আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর
২৫/২/৪১ হি.
গতকাল আমার এক সহপাঠী কাশ্মীরের উপর রচিত একটি তারানা দেখালো, লিখেছেন পাকিস্তানের স্বনামধন্য আলিম আল্লামা তাক্বী উছমানী আজ থেকে পঞ্চাশ বছরেরও আগে। তারানাটি শুনে বিশ্বাসই হতে চায় না, কোন আলিমের কলম থেকে জন্ম নিতে পারে এমন তারানা! যেমন আবেগ-উষ্ণতা ও জিহাদি চেতনা, তেমনি ছন্দ ও সুর, আর তেমনি কাব্যিক শব্দচয়ন! ইচ্ছে হয়, পুষ্পের পাতায় পুরো তারানা পরিবেশন করি অন্তত গদ্যে অনুবাদ করে।
আফসোস! আমাদের সমাজে এমন একটি কলমও কি আছে যা এমন একটি তারানা লিখতে পারে, আলআকছার জন্য, আরাকানের জন্য, কাশ্মীরের জন্য এবং আমার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য?! (সাঈদ, বরিশাল)
মুক্তি কোন্ পথে!
২৬-১২-৪০ হি. ২৮-৮-১৯ খিৃ. বুধবার
আজ একটি লেখা এসেছে নয়া দিগন্তে; শিরোনাম, ‘অবরুদ্ধ কাশ্মীর, মুক্তি কোন্ পথে?’
আগ্রহ হলো, দেখি তো কাশ্মীরের মুক্তির কোন্ পথটি তিনি দেখাতে চান!
‘কাশ্মীর জ্বলছে বাহাত্তর বছর ধরে’ দিয়ে বক্তব্যের শুরু, আর ‘জাতিসঙ্ঘের কার্যকর ভূমিকা ছাড়া স্থায়ী সমাধানের কোন পথ নেই’ দিয়ে বক্তব্যের সমাপ্তি।
এখন এটাই আমাদের চিন্তার সাধারণ প্রবণতা। সমস্যা বুঝতে চাই ‘নিরপেক্ষ’ দৃষ্টিতে এবং সমাধানও আনতে চাই ‘নিরপেক্ষ’ দৃষ্টিকোণ থেকে।
জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে, দেড় হাজার বছরের মধ্যে একবারও কি আমাদের সমস্যার সামাধান এসেছে ‘অন্যের’ দয়ায়, বদান্যতায়! দূর অতীতের কথা থাক, আমাদের নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা কী বলে? কলমের একখোঁচায় যিনি বাইতুল মাকদিস দিয়ে দিলেন ইহুদিদের তিনি কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করে দেবেন ইনসাফের সঙ্গে নিজে কিংবা জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে?
আফসোস, কবে আমাদের বুঝ হবে! কবে আমরা অনুপ্রাণিত হবো কোরআনের আহ্বানে!!
মাহমূদ ইমরান, ফরিদাবাদ, ঢাকা
মিছিলে কী হবে?
আজ মিছিল হলো। উদ্দেশ্য, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। খেলাফত আন্দোলনের মিছিল। খেলাফত আন্দোলন এখনো একটি ‘সক্রিয়’ ইসলামী রাজনৈতিক দল! তারা প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে, আমার কয়েকজন সহপাঠী গিয়েছে। ফিরে এসে জানালো তাদের হতাশার কথা। কয়েক শ তালিবে ইলম, অন্যান্য স্তরের মানুষের অংশগ্রহ বলতে গেলে শূন্য!
কী হবে! একটা দু’টো মিছিল, প্রতিবাদসভা, সেমিনার, তারপর যথারীতি ‘ঘুম’! স্থায়ীভাবে জাগ্রত থাকার এবং জাগ্রত রাখার ব্যবস্থা যদি গ্রহণ না করা হয় তাহলে কী হবে এসব মৌসুমি কাজকর্মে!৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল থেকেই কি কাশ্মীরে সমস্যার শুরু? আর এটা কি ভারতীয় সংবিধানে যুক্ত হয়েছিলো কাশ্মীরী মুসলমানদের দাবীর মুখে, না কাশ্মীরী জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য কৌশল হিসাবে? তাহলে! আমরা নীরবচ্ছিন্ন ও লাগাতার কোন কর্মসূচী কি
গ্রহণ করতে পারি না, যাতে তৃণমূল থেকে আমরা তালিবানে ইলম ইলমী যোগ্যতা এবং চিন্তার প্রজ্ঞা, সর্বোপরি জিহাদের সস্তা জোশ নয়, বরং বাস্তব জাযবা নিয়ে গড়ে উঠতে পারি! পুষ্পের আরাকানসংখ্যা হয়েছে, তারপর আলকুদসসংখ্যা হয়েছে; এবার যদি কাশ্মীরসংখ্যা হতো!
-আহসান ইরফান, ফেনী
***
০০ তোমার চিন্তার সঙ্গে আমি একমত তবে তুমি অন্যের দিকে না তাকিয়ে নিজেই তোমার সাধ্যের ভিতরের কাজটুকু শুরু করো। প্রথম কাজ হলো ইলমি। তুমি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস পড়ো। আমাদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করো, যা তোমার সামনে বর্তমানের কর্মপন্থা স্পষ্ট করে দেবে। তারপর আল্লাহ্র কোন নেক বান্দার ছোহবতে থেকে ‘ওয়াহন’ থেকে মুক্ত হওয়ার মেহনত করো, যার কথা হাদীছ শরীফে এসেছে। এ দু’টি যদি অর্জন করা সম্ভব হয়...!
তুমি তো নিশ্চয় জানতে না যে, পুষ্পের বর্তমান সংখ্যাটি হবে কাশ্মীরসংখ্যা, দেখে ভালো লাগছে নিশ্চয়!!
ভারতীয় সংবিধানে পরিবর্তন, উদ্দেশ্য কী?
৬-১২-৪০ হি. ৮-৮-১৯ খৃ. বৃহস্পতিবার
আজ নয়া দিগন্তে একটা লেখা এসেছে ‘কাশ্মীরসঙ্ঘাতের শেষ কোথায়?’ শিরোনামে। তিনচার দিন থেকেই চলছে পত্রপত্রিকায় কাশ্মীরবিষয়ক লেখার আগ্রহ। হয়ত আরো কয়েকদিন চলবে। প্রশ্ন হলো, তারপর?
সন্ধ্যার পর পত্রিকা হাতে পেয়েই লেখাটা পড়লাম। মোটামুটি চিন্তাপূর্ণ লেখা। প্রথমে তুলে ধরা হয়েছে সমস্যার সর্বশেষ প্রেক্ষাপট; সাতচল্লিশের ভাগবাটোয়ারার সময়ের কথা। তারপর তুলে ধরা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়দেশের জন্য কাশ্মীরের, বিশেষ করে ভৌগোলিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা, যে জন্য ভারত বা পাকিস্তান কারো পক্ষেই পিছিয়ে আসা বা ছাড় দেয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে পাকিস্তানের কাশ্মীর হলো ‘শাহরগের মত’!
তারপর তুলে ধরা হয়েছে, ভারত আসলে কী চায় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত ৩৫ক ধারার বিলুপ্তি দ্বারা? উত্তর সোজা, কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিনষ্ট করা। হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে চিরকালের জন্য কাশ্মীরকে হিন্দুভারতের দখলভুক্ত করে নেয়া। তারপর কাশ্মীর থেকে যেন আর কোন মুসলিম আওয়ায উঠতে না পারে...!
লেখাটি শেষ করা হয়েছে এভাবে, ‘... তা না হলে হিন্দুস্তানে ভয়াবহ যুদ্ধের যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে সেদিকেই পরিস্থিতি এগিয়ে যাবে বলে মনে হয়। আর ভারতীয়রা জয়ী হতে পারবে না বলেই ভবিষ্যদ্বাণীতের বলা হয়েছে। (হামীদ রাশেদ, মোমেনশাহী
নিজেকেই এগিয়ে আসতে হয়!
একটি চিঠি ও তার উত্তর!
০ প্রিয় আদীব হুযূর! সালাম নেবেন ...
কাশ্মীরের মুসলমানদের দুঃখ-দুর্দশার কথা যখন জানতে পারি, মনে বড় কষ্ট হয়। একটা অক্ষম অস্থিরতায় শুধু ছটফট করতে থাকি। বুঝে উঠতে পারি না, আমার কী করণীয়! ...
তারপর যখন দেখি মুসলিম বিশ্বের চরম নির্লিপ্ততা তখন...! প্লিজ, আপনার দিকনির্দেশনা চাই।
০০ তুমিও দেখি ‘প্লিজ সংস্কৃতি’র অনুসারী! ‘দিকনির্দেশনা’ শব্দটা অর্থহীনভাবে এত বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে যে, ...!
সবসময় যা বলে এসেছি এখনো তাই বলবো, অন্যরা কী করছে তা ভেবে চুপসে থাকার কোন অর্থ নেই। মুসলিম বিশ্বের ‘নেতা ও জনতা’ কেন ঘুমিয়ে আছে সে কান্না কেঁদেও লাভ নেই। শুধু চিন্তার বিষয় হলো, আমার কী করণীয় এবং আমি কী করছি! কারণ নিজের উপর তো আমার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে! আসল কথা হলো, যে কোন অবস্থায় নিজেকেই এগিয়ে আসতে হয় এবং সাধ্যের ভিতরে যা আছে তা সর্বোচ্চ উপায়ে আঞ্জাম দিয়ে যেতে হয়। নিজের কর্ম ও কর্তব্যের উপর আস্থা ও স্বতঃস্ফূর্ততা থাকতে হয়। আমার কথাই ধরো। আল্লাহ্ হাতে কলম রেখেছেন, তো কলমের সাহায্যে মনের কষ্টগুলো লিখে যাচ্ছি, আর যদ্দুর সম্ভব, আমাকে যারা ভালোবাসে, আমার কলমের কথা যারা শুনতে চায় তাদের কাছে আমার কথাগুলো পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
যে সব বড় কাজ বড়দের করার কথা, যা আমার সাধ্যের ভিতরে নেই তার জন্য আফসোস তো অবশ্যই আছে, তবে তা নিয়ে হায়হুতাশ করে সময়ের অপচয় করতে আমি রাজী নই।
এ মুহূর্তে আমার, তোমার আমাদের সবার করণীয় হলো, আত্মসংশোধনের সাধনায় নিয়োজিত থাকা। দুনিয়ার মোহ থেকে, মৃত্যুর ভয় থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে মুক্ত করার মেহনত করা। নিজের মধ্যে ঈছার-এর গুণ অর্জনের চেষ্টা করা। সুন্দর আখলাক ও সুন্দর চিন্তা অর্জনের চেষ্টা করা। এমন সব কর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখা যাতে পরস্পর বিভেদ ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
আরেকটা বড় কাজ হলো, সময়কে সুশৃঙ্খখলভাবে ব্যয় করা, যাতে উম্মাহ্র ইতিহাস সম্পর্কে ‘নিয়মিত’ মুতালা‘আ ও অধ্যয়ন করা যায়। এ বিষয়ে আমাদের অজ্ঞতা সত্যি অমার্জনীয়।
এভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা প্রত্যেকে নিজেকে আগামী দিনের জন্য গড়ে তুলতে পারি। যদিও এগুলো ‘রক্ত ঠা-ণ্ডা করা’ কথা, যা তরুণ রক্তের পছন্দ নয়, তবে এটাই হলো সঠিক ‘দিকনির্দেশনা’, অন্তত আমার দৃষ্টিতে। আল্লাহ্ হাফেয!