আমাকে
আমাকে যত পারো তিরস্কার করো। যত পারো ধিক্কার দাও। যত পারো ঘৃণা করো। যদি ইচ্ছে হয়, কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দাও
***
আমি জানি কোন তিরস্কারে, কোন ধিক্কারে, কোন সাজা ও শাস্তিতে আমার অপরাধের মোচন হবে না। আমি জানি, এ অপরাধের বোঝা, এ কলঙ্কের কালিমা চিরকাল আমাকে বয়ে যেতে হবে। এ মহাঅপরাধের দায়ভার নিয়েই আমাকে কবরে যেতে হবে, হাশরে তোমার সামনে দাঁড়াতে হবে, আমি জানি, আমার কোন গতি নেই, আমার কোন মুক্তি নেই। আমি জানি, আমার জন্য কোন সুফারিশ নেই, কোন সুফারিশকারী নেই, তুমি যদি দয়া না করো হে রাহমান! তুমি যদি ক্ষমা না করো হে গাফুর!!
***
আমি মুক্তি চাই, আমি প্রায়শ্চিত্ত চাই!! আমি উদ্ধার পেতে চাই, এবং উদ্ধার করতে চাই। তুমি আমাকে শক্তি দাও, সাহস দাও! তুমি আমাকে সাহায্য করো, তুমি আমাকে পথ দেখাও, তুমি আমাকে উপায় বলে দাও। তোমার আকাশ তো চিরউদার, চিরপ্রশস্ত! তোমার আকাশ তো সবার জন্য অবারিত। তোমার আকাশের নীচে আমাকে একটু স্থান দাও হে মহান! আমিও পেতে চাই তোমার করুণা। আমিও পেতে চাই তোমার সেই সাহায্য, যাতে আজকের শক্তি-দানবদের বিরুদ্ধে আখেরি লড়াইয়ে আমি জয়ী হতে পারি। যেন আমার প্রিয়কে আমি উদ্ধার করে আনতে পারি। যেন আমার প্রিয়কে চিরকালের জন্য আমি রক্ষা করতে পারি।
***
যিল্লতির চূড়ান্ত হয়ে গেছে হে আল্লাহ! আমাকে দেখে ওরা এখন হাসে অবজ্ঞার হাসি! আর আড়ালে করে হাসাহাসি। আমার প্রিয়কে ছিনিয়ে নিয়ে ওরা দেখাতে চায়, ওদের কত শক্তি! আমরা কত দুর্বল, কত কমযোর!! আমরা তোমার বলে বলীয়ান হতে চাই হে আল্লাহ! তোমার সিপাহী হয়ে সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করতে চাই হে আল্লাহ!
তুমি তো বদরে ছিলে, হোনায়নে ছিলে! আমরা তোমার সেই প্রিয়তমেরই অনুসারী হে রাহীম, রাহমান!
তুমি তো শুনেছো সেই ফরিয়াদ, ‘যদি এদলটি আজ ধ্বংস হয়ে যায়, পৃথিবীতে তোমার ইবাদত আর হবে না!’ সেই প্রার্থনার, সেই ফরিয়াদের দুহাই ইয়া কাহ্হার! ইয়া যুল জালাল!! আমাকে সাহায্য করো। যলিমকে হীনবল করো। গুঁড়িয়ে দাও, চূর্ণ করে দাও! আছড়ে ফেলো, বিচ্ছিন্ন করে দাও। এমন পাকড়াও করো যাতে নড়তে না পারে, যাতে বাঁচতে না পারে। ওদের চক্রান্ত ওদেরই বুকে বিঁধিয়ে দাও। ওদের মকর ফেরেব ওদেরই দিকে ঘুরিয়ে দাও। তুমি কী না পারো হে আল্লাহ! তুমি সব পারো হে আল্লাহ!
ওদের সব শক্তি, সব যুক্তি, সব প্রযুক্তি তোমার কুদরতের সামনে তো অচল হে আল্লাহ! ওদের দাপট, প্রতাপ, হুঙ্কার আর সহ্য হয় না হে আল্লাহ! এবার আমাকে তুমি সাহায্য করো হে আল্লাহ! আমাকে পরদা করে তুমি কতল করো হে আল্লাহ! তুমি নিজে ছুঁড়ে মারো হে আল্লাহ!
***
নতুন করে যেন শুনতে পেলাম, ‘তোমরাই হবে বিজয়ী, যদি হও মুমিন!’ বিশ্বাস করি হে আল্লাহ! তোমার সাহায্যে আমরাই বিজয়ী হবো হে আল্লাহ! তোমার শোকর হে আল্লাহ!
তোমাকে
ভালোবেসেছি তোমাকে হৃদয়-প্রাণ উজাড় করে। পেয়েছি তোমাকে জীবনের পুরো আঙ্গিনাজুড়ে।
তুমি আমার হৃদয়ের শান্তি, আমার আত্মার প্রশান্তি!! তুমি আমার স্বপ্নের আলো, আমার দৃষ্টির জ্যোতি!! তুমি আমার প্রাণ, আমার প্রাণের সজীবতা!! তুমি আমার উদ্যানের ফুল, আমার ফুলের সুবাস! তুমি আমার জীবনের সবুজ পাতা!!
তুমি আমার রাতের আকাশ! আকাশের জোসনাভরা চাঁদ! তুমি আমার তারার ঝিলিমিলি, আমার জোনাকির আলো!! তুমি আমার জীবননদীর স্রোতের কুলকুল ধ্বনি! তুমি আমার হৃদয়সরোবর ও প্রাণঝর্ণার মধুর সঙ্গীত-তরঙ্গ!!
তুমি আমার সত্য, আমার আলো, আমার অস্তিত্ব, তুমি ছাড়া আমার সবকিছু মিথ্যা, আলোহীন, অন্ধকার! তুমি ছাড়া জীবন আমার মরুভূমি। তুমি আমার জীবনমরুর মরূদ্যান।
তুমি আমার স্বপ্ন, আমার স্বপ্নের আলোকদিগন্ত!! তুমিই আমার প্রতিটি স্বপ্নের শুরু ও শেষ। তুমি আমার অতীত, বর্তমান, আমার ভবিষ্যত!!
***
আমার জীবনে আজ কেন এত অন্ধকার! হতাশার এমন ঘোর আঁধার!! আমার জীবনে আজ নেই কেন বসন্ত, বসন্তের বাহার, আমার হৃদয়ের উদ্যানে নেই কেন আজ ফুলের হাসি, ফুলের সুবাস! নেই কেন ফুলের পাপড়ি, ফুলের হলুদ রেণু!! আমি পেতে চাই তাকে একান্ত আপনার করে। কেন খুঁজে পাই না তাকে! কোথায়, কোন সুদূরে তার অধিবাস! একসময় ছিলো আমার কাছে তার ঠিকানা। আজ হারিয়ে গেছে জীবনের অর্থহীন ব্যস্ততার ভিড়ে! জীবনের
লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যহীন শোরগোলের মধ্যে।
***
তোমার দোষেই তুমি হারিয়েছো তাকে। তোমার কাছেই তো ছিলো আকাশের উপহাররূপে! হীরকখ-ের চেয়ে মূল্যবান ছিলো! তার জন্য কোরবান হতে পারে হাজার কূহে নূর, হাজার শহর-নগর ও জনপদ! অথচ, নিজের হাতেই তুলে দিলে তাকে আজনবীর হাতে। তোমারই বেগায়রতির যিল্লতি আজ সে ভোগ করছে ‘ওদের’ হাতে!!
আজ সে বন্দিনী তাদের কারাগারে! আজ সে তাদের নির্মমতার, নিষ্ঠুরতার অসহায় শিকার!!
সে জানে তোমারই অপরাধে আজ তার এ যিল্লতি, এ দুর্গতি!! তবু সে ভুলেনি তোমাকে! হৃদয়ের গভীরে আজো সে অনুভব করে তোমার প্রতি ভালোবাসার বন্ধন!! এ বন্ধন যে আকাশের দান!!
আজো সে স্মরণ করে তোমাকে। দুশমনের যিন্দানখানায় আজো কাঁদে সে তোমার বিরহে! তোমার প্রতীক্ষায় আজো প্রহর গুণে সে!! তোমাকেই ফিরে পাওয়ার আশায় আজো বেঁচে আছে সে! তুমি কি শুনতে পাও তার কান্না! তার করুণ আর্তনাদ! ঐ শোনো তার ডাক, কোথায় তুমি হে আমার প্রিয় মুসলিম!!
কত হৃদয়হীন তুমি, কত নিষ্ঠুর বে-গায়রাত তুমি! জীবনে তোমার ভোগ আনন্দের ছড়াছড়ি, অথচ তোমার ‘প্রিয়’ বন্দী দুশমনের যিন্দানখানায়!! তুমি ঘোমাও কী সুখের ঘুম শীতল বাতাসে, কোমল শয্যায়! অথচ তোমার ‘প্রিয়’, নির্ঘুম রাত কাটে তার, কারাগারের ধূলিশয্যায়!!
***
আমি লজ্জিত, আমি অনুতপ্ত! এই দেখো, তোমার জন্য আবার আমি বুক পেতে দিয়েছি!! এই দেখো, আবার আমি খঞ্জরের আঘাত হাসিমুখে বরণ করেছি! দেখো কী লাল খুন বুকে আমার! তোমার জন্য, শুধু তোমার জন্য আমার বুকের প্রতিটি রক্তবিন্দু! আমার চোখের প্রতিটি অশ্রুবিন্দু!! তোমাকে উদ্ধার করার জন্য আমি আসছি হে প্রিয় আকছা! আমার সঙ্গে আসছে ঐ দেখো লক্ষ জনতা!! ঐ দেখো, মাথায় সবার সাদা কাফন বাঁধা!! ঐ দেখো, ভোরের আকাশে লাল সূর্যের কী সুন্দর উদয়! উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই। *
কোথায় তুমি আমার হৃদয়, আমার আত্মা, আমার প্রাণ, কোথায় তুমি আমার জীবনমরুর মরূদ্যান! কোথায় তুমি আমার জীবনবৃক্ষের সবুজ পাতা! সুরভিত ফুল! কোথায় তুমি আমার ফুলের সুবাস, আমার ফুলের রেণু!! কোথায় তুমি, কোথায়!!
এই তো আমি! এই যে তোমার কত কাছে!! যখন ডাকো তখনো, যখন ভুলে থাকো তখনো!! এই নাও আমার ঠিকানা! আবার গ্রহণ করো আমাকে!! আাবার যদি ভুলে যাও, আবার যদি হারিয়ে ফেলো আমার ঠিকানা, ভুল করো ডাকতে আমাকে! যখনই ডাকবে, পাবে আমাকে তোমার একেবারে কাছটিতে!! পাবে তুমি আমাকে দুঃখী মানুষের চোখের পানিতে! ক্ষুধার্ত মানুষের শূন্য পাত্রে!! পাবে তুমি আমাকে মজলুমানের আর্তনাদে! আমি বড় ভালোবাসি তাকে, ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে আহার তুলে দেয় যে। আমি বড় ভালোবাসি তাকে এতীম শিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে চোখোর মুছে দেয় যে। আমি বড় ভালোবসি তাকে, ঠিকানাহীন মানুষকে ঠিকানা বলে দেয় যে, পথের ঠিকানা এবং জীবনের ঠিকানা।