৭-৪-৩৯ হি.
ফিলিস্তীনী নেতা ইয়াসির আরাফাত! তার কর্মকাল ছিলো আমার জন্মের আগে। এমনকি তার মৃত্যুও হয়েছে আমার জন্মের বছর! যতদুর জানি জীবনের প্রথম অংশে তিনি ছিলেন ফিলিস্তীনী জনগণের প্রাণপ্রিয় নেতা। শেষ জীবনের তিনি নাকি ফিলিস্তীনের মুক্তিসংগ্রামের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছিলেন!
যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে, কেন?
এত বড় মাপের একজন জাতীয়বীর কোন্ প্রাপ্তির লোভে ভুলে যেতে পারেন নিজেরই অতীত জীবনের এত এত ত্যাগ ও কোরবানি!!
বর্তমানের মাহমুদ আব্বাস তো তার তুলনায় কিছুই না! হামাস খুব তো অগ্রসর হচ্ছিলো! কোত্থেকে কী হলো! এমন অসহায় আত্মসমর্পণ!!
আমার বেদনা, আমার যন্ত্রণা
হুযূর, আবার আপনাকে চিঠি লেখার সাহস করছি। সাহস আপনিই দিয়েছেন আমার মত সাধারণ মানুষের চিঠিকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে।
হুজুর, প্রথমেই আমি মাফ চাই এবং তাওবা করি। আসলে মুসলিম হিসাবে আমাকে যে হিজরী তারিখ ব্যবহার করতে হবে, এই চেতনা আমার মধ্যে ছিলোই না। অমাদের তো জানাই থাকে না, কখন কোন্ হিজরী মাস শুরু হয়, কখন শেষ হয়। আমাদের জীবনের সবকিছু তো চলে খৃস্টীয় বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে। আমরা জানি রোযা শুরু হবে অমুক ইংরেজি মাসের অমুক তারিখে। ঈদ, হজ্ব সবই তো ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী হয়!
হুজুর, আমার জানতে ইচ্ছা করে, মাদরাসাতুল মাদীনার তালিবানে ইলম হিজরী তারিখের প্রতি কেমন যত্নবান?! সেদিন কিন্তু কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা হলো! একজন আলিম, মাদরাসাতুল মাদীনায় পাঁচ বছর পড়েছেন। পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম, আজ কত তারিখ, বললেন ২২শে নভেম্বর! বললাম, আমি হিজরী তারিখ জানতে চাচ্ছি! বললেন, বলতে পারছি না!
হুজুর, পুষ্পের আরাকানসংখ্যা পেয়ে কী যে আনন্দিত হয়েছি! কত যে উপকৃত হয়েছি! জাযাকাল্লাহ্। হুযুর সাহস করে একটা আবেদন করি ... ফিলিস্তীনসংখ্যা যদি ...
৫-৪-১৪৩৯ হি.
হায় জেরুসালেম
যন্ত্রণাদগ্ধ এক তরুণের রোযনামচা
২৩-৩-৩৯ হি.
পত্রিকায় ক্রিকেট খেলার ফাইনাল না কী যেন হয়েছে। সরা মাদরাসা সেই আলোচনায় ভাসছে। ভালো ছাত্র যাদের মনে করা হয় তারাও দেখি, খেলার বিস্তারিত জানার জন্য উৎসুক। একছাত্র- ভাইকে বললাম, জেরুসালেমের পরিস্থিতি নিয়ে দুনিয়ার মুসলমান দিশেহারা, আর আমরা খেলার খবরের জন্য এমন লবেজান! এটা কি লজ্জার বিষয় না ভাইজান! তিনি বললেন, ‘মিয়াঁ তোমার মাথায় দেহি রাজনীতির পোকা ঢুকছে। রাজনীতি করলে লেখাপড়া করতে পারবা না।’
হাসবো না কাঁদবো, বুঝতে না পেরে সেখান থেকে সরে পড়লাম।
আরেকজনকে পরীক্ষা করার নিয়তে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাইজান ওআসির খবর জানেন? তিনি আমার অজ্ঞতার দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘ওআইসি আবার আইল কইততে! চ্যাম্পিয়ন তো হইছে রংপুর.......!
নাহ, এভাবে আর কিছু দিন চললে মনে হয় মাদরাশিক্ষাই ‘চ্যাম্পিয়ন’ হয়ে যাবে। আল্লাহ্, তুমি হেফাযত করো। আমাদের তুমি ছহী সমঝ দাও।
২৫-৩-৩৯ হি.
আমাদের মাদরাসার অনেক উপরের এক বড় ভাই লুকিয়ে লুকিয়ে আরবদেশের খবর শোনেন, আবার দেখেন।
হাঁ, প্রযুক্তি এখন এতদূর আগে বেড়েছে যে, জাওয়ালের পর্দায় দুনিয়ার যে কোন চ্যানেলের খবর এবং অনুষ্ঠান দেখা যায়। আমাদের বড় ভাই নাকি শুধু আরবী খবরগুলো দেখেন। হতে পারে। এমনকি আমাকে তিনি বললেন, তুমি চাইলে ফিলিস্তীনে যে বিক্ষোভ হচ্ছে তা দেখতে পারো।
ইচ্ছে হলেও কৌতূহল দমিয়ে রাখলাম।
এখন আমি পড়ে গিয়েছি দুশ্চিন্তায়। বড় ভাই ভালো তালিবে ইলম। উস্তাযগণ তাকে বিশ্বাস করেন। তার উপর তিনি একজন উস্তাযের খাছ খাদিম! এখন মাদরাসার তো আদেশ হলো, এধরনের কিছু কারো নযরে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে দফতরে জানানো। আমার কী করা উচিত বুঝতে পারছি না। হুযুরকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে। প্রথমে নাম গোপন করে জিজ্ঞাসা করবো।
১-৪-৩৯ হি.
আরাকানের পেরেশানিই তো শেষ হলো না, শুরু হয়ে গেলো জেরুসালেমের পেরেশানি। কাল মাদরাসা থেকে মিছিল বের হবে।
ভাবলে কোন কূল- কিনারা পাই না, ...
১০-৪-২০১৭ খৃ.
মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য শহর মোটামুটি শান্ত হয়ে এসেছে। আর কত! সবারই জীবনে দৌড় -ঝাঁপ আছে, রুটি রুজির পেরেশানি আছে। আমেরিকা ইসরাইলের কি আর তা জানা নেই! তাই এসবকে খুব কমই পাত্তা দেয় ওরা। হাঁ, কোথাও যদি সুদূর- প্রসারী লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়, তখন তাদের মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়। কে করছে? কী উদ্দেশ্যে করছে? ব্যাপক খোঁজ খবর নেয়া শুরু হয়ে যায়। তারপর শুরু হয় কীভাবে তা রোধ করা যায় সে চিন্তা!
ফিলিস্তীনে বিক্ষোভ থামছেই না। গতকাল এক যুবক নিহত হয়েছে ইহুদিদের গুলিতে। যুবকের বাবা আগেই শহীদ হয়েছেন। শুধু মা আছেন। যুবক একটি বিদ্যালয়ে পড়তেন। জেরুজালেম এমনিতেই তো দুশমনের দখলে। তার উপর এখন তা হতে চলেছে ইহুদিদের রাজধানী! তাহলে আমাদের আর থাকলো কী? কিন্তু আমাদের প্রকৃত চেতনা ও গায়রত কোথায়?!