিলেন, কিন্তু ...
কামনা করি, বিজ্ঞানের গবেষণা ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে আবার ফিরে আসুক আমাদের গৌরবময় অতীত।
স্লো মোশন টাইম মেশিন
তিনি যন্ত্রবিজ্ঞানী। নাম আমীর হোসেন। ইতিমধ্যে তিনি দেশীয় প্রয়োজনে বিভিন্ন যন্ত্র উদ্ভাবন করে সাড়া জাগিয়েছেন। এবার তিনি
নিজের সকল পূর্বকীর্তিকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন স্লো মোশন টাইম মেশিন উদ্ভাবন করে। এটা মূলত সূর্যের অভ্যন্তর থেকে আসা তাপশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহারের প্রযুক্তি, যা যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেনের দীর্ঘ নয় বছরের গবেষণার ফসল। তিনি মনে করেন, তার উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি পদার্থবিজ্ঞানের অঙ্গনে এক নতুন যুগের সূচনা করবে।
তিনি বলেন, এ যন্ত্রটি সূর্যের তাপরশ্মি গ্রহণ করে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল রাখার জন্য ¯œায়ুর ভিতরে নতুন রক্তের সেল তৈরী করে নির্জীব কোষগুলোকে সজীব রাখবে।
তিনি বলেন, আমার মায়ের চিকিৎসার সময় জানতে পারি, মানবদেহে সবসময় এক ধরনের তাপশক্তি প্রয়োজন। এই তাপশক্তি নিষ্ক্রিয় হলে ঔষধ কোন কাজ করে না। দেহের প্রতিটি কোষের একটি নির্দিষ্ট আয়ু আছে। ঐ আয়ুষ্কাল পার হলে কোষ মরে যায় এবং নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু তাপনিষ্ক্রিয় জীবদেহে কোষপ্রতিস্থাপনপ্রক্রিয়া থেমে যায়; ফলে....। স্লো মোশন... যন্ত্রের সাহায্যে তাপশক্তি সঞ্চালন করার মাধ্যমে প্রাণপ্রক্রিয়া সচল করা সম্ভব। তিনি বলেন, তাপরশ্মি-চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলে আমার মাকে তখন সুস্থ করা সম্ভব হতো।
আমীর হোসেন বলেন, পৃথিবীতে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা ভূপৃষ্ঠের অনেক নীচে আলো ও অক্সিজেনবিহীন অঞ্চলে দিব্বি বেঁচে আছে ভূগর্ভের তাপরশ্মিকে কাজে লাগিয়ে। তো যখন তাপশক্তির অভাব দেখা দেয় তখন তাপশক্তি সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে যে কোন জীবদেহের প্রাণপ্রক্রিয়া সচল রাখা সম্ভব।
আমাদের দেশে কোন রহস্যজনক কারণে দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনকে কদর করা হয় না। পিছনে এর প্রচুর নযির রয়েছে। আশা করি যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেনের ক্ষেত্রে এ দুঃখজনক অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে না। বরং তার প্রতি সহযোগিতার হাত ....
রেডিও টেলিস্কোপ
১৯৩১ সালে উদ্ভাবিত হয়েছে রেডিও টেলিস্কোপ। এর সাহায্যে আমরা রেডিও তরঙ্গ আহরণ ও বিশ্লেষণ করতে পারি।
বহু নক্ষত্র থেকে এবং কোন কোন গ্রহ থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে রেডিও তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। সেটা বিশ্লেষণ করে নক্ষত্র ও গ্রহের অবস্থা জানা যায়।
এমন জ্যোতিষ্কও রয়েছে যাদের বলা হয় কোয়াসার (য়ঁধংধৎ) কোয়াসার আকারে অন্যান্য নক্ষত্রের চেয়ে বেশ ছোট। কিন্তু প্রতিটি কোয়াসার থেকে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে বিপুল তেজ, বিকিরণ ও ৎধফরধঃরড়হ রূপে।
কোয়াসারের অভ্যন্তরে কী করে এত বিপুল তেজ উৎপন্ন হচ্ছে তা ব্যখ্যা করা এখনো সম্ভব হয়নি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, কোয়াসার সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি যখন আরো বিস্তৃত হবে তখন বিশ্বজগত সম্পর্কে আমাদের ধারণায় অনেক পরিবর্তন আসবে।