পদার্থের ভর ও ঘনত্ব
এসো, এখানে আমরা পদার্থ বিজ্ঞানের একটি সহজ সূত্র সম্পর্কে আলোচনা করি। সূত্রটি হলো, সমান আয়তনের বিভিন্ন বস্তু ও পদার্থের ভর ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।সুতরাং এক লিটার পানি, এক লিটার তেল, এক লিটার মধু এবং এক লিটার দুধ এগুলো আয়তনে তো সমান, কিন্তু এগুলোর প্রতিটির ভর হবে আলাদা। এগুলোর ভর যদি পরিমাপ করি তাহলে সেটাই দেখা যাবে।আরেকটি সূত্র হলো, যে পদার্থের ভর বেশী তার অভিকর্ষের টান বেশী অনুভ‚ত হবে এবং সেই টানের কারণে তা নীচের দিকে যেতে চাইবে এবং যাবে। পক্ষান্তরে যে পদার্থের ভর কম তা অভিকর্ষের টান কম অনুভব করবে এবং তা উপরে থাকতে চাইবে এবং থাকবে।সমান আয়তনের দু’টি ভিন্ন তরল পদার্থ দ্বারা বিষয়টি আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি। এক লিটার বা আধা লিটার তেল একটি কাঁচের পাত্রে নাও। তারপর ঠিক ঐ পরিমাণ পানি ঐ পাত্রে নাও। কী দেখা যাবে?দেখা যাবে, জল নীচে চলে যাচ্ছে, আর তেল উপরে চলে আসছে।আবার পানির সঙ্গে সমান পরিমাণ মধু নাও। তখন দেখা যাবে মধু নীচে চলে যাচ্ছে, আর পানি উপরে আসছে।অবাক হচ্ছো! আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা হচ্ছে সমান আয়তনের বিভিন্ন পদার্থের ভরের ভিন্নতার কারণে। অর্থাৎ পানির ভর বেশী, তেলের ভর কম; তাই পানির ক্ষেত্রে অভিকর্ষের টান বেশী হওয়ার কারণে পানি নীচে চলে যাচ্ছে, আবার তেলের ক্ষেত্রে অভিকর্ষের টান কম হওয়ার কারণে তেল উপরে চলে আসছে।মধুর ক্ষেত্রে অবস্থা হবে বিপরীত। কারণ পানির তুলনায় মধুর ভর বেশী। সুতরাং মধু নীচে যাবে, পানি উপরে আসবে।আচ্ছা, একটা কথা, এই যে বললাম কাঁচের পাত্র; তোমরা আবার ভেবো না যে, ঠিক কাঁচের পাত্রই হতে হবে। না, বরং যে কোন পাত্রেই উপরের পরীক্ষাটা চালাতে পারো, তবে কাঁচের পাত্র হলে সুবিধা এই যে, স্বচ্ছতার কারণে ফলটা সরাসরি দেখা যাবে।এই যে সূত্রটি তোমাদের বললাম, শুধু বই দেখে, বই থেকে তুলে দিয়েছি, এমন নয়। নিজে পরীক্ষা করেও দেখেছি। তোমরাও শুধু আমার কাছ থেকে শুনেই গ্রহণ করো না, বরং নিজেও বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখো।এটাই বিজ্ঞানের দাবীÑ ‘যা শোনবে, পড়বে তা গ্রহণ করার আগে নিজে পরীক্ষা করে সত্যতা যাচাই করে নেবে। আমাদের পূর্বযুগের মুসলিম বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণাগারে সবকিছু হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখে নিতেন। তারপর তাঁদের গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা কিতাবে লিখে রাখতেন। এভাবেই পরবর্তী মানুষের জন্য নিজেদের বিপুল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তাঁরা সংরক্ষণ করে গিয়েছেন। তবে দুর্ভাগ্য এই যে, অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখনকার ইউরোপ ঠিক সময়ে জেগে উঠেছে, আর আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি। জাগ্রত ইউরোপ আমাদেরই পূর্ব-পুরুষের বিপুল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছে, আর ঘুমের ঘোরে অচেতন আমরা পিছিয়ে পড়েছি। ...যাক, পিছনের দিকে তাকিয়ে হায়হুতাশ করে তো আর লাভ নেই; এখন আমাদের জেগে ওঠার সময় এবং পূর্বপুরুষের জ্ঞানগৌরব পুনরুদ্ধার করার সময়।আচ্ছা, আগের আলোচনায় ফিরে যাই। উপরে অভিকর্ষ শব্দটি এসেছে। অভিকর্ষ কাকে বলে, সেটাও আমাদের জানতে হবে। অভিকর্ষ হলো এমন একটি শক্তি বা বল যার মাধ্যমে পৃথিবী কোন বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে বা টেনে আনে। এটাকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বা বলও বলে। পদার্থ বিজ্ঞানে আয়তন কাকে বলে, আয়তন দ্বারা কী বোঝানো হয় তাও আমাদের জানতে হবে।সহজ ভাষায় কোনকিছুর আয়তন মানে তার পরিমাণ। একটু বিশদ-ভাবে যদি বলি, কোন বস্তু যে স্থান জুড়ে থাকে ঐ স্থানটিকে ঐ বস্তুর আয়তন বলে। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদেরকে বিভিন্ন বস্তুর আয়তন ও পরিমাণ নির্ধারণ করতে হয়। কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়, এই তিনটি পদার্থেরই নিজস্ব আয়তন আছে। তবে প্রত্যেক শ্রেণীর পদার্থের আয়তন বা পরিমাণ বিভিন্ন পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়। প্রতিটি পদ্ধতির একক অভিন্ন নয়, বরং ভিন্ন। তাছাড়া আয়তন সাধারণত সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়।সীমাবদ্ধ ত্রিমাত্রিক স্থানের (অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা আছে এমন বস্তুর) ত্রিমাত্রিক পরিমাপের যুক্ত রূপকে ঐ বস্তুর আয়তন বলে।কোন তরল পদার্থের নির্দিষ্ট কোন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা নেই। যে পাত্রে তরল পদার্থ রাখা হয় তা ঐ পাত্রের আকার ধারণ করে। তাই কোন তরল পদার্থ কোন পাত্রের যে পরিমাণ জায়গা জুড়ে থাকে সেটাই হবে ঐ তরল পদার্থের আয়তন। তাই নির্দিষ্ট আকৃতির মাপনী দ্বারা তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপ করা হয়।তরল পদার্থের ক্ষেত্রে আয়তন নির্ধারণ করা হয় লিটার দ্বারা, যার একক হলো মিলি লিটার।সাধারণত কঠিন পদার্থের আয়তন মাপা হয় স্কেল দ্বারা।আয়তনের বৈশিষ্ট্য, কোন অবস্থাতেই পদাথের আয়তন শূন্য হয় না। সমান ভরের বিভিন্ন পদার্থের আয়তন বিভিন্ন। যেমন এককেজি পাথরের চেয়ে এককেজি তুলার আয়তন বেশী।আমরা জানি, কোন বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা/ উচ্চতা একযোগে পরিমাপ করলে ঐ বস্তুর আয়তন বের হয়।বিভিন্ন আকৃতি, যেমন সরল প্রান্তযুক্ত এবং বৃত্তাকার আকৃতিগুলোর আয়তন ভিন্ন ভিন্ন সূত্র দ্বারা নির্ধারণ করতে হয়। গোলকের আয়তন নির্ধারণ করতে হলেও আমাদের আলাদা সূত্র ব্যবহার করতে হবে। মোটকথা, আমরা যখন যে ধরণের বস্তুর আয়তন নির্ধারণ করবো তখন ঐ বস্তুর উপযোগী সূত্র ব্যবহার করতে হবে।***এবার আরেকটি কথা। সমান আয়তনের বিভিন্ন পদার্থের এই যে ভিন্ন ভিন্ন ভর, এখান থেকেই পদার্থ বিজ্ঞানে পদার্থের ঘনত্বের ধারণা তৈরী হয়েছে। পদার্থের ঘনত্ব কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে?এখানে আমরা ভর ও ঘনত্ব সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবো। বিজ্ঞানের স্বীকৃত সত্য এই যে, বেশী ঘনত্বের জিনিস সবসময় অভিকর্ষের টান অনুভব করবে এবং সেই টানের কারণে তা নীচের দিকে যেতে চাইবে এবং যাবে। পক্ষান্তরে তার তুলনায় কম ঘনত্বের জিনিস উপরে উঠে আসতে চাইবে এবং আসবে।