বড় একটা চমকপ্রদ খবর সম্প্রতি দেশবাসীর কর্ণগোচর হয়েছে সদাশয় সরকারের কৃপা ও বদান্যতায়। দেশের স্কুল-গুলোতে চলন্ত সিঁড়ি যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ‘গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়নের বেশী প্রয়োজন’, এ নীতির প্রবক্তা বর্তমান সরকার। খরচ হবে খুব বেশী না, হাজার কোটি টাকার উপরে। যে দেশের অর্থমন্ত্রী বলতে পারেন, চল্লিশ হাজার কোটি টাকার ঋণপ্রবাহের মধ্যে চারহাজার কোটি টাকার দুর্নীতি কছিুই না, সে দেশে ‘শিক্ষা-উন্নয়নের’ নামে হাজার কোটি টাকার খরচ, আসলেই তো বেশী কিছু না!
সরকার যে চাইলেই অমন ছোটখাটো উন্নয়ন চোখের পলকে করে ফেলতে পারে তার তো জ্যান্ত নমুনা পাওয়া গেলো ‘পথপারাপারসেতু’তে চলন্তসিঁড়ি যুক্ত করার মধ্যে। কত টাকা খরচ হলো সেটা বড় কথা না, আরো জরুরি কাজ পড়ে আছে কি না সেটাও বড় কথা না; এমনকি যতœ, পরিচর্যা ও মেরামতের অভাবে বেশীর ভাগ সময় যে সিঁড়িগুলো অচল হয়ে পড়ে থাকে সেটাও বড় কথা না; উন্নত বিশ্বের মত উন্নয়নই হলো বড় কথা, আর এগুলো তো হচ্ছে উন্নয়নের অনিবার্য অনুষঙ্গ!
***
গরীবের ঘোড়ারোগ কথাটা আমাদের মধ্যে হয়ত অনেকেই শুনেছি। কখনো ভাবিনি, কথাটার উৎপত্তি কীভাবে এবং তা কী মর্ম ও শিক্ষা ধারণ করে। হয়ত ভেবে দেখিনি, আমাদের সমাজে চারপাশে ছড়িয়ে আছে গরীবের ঘোড়ারোগের কত শত নমুনা! বলতে গেলে আমাদের গরীব জীবনে এখন ঘোড়া-রোগেরই তো ছড়াছড়ি! কী ব্যক্তি জীবন, আর কী পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন!!
গরীব প্রজা, সবসময় দেখে, জমিদার ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে বের হন। সে ভাবে, অমন একখান ঘোড়া আমিও কিনতে পারি! বেশীর চেয়ে বেশী কী হবে, বাড়ীঘর বন্ধক রাখতে হবে! কিন্তু ঘোড়ায় চড়ার শখ তো পুরা হবে!
ঘোড়া খরিদ করা হলো এবং যথারীতি বাড়ীঘর বন্ধক রেখে সেই জমিদারেরই মহাজনিতে! বেচারার জানা ছিলো না, ঘোড়ার জন্য প্রয়োজন বড় একটা আস্তাবলের; প্রয়োজন ঘোড়ার দেখভাল ও পরিচর্যার জন্য একজন অভিজ্ঞ সহিসের!
তারপর তো কিস্সা মুখতাছার। ঘোড়াও মরলো যতেœর অভাবে; বেচারা গরীব, তারো মরো মরো দশা!
লোকে তাকে দেখে, আর বলে, রহীমুদ্দীকে ধরেছিলো ঘোড়ারোগে! কথাটা একবার মনে পড়েছিলো যখন বড় বড় উড়াল সেতু তৈরী হচ্ছে বিরাট বিরাট বাজেটে। উন্নত দেশে উড়াল সেতুর উপর দিয়ে গাড়ী ছুটে যায় শাঁ শাঁ করে। আমরা করলাম; কী হলো?! খোদ উড়ালসেতুতেই যানজটে জান যাওয়ার দশা! এটা আসলে গরীবের ঘোড়ারোগ।
কথাটা দ্বিতীয়বার মনে পড়লো যখন খবরে পড়লাম, দেশের সদাশয় সরকার স্কুলগুলোতে এসকেলেটর স্থাপনের ‘সুচিন্তা’ শুরু করেছেন!
কোন দেশে? যে দেশের বেশীর ভাগ স্কুলের অবকাঠামোই নড়বড়ে। ক্লাসরূম আছে, পাখা নেই; লাইব্রেরী নেই। লাইব্রেরী আছে তো বই নেই; ল্যাবরেটরিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। এমন দেশে এমন চিন্তাকে শুধু গরীবের ঘোড়ারোগ বললে তো কমই বলা হয়। বলতে হবে, গরীবের হাতিরোগ! এমন হাতিরোগে পাওয়া গরবী জাতির ...