শাবান ১৪৩৯ হিঃ (৩/৪)

টেকনাফ/তেতুলিয়া

যানজটে জান যাওয়ার উপক্রম!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

বাংলাদেশের এখন জ্বলন্ত জনদুর্ভোগের নাম যানজট। বস্তুত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে যানজটের কারণে জনজীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সবচে’ হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, এ দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী তা কারোই জানা নেই।

রাজধানী ঢাকায় এখন যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচকিলোমিটার, যা মানুষের পায়ে হাঁটার গতির প্রায় সমান। কিছুদিন পর হয়ত মানুষ পায়ে হেঁটেই গাড়ীর আগে পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। গাড়ীতে শুধু তারাই ওঠবে যারা হাঁটতে অক্ষম। অথচ ২০০৪ সালেও গাড়ীর গড় গতি ছিলো ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।

সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা গেছে, যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় প্রতিদিন পঞ্চাশ লাখ কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। (হাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন, সাইত্রিশ হাজার কোটি টাকা!)

ইচ্ছে করলে আপনি ‘রাবিশ, বোগাস, স্টুপিড’ জাতীয় শব্দ বলে জরিপের তথ্য উড়িয়ে দিতে পারেন, কিন্তু যানজটের যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে অসহায় জনগণ তা অস্বীকার করতে পারবেন না; এমনকি আমাদের সড়কযোগাযোগ মন্ত্রী, বা বার্ধক্যভারে জর্জরিত অর্থমন্ত্রীও না।

***

যানজটের প্রধান কারণ কী, প্রশ্ন করলে প্রথমেই আসে সড়কস্বল্পতার কথা। এক হিসাবে দেখা যায়, শহরের মূল আয়তনের অনুপাতে রাস্তার পরিমাণ পাঁচ- শতাংশের বেশী কিছুতেই হবে না, যেখানে আদর্শ শহরের জন্য প্রয়োজন অন্তত পনেরো শতাংশ সড়ক। তদুপরি বিদ্যমান সড়কের বিরাট অংশ আবদ্ধ থাকে অবৈধ পার্কিং, ভাসমান ক্রেতা-বিক্রেতার সড়ক ও ফুটপাথ দখল, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো নামানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়া।

আরেকটি ছোট্ট কারণ আছে যানজটের, যদিও সেটা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, তবু বলছি; সেটা হচ্ছে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রয়ণে নিয়োজিত বাবুদের রাস্তার মাঝখানে গাড়ী থামিয়ে  ‘খোঁজখবর’ নেয়া! এ দৃশ্যটির সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন মানুষ দেশে কমই পাওয়া যাবে।

***

যানজটের ফলে সবচে’ ভয়াবহ যে উপসর্গ দেখা দেয় তা হচ্ছে স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং মানসিক চাপ, যার প্রভাব পড়ে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের বিস্তৃত ক্ষেত্রে। যানজটের কারণে যথাসময়ে হাসপাতালে নিতে না পারার কারণে পথেই বহু রোগী মারা যায়, যা সত্যি বড় মর্মন্তুদ!

এছাড়া যানজটের কারণে ব্যক্তির কর্মদক্ষতা ও কর্মস্পৃহাও প্রভাবিত হয়। গাড়ীচালকদের মানসিক অস্থিরতার কারণে দুর্ঘটনার হারও অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যায়।

আরেকটি বড় ক্ষতি, যা সাধারণত গবেষকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। সেটা হচ্ছে যানজটের কারণে সঠিক সময়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে না পারা । এতে জীবন ও সম্পদের বিপুল ক্ষতি হয়।

***

এখন প্রশ্ন হলো, সমাধান কী? আমাদের বক্তব্য, প্রথমেই প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। বাসসেবা আরো বিস্তৃত ও উন্নত করা। শহরে মেট্টো রেল চালু করা।

আরো অনেক প্রস্তাবই পেশ করা আছে সরকারের কাছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পক্ষ হতে। এখন প্রয়োজন শুধু ....!!

আমরা অসহায় দেশবাসী শুধু কামনা করতে পারি, সদাশয় সরকার একটু যেন বুঝতে চেষ্টা করেন, তারা তো সাইরেন বাজিয়ে চলে যান, বাকী আমজনতার কী করুণ দশা ঘটে যানজটের অথৈ সাগরে খাবি খেতে খেতে!!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা