দেশের কোন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে শেখ সাদীর সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘ত্যন হ্যমা দাাগ দাাগ শুদ, পুম্বা কুজাা কুজাা নিহ্যম’ (সারা শরীরে ক্ষত, মলম লাগাবো কোথায় কোথায়?!)
সত্যি বুঝে উঠতে পারি না, কোন্ সমস্যা এড়িয়ে যাবো, আর কোন্ সমস্যা নিয়ে কথা বলবো?!
কোন জাতির জীবন থেকে লজ্জা-শরম কতটা বিদায় নিলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত কলঙ্কজনক ঘটনা বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে ঘটতে পারে?
প্রথম কিছু দিন তো গেলো এভাবে যে, শিক্ষামন্ত্রণালয় স্বীকারই করবে না, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন ঘটনা তাদের তল্লাটে কখনো ঘটেছে, বা ঘটতে পারে!
দ্বিতীয় ধাপে বলা হলো, আগেও, পাকিস্তানী আমলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে! হায়, মধুশোধন, শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের দোহাই!!
তৃতীয় ধাপে বলা হলো, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কোনভাবেই ছাড়া হবে না। বহু দিন গেলো, ‘চুনোপুটি’ ছাড়া ‘রাঘববোয়াল’ কাউকে ধরাই তো হলো না, ছাড়া হবে কী?!
পরিস্থিতি এখন এ পর্যায়ে নেমে এসেছে যে, জাতির বিবেকের গলায় যেন আজ ফাঁস লেগেছে, তাই এত অবাধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটতে পারছে!
কীভাবে বিশ্বাস করি, এখন শিক্ষক, অভিভাবক ও বাবা-মা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ছাত্রকে, সন্তানকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র যোগাড় করে দিচ্ছেন! কেউ যেন বুঝতেই চাচ্ছেন না, এভাবে তারা কোমলমতি শিশুকিশোরদের বিবেকের গলায়ই ফাঁস লাগিয়ে দিচ্ছেন! দেশের ভবিষ্যত তাহলে কী হবে? কী হতে পারে?!
পত্রিকায় একজনের মন্তব্য ছাপা হয়েছে, যিনি ছাত্রের পিতা এবং স্কুলের শিক্ষক, তিনি খুব নির্লিপ্তভাবেই বলেছেন, বলতে পেরেছেন, ‘আগে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করবো, নাকি বর্তমানকে রক্ষার চেষ্টা করবো?!’
তার এক কথা, ‘আমার সন্তান, আমার ছাত্র, মেধায় পরিশ্রমে যে সবার থেকে এগিয়ে, সে পরীক্ষায় পিছিয়ে যাবে, আর মেধাহীন, অপদার্থ ছাত্র নিছক ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের জোরে ভি চিহ্ন দেখিয়ে উল্লাস করবে! কীভাবে এটা মেনে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকবো?!
তার সর্বশেষ মন্তব্য, ‘ভালো ভালো কথা, বড়দের মুখে সভা সেমিনারেই ভালো মানায়। কিন্তু ...’
একটি সেমিনারে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির দেয়া ভাষণের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি উপরের কথাগুলো বলেছেন। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য ছিলো, ‘মা-বাবা তার সন্তানের এবং শিক্ষক তার ছাত্রের সাফল্যের পিছনে ছুটছেন, কিন্তু মা-বাবা ও শিক্ষককে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, নৈতিকতাবর্জিত সাফল্য কোনভাবেই কাম্য নয়।
ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষা-সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি একথা বলেন। এর আগে তিনি গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যাতে প্রশ্নপত্রফাঁসের ঘটনায় শিক্ষক-অভিভাবকদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সাংবিধানিক মর্যাদা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হলেন জাতির অভিভাবক। সুতরাং যে কোন মঞ্চ থেকেই তিনি উপদেশ দিতেই পারেন। কিন্তু নির্মম সত্য এই যে, আমরা যা বলি তা যদি আচরণে প্রমাণ করতে না পারি তাহলে সর্বোচ্চ সুন্দর বক্তব্যও মূল্য হারিয়ে ফেলে।
আমরা কোমলমতি ছাত্রদের কাছেই আবেদন রাখতে চাই, বিবেক বিসর্জন দিয়ে জীবনে কখনো সফলতা আসতে পারে না। সততার সঙ্গে সাধনা যোগ করো, আর ধৈর্য ধারণ করো, জীবনে সফলতা অবশ্যই ...!!
আর যদি পারো, আল্লাহর সাহায্য কামনা করো, আল্লাহর উপর ...!!