আ মা কে
নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে হয় যখন বুঝতে পারি, তুমি ভালোবাসো আমাকে; যখন দেখতে পাই তোমার এত বিপুল আয়োজন শুধু আমার জন্য! শুধু আমাকে আনন্দ দেয়ার জন্য এবং ভিতরে বাইরে আমাকে সমৃদ্ধ করার জন্য, নিজেকে তখন বড় ভাগ্যবান মনে হয়।
ইচ্ছে হয়, সত্যি বলছি, অন্তর থেকেই ইচ্ছে হয়, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ হই; হৃদয়ের সবটুকু কৃতজ্ঞতা তোমাকে, শুধু তোমাকে নিবেদন করি! তারপর কী যে হয়, সবকিছু গুলিয়ে যায়! কী এক অশুভ ছায়া যেন আমার উপর ভর করে, আমাকে আচ্ছন্ন করে, আমাকে বিভ্রান্ত করে!! নিজেকে তখন বড় দুর্ভাগা মনে হয়! নিজের প্রতি অন্যরকম একটা ঘৃণা জন্ম নেয়; নিজের কথা ভেবেই যেন ভিতরটা কেমন ঘিন ঘিন করে!!
যখন দেখি, আমার সব তুচ্ছতা, হীনতা ও কৃতঘœতা সত্ত্বেও তুমি আমাকে একই রকম ভালোবাসো; যখন দেখি, আমার শান্তির জন্য, আমার সুখের জন্য এবং আমার কল্যাণের জন্য তোমার দানের, তোমার আয়োজনের কোন কার্পণ্য নেই; তারপরো যখন দেখি আমাকে তুমি কাছে পেতে চাও, আমার চোখের সামান্য জলেও তুমি সন্তুষ্ট হও; যখন দেখি, চোখের এই তুচ্ছ জলবিন্দকেও তুমি মুক্তার মূল্যে ক্রয় করতে চাও তখন আবার যেন নিজেকে খুঁজে পাই! নিজেকে আবার তোমার ভালোবাসার যোগ্য করে গড়ে তোলার ইচ্ছে জাগে।
তখন আবার আমি খুঁজে দেখি, কিসে তুমি খুশী হও, কিসে হও অখুশী! আবার ইচ্ছে জাগে, তোমার খুশির পথে চলি; তোমাকে অখুশী করে, এমন কাজ থেকে দূরে থাকি।
কিন্তু ... সেই অশুভ ছায়া আবার ভর করে আমার উপর, আবার বিভ্রান্ত করে আমাকে। আমাকে তুমি ক্ষমা করো বন্ধু! আমাকে তুমি আলোর পথ দেখাও; আমাকে তোমার একান্ত কাছে নাও হে প্রিয়তম!!
তোমাকে
শুনেছি, আকাশ নীল হয় অব্যক্ত কিছু ব্যথার কারণে। আকাশ যখন তার ব্যথার কথা কাউকে বলতে পারে না তখন সে ব্যথায় নীল হয়ে থাকে।
কবিদের কথা সত্য হতে পারে, আবার হতে পারে নিছক তার নিজের কল্পনা।
কবির সত্যকে যেমন গ্রহণ করতে চাই তেমনি প্রত্যাখ্যান করতে চাই না তার নির্দোষ কল্পনাকেও। কবির কোন কল্পনা যদি সান্ত¦না দান করে, বা প্রশান্তি! যদি আশ্বস্ত করে বা অনুপ্রাণিত, তাহলে তো কবির প্রতি আমার হৃদয় কৃতজ্ঞ হতেই পারে!
সেদিন আমারও হৃদয়ের আকাশটা অব্যক্ত এক বেদনায় নীল হয়ে ছিলো। বেদনার মধ্যে একটা নোনা স্বাদ যেন ছিলো! তাই হঠাৎ করেই যেন হৃদয়ের ব্যথা ও বেদনাগুলোর কারণে অপূর্ব একটি ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হলাম। সেদিন উপলব্ধি হলো, সুখ ও আনন্দ যেমন শান্তি দেয়, তেমনি ব্যথা ও বেদনাও হতে পারে শান্তিদায়ক।
আজ তাই ইচ্ছে হলো, আমার হৃদয়ের বেদনাগুলো তোমাকে সমর্পণ করি। সুখ ও আনন্দ তোমারই দান, কিন্তু লজ্জার কথা, সুখের সময় তোমাকে মনে পড়ে না। আনন্দের বিহ্বল মুহূর্তগুলোতে তোমাকে ভুলে থাকি। দুঃখের সময়, ব্যথা ও বেদনার মুহূর্তগুলোতে একটু হলেও তোমাকে মনে পড়ে। আনন্দগুলো তোমাকে অর্পণ করতে পারি না, এ আমার ব্যর্থতা, অন্তত আমার কষ্টগুলো তোমাকে নিবেদন করতে চাই; গ্রহণ করো হে প্রিয়।
কষ্টের নিবেদন-লগ্নে এই জীবনব্যাপী সাধনার শপথ গ্রহণ করি, সুখের সময়, আনন্দের মুহূর্তেও যেন তোমাকে মনে পড়ে হে প্রিয়!!