রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

টেকনাফ/তেতুলিয়া

আমাদের জীবনে শৃঙ্খলার এত অভাব কেন?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

আমরা বলি, অভাবের জীবন। অভাব বললেই আমাদের চিন্তায় যা প্রথমে আসে সেটা হলো অর্থের অভাব। এটা ঠিক, অর্থের অভাব জীবনে অনেক কষ্ট ও দুর্ভোগ ডেকে আনে; কিন্তু অর্থের শত অভাবের মধ্যেও জীবন থেমে থাকে না এবং জীবনের গতি থমকে যায় না। নির্মম সত্য তো এই যে, আমাদের জীবনে সবচে’ বড় অভাব, যার কারণে জীবন শুধু থেমে যায় না, থমকে যায়! যার কারণে জীবনের গতি হয়ে পড়ে পশ্চাদ্মুখী, সেই অভাবের নাম শৃঙ্খলার অভাব।

জীবনে যে সকল জাতি ও সমাজ উন্নতি করেছে এবং বিশ্বের বুকে আজ গর্বিত জাতি বলে মাথা উঁচিয়ে চলছে তাদের জীবনে অনেক কিছুর অভাব আছে, এমনকি নৈতিকতারও রয়েছে চরম অভাব, যে জিনিসটির অভাব নেই তা হলো শৃঙ্খলা। তাদের জীবনের সবকিছুতে রয়েছে পূর্ণ শৃঙ্খলা। সমাজের সর্বশ্রেণীতে এবং জীবনের সর্বস্তরে রয়েছে শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ। শৃঙ্খলাভঙ্গের এমনকি সুযোগ পেলেও কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে না। শোনা যায়, ওদের দেশে পথ পারাপারের ক্ষেত্রে কুকুরও নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চলে। সবুজ সঙ্কেত দেখে পথ পার হয়, লাল সঙ্কেত দেখে থেমে যায়। গভীর রাতে পথ যখন নির্জন। গাড়ী নেই, ঘোড়া নেই, তখনো একজন চালক লাল সঙ্কেত দেখে গাড়ী থামিয়ে রাখে যতক্ষণ না সবুজ আলো জ্বলে ওঠে।

দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা এই যে, আমাদের জীবনের ধরণ-ধারণ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের দেশের কুকুর আর কিছু পারে না, পারে শুধু ঘেউ ঘেউ করতে, আর পথচারীর পায়ে কামড় বসিয়ে দিতে। এখানে যিনি যত উঁচু স্তরের মানুষ, নিজেকে তিনি মনে করেন নিয়ম-শৃঙ্খলার তত ঊর্ধ্বে। তিনি শুধু উপদেশ দেবেন আম জনতাকে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার। তারপর তিনি মুক্ত নিয়ম-শৃঙ্খলার সব বন্ধন থেকে। আমাদের দেশেই পত্রিকার খবর হতে পারে, ট্রাফিকনিয়মভঙ্গের অপরাধে গাড়ী থামিয়ে বিপদে পড়েছে নিরীহ ট্রাফিক কনেস্টবল! কারণ সে খেয়াল করেনি, গাড়ীটা কার! যাদের আজ মনে করা হয় উন্নত দেশ, উন্নত সমাজ, তাদের জীবনে শত দোষের সঙ্গে রয়েছে নিয়ম-শৃঙ্খলার এমন কঠিন বন্ধন যে, সবচে’ উপরের মানুষটিও তা ভঙ্গ করতে পারে না, বরং ভঙ্গ করার কথা চিন্তাও করে না। ওদের দেশে সামান্য একটা ট্রাফিকনিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে একজন রাজনীতিবিদের শেষ হয়ে যেতে পারে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার! গল্পের মত শোনালেও এটাই সত্য, এটাই বাস্তব।

ওদের দেশে চারহাজার কোটি নয়, চার কোটি নয়, এমনকি চার লাখও নয়, তার চেয়ে অনেক কম অঙ্কের দুর্নীতিকেও ‘এটা তেমন কিছু নয়’ বলার দুঃসাহস হবে না কোন অর্থমন্ত্রীর! ঝড় শুরু হয়ে যাবে সমাজের সর্বস্তরে। সে ঝড় থামবে না, এমনকি ক্ষমাপ্রার্থনা দ্বারাও। শেষ পর্যন্ত তাকে জমা দিতে হবে পদত্যাগপত্র। এজন্যই তারা এগিয়ে, এজন্যই আমরা পিছিয়ে।

আমরা এখন থেকে শুরু করতে পারি। প্রথমে আমার জীবনকে  শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। যত ক্ষুদ্রই আমি হই, আমারও কিছু না কিছু ক্ষমতা আছে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার, অন্তত নিজের ঘরে। আসুন আমি, আপনি, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি, আমার ক্ষমতার ভিতরে কখনো আমি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবো না। শৃঙ্খলাই জীবনকে সুন্দর করে; শৃঙ্খলাই জীবনকে উন্নত করে। আসুন আমরা সুন্দর এবং উন্নত জীবনের পথে অগ্রসর হই। যে শুরু নিজেকে দিয়ে, সেটাই হলো সবচে’ সুন্দর শুরু!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা