রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

তোমাদের পাতা

সাহিত্যচর্চা ও মাত্রাবোধ

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

মুহম্মদ মিকদাদ/ চৌধুরীবাজার, লালবাগ, ঢাকা

০ ... আপনার মত বুড়ো মানুষকে ভাইয়া বলে, তাদের কি সঙ্কোচ হয় না! আপনারও কি খারাপ লাগে না..!! নাকি আগের সেই ছেলেমি ভাবটা রয়ে গেছে এখনো আপনার ভিতরে?!

০০ যদিও এটা চিঠিপত্র বিভাগের জন্য এবং এর জবাবও হতে পারতো কৌতুকপূর্ণ। কিন্তু আমি এটাকে এখানে আলাদা করে এনেছি। কারণ আমি চাই তোমার প্রশ্নের একটা হাকীকতপূর্ণ ও তত্ত্বসমৃদ্ধ উত্তর দিতে, যাতে এ বিষয়ে সবার উপকারে আসে।

আমার বক্তব্যের খোলাছা হলো ‘মাত্রাজ্ঞান’। আর এটা আমরা শিখতে চাই পুষ্পের মাধ্যমে।

আমি আদীব হুযূর, তাই বলে কী নাতি ও নাতিন আমার সঙ্গে একটু আনন্দ করবে না! আমার চশমাটা একটু লুকোবে না! এটা তো তাদের অধিকার! (যদিও তারা করে না।) ‘নাতি  তো কাঁধেও চড়তে পারে’! কিন্তু নাতি-নাতিন যা পারে,  কোন ছাত্রের কি তা পারা উচিত? আমি শায়খুল হাদীছ হয়েছি বলে কি আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে ‘মিযাহ’ করতে পারবেন না? কিন্তু এটা কি অন্যের পক্ষেও  শোভন?!

তিনি আল্লাহর নবী, হযরত আয়েশা রা. উম্মতি। উম্মতি পরিচয়ে তিনি যা করতে পারেন না, স্ত্রীপরিচয়ে স্বচ্ছন্দে তা করতে পারেন। কন্যা যা পারেন, কন্যার পিতা হযরত আবু বরকর কি তা করতে পারেন?!

আমি বলতে চাচ্ছি, প্রতিটি মানুষ তার সত্তায় অনেকগুলো ব্যক্তিত্ব ধারণ করে এবং প্রতিটি ব্যক্তিত্বের রয়েছে আলাদা দাবী ও চাহিদা, আলাদা অধিকার ও মর্যাদা। তবে মাত্রাবোধ অবশ্যই থাকতে হবে।

আমি যতক্ষণ পুষ্পের পাপড়িকে সঙ্গ দান করি ততক্ষণ আমি আদীব হুযূর নই এবং কোন কিছু নই। শুধু বড়দের জন্য পুষ্পের সম্পাদক, কিশোরদের জন্য সম্পাদক ভাইয়া!  ছোট্ট খোকাখুকুদের জন্য পুষ্পের দাদু ভাই! খোকাখুকুদের সঙ্গে রাশভারী আদীব হুযূর হয়ে বসে থাকলে চলবে কেন?

এটা অবশ্য ঠিক, সবাই মাত্রাজ্ঞান রক্ষা করতে পারে না। কিন্তু আমি যদি সেটা ধরে রাখি তা হলে কলমের জগতে তোমরা আগে বাড়বে কীভাবে?

এই যে তুমি লিখেছো,  ‘ছেলেমি ভাবটা রয়ে গেছে’। এখানে মাত্রা রক্ষিত হয়নি। তুমি লিখতে পারতে, ‘হয়ত আগের সেই শিশুটি রয়ে গেছে আপনার ভিতর’। কিন্তু আমি কিছুই মনে করিনি। কারণ তুমি কলম ধরতে মাত্র শিখছো। তো যখন চিটিপত্র বিভাগে তুমি কলমের মশক করবে, তখন কলমের কিছু বিচ্যুতি হতেই পারে। আমাকে তো এ বিভাগের পরিচালক হিসাবে দায়-দায়িত্ব মেনে নিতেই হবে!

কিন্তু যখন আমি পুষ্পের জলসা থেকে বের হয়ে আসি, তখন আমার অন্য ব্যক্তিসত্তা জাগ্রত হয়। তখন পুষ্পের জলসায় যা চলেছে তা আর চলবে না। তদ্রুপ যখন আমি ‘তোমাদের চিঠি আমাদের পত্র’ এর মাহফিলে থাকি তখন আমি তোমাদের একেবারে নাগালের মানুষটি হয়ে যাই। কিন্তু যখন এই মাহফিল থেকে বাইরে আসি তখন অশোভন একটা শব্দও হয়ত বরদাশত করবো  না। কচি ও কাঁচার আসর সম্পর্কেও একই কথা।

হতে পারে এ ধরনের বহুমুখী রূপ কারো পছন্দ নয়। হতেই পারে। তিনি অবশ্যই তার পরিম-লে অবস্থান করুন। সাহিত্যের অঙ্গনে তার...!  ছোট ছোট কলমগুলোকে কালিতে সিক্ত করা তার...

মোট কথা, সাহিত্যের অঙ্গনে আমি আমার ব্যক্তিত্বের প্রতিটি রূপ নিয়ে সন্তুষ্ট। যখন আমি সম্পাদকীয় লিখি,  হযরত আলী মিয়াঁর পাতা লিখি, ইত্যাদি, তখন আমি আমার ব্যক্তিত্বের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে সমাহিত হয়ে যাই। যখন রসের কলমদানি লিখি তখন من قمة الرأس إلى أخمص القدم

রসে টুইটুম্বুর হয়ে যাই। যখন শিশুদের জলসায় বসি তখন সম্পূর্ণ-রূপে ফিরে যাই আমার শৈশবে। এমনকি যখন আমি নারিদের হয়ে বা নারিদের সম্পর্কে লিখি তখন পুরুষ হয়েও আমার মধ্যে একটি নারিসত্তা জীবন্ত হয়ে উঠে।

এটাই সাহিত্যের ধর্ম। একজন সাহিত্যিকের এটা হয় সারা জীবনের সাধনা। এটা যিনি যতটুকু পারেন তিনি ততটুকুই সাহিত্যিক। এটা না হলে তিনি হয়ত লেখক, সাহিত্যিক কখনো নন।

তো আমি চাই সাহিত্যের সাধক হয়ে সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গনে আমার সমাজের কিছু সেবা করে যেতে। বাকি সবাইকে মাত্রাবোধ অর্জন করার অনুরোধ অবশ্যই করবো। মাত্রাজ্ঞান ছাড়া সবকিছু ...।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা