জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮)

রোযনামচার পাতা

নিয়মিত রোযনামচা! সুন্দর অতীত! সুশৃঙ্খল বর্তমান! উজ্জ্বল ভবিষ্যত! সফল জীবন!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

রোযনামচার পাতা

আজ আমি অনেক খুশী হয়েছি। ভাইয়্যা আমার জন্য দু’টি বই এনেছে। একটি কবিতার বই একটি সীরাতের বই। তাতে নবীজীবনের প্রতিটি ঘটনা কবিতার ছন্দে সাজানো হয়েছে। কবিতাগুলো পড়তে পড়তে কখনো কান্না পায়, কখনো আনন্দ হয়। (জা, জিনান, ২৪/৮/৩৯ হিজরী)

৬/১২/৪০ হি. শনিবার

আমার কাছে সবচে’ প্রিয় কী? আমার কাছে সবচে’ প্রিয় হলো ফুল। আমাদের মাদরাসার বাগানে অনেক রকম ফুল আছে। একেক ফুলের একেক রকম ঘ্রাণ! একেক ফুলের একেক রকম সৌন্দর্য। ফুলকে দেখে আমি আল্লাহ্কে চিনতে পারি। ফুলকে দেখে আমি আল্লাহ্র সৌন্দর্য বুঝতে পারি।

আমার কাছে ফুলের চেয়ে প্রিয় কী? আমার কাছে ফুলের চেয়ে প্রিয় হলেন আমার আম্মু। আম্মুর মায়া-মমতা দেখে আমি বুঝতে পারি, আল্লাহ্র কত দয়া, কত মায়া। আম্মুর মায়া-মমতা তো আল্লাহ্রই দান! (আবু দুজানা)

 

০ রিফ‘আত! তোমার লেখাগুলো পেয়েছি। ভালো হয়েছে। পাখীগুলোর জন্য তোমার মত আমারও মনটা বিষণœ হয়ে উঠেছে। আশা করি, এখন বুঝতে পারছো, খাঁচায় বন্দী করে পাখীদের এভাবে কষ্ট দেয়া ঠিক না।

০ আবু হোরায়রা, তোমার লেখা পেয়েছি। তুমি লিখেছো, ভবিষ্যতে তুমি বড় আলিম হতে চাও। আলিম হয়ে মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিতে চাও, যেন আল্লাহ্ তোমার প্রতি খুশী হন। খুশী হয়ে তোমাকে জান্নাত দান করেন।

আমরা তোমার জন্য দু‘আ করি, আল্লাহ্ যেন তোমাকে তাওফীক দান করেন। তবে মনে রেখো, শুধু কথা দিয়ে কিছু হয় না। জীবনে কিছু হওয়ার জন্য খুব মেহনত করতে হয়।

 

০ ফাহীম, তুমি লিখেছো, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি তোমার ভালো লাগে, আরো ভালো লাগে রিমঝিম বৃষ্টি। আর সবচে’ ভালো লাগে বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে।

আচ্ছা, আবার যখন বৃষ্টি হবে, আমাকে বলো। আমি তোমাকে বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ করে দেবো, তবে ঠা- লেগে জ¦র হলে আমার দোষ নেই!

আজ আমরা মাক্তাবের ছেলেরা আকাশে আল্লাহ্র একটি কুদরত দেখতে পেলাম। দেখি কী, একটি পাখি ডানা ছড়িয়ে আকাশের গায়ে ভেসে আছে স্থির হয়ে। সামনেও যাচ্ছে না পিছনেও যাচ্ছে না, আবার পড়েও যাচ্ছে না। শুধ ভেসে আছে। দেখে আমরা সবাই অবাক। নিশ্চয় এটা আল্লাহ্র কুদরত। পাখীকে এভাবে ডানা ছড়িয়ে ভেসে থাকতে কে শিখিয়েছেন? আল্লাহ্ শিখিয়েছেন।

অনেক্ষণ পরে দেখি, পাখীটা ডানা নাড়তে শুরু করেছে এবং উড়ে যেতে শুরু করেছে।

আমরা একসঙ্গে সুবহানাল্লাহ্ বলে উঠলাম। একটু পরে পাখীটা দূর আকাশে হারিয়ে গেলো।

সাঈদ সা‘আদাত, রোববার, ২৩/৭/৪০ হি.

 

আম্মুর কথা অনেক মনে পড়ে। আম্মুর জন্য আমার অনেক কষ্ট হয়। রাতে আমি কম্বলের নীচে নীরবে কাঁদি, যেন কেউ বুঝতে না পারে। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়ি জানতে পারি না। সকালে উঠে দেখি, চোখের পানিতে বালিশ ভিজে আছে!

কাল রাতে আমি কাঁদছিলাম। মনে হয় কান্নার শব্দ হয়েছিলো। হুযূর বললেন, আব্দুল আযীম তুমি কি কাঁদছো?

আমি চোখের পানি মুছে বললাম, হুযূর, আম্মুর কথা মনে পড়ছে। আমি কাঁদতে চাই না, তবু কান্না এসে যায়। তখন হুযূর অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বললেন, আর বললেন, কালকে ইনশাআল্লাহ্ তুমি আম্মুর সঙ্গে কথা বলবে। তখন তোমার আর কোন কষ্ট থাকবে না।

আমার খুব সান্ত¡না হলো, আর মনটা শান্ত হয়ে গেলো। তারপর আমার চোখে ঘুম নেমে এলো।

বুধবার, ১১/০৪/৪০ হি.  আব্দুল আযীম (মাদানী মাক্তাব, চূড়ান্ত স্তর)

সোমবার, ৮/৫/৪০ হি.

আমাদের মাদরাসার বাগানে অনেক রকম গোলাবফুলের গাছ আছে। গাছগুলো দুই সারিতে লাগানো হয়েছে। তাই দেখতে বড় সুন্দর লাগে। যখন দুই সারিতে নানা রকম গোলাবফুল ফুটে থাকে তখন আরো সুন্দর দৃশ্য হয়। অনেক গোলাবফুলের মধ্যে একটি গোলাব আমার বেশী প্রিয়। কারণ ফুলটি যখন ফোটে তখন দেখতে হয় হলুদ। আর দু’তিনদিন পরে অর্ধেকটা হয় গোলাপী, বাকি অর্ধেকটা থাকে হলুদ। আবার যখন পাপড়িগুলো ঝরে যাওয়ার সময় হয় তখন হয় একেবারে লাল।

আজ বিকালে গোলাবটিকে আলতো করে স্পর্শ করলাম। গোলাবটি সঙ্গে সঙ্গে এমন করে দুলে উঠলো, যেন আমার আদর গ্রহণ করছে! তখন মনে হলো, গোলাবটি যেন আমাকে বলছে তার নিজের ভাষায়, ‘আমাকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন, আমি তোমাদের বাগানে ফুটেছি তোমাদের আনন্দ দেয়ার জন্য, আর সুবাসের ভাষায় একথা বলার জন্য যে, তোমরা ফুলের মত সুন্দর ও সুবাসিত হও।

আমি তখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, সারা জীবন আমি চেষ্টা করবো, আমার প্রিয় গোলাবফুলের উপদেশ মনে রাখার। সারা জীবন আমি চেষ্টা করবো ফুলের মত সুন্দর হওয়ার এবং ফুলের মত সুবাসিত হওয়ার। আব্দুল্লাহ বিন সাইফুল ইসলাম

প্রিয় জরীর বিন আব্দুল্লাহ্, তোমার লেখা বেশ সুন্দর হয়েছে। নদীর মিঠা পানিতে এবং সাগরের নোনা পানিতে কত রকমের মাছ আছে। ছোট ছোট মাছ যেমন আছে তেমনি আছে বড় বড় মাছ। নদীর মিঠা পানির মাছ খুব সুস্বাদু, আবার সাগরের নোনা পানির মাছও কম সুস্বাদু নয়। তুমি লিখেছো, ‘যখনই কোন মাছের স্বাদ গ্রহণ করি, মনের ভিতরে প্রশ্ন জাগে, আমাদের জন্য এত মায়া করে যিনি এত রকমের এবং এত স্বাদের মাছ সৃষ্টি করেছেন নদীর মিঠা পানিতে এবং সাগরের নোনা পানিতে, কেন আমরা তাঁর শোকর আদায় করি না? কেন আমরা তাঁর ইবাদত করি না। ...

তোমার লেখাটি আরো বড় ছিলো, জায়গার অভাবে পুরোটা দেয়া গেলো না। কামনা করি, তোমার লেখা যেন আরো সুন্দর হয়।

 

১০/১/৪০ হি.

কিছু দিন আগে আমার একটি ভাই হয়েছিলো। আমি দেখিনি। আম্মু বলেন, আমার ভাইটি নাকি ছিলো চাঁদের মত সুন্দর। আম্মু হাসপাতালে ছিলেন। হঠাৎ কী হলো! দু’দিন বয়সের ছোট্ট ভাইটি অসুস্থ হয়ে পড়লো এবং ইন্তিকাল করলো।

ভাইটির ইন্তিকালে আম্মুর অনেক কষ্ট হয়েছে। ভাইটির কথা আম্মু ভুলতে পারেন না। তার জন্য তিনি এখনো নীরবে কাঁদেন এবং নীরবে চোখের পানি ফেলেন।

আমারও কষ্ট হয়। আমারও কান্না পায়। আমারও চোখে পানি আসে। তবু আম্মুকে আমি সান্ত¡না দেই। আম্মুকে বলি, কেঁদো না আম্মু। তোমার ছেলে তো আখেরাতে আল্লাহ্র কাছে জমা আছে। ইনশাআল্লাহ্ সে তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। -সা‘ঈদ সা‘আদাত

০০ মাকে যে এভাবে সান্ত¡না দিতে পারে সে তো খুব ভালো ছেলে!

আজ এশার পর মসজিদ থেকে কামরায় ফেরার সময় অন্ধকার আকাশের দিকে তাকালাম। কী যে সুন্দর মনে হলো! অসংখ্য তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, আর ঝিলমিল করছে। তারারা যেন আকাশের গায়ে  মেলা বসিয়েছে!

আকাশের তারাদের আমার খুব ভালো। ইচ্ছে হয়, আমিও আকাশের তারা হয়ে যাই। আমিও তারাদের মত একটি তারা হয়ে আকাশে ঝিলমিল করি। আকাশের তারাগুলো নাকি দেখতে এত ছোট হলেও অনেক বড়! অনেক মানে অ-নে-ক। অনেক দূরে বলে এত ছোট দেখা যায়। আল্লাহ্র কী কুদরত! 

 আবু হোরায়র/২৭-৭-৪০ হি.া

শিউলী ফুলের একটি সবুজ সুন্দর গাছ আছে আমাদের মাদরাসায়। তাতে অনেক শিউলীফুল ফোটে। আদীব হুযূর প্রতিদিন আমাদের শিউলীফুল হাদিয়া দিতেন। তখন অনেক শিউলীফুল ফুটতো, এখন ফোটে না। শিউলীফুল শীতকালে ফোটে। শীতকাল হলো শিউলীফুল ফোটার মৌসুম। আবার যখন শীতকাল আসবে, আবার যখন অনেক অনেক শিউলীফুল ফোটবে তখন আদীব হুযূর আবার আমাদের শিউলীফুল হাদিয়া দেবেন। তখন আবার আমরা শিউলীফুলের সুবাস পাবো, কী যে আনন্দ হবে!

সম্পাদক ঃ আচ্ছা, এখন না হয় শিউলীফুলের ছবি দেখো, তাতেও তো কিছু না কিছু আনন্দ হবে!

২১/৬/১৪৪০ হি.   আবু তালহা, মাদানী মক্তব, প্রথম স্তর

মানুষ তো পাখীর কথা বোঝে না, তাই বলে পাখীর কিচির মিচির, পাখীর কলরব। আসলে পাখীরা আল্লাহ্র যিকির করে, তাসবীহ পড়ে এবং আল্লাহ্র শোকর করে।

আজ সকালে একটি পাখী আমাদের কামরার সামনে বসে খুব সুন্দর করে আওয়ায করছিলো, কূ উ, কূ উ। আমার খুব ভালো লাগছিলো। আমি বললাম, ও পাখী তুমি কি আল্লাহ্র যিকির করছো? পাখীটি বললো, কূ উ, কূ উ। আমার মনে হলো, পাখীটি বলছে, হুঁ হুঁ!

আল্লাহ্র রহমতে আমি এখন মাদরাসাতুল মাদীনাহ্র ছাত্র। আমাদের মাদরাসাটি খুবই সুন্দর! সবকিছু পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে তকতকে।

আমাদের মাদরাসার বাগানে অনেক ফুল ফোটে, আবার অনেক পাখী আসে। ফুলের হাসি, ফুলের সুবাস এবং পাখীর কলরব, পাখীর গান দু’টোই আমার খুব ভালো লাগে। সকালে সন্ধ্যায় পাখীরা কী সুন্দর গান গায়! আসলে পাখীরা আল্লাহ্র যিকির করে। পাখীরা সকালে রিযিকের সন্ধানে বের হয়। তার আগে আল্লাহ্র ইবাদত করে। তাই আল্লাহ্ পাখীদের প্রতি খুশী হন। খুশী হয়ে পাখীদের রিযিক দান করেন।

পাখীরা সকালে খালি পেটে বের হয়, আর সন্ধ্যার সময় ভরা পেটে নীড়ে ফিরে আসে।

মাদরাসার কৃষ্ণচূড়া গাছে একটি সুন্দর পাখী বাস করে পাখীটির নাম বুলবুলি.... মু‘আয বিন আযীযুল হক

 

আমাদের মাদরাসার বাগানে অনেক রকম ফুলের গাছ আছে। তাতে নানা রকম ফুল ফোটে; লাল, নীল, সাদা, হলুদ, জবা, বেলী, গোলাব, গন্ধরাজ, টগর, চামেলী।

পৃথিবীর বাগানে আল্লাহ্ এত ফুল কেন সৃষ্টি করেছেন? মানুষের জন্য, মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য। আমরা যখন কাউকে ভালোবাসি, তাকে ফুল উপহার দেই। আমরা মানুষের জন্য ফুল সৃষ্টি করতে পারি না; বাগান থেকে ফুল এনে মানুষের হাতে দিতে পারি। আল্লাহ্ তো মানুষের জন্য ফুল সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ মানুষকে তাহলে কত ভালোবাসেন!

পৃথিবীর বাগানে আল্লাহ্ ফুল সৃষ্টি করেছেন। কেন করেছেন? মানুষ যেন ফুল দেখে দেখে ফুলের সুন্দর হতে চেষ্টা করে। মানুষ যেন ফুলের মত সুবাস ছড়াতে পারে। কিসের সুবাস? সুন্দর আখলাক এবং সুন্দর চরিত্রের সুবাস।

আব্দুল্লাহ বিন ইমদাদুল্লাহ, মাদানী মক্তব, চূড়ান্ত স্তর

 

আমার মনে পড়ে সেই ছেলেটির কথা। যখনই মনে পড়ে, মনের ভিতরে খুব কষ্ট হয়। আমি আর সেই ছেলেটি, আমরা দু’জন বাড়ী থেকে বের হয়েছি। মাদরাসায় যাবো। অনেক দূর পথ আসার পর আমি তাকে বললাম, তুমি একটু দাঁড়াও, ঐ যে আমার খালার বাড়ী, খালাম্মাকে একটা খবর বলে এখনই আসছি। ছেলেটি বললো, আচ্ছা, আমি ঐ কুয়াটার কাছে যাচ্ছি।

পরে যা ঘটলো তা মনে পড়লে এখনো কান্না পায়। কষ্টে বুকটা যেন ভেঙ্গে আসতে চায়। ছেলেটি কীভাবে জানি কুয়ার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো। ...

আমি যদি তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতাম তাহলে তো...

আমি সবসময় দু‘আ করি, আল্লাহ্ যেন তাকে জান্নাতের ফুল বানিয়ে রাখেন। জান্নাতের বাগানে গিয়ে আমি যেন তার দেখা পাই, আমীন।

নাবীল বিন শহীদ

 

প্রিয় নাবিল বিন শহীদ, তোমার লেখা পেয়েছি। তোমার হাতের লেখা সুন্দর, তবে আরো সুন্দর হতে পারে, যদি তুমি হাতের লেখার যত্ন করো। তুমি যে কথাটা লিখেছো

 সেটা আসলে এভাবে বলতে হবে, ‘আল্লাহ্ আমাদের অনেক ভালোবাসেন, তাই তিনি আমাদের কত রকম নেয়ামত দান করেছেন। এজন্য আমরাও আল্লাহকে ভালোবাসি।’ এ লেখাটি সম্পর্কে তুমি তোমার প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করো, তিনি তোমাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবেন।

 

আম্মু খুশী হলে আল্লাহ খুশী হবেন

আমি যদি বড় আলিম হতে পারি তাহলে সবচে’ বেশী খুশী হবেন কে? আমার আম্মু!

আমার আখলাক যদি সুন্দর হয়, আমার চিন্তা যদি উন্নত হয় তাহলে সবচে’ বেশী খুশী হবেন কে? আমার আম্মু!

আমি যদি অনেক বড় লেখক হতে পারি, সাহিত্যিক হতে পারি তাহলে সবচে’ বেশী খুশী হবেন কে? আমার আম্মু!

আম্মু যদি খুশী হন তাহলে আল্লাহ অনেক খুশী হবেন! তাই আমি মন দিয়ে লেখাপড়া করি, সুন্দর সুন্দর কাজ করি, ভালো ভালো চিন্তা করি, আর সুন্দর করে কথা বলি।

আমার আম্মু কত ভালো! সবার আম্মুই তো ভালো। আমার আম্মু আরো ভালো। আম্মু আমার জন্য কেঁদে কেঁদে কত দু‘আ করেন!

একবার আম্মুর জ¦র হলো। আমি আম্মুর অনেক খেদমত করলাম। আম্মুর মাথায় পানি দিলাম। আম্মুর অনেক আরাম হলো। আম্মু খুব খুশী হলেন। খুশী হয়ে অনেক দু‘আ করলেন।

মু‘আওয়ায বিন আযীযুল হক

 

 

রোযনামচার পাতা শুকনো পাতা, সবুজ পাতা!

 

 মনে পড়ে আমার ময়নাপাখীর কথা!    ২৭/১২/৩৯ হি. রোববার

আজ পুষ্প পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে মনট খুব বিষণœ হয়ে গেলো। একজন লিখেছে তার প্রিয় ময়নাপাখীর কথা। লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়তে পারলাম না। অশ্রুতে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। মনে পড়লো আমার প্রিয় ময়নাপাখীটির কথা। আমার খুব কাছের একজন মানুষের নির্দয়তার কারণে পাখীটির করুণ মৃত্যু হয়েছিলো। আমি তাকে বিশ^াস করেছিলাম এবং ভুল করেছিলাম। জানি না, বিশ^াস করা ভুল, না বিশ^াস ভঙ্গ করা ভুল!

পাখীটির মৃত্যুর কারণে আমি শোকে একেবারে কাতর হয়ে পড়েছিলাম। কয়েকবার স্বপ্নে দেখেছি পাখীটিকে। একবার দেখি, পাখীটি গাছের ডালে বসে আছে মুখ ভার করে। আমি কাছে ডাকলাম। পাখীটি এলো না, বরং অনুযোগের স্বরে বললো, তুমি তো আবার আমাকে বন্দী করবে, আমার মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াবার স্বাধীনতা হরণ করবে, তারপর আমাকে মেরে ফেলবে। ...

 সৈয়দ কাউছার আহমাদ, মাদরাসা-ই- রাবেতা আল ইসলামিয়া, ঢাকা

 

আবার এসেছে আমাদের পুষ্প  আবার এসেছে আমাদের পুষ্প!

 আমি যখন লিখতে শুরু করেছিলাম কাঁচা হাতে কাঁচা কাঁচা শব্দ জোড়া দিয়ে তখন পুষ্প ... তবু আমার লেখা দুর্বল গতিতে হলেও চলছিলো। ...

কয়েকদিন আগে যখন পুষ্পের নতুন আত্মপ্রকাশের কথা শুনলাম, কী যে আনন্দ হলো! তারপর আজ পেলাম পুষ্পের প্রথম সংখ্যা যাতে ছিলো আরাকানের আগুন, ধোঁয়া, আর ছিলো আরাকানী মুহাজিরীনের বুকফাটা আর্তনাদ। ...

একই সঙ্গে পেলাম দ্বিতীয় সংখ্যা যাতে ছিলো মসজিদুল আকছার করুণ কাহিনী, ফিলিস্তীনের মুজাহিদীনের সাহস ও বীরত¦গাঁথা...

এদু’টি যেন আমার ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা দ্বীনী গায়রত ও ইসলামী চেতনাকে জাগিয়ে তুললো প্রবল একটা ঝাঁকুনি দিয়ে। ...

আমার চোখ থেকে যে অশ্রু ঝরছে সেটাই হবে আমার কলমের কালি। আমি লিখবো আমার মজলুম ভাইদের কথা। সবাইকে আমি শোনাবো এ সান্ত¡নার বাণী, যদি আমরা সত্যের পথে চলার যোগ্যতা অর্জন করি তাহলে বিজয় আমাদের...

তাসনীম আহমদ, চাটখিল, নোয়াখালী (রোযনামচার তারিখ নেই)

 

 

২/৫/৩৯ হি.২০/১/১৮ খৃ, শনিবার

গতকাল আমাদের মাদরাসার ছাত্ররা ইজতিমায় গিয়েছে। আজ আমিও গেলাম আব্বুর সঙ্গে। ভাঙ্গা রাস্তা, বাসের ঝাঁকুনি, আর ধূলো, সব মিলে বড় কষ্টদায়ক অবস্থা ছিলো। তবু নদীর তীর ঘেঁষে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ছিলো। সবুজের দৃশ্যটিও আনন্দদায়ক ছিলো।

ইজতিমায় গিয়ে আছর পড়লাম। দু’টো মূল্যবান বয়ান শুনে এশার পর বাসায় ফিরে এলাম।

 ২৪/৬/৩৯ হি. ১৩/৩/১৮ খৃ. রোববার

আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো আজ। পারিবারিক ধারাবাহিকতা রক্ষার অধ্যায়। পরিবারের সবাইকে চশমা ব্যবহার করতে হয়; চক্ষুচিকিৎসক আমারও নাকের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন চশমা নামের ‘চশমখোর’!

১২/৭/৩৯ হি. ৩১/৩/১৮ খৃ. শনিবার

আজ আমার প্রিয় পুষ্প এসেছে। পুষ্প যখন আসে আমার হৃদয়ের ্উদ্যানটি সজীব হয়ে ওঠে। আমার আত্মার গভীরে তখন যে শান্তি ও প্রশান্তি অনুভূত হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

পুষ্পের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় তখন যখন পুষ্প ছিলো না। বলা যায়, তাজা ফুলের প্রত্যাশায় বাসি ফুল দিয়েই পুষ্পকে আমি বরণ করেছিলাম।

পুষ্প আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। পুষ্প আমাকে নতুন চিন্তা ও চেতনা দান করেছে। পুষ্প আমাকে ফুলের মত হতে প্রেরণা যুগিয়েছে। পুষ্পের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ ...

উসামা বিন মুহাম্মাদুল্লাহ, মীরপুর, ঢকা-১

***

১৮/৭/৩৯ হি.

মাদরাসাতুল মাদীনায় এসে আমি ফুলের প্রতি ভালোবাসা পেয়েছি, আর একটি কথা জেনেছি, ফুলকে যদি ভালোবাসতে পারি সত্যিকারের ভালোবাসা তাহলেই আমি হতে পারবো ফুলের মত কোমল, ¯িœগ্ধ ও পবিত্র।

গাছের ডাল থেকে ফুল ছিঁড়লে ফুলের কষ্ট হয়, গাছ ব্যথা পায়, এটা আমার জানা ছিলো না, এখন জেনেছি এবং অবাক হয়েছি। ঘটনাটি হলো, একদিন মাদরাসার বাগান থেকে একটি ফুল ছিঁড়ে তার ঘ্রাণ নিলাম এবং ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। আমার খুব আনন্দ হলো। সেদিন রাতে পুষ্প খুলেছি পড়বো বলে। হঠাৎ দেখি চোখের সামনে ফুলের যবানিতে এই লেখাটি,-

‘তুমি আমাকে আমার মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ো না। আমাকে মায়ের কোলে রেখেই আমার সুবাস গ্রহণ করো। তোমাকে যদি কেউ তোমার মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেয় তোমার কষ্ট হবে না?! তোমার মায়ের কান্না পাবে না?!’

তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছি, আর কখনো গাছ থেকে ফুল ছিঁড়বো না। আরো প্রতিজ্ঞা করেছি, আমি ফুলের মত সুন্দর হবো, ফুলের মত কোমল হবো এবং হবো ফুলের মত পবিত্র।

-মুহম্মদ হাসান সাইয়াফ, মাদরাসাতুল মা...

২২/২/১৮ খৃ.

কতদিন হলো, গ্রামের শান্ত  পরিবেশ ছেড়ে চলে এসেছি শহরের ইটপাথরের প্রাণহীন পরিবেশে। কিন্তু গ্রামের সেই দিনগুলোর মধুর স্মৃতি আজো আমি ভুলতে পারিনি। ভোরে ‘পাখীর আযানে’ ঘুম থেকে জেগে ওঠা, দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠে বিচরণ করা, পুকুরে সাঁতার কেটে গোসল করা, জাল দিয়ে মাছ ধরা। এসব যখন মনে পড়ে, মনটা বড় বেশী কাতর হয়ে পড়ে। মনে পড়ে সমবয়সী বন্ধুদের কথা। আমার কত সুখের, কত দুঃখের স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের ঘিরে! বিশেষ করে ঝড়ের দিনে দল বেঁধে আমকুড়ানো। তাদেরও কি মনে পড়ে আমার কথা! এখন হয়ত তারাও বড় হয়ে গিয়েছে। তাদেরও হয়ত খেলাধূলার পরিবর্তে লেখা-পড়ার ব্যস্ততা শুরু হয়েছে।

অতীতের স্মৃতি কেন মানুষকে এত কাতর করে? বর্তমান ও ভবিষ্যতের চেয়ে অতীত কি এতই শক্তিমান!

আশরাফ আলী/টঙ্গী দারুল উলূম মাদরাসা, চেরাগ আলী, টঙ্গী, গাজীপুর

***

ওরা এবং আমরা,কত পার্থক্য

 

দুঃখে ক্ষোভে বুকটা ফেটে যায়, যখন দেখি মুসলিমবিশে^র নেতৃবৃন্দ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্র বিষয়-গুলোকে, সমস্যাগুলোকে রাজনৈতিক, আঞ্চলিক, আভ্যন্তরীণ, ইত্যাদি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। আরাকানের মুহাজিরীনের সমস্যা, কাশ্মীরের নির্যাতিত মুসলমানদের সমস্যা, বসোনিয়ার অসহায় মুসলমানদের সমস্যা, এমনকি ফিলিস্তীন ও বাইতুল মাকদিসের সমস্যা, কোন সমস্যার সঙ্গে যেন দ্বীন ও মিল্লাতের কোন সম্পর্ক নেই!

অথচ হিন্দু-নাছারা-ইহুদি, যে জাতি ও জনগোষ্ঠীর দিকেই তাকাই, প্রতিটি বিষয়কে তারা ধর্মীয় এবং শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখে থাকে। এমনকি তাদের রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি ও ‘অস্ত্রনীতি’, এমনকি তাদের সাহায্যনীতিও পরিচালিত হয় ধর্মকে কেন্দ্র করে। তাদের মিডিয়া ও গণমাধ্যম, তাও আগাগোড়া ধর্মকে সামনে রেখে। ওরা অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভাঙ্গলো ধর্মের নামে, রামের জন্মভূমির কথা বলে। কাশ্মীরে এত রক্ত ঝরছে, শুধু এজন্য যে, তারা মুসলিম। তিমুরে কোন রক্ত ঝরলো না, শুধু এজন্য যে, ওরা খৃস্টান। ফিলিস্তীনের বুকে ‘ইহুদি’ নামে রাষ্ট্র হলো, তাও নাকি এ যুক্তিতে যে, এটা হচ্ছে ওদের ধর্মগ্রন্থমতে ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’!

ওরা দুর্গত মানুষকে সাহায্য করে মানবতার নামে নয়, ধর্মপ্রচারের ‘মতলবে’, তবু ওরা আগাগোড়া মানবতাবাদী!

আমেরিকার মত চরম পুঁজিবাদী ও আধুনিক বস্তুবাদের দেশেও মুদ্রার গায়ে থাকে ধর্ম ও বিশ^াসের শ্লোগান, অথচ কোন মুসলিম দেশের সংবিধানে...!

এরপরো কি বুঝতে বাকি থাকে, কেন আমাদের জীবনে আজ এত দুর্গতি, এত যিল্লতি!! ....

নোমান আহমদ, তাজমহল রোড, মুহাম্মদপুর, ঢাকা ১৪/৭/৩৯ হি.

 

০০ প্রিয় নোমান, পুষ্পকে সম্বোধন করে লেখা তোমার চিঠি ও আত্মকথা পড়েছি। তোমার অনুভূতিকে আমি সম্মান করি, তবে আকুতি বলো, বা মিনতি, তখনই তা ফলদায়ক হয় যখন তার সঙ্গে থাকে পরিশ্রম ও সাধনা। আশা করি, এ বিষয়ে তুমি যথেষ্ট সচেতন।

মাকে মনে পড়ছে, কিন্তু ...!

পৃথিবীতে আমার সবচে’ আপন যিনি তিনি আমার মা! যাকে দেখলে জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাই, তিনি আমার মা! যিনি চোখের আড়াল হলে আমার পৃথিবী আঁধার হয়ে যায় তিনি আমার মা!

মা আমার জন্য কত কষ্ট করেছেন! কত ত্যাগ ও আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন শুধু আমার সুখ-শান্তির জন্য, শুধু আমার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য!

কেন জানি, মাকে একটিবার দেখার জন্য মনটা আজ বড় ছটফট করছে। কিন্তু সামনে যে পরীক্ষা! মায়ের কত স্বপ্ন, কত আশা আমাকে কেন্দ্র করে! আমি যদি পড়া লেখা করে বড় আলিম হতে পারি তাহলে মায়ের মনে কত শান্তি আসবে!

এসব চিন্তা করে মনকে বুঝিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।

পরীক্ষার পর যখন ‘বিরতি’ হবে তখন ইনশাআল্লাহ্ মায়ে কাছে ফিরে যাবো এবং মন ভরে দেখবো মায়ের নূরানী চেহারা। সন্তানের জন্য কত সৌভাগ্য যে, মা ও বাবার চেহারার দিকে একবার যদি মুহব্বতের নযরে তাকানো হয় তাহলে ...!

ইনশাআল্লাহ্ বিরতির সময় আমি মায়ের অনেক খেদমত করবো এবং মায়ের দু‘আ হাছিল করার চেষ্টা করবো, কারণ জীবনে যা কিছু...।

হে আল্লাহ্, আমাকে তাওফীক দান করুন যেন মায়ের স্বপ্ন, মায়ের আশা আমি পূর্ণ করতে পারি।

হে আমার রাব্ব, আপনি রহম করুন তাদের, যেমন তারা প্রতিপালন করেছেন আমাকে ছোট অবস্থায়।

মাহফুযুর রহমান, নোয়াখালী (তারিখ নেই)

 

প্রিয় মাহমূদ হাসান/মানারুশ্-শারক, উত্তরা, ঢাকা

০০ তোমার এবং তোমার বোনের টিঠি পেয়ে খুশী হয়েছি। তোমার হৃদয়নিঃসৃত দু‘আ আমার হৃদয়কে আপ্লুত করেছে। ফাজাযাকুমুল্লাহু খায়রান।

দয়াময়ের দয়ায় তোমার জীবনে কিছু প্রশান্তি বিরাজ করছে এবং তা পুষ্পের সান্নিধ্য লাভের কল্যাণে, শুনে কত যে আনন্দ হলো! কামনা করি, আল্লাহ্র ইচ্ছায় তোমার জীবন যেন কল্যাণে ও প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

তোমরা ভাই-বোন সবাই নিয়মিত রোযনামচা লিখছো, এটা সত্যি অত্যন্ত সন্তোষের বিষয়। রোযনামচাকে কেউ যদি সামান্য সময়, সামান্য যত্ন, কিছু চিন্তা, কিছু অন্তরঙ্গতা দান করে, রোযনামচা তাকে দান করে অফুরন্ত কল্যাণ, অন্তহীন সফলতা এবং চিরন্তন আলোর ¯িœগ্ধ পরশ। রোযনামচা তাকে দান করে চিন্তা ও চেতনার সমৃদ্ধি, হৃদয়ের কোমলতা ও আত্মার পবিত্রতা এবং দান করে ...!

তোমার বোন নাজিয়ার চিঠি থেকে বোঝা গেলো, তার ছাত্রীদের জন্য তার হৃদয়ে রয়েছে মাতৃমমতা এবং ...! এটি আদর্শ শিক্ষক হওয়ার অন্যতম শর্ত। আমি তার সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করি।- আ, তা, মেছবাহ

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা