কিশোর বন্ধুরা!
সালাম গ্রহণ করো। আশা করি, আলকুদ্স সংখ্যা তোমাদের হাতে পৌঁছে গেছে এবং মূল অধ্যয়ন অব্যাহত রেখে, অবসরের সময়গুলো কাজে লাগিয়ে এ সংখ্যার লেখাগুলো তোমরা গভীর মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করছো।
আমাদের জীবনের বড় একটা সমস্যা এই যে, কোন বিষয়ে, বিশেষতঃ দ্বীনী বিষয়ে আমাদের সামান্য হলেও আবেগ আছে জাযবা আছে, কিন্তু বিষয় সম্পর্কে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে জানা নেই। কোন বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতা, বিশেষ করে আলকুদস ও আলআকছা সম্পর্কে অজ্ঞতা সত্যি লজ্জাজনক এবং অমার্জনীয়। আলকুদ্সসংখ্যার মাধ্যমে আমরা আমাদের সেই অজ্ঞতা দূর করার সামান্য কিছু চেষ্টা করেছি। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস সম্পর্কেও আমরা বড় বেশী বে-খবর। আমি সাধারণের কথা বলছি না, বলছি মাদরাসার উচ্চস্তরের তালিবানে ইলমের কথা। পুষ্পের মাধ্যমে যদি আমাদের মধ্যে জানার আগ্রহ জাগ্রত হয় তাহলেও মনে করবো ...।
আল্লাহ তাওফীক দান করুন, আমীন।
পুষ্পের আলকুদ্সসংখ্যা কেমন লেগেছে, জানাবে আশা করি।
***
আমরা অত্যন্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সঙ্গে আশা করছি এখন থেকে পুষ্পের তৃতীয় প্রকাশনা নিয়মিত হবে, ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে তোমাদের সহযোগিতা আমাদের অনেক প্রয়োজন। পুষ্প যদি তোমাদের জীবনের পথে সামান্য আলো, সামান্য পাথেয় দিয়ে থাকে এবং আগামীতেও দিতে পারবে বলে বিশ্বাস করো তাহলে পুষ্পের পথচলা যেন সহজ হয়, মসৃণ হয় সে চেষ্টা করা তোমাদের অবশ্যকর্তব্য।
তোমাদের জন্য লেখা পুষ্পের প্রতিটি লেখা যতেœর সঙ্গে পড়ো। এর আলো ও শিক্ষাটুকু জীবনে ধারণ করার প্রতি যতœবান হও। নিজের কলম পুষ্পের জন্য কোন না কোনভাবে সচল রাখো। আমদের জন্য লেখার উপাদান সরবরাহ করো। এটাই তোমাদের পক্ষ হতে আমাদের জন্য বড় সহযোগিতা। আবার দেখা ...!
জোনাকির প্রতি কৃতজ্ঞতা
শৈশবের যে দিনগুলো গ্রামে দাদার বাড়িতে কেটেছে সেই ‘মনকেমন করা’ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে সত্যি এখনো মনটা যেন কেমন করে ওঠে। শুধু মনে পড়ে থোক থোক জোনাকির কথা। সন্ধ্যার ঘন কালো আঁধারের মধ্যে অসংখ্য আলোর কণা এই জ্বলে, এই নেভে, দৃশ্যগুলো সত্যি হৃদয়কে বড় আনন্দ দিতো! সারাটা দিন প্রতীক্ষায় থাকতাম, কখন সন্ধ্যা হবে! কখন জোনাকির মেলা বসবে!!
জোনাকির প্রতি আমার শৈশবের আকর্ষণ ছিলো শুধু এর সৌন্দর্যের কারণে। শুধু ভালো লাগতো আলোর কণাগুলোর নিরন্তর ছোটাছুটি। মনে হতো জোনাকিরা আমাদের মত শিশুদের সঙ্গে সাঝের বেলা খেলায় মেতে ওঠে। যেন বলে, যদি পারো আমাদের ধরো, হাতের মুঠোয় বন্দী করো। পারবে না। আমরা উড়তে পারি, তোমরা তো পারো না। কিন্তু মাঝে মধ্যে একটা দু’টো জোনাকি ধরা পড়তো দুষ্ট কোন ছেলের হাতে। তখন তার বড় দুর্গতি হতো। আমি কখনো জোনাকি ধরিনি, যারা ধরতো তাদের বরং বারণ করেছি।
যখন একটু বড় হলাম, জোনাকির প্রতি আমার ভালোবাসার উৎস হলো জীবনের জন্য জোনাকির কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা।
কত সামান্য আলো একটি জোনাকির! কিন্তুু ঐ সামান্য আলো দ্বারাই সন্ধ্যার আঁধার দূর করার জন্য কী নিরন্তর প্রচেষ্টা! শেষ পর্যন্ত পারে না। সন্ধ্যার আঁধারের কাছে পরাস্ত হয়, তবু তার প্রচেষ্টা নিরন্তর, নিরলস।
জীবনের চলার পথে এই শিক্ষাটুকু আমি জোনাকির কাছ থেকে পেয়েছি। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করি।
চেষ্টা করে যাই, সামান্য কিছু আলো দ্বারা জীবনের সীমাহীন আঁধার দুর করার। এ শিক্ষাটুকুর জন্য জোনাকির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ!
কৃতজ্ঞ এজন্যও যে, জোনাকিরা এখন দুর্লভ। তবু আমার চারপাশে এখনো জ্বলে কিছু জোনাকি! আমার ছেলেকে জোনাকির গল্প যেমন শুনিয়েছি তেমনি দেখাতে পেরেছি সাঝের বেলা জোনাকির মেলা! অনেকের পক্ষেই এখন সম্ভব হয় না পরবর্তী প্রজন্মকে জোনাকির আলো দেখানো।
ফুলের কথা, ফুলের সুবাসের কথা
ফুলের কথা, ফুলের সুবাসের কথা আমি এত বলেছি, এত লিখেছি যে, মানুষ রীতিমত অবাক হয়। ভাবে, আমার বোধহয় লেখার বিষয়ের অভাব ঘটেছে। তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুধু ফুলের কথা বলি, ফুলের সুবাসের কথা লিখি।
না বন্ধু, না! নুতন নতুন বহু বিষয়ে আমি লিখতে পারি, যদি লিখতে চাই। আমাকে বেষ্টন করে আছে এই যে বিশাল প্রকৃতি! এ আকাশ, এ পৃথিবী! এ পাহাড়-অরণ্য, এ জল, সাগর-মহাসাগর, এগুলো এবং আরো অনেক কিছুই হতে পারে আমার লেখার বিষয়! কেন তবে বারবার বলি ফুলের কথা, ফুলের সুবাসের কথা!! কারণ বাগানে অনেক ফুল ফোটে দেখি; ফুলের তোড়া থেকে সুবাসও পাই! কিন্তু জীবনের অঙ্গনে এখনো আমি ফুল ফুটতে দেখিনি। এখনো পাইনি জীবন থেকে ফুলের সুবাস!!
জীবনটা হতে পারে ...
এই মহাকালের মধ্যে আমার অস্তিত্ব কত সামান্য! কত লক্ষ কোটি বছর এই মহাকালের ব্যাপ্তি! কবে হয়েছে এর শুরু, কবে এর শেষ হবে, কিছুই জানি না। শুধু বুঝতে পারি, আমি কত ক্ষুদ্র, কত সামান্য! কত তুচ্ছ, কত মূল্যহীন!!
কিন্তু যখন চিন্তার গভীরে প্রবেশ করি, একটা আলোর ছটা যেন আমার সর্বসত্তাকে বেষ্টন করে রাখে। তখন আমি বুঝতে পারি, আমি ক্ষুদ্র নই, আমি তুচ্ছ নই এবং নই মূল্যহীন।
শিল্পের মূল্য যেমন শিল্পীর কুশলতায়, তার রঙ-তুলির কারিশমায়! আমারও মূল্য বুঝতে হবে আমার ¯্রষ্টার বড়ত্বের অসীমতায়, তাঁর কুদরতের সর্বব্যাপিতায় এবং তাঁর সৃজন-উদ্দেশ্যের মহিমায়!!
একথা সত্য, আমার জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত! কিন্তু এ জীবনটাই হতে পারে অনন্ত জীবনের সোপান, যদি আমি চলতে পারি আমার সৃষ্টির উদ্দেশ্যের পথে, আমার স্রষ্টার নির্ধারিত সরল রেখায়।
যখন আমি বুঝতে পারি, গাছে গাছে ফল ও ফুল সাজানো হয়েছে আমারই জন্য! জলে ও স্থলে যা কিছু সম্পদ ও সৌন্দর্য, তা আমারই জন্য! সাগরের তলেদেশে এবং পর্বত -চূড়ায় যা কিছু সঞ্চিত তা আমারই জন্য তখন নিজেকে মনে হয় না ক্ষুদ্র বা সামান্য। তখন মনে হয়, স্রষ্টার কাছে হতে পারে আমার অনেক মূল্য, যদি ¯্রষ্টার ইচ্ছাকে আমি দিতে পারি কিছু মূল্য!! যখন বুঝতে পারি, আকাশের চাঁদ-সুর্য আমার সেবায় নিয়োজিত, ছোট-বড় দেখা অদেখা প্রতিটি সৃষ্টি আমার সেবায় নিয়োজিত, আর আমি নিবেদিত আমার স্রষ্টার ‘সেবায়’, নিজেকে তখন মনে হয় না সামান্য, কিংবা তুচ্ছ।
যখন শুনতে পাই, ‘তুমি আমার দিকে যদি হেঁটে আসো, আমি তোমার দিকে দৌড়ে আসবো’, যখন শুনতে পাই, ‘আমি ক্ষুধার্ত হয়ে, অসুস্থ হয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম...’ হৃদয়টা তখন গর্বে গৌরবে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নিজেকে তখন মনে হয় না ক্ষুদ্র, তুচ্ছ, বা মূল্যহীন! তখন মনে হয়, আমি হতে পারি সৃষ্টিজগতের সবকিছু চেয়ে মূল্যবান, যদি একটু হেঁটে যেতে পারি তাঁর দিকে, হোক না খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, হোঁচট খেয়ে খেয়ে! তিনি আমার দিকে আসবেন দৌড়ে দৌড়ে নিজের শানে জামাল ও শানে কামালের মত। ঊর্ধ্ব-জগতে আমার মূল্য তখন হতে পারে কত উঁচুতে!!
তিনি তো সত্য বলেছেন, আমার দুয়ারে তিনি আসেন ক্ষুধার্ত হয়ে, অসুস্থ হয়ে। আমি যদি তাঁকে একটু আহার দিতে পারি! যদি তাঁর একটু শুশ্রুষা করতে পারি! তাহলে তো আমার মর্যাদা হতে পারে আসমানের ফিরেশতাদেরও উপরে!