বাইতুল মাকদিস এবং জেরুসালেম একই শহরের দুই নাম। পৃথিবীর প্রাচীনতম, বা অন্যতম প্রাচীন নগর এটি। বহু হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে এর। বাইতুল মাকদিসের সবচে’ বড় বৈশিষ্ট্য, হযরত ইবরাহীম আ.-এর নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনটি ধর্মেরই রয়েছে এই নগরের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীলতা। ইহুদি, খৃস্টান ও ইসলাম, এ তিন ধর্মের মানুষই এই শহরকে মনে করে পবিত্র শহর। এর মধ্যে ইসলামের স্বতন্ত্র মর্যাদা এই যে, তার আসমানি গ্রন্থ স্বয়ং এ মর্যাদার সাক্ষ্য দান করেছে বহু আয়াতের মাধ্যমে। ইরশাদ হয়েছেÑ
سبحن الذى أسرى بعبده ليلا من المسجد الحرام إلى المسجد الأقصى الذى باركنا حوله لنريه من آيتنا، إنه هو السميع البصير
‘ঐ সত্তার পবিত্রতা যিনি তাঁর বান্দাকে ইসরা ও নৈশযাত্রা করিয়েছেন মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকছা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত রেখেছি, তাঁকে দেখাবার জন্য আমার কিছু নিদর্শন, নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’
ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কাছে এর পবিত্রতার আরো কারণ, কা‘বাতুল্লাহ স্থায়ী কিবলার মর্যাদা লাভের পূর্বে মসজিদুল আকছাই ছিলো মুসলিম উম্মাহর প্রথম কেবলা। প্রায় ষোল মাস আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদুল আকছা-অভিমুখী হয়ে পাঁচওয়াক্ত নামায আদায় করতেন।
তৃতীয়ত, মসজিদুল আকছা হতে শুরু হয়েছে তাঁর মি‘রাজযাত্রা। এখানে আম্বিয়া কেরাম তাঁর ইমামতিতে ছালাত আদায় করেছেন বলে বিশুদ্ধ হাদীছে বর্ণিত রয়েছে।
খৃস্টানদের কাছে এর পবিত্রতার কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঈসা (যিশুখৃস্ট)-এর জীবন। এখানে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর শৈশব। এখান থেকে তিনি ধর্মপ্রচার করেছেন। তার ক্রুশবিদ্ধ হওয়া, মৃত্যুবরণ করা, সমাধিস্থ হওয়া, পৃথিবীতে তাঁর পুনঃআবির্ভাব, এগুলো এখানেই ঘটেছিলো। এখানে যিশুর কথিত সমাধিস্থল রয়েছে
ইহুদিদের নিকট এর পবিত্রতার কারণ, এখানে টেম্পল মাউন্টে রয়েছে তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান ‘ফার্স্ট টেম্পল’ যা (তাদের ধারণায়) নির্মাণ করেছিলেন রাজা সলোমন (হযরত সোলায়মান আ.)। এখানেই ‘আব্রাহাম’ তার পুত্র ইসাককে উৎসর্গ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। (ইসলামের মতে এটি প্রকৃতপক্ষে হযরত ইসমাঈল আ.এর ঘটনা এবং এটাই সুপ্রমাণিত)।
তাছাড়া আলআকছার পশ্চিম দিকের দেয়ালটি হচ্ছে তাদের মতে ‘ক্রন্দনপ্রাচীর’ যা সলোমনের নির্মিত দ্বিতীয় উপাসনালয়ের ভগ্নাবশেষ।
***
ইসলামপূর্ব যুগের দিক থেকে
জরুসালেম বা বাইতুল মাকদিসের সমগ্র ইতিহাসকে আমরা মোট তিনটি পর্বে ভাগ করে নিতে পারি। প্রথমত ইসলামপূর্বযুগের জেরুসালেম। দ্বিতীয়ত ইসলামপরবর্তী বাইতুল মাকদিস। তৃতীয়ত আধুনিক যুগের বাইতুল মাকদিস, যার সূচনা হচ্ছে ঐ সময় যখন বিশ্বইহুদিবাদী সংস্থা বাইতুল-মাকদিস তথা জেরুসালেমকে ইহুদীদের ধর্মীয় বাসভূমি করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
নামকরণ
জেরুশালিম হচ্ছে মূল হিব্রু শব্দ উরিশালা, বা উরায়শালম-এর পরিবর্তিত রূপ। তারো আগে এ শহরকে বলা হতো ঈলিয়া।
ইসলামের আবির্ভাবের পর মুসলিম উম্মাহর নিকট তা আলকুদস, বাইতুল মাকদিস বা বাইতুল মুকাদ্দাস নামেই পরিচিতি লাভ করেছে।
এ তিনটি নামের মধ্যে বাইতুল মাকদিসকে হিব্রু শব্দ ‘বাইতি হাম্মিক্দাশ-এর পরিবর্তিত আরবীরূপ বলে মনে করা হয়। পক্ষান্তরে কুদস বা মুকাদ্দাস হচ্ছে সরাসরি আরবী শব্দ, যার অর্থ মহিমা, বা মহিমাপূর্ণ।
জেরুসালেমের গোড়াপত্তন
প্রাচীনতম ঐতিহাসিক বিভিন্ন
নিদর্শনের আলোকে ধারণা করা হয়, এ অঞ্চল আদিকালে মিশরীয়দের শাসনাধীন ছিলো। পরবর্তীকালে হযরত ইয়াকুব আ. এখানে ইবাদতখানা তৈরী করে আল্লাহর ইবাদত এবং বসবাস করতে থাকেন। ক্রমে তাঁকে কেন্দ্র করে এখানে বসতি গড়ে ওঠে।
খৃস্টপূর্ব ১০০০বছরপূর্বে হযরত দাউদ আ, এ শহর অধিকার করেন। পরবর্তীকালে তাঁর স্থলবর্তী হযরত সোলায়মান আ. মসজিদ ও শহর পুনর্নির্মাণ করেন। ঐ মসজিদ ইহুদিদের কাছে ‘হায়কালে সোলায়মানি’ নামে পরিচিত। ইহুদিদের দাবী, এখন যেখানে মসজিদে আকছা ঠিক সেখানেই ছিলো হায়কালে সোলায়মানি। সুতরাং ইহুদিবাদী চক্রের পরিকল্পনা হলো, আলআকছার স্থানে হায়কালে সুলায়মানির নির্মাণ। ভাবতেও শরীর কাঁটা দেয় যে, কী ভয়াবহ সঙ্ঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে চায় তারা, সম্পূর্ণ কাল্পনিক দাবীর ভিত্তিতে!
খৃস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্যাবিলন (বাবেল)-এর স¤্রাট বুখতে নাছ্ছার (নেবুকাডনেযার) জেরুসালেম নাম গ্রহণকারী এই শহরটি জয় করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন, আর ইহুদিদের উপাসনালয় হায়কালে সোলায়মানি ভষ্মীভূত করেন। স¤্রাট একলাখের মত ইহুদিকে বন্দীদাসরূপে ব্যাবিলনে নিয়ে যান।
পরবর্তীকালে ফিলিস্তীন নামে এ অঞ্চলটি ইরানী ও গ্রীক সম্রাটদের অধীনে শাসিত হতে থাকে।
মহাবীর হেরোদ (হেরোদ দ্য গ্রেট), যার রাজত্বকাল ছিলো খৃস্টপূর্ব ৩৭ থেকে ৪ পর্যন্ত, তখন শহর ও মসজিদটি আবার তৈরী হয়। এখানেই হযরত ঈসা আ. তাঁর দ্বীন প্রচার করেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।
জেরুসালেমের উপর একটা বড় দুর্যোগ নেমে আসে রোমান সম্রাট টাইটাস-এর সময়। তিনি হায়কাল ও শহরটিকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ভষ্মীভূত করেন ৭০ খৃস্টাব্দের শেষ দিকে।
শহর অধিকারের সময় প্রবল স্থানীয় প্রতিরোধের কারণেই সম্ভবত এরূপ করা হয়েছে । ইতিহাসের বর্ণনায় দেখা যায়, ঐ সময় কয়েকরাত লাগাতার শহরটি জ্বলেছে, যেন আগুনের সমুদ্র। শহরে ব্যাপক গণহত্যা চালানো হয়েছিলো। পরবর্তীকালে রোমান সম্রাট হ্যড্রিয়ান (১১৭Ñ৩৮ খৃ.)-এর রাজত্বের শুরুতে জেরুসালেমে আবার বসতি গড়ে ওঠে এবং শান্তিপূর্ণ জীবন শুরু হয়।
১৩২ খৃস্টাব্দে রোমান সম্রাট ইহুদিদের প্রতি ‘খতনাপ্রথা’ বন্ধ করার আদেশ জারি করেন। এতে ভয়াবহ বিদ্রোহ দেখা দেয়, আর সম্রাট চরম নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে বিদ্রোহ দমন করেন। বিধ্বস্ত জেরুসালেমকে তিনি একটি নির্ভেজাল পৌত্তলিক শহররূপে গড়ে তুলেন।
এভাবে ইহুদি-নির্যাতন চলতে থাকে যুগের পর যুগ। রোমান সম্রাট কনস্টান্টাইন দ্য গ্রেট (রাজত্ব ৩০৬Ñ৩৩৭) তিনশ সাইত্রিশ খৃস্টাব্দে খৃস্টধর্ম গ্রহণ করেন। তখন খৃস্টান তীর্থযাত্রিগণ দলে দলে জেরুসালেমে আগমন করতে থাকেন। তীর্থযাত্রিদের সুবিধার জন্য সম্রাট অনেক গীর্জা ও সরাইখানা তৈরী করেন। তিনি খৃস্টধর্মের প্রতি যথেষ্ট অনুরাগ প্রকাশ করেন। তিনি যে সকল কীর্তি নির্মাণ করেছেন তার মধ্যে প্রসিদ্ধতম হচ্ছে জেরুসালেমের যায়তুন পর্বতের উপর নির্মিত রোমান ক্যাথলিক চার্চ।
তিনি সুবিশাল ও অত্যন্ত জৌলুসপূর্ণ আরেকটি গীর্জা নির্মাণ করেন। ৩৩৫ খৃস্টাব্দে এর নির্মাণ সমাপ্ত হয়। কথিত আছে, সম্রাট কনস্টান্টাইন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি এমন এক গীর্জা নির্মাণ করবেন যা জৌলুস, জাঁকজমক, চাকচিক্য ও বিশালতায় পৃথিবীর সমস্ত গীর্জার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে। সেই প্রতিজ্ঞারই বাস্তবরূপ ছিলো ঐ গীর্জ। বিভিন্ন ঐতিহাসিক উক্ত গীর্জার বিবরণ দিয়েছেন, তবে তারা বেশ অতিশয়তার আশ্রয় নিয়েছেন বলেই মনে হয়।
খৃস্টধর্ম গ্রহণকারী সম্রাট কনস্টান্টাইনের শাসনকালে ইহুদিরা কিছু নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ভোগ করতে শুরু করে। শহরে প্রবেশ করে হায়কালে সোলায়মানির ‘ক্রন্দন প্রাচীর’-এর নিকট ক্রন্দন করার অনুমতিও তাদের দেয়া হয়, যা আগে ছিলো না। পরবর্তী সম্রাটদের আমলে ইহুদিদের সুযোগ সুবিধা আরো বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী নিপীড়নমূলক আইন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
৬১৪ খৃস্টাব্দে ইরানীরা জেরুসালেমে ধ্বংসের তা-ব চালায়। ফলে তা আবার অশান্তির শহরে পরিণত হয়। ইরানীদের মূল আক্রোশ ছিলো খৃস্টানদের উপর। তাই গণহত্যার ভয়াবহতা খৃস্টানদের উপর দিয়েই গিয়েছিলো। ইহুদিরা বরং এটিকে খৃস্টানদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ- রূপে গ্রহণ করেছিলো। ফলে তারাও ঐ হত্যাকর্মে মেতে উঠেছিলো।
জেরুসালেম শহরের অশান্তি ও ভয়ভীতির অবসান তখনই ঘটে যখন সম্রাট হেরাক্লিয়াস তার বিজয়াভিযান শুরু করেন, আর ইরানী সৈন্যদের পরাজিত ও বিধ্বস্ত করে জেরুসালেম, ফিলিস্তীন ও সিরিয়া জয় করে নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেন।
***
এর মধ্যে মরু আরবের মক্কায় ইসলামের আবির্ভাব ঘটে এবং ইতিহাসের নতুন নির্মাতারূপে মুসলিম উম্মাহ নাম ধারণ করে আরবজাতি প্রস্তুত হতে থাকে। হিজরতের পর মদীনায় ইসলাম, সমাজ ও সরকারকাঠামো লাভ করে এবং একটি রাষ্ট্রশক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করে। ইসলামের নবী হযরত মুহম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর ইসলামী শক্তি জাযীরাতুল আরবের সীমানা অতিক্রম করতে শুরু করে। বস্তুত তখন থেকেই বাইতুল মাকদিস, এই নতুন নামে শরু হয় জেরুসালেম শহরের ইতিহাসের দ্বিতীয় পর্ব।
দ্বিতীয় পর্ব
৬৩৪ সনের জুলাই মাসে ফিলিস্তীনের নিকটবর্তী অঞ্চল আজনাদাইনে মুসলিম বাহিনীর নিকট রোমান বাহিনী শোচনীয়-রূপে পরাজয় বরণ করে। বস্তুত আজনাদাইনের যুদ্ধে মুসলিম শক্তির বিজয় এবং রোমানদের পরাজয়ই ছিলো জেরুসালেম খৃস্টানদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার এবং আলকুদস বা বাইতুল মাকদিস নামে ইসলামী খেলাফতের অধিকারভুক্ত হওয়ার প্রথম ধাপ।
৬৩৬ খৃস্টাব্দে ইয়ারমুকের যুদ্ধ ছিলো মূলত ভাগ্যনির্ধারণী যুদ্ধ। এ যুদ্ধের পর ফিলিস্তীনের ‘দুর্গ-সুরাক্ষিত’ রোমান শহরগুলো একের পর মুসলিম অধিকারে আসতে শুরু করে।
অবশেষে মুসলিম বাহিনী বাইতুল মাকদিস শহর অবরোধ করে। হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ-এর নেতৃত্বে অবরোধ যখন চরম ও দীর্ঘায়িত হতে থাকে তখন খৃস্টান বাহিনী প্রতিরোধের মনোবল হারিয়ে সন্ধিপ্রস্তাব পেশ করে। শহরের প্রধান বিশপ আরফানোস শর্ত আরোপ করেন, স্বয়ং আমীরুল মুমিনীন উপস্থিত হয়ে সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করলেই শুধু তারা আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত। এটা হলো ৬৩৮ খস্টাব্দের ঘটনা।
আমীরুল মুমিনীন শর্ত মঞ্জুর করে ১৭ হি. ১৬ই রজব হযরত আলী রা.কে মদীনায় নিজের স্থলবর্তী করে বাইতুল মাকদিসের পথে রওয়ানা হন। জাবিয়াহ নামক স্থানে মুসলিম সেনাপতি হযরত আবু উবায়দা আমীরুল মুমিনীনকে
ইস্তিকবাল করেন। খৃস্টানদের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিদল আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলো। তারাও ইসতিকবালে শামিল হয়। সেখানেই সন্ধিপত্র লিখিত ও স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিপত্রে পরাজিত পক্ষের অধিকাংশ দাবী অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চুক্তির শর্তাবলী বিভিন্ন ইতিহাসগ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে। ইতিহাসের বর্ণনায় দেখা যায়, সন্ধিচুক্তিটি ছিলো খৃস্টানদের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশী।
হযরত ওমর রা. সাখরাহ বা প্রস্তরটিলা ও বোরাক বাঁধার স্থানটির নিকটে যেখানে তিনি ছালাতের জামাত করেছেন, একটি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে উমাইয়্যা খলীফা আব্দূল মালিক ইবনে মারওয়ান (রাজত্ব ৬৬/৬৮৮ - ৭২/৬৯১) ঐ স্থানে মসজিদসহ গম্বুজ নির্মাণ করেন, যা কুব্বাতুস্সাখরাহ বা ডোম অব রক নামে প্রসিদ্ধ। এ সময় বাইতুল মাকদিস শান্তি ও নিরাপত্তার শহর বলে খ্যাতি লাভ করে এবং সর্বধর্মের মানুষ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করে, যা এর পূর্বে কখনো ঘটেনি। পরবর্তী যুগেও এ ধারা অব্যাহত ছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাশ্চাত্যের খৃস্টান ও ইহুদি ঐতিহাসিকদের একদু’জন ছাড়া কেউ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর এ অবদান মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেননি, বরং ধর্মান্ধ ও মুসলিম-বিদ্বেষী ধর্মজাযক ও রাব্বীগণ বিপরীত প্রচারণাই চালিয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে ক্রসেডের উন্মাদনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।
পুরো উমাইয়্যা শাসনজুড়ে বাইতুল মাকদিস খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো শাসকদের দৃষ্টিতে। খলীফা আব্দুল মালিকের হাতে কুব্বাতুস্সাখরাহ ও মসজিদুল আকাছার নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। খলীফা ওয়ালীদ তার শ্রীবৃদ্ধি করেন এবং বহু সেবক নিযুক্ত করেন। বাইতুল মাকদিস তখন ছিলো ইলম ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও দ্বীনী দাওয়াতের কেন্দ্র।
এ ধারা আরো জোরালোরূপে আব্বাসী আমলে অব্যাহত ছিলো। আব্বাসী খলীফা মানছূর দু’বার আলআকছা যিয়ারত করেন। তিনি আলআকছার সংস্কারকাজও করান। খলীফা আলমাহদীর আমলে এর আয়তন বৃদ্ধি পায়।
খলীফা হারূন-রাশীদের আমলে বাইতুল মাকদিসে খৃস্টান তীর্থ-যাত্রিদের আগমন অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ইহুদি ও খৃস্টান উভয় ধর্মের মানুষ পূর্ণ ধর্মীয় অধিকার ও সুবিধা ভোগ করে।
খলীফা মামুন ও মু‘তাছিমের আমলে কুব্বাতুস্সাখরাহ পুনর্নির্মিত হয়।
আব্বাসী খেলাফত দুর্বল হয়ে পড়ার পর বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর হাতে ফিলিস্তীন ও বাইতুল মাকদিসের দখল ও অধিকারের পালাবদল হতে থাকে। তবে সেখানকার খৃস্টান ও ইহুদী বাসিন্দা এবং বাইরে থেকে আসা তীর্থযাত্রী সবাই ধর্মীয় স্বাধীনতা নিরবচ্ছিন্নরূপেই ভোগ করেছে।
বেশ কিছুকাল উক্ত অঞ্চল ফাতেমীদের অধিকারে ছিলো। সালজূক বংশীয় শাসকগণ একসময় ফাতেমিদের হাত থেকে ফিলিস্তীন ও বাইতুল মাকদিসের অধিকার হস্তগত করেন। ৪৪৭/১০৭০ সালে সালজূকী শাসক তুগরুল বেগ আব্বাসী খলীফার দরবার হতে সুলতান খেতাব অর্জন করেন। ফলে সালজুকীদের হাতে যতদিন ফিলিস্তীন ও বাইতুল মাকদিসের শাসনক্ষমতা ছিলো তত দিন সেখানে খোতবায় আব্বাসী খেলাফত ও খলীফার প্রশংসা-কীর্তন হতো, যা ফাতেমী আমলে বন্ধ ছিলো।
বস্তুত খৃস্টান ক্রুসেডারদের আগমন পর্যন্ত ফিলিস্তীনের শাসনক্ষমতা বিভিন্ন শাসক-বংশের মধ্যে অদল-বদল হতেই থাকে। এ সময় খৃস্টান-ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ই সুযোগ পেলেই গোলযোগ সৃষ্টি করতো, যা দমন করা কঠিন হয়ে পড়তোা। ফলে কখনো কঠোরতারও আশ্রয় নিতে হতো। তবু তাদের ধর্মীয় অধিকারে কখনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি।
***
সবজাতির ইতিহাস যেমন মুসলিম ইতিহাসও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়, অর্থাৎ উত্থানকালের উদ্যম-উদ্দীপনা, ত্যাগ ও আত্মত্যাগের প্রেরণা, সুদৃঢ় ঐক্য ও সম্প্রীতি এবং জাতীয় শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস ও মনোবল, জাতীয় চরিত্রে সাধারণভাবে এবং ব্যক্তির মধ্যে বিশেষভাবে এগুলো বিপুল পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। পক্ষান্তরে পতনকালে এগুলো সব দুর্বল ও বিলুপ্ত হয়ে যায়, যেন কখনো ছিলোই না! এর স্থানে দেখা দেয় নিস্তেজতা, নির্জীবতা, স্বার্থপরতা, কলহপ্রিয়তা, কপটতা ইত্যাদি আত্মঘাতী প্রবণতা।
ইউরোপ যখন ক্রুশেডের উন্মাদনায় মুসলিমবিশ্বের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য পূর্ণোদ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে, মুসলিমবিশ্বে তখন শাসক ও শাসিত, উভয় শ্রেণী গাফলতের ঘোরে ছিলো অচেতন। পতনকালের সবকটি চরিত্র ও প্রবণতা তাদের মধ্যে চরম পর্যায়ে বিদ্যমান ছিলো। সামান্য একটি ঝড়ো হাওয়াই যথেষ্ট ছিলো তাদের ধ্বসে পড়ার জন্য।
ক্রুশেড বা ধর্মযুদ্ধের ধারণা সম্ভবত সর্বপ্রথম চরম মুসলিম বিদ্বেষী পোপ দ্বিতীয় আরবান (৪৮০/১০৮৮ - ৪৯২/১০৯৯) এর অন্তরে ও চিন্তায় উদিত হয়। তিনি সাধু পিটার্সকে এ কাজে নিযুক্ত করেন, আর তিনি ফ্রান্স ও জার্মানের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত উন্মাদের মত চষে বেড়ান। জেরুসালেম ও ফিলিস্তীনে অমুসলিমদের উপর মুসলিমদের নির্যাতনের কাল্পনিক ও অতিরঞ্জিত কাহিনী প্রচার করে খৃস্টানজাতিকে তিনি ‘মুসলিম- দখল’ হতে জেরুসালেমকে উদ্ধার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। খুব অল্পকালের মধ্যে তিনি তার উদ্দেশ্যে অভাবনীয়রূপে সফলতা অর্জন করেন।
পোপ ঘোষণা করেছিলেন, যারা ফিলিস্তীনের পবিত্র ভূমিতে গমন করবে তারা স্বর্গীয় ক্ষমা লাভ করবে। বলাবাহুল্য, এ ঘোষণা অত্যন্ত প্রভাবক হয়েছিলো।
ক্রশেড বাহিনী ১৫ই জুলাই ১০৯৯ খৃ. বিজয়ী বেশে বাইতুল মাকদিসে প্রবেশ করে। ক্রুশেডারদের হাতে এ পবিত্র শহরে যে ব্যাপক গণহত্যা সঙ্ঘটিত হয়েছে তা বর্ণনা করতে গিয়ে খৃস্টান ঐতিহাসিকগণ পর্যন্ত লজ্জাবোধ করেছেন। কারণ, তা হযতর উমর রা.-এর জেরুসালেম বিজয় থেকে সব দিক থেকেই ছিলো বিপরীত মেরুতে। ঐতিহাসিকগণ ক্রুশেডারদের বর্বরতার বিবরণ দিতে গিয়ে দু’টি বাক্য ব্যবহার করেছেন, ‘রক্তের ¯্রােত বয়ে গেছে এবং লাশের স্তূপ তৈরী হয়েছে।’ এমনকি প্রাণ বাঁচানোর জন্য যে সত্তর হাজার নারীপুরুষ মসজিদুল আকছায় আশ্রয় নিয়েছিলো তাদেরকে মসজিদের ভিতরেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। ইতিহাস বলে, এমনকি ইহুদিরাও খৃস্টানদের বর্বরতা থেকে রেহাই পায়নি।
পুরো খৃস্টানবিশ্বে আনন্দের ঢেউ বয়ে গিয়েছিলো। কারণ পুরো চারশ সত্তর বছর পর তারা জেরুসালেম দখল করার সুযোগ পেয়েছিলো।
হযরত ওমর রা খৃস্টানদেরকে গীর্জা ব্যবহারের অবাধ অনুমতি দিয়েছিলেন। আর মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন সাখরাহ ও তার চারপাশের অনাবাদ ভূমি। পক্ষান্তরে ক্রুশেডাররা নির্বিচারে মসজিদকে গীর্জায় রূপান্তরিত করেছিলো। মসজিদুল আকছার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে তার নতুন নাম রেখেছিলো ‘সোলায়মানি উপাসনালয়’।
সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রাহ. ১১৬৯ -এ মিসরের শাসনক্ষমতা লাভ করেন। আর তখনই তিনি জীবনের একমাত্র লক্ষ্যরূপে নির্ধারণ করেন খৃস্টানদের নাপাক হাত থেকে বাইতুল মাকদিস উদ্ধার করা। অবশ্য তার পূর্বে জীবনের একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জিহাদ চালিয়ে গিয়েছেন ইমাদুদ্দীন ও নূরুদ্দীন যানকি। নুরুদ্দীন যানকির কর্ম ও অবদান কোন অংশেই কম ছিলো না, তবে এই দীর্ঘ জিহাদের সফল পরিণতি ঘটেছিলো মহান সুলতান ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহ. এর হাতে, তাই ইতিহাসের আলোটা তাঁরই উপর পড়েছে বেশী।
হিত্তীন যুদ্ধে মুসলিমবাহিনী খৃস্টানদের উপর বিরাট বিজয় অর্জন করে, যাকে বলা যায় ভাগ্যনির্ধারণী যুদ্ধ। তারপর সুলতান ছালাহুদ্দীন বাইতুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন। শহররক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে সুলতানের সহজ শর্তের সন্ধি প্রস্তাবে সম্মত না হলেও শহরের পতন যখন আসন্ন তখন নিজেদের পক্ষ হতেই তারা সন্ধির প্রস্তাব দেয়। সুলতান অনেক চিন্তাভাবনার পর যুদ্ধের পরিবর্তে সন্ধিকেই অগ্রাধিকার দিলেন। ১১৮৭ খৃস্টাব্দে আল্লাহ তাআলা এই মহান মুজাহিদের হাতে বাইতুল মাকদিসের বিজয় দান করেন। পরাজিত সৈন্য ও সাধারণ অধিবাসীদের প্রতি সুলতানের আচরণ এতই দয়াপূর্ণ ছিলো যে, খৃস্টান ঐতিহাসিক পর্যন্ত তার প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন।
সুলতান আইয়ূবীর ইনতিকালের পর (৫৯৮/১১৯২) সিরিয়া ও ফিলিস্তীনের শাসনভার অর্পিত হয় তার ভ্রাতুষ্পুত্র আলমুআয্যামের উপর।
বাইতুল মাকদিস কয়েক শতাব্দী মিশরের মামলূক শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়। তারা সকলেই ইহুদি ও খৃস্টান অধিবাসী এবং বাইরে থেকে আগত তীর্থযাত্রি-দের সঙ্গে সদাচার করেন। মসজিদুল আকাছার উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তারা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। সুলতান কাবীর প্রথম বারবারস মসজিদুল আকছা পুনর্নির্মাণ করেন। ৬৯৬ Ñ৯৮ হি. সময়কালে তিনি শহরের দক্ষিণ দেয়ালের কাছে বড় বড় কয়েকটি মুসফিরখানা নির্মাণ করেন।
সুলতান আলআশরাফ (৮৭৩/১৪৬৮ Ñ৯০১/১৪৯৫) ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ ও সুযোগ্য শাসক। তিনি বাইতুল মাকদিস ও মসজিদুল আকছার উন্নয়নকাজে অত্যন্ত যতœবান ছিলেন। তার অনেক কীর্তির মধ্যে একটি হলো পুরো শহরে পানি সরবরাহের জন্য বহু ঝরণা ও নালা খনন ও সংস্কার
মামলূকদের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটে ১৫১৭ খৃস্টাব্দে উছমানী সুলতান ১ম সেলিম-এর হাতে। তখন থেকে বাইতুল মাকদিস,ও আলআকাছার দায়িত্ব -ভার উছমানী খেলাফতের তত্ত্বাবধানে চলে আসে।
এটা আসলে তাকদীরের পক্ষ হতেই একটি সুন্দর ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা ছিলো। কারণ পৃথিবীতে তখন সকল জাতির অগোচরে ভয়ঙ্কর এক ফিতনার অঙ্কুরোদ্গম হতে শুরু করেছিলো, যা সমগ্র মানব-জাতির জন্য ক্ষতির কারণ হলেও বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহর জন্য হতে পারে ধ্বংস ও বরবাদির কারণ। অর্থাৎ ফিলিস্তীন ও বাইতুল মাকদিসকে ঘিরে খৃস্টধর্ম ও ইহুদিধর্মের পরিবর্তে খৃস্টবাদ ও ইহুদিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করেছিলো। আর এটা ছিলো সময়ের চেয়ে এত অগ্রসর এক ফিতনা যার মোকাবেলা পুরোনো ধ্যানধারণার শাসকশক্তির পক্ষে সম্ভব হতো না। এদিকে তুর্কী সালতানাতও ছিলো যুগের সবচে’ প্রাগ্রসর শক্তি। তাদের পক্ষেই সম্ভব ছিলো আধুনিক যুগের আধুনিক ফিতনার মোকাবেলা করা। এটা অবশ্য আলাদা বিষয় যে, তুর্কী সালতানাত তাকদীরের পক্ষ হতে অর্পিত আমানত ও দায়িত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি এবং যোগ্যতা ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তারা বিষয়টির গুরুত্ব ও গুরুতরতা অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে তাদের সালতানাতের ভূমিতেই এবং তাদের অগোচরেই খৃস্টবাদ ও ইহুদিবাদের ফিতনার বীজ রোপিত হয় এবং অঙ্কুরিত হয়। তুর্কী সালতানাত তখন বে-খবর, গাফলতের ঘোরে বে-ঘোর। একসময় ঐ ফেতনা এমন মহীরুহের আকার ধারণ করে যে, তুর্কী খেলাফাত তার বিশাল বিস্তার ও বিপুল শক্তি নিয়েও তার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়। এমনকি তুর্কী সালতানাত ও খেলাফতের মৃত্যুঘণ্টাও বেজে ওঠে সেই অভিশপ্ত খৃস্টবাদ ও ইহুদিবাদেরই মরণছোবলে।
তাকদীর অনেক অপরাধ ক্ষমা করে, ব্যক্তিরও, জাতিরও; অবহেলা ও গাফলত, জুলুম ও অনাচার কখনো বরদাশত করে না, না ব্যক্তির জীবনে, না জাতি ও সমষ্টির জীবনে।
তুর্কী সালতানাত, বিশেষ করে ১ম সোলায়মান (১৫২০Ñ১৫৬৬) এবং সুলতান ২য় মাহমূদ (১৮০৮ Ñ১৮৩১) সিরিয়া, ফিলিস্তীন এবং মাসজিদুল আকছা ও বাইতুল মাকদিসের ব্যাপক বৈষয়িক উন্নয়ন সাধন করেন, যা যেমনই ছিলো দৃষ্টিনন্দন তেমনি ছিলো আধুনিক নগরায়ণ সুবিধার উপযোগী। কিন্তু ... যা করা তাদের অতীব কর্তব্য ছিলো, অথচ করেননি তা হলো অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ে নতুন যুগের নতুন ছালীব এবং নতুন ড্রাকুলার হামলা থেকে আত্মরক্ষার উপযোগী আধুনিক মুসলিম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা এবং এজন্য ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা গ্রহণ করা; এমন সক্ষম জনগোষ্ঠী যারা ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্কর ঝড়ের আঘাতে শেকড়শুদ্ধ মাটি থেকে উপড়ে যাবে না।
একাজটাই শুরু করেছে ক্রুশেডীয় চেতনার ধারক বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদ এবং বিশ্বইহুদিবাদ!
কিন্তু আমরা ভুলে ছিলাম। এখন পর্যন্ত সেই ভুল ও গাফলতেরই খেসারত দিয়ে চলেছি আমরা। তাকদীরই জানে আরো কতদিন দিয়ে যেতে হবে। অবশ্য তাকদীরেরই বিধান, ‘যে কোন আঁধার রাতেরই ভোর আছে।’
ইউরোপ থেকে পবিত্রভূমির উদ্দেশ্যে প্রথম আঘাতটি আসে নেপোলিয়নের মাধ্যমে। সর্বপ্রথম তিনি চিন্তা করেন, ফিলিস্তীন বা তার কাছাকাছি উপযুক্ত কোন ভূমিতে ইহুদি বসতি গড়ে তোলার যা একদিকে হবে মুসলিম বিদ্বেষী, অন্যদিকে হবে সা¤্রাজ্যবাদের অনুগত সেবক। তিনি ফিলিস্তীন আক্রমণ করেন এবং তুর্কীদের সঙ্গে যুদ্ধেও প্রবৃত্ত হন। বিশ্বের ইহুদী-সমাজকে তিনি ডাক দিয়েছিলেন তার সঙ্গে ফিলিস্তীনঅভিযানে শরীক হওয়ার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে জেরুসালেম (আলকুদস) দখলের পরিকল্পনা তাকে পরিত্যাগ করতে হয়। নেপোলিয়ন যা পরিত্যাগ করলেন, ইহুদিবাদের পৃষ্ঠপোষক নতুন খৃস্টবাদী শক্তি, তথা গ্রেটবৃটেন নিজস্ব সা¤্রাজ্যবাদী চিন্তা থেকে তা লুফে নেয়।
বেশ কিছুকাল ফ্রান্স-এর নেতৃত্বে ইউরোপীয় শক্তি পাশাপরিবারের আড়ালে তাদের ফিলিস্তীন-কেন্দ্রিক পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। তবে একটা পর্যায়ে এসে ফরাসিগণ ইবরাহীম পাশার উপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। তখন উছমানী খলীফা আব্দুল মজীদ ইংল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার সহায়তায় ১৮৪০-এ বাইতুল মাকদিস ও ফিলিস্তীনের ভূখ- পুনরুদ্ধার করেন।
এরপর থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ফিলিস্তীন ও পবিত্র ভূমি তুর্কীদের তত্ত্বাবধানেই থাকে। তবে তত দিনে ইউরোপীয় শক্তি চলে এসেছে নির্ধারক-এর ভূমিকায়। আফসোস, সুলতান আব্দুল হামীদের আগে কোন খলীফা বুঝতে পারেননি, মূল আঘাতটা কোনদিক থেকে আসতে শুরু করেছে!
আফসোস, ইহুদিবাদী মস্তিষ্ক যা ভাবতে পারলো, অর্থাৎ মূল পরিকল্পনার প্রাকপ্রস্তুতিরূপে ফিলিস্তীনের ভূমিতে ইহুদিবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ইহুদি বসতি গড়ে তোলা এবং এজন্য প্রয়োজনে
সারা পৃথিবী থেকে নির্বাচিত ইহুদিদের ফিলিস্তীনে জড়ো করা। ইহুদিবাদ অবৈধভাবে যা করেছে, তুর্কী খেলাফাত বৈধ অধিকারের বলেই তা করতে পারতো খুব সহজে। অর্থাৎ ইসলামী চেতনা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ মুসলিমবসতি বা কম্যুনিটি গড়ে তোলা। প্রয়োজনে মুসলিম উম্মাহর যেখানে যত যোগ্য পরিবার ছিলো তাদের তুলে এনে সেখানে আবাদ করা। আমাদের নবীর সুন্নায় এজন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও ছিলো। কুদরত আমাদের সুযোগও দিয়েছিলো উছমানী খেলাফতের ছত্রচ্ছায়ায়। আমরা বুঝিনি, ইহুদী দেমাগ বুঝেছে এবং নীরবে সবার অগোচরে সেই লক্ষ্যে কাজ করে গেছে। যার যা প্রাপ্য, কুদরত তাকে তা এভাবেই দিয়ে থাকে।
উনবিংশ শতাব্দী তার নতুন রূপ ও প্রকৃতি নিয়ে সারা পৃথিবীতে যেমন জীবন ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছিলো তেমনি তার ঢেউ পবিত্রভূমিতেও এসে লেগেছিলো। নতুন এক প্রাণচাঞ্চল্য জীবনের সবকিছুতে পরিবর্তনের দাবী জানাচ্ছিলো এবং নিজের শক্তিতেই সে দাবী আদায়ও করে নিচ্ছিলো। মধ্যযুগের সকল ছায়া ও ছাপ ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছিলো। এর মধ্যে ইউরোপ থেকে পর্যটকদের আগমন বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেলো, আর বহু পর্যটক ফিরে না গিয়ে নিয়মভঙ্গ করে ফিলিস্তীন ও কুদসের ভূমিতে স্থায়ী বসবাস শুরু করে দিলো। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কন্সাল স্থাপিত হলো, যাদের বাহ্যিক কাজ ছিলো ইউরোপীয় নাগরিকদের আইনগত অধিকার-সমূহ রক্ষার ব্যবস্থা করা। কিন্তু অন্তরালের উদ্দেশ্য ছিলো ইউরোপ থেকে আসা ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তীনের ভূমিদখলের সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত সফল করা।
ফিলিস্তীনের ভূখণ্ডে ইহুদিবাদের আছড়ে পড়া ঢেউ অনেক পরে সর্বপ্রথম যিনি অনুভব করতে সক্ষম হন তিনি হলেন মহান উছমানী খলীফা সুলতান আব্দুল হামীদ। এ ঢেউ রোধ করার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহণের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। পূর্ববর্তী খলীফাদের অমনোযোগ ও অদূরদর্শিতার পুরো মাশুল তাকেই আদায় করতে হয়েছে। তার সে প্রচেষ্টার যে সূচনা সেটার নাম ছিলো প্যানইসলামিজম। কিন্তু সে মহৎ প্রচেষ্টা সূচনাতেই শেষ হয়ে যায় তার চারপাশে দরদী ও সমঝদার মানুষ না থাকার কারণে।
সুলতান আব্দুল হামীদের সবচে’ বড় কষ্ট ছিলো এই যে, আপন-পর কারোই মনে থাকতো না, তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন! খুব কাছের মানুষগুলোরও তার প্রতি আচরণ ছিলো একজন সাধারণ শাসকের মত, বরং তার চেয়ে কম। তিনি কারো কাজের কৈফিয়ত চাওয়ার অবস্থানে ছিলেন না, অথচ সবাই যেন ছিলো তার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার অবস্থানে। এর মধ্যে এই নিঃসঙ্গ অসহায় মানুষটি সুদীর্ঘ ত্রিশটি বছর ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন। বলা যায়, তিনি তার সাধ্যের সবটুকু করেছেন, কিন্তু প্রয়োজন ছিলো তার চেয়ে অনেক বেশী! ফিলিস্তীন ও পবিত্র ভূমিকে ঘিরে বিশ্বইহুদিবাদী নেতৃত্বের সমস্ত আয়োজন যখন মোটামুটি সম্পন্ন তখন তারা প্রকাশ্য মঞ্চে অবর্তীণ হয় এবং সুলতান আব্দুল হামীদের দরবারে অদ্ভুত এক আব্দার নিয়ে হাজির হয়। সুলতান তাদেরকে ফিলিস্তীনে ‘সামান্য কিছু’ ভূমি ক্রয়ের অনুমতি দান করবেন, বিনিময়ে তারা তুরস্কের সমস্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করে দেবে। সুলতান ঘৃণাভরে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরিষ্কার ভাষায় তিনি তাদের বলেন, ‘আমি তো ফিলিস্তীনের এক বিঘত ভূমিও ছাড়তে পারি না। কারণ এটা আমার মালিকানা নয়, আমার জনগণের মালিকানা। আমার পূর্ববর্তিগণ তাদের বুকের রক্তে এ ভূমি সিঞ্চিত করেছেন। .....
কিন্তু সুলতান ফিলিস্তীনে ইহুদিদের ভূমিক্রয় পুরোপুরি রোধ করতে পারেননি। তারা খুব গোপনে চড়া মূল্যে অসচ্ছল আরবদের কাছ থেকে নামে বেনামে জমিক্রয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে চলতে থাকে বসতি স্থাপন কার্যক্রম। অন্যদিকে সুলতান আব্দুল হামীদকে খেলাফতের মসনদ থেকে অপসারণের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করতে থাকে। ....
বহু ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ১৯০৯ সালে খলীফা আব্দুল হামীদের অপসারণ সম্পন্ন হয়। আর ফিলিস্তীন ও বাইতুল মাকদিসের পবিত্র ভূমি হয়ে পড়ে সম্পূর্ণ অরক্ষিত, অভিভাবকহীন।
এর মধ্যে প্রথমবিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। উছামানী খেলাফত (প্রকৃতপক্ষে নব্যতুর্কীবাদী শক্তি) বুঝে বা না বুঝে জীবনের সেরা ভুলটা করে বসে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করে। এর পিছনেও অবশ্য নব্য -তুর্কীদের ছত্রচ্ছায়ায় ইহুদী-বাদের চক্রান্তই কাজ করেছে।
বৃটিশদের দীর্ঘ কূটপ্রচেষ্টার ফলে বিভ্রান্ত আরবনেতৃত্ব উছমানী খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বৃটেনের পক্ষাবলম্বন করে।
ঘটনাপ্রবাহ নিজস্বগতিতে, বরং বিভিন্ন পার্শ্বপ্রভাবে খুব দ্রুত গতিতে পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
মিত্রশক্তির বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হয়। বৃটেন ফিলিস্তীন ও বাইতুল মাকদিসের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হয় জাতিপুঞ্জের পক্ষ হতে। আলকুদস ও ফিলিস্তীনে ইহুদিদের আগমন তখন জোয়ারের আকার ধারণ করে। সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত আরবজনগোষ্ঠী বিদ্রোহ শুরু করে এবং গণ-হত্যার শিকার হয়। বড় মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। একদিকে নতুন নতুন বসতি গড়ার উদ্দেশ্যে সায়লাবের মত ইহুদিরা আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে, অন্যদিকে প্রাণভয়ে ভীত আরবরা ঢলের মত ফিলিস্তীনের পিতৃভূমি ত্যাগ করে যাচ্ছে! নারীপুরুষ সবার মাথায় শুধু জিনিসপত্রের বোঝা! বিভিন্ন ছবি এখনো ঐ সময়ের স্মৃতি ধারণ করে আছে; এখন যেমন আমরা দেখতে পাই আরাকানের মুহাজিরীনের ক্ষেত্রে।
১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়া হয় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতিও এসে যায়।
তত দিনে ফিলিস্তীনের বিস্তীর্ণ ভূখ- এবং বাইতুল মাকদিস বা জেরুসালেমের অপেক্ষাকৃত উন্নত পশ্চিমাঞ্চল ইহুদিদের দখলে চলে যায়। তবে ফিলিস্তীনের পশ্চিমাঞ্চল এবং কুদসের পূর্বাঞ্চল তথা প্রাচীন অংশ তখনো ইহুদিদের দখলমুক্ত রাখা সম্ভব হয়।
পরিস্থিতির ষোলকলা পূর্ণ হতে তখনো বাকি ছিলো। সেটা পূর্ণতা লাভ করে ৬৭-এর আরব-ইসরাইল যুদ্ধে। জেরুসালেমের পূর্বাঞ্চলও চলে যায় ইসরাইলী দখলে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তীনের পশ্চিমাঞ্চল, অর্থাৎ জর্দাননদীর পশ্চিম তীরও। বস্তুত এটা যুদ্ধের জয়-পরাজয় ছিলো না, বরং বলা যায়, এটা ছিলো আরবদের পক্ষ হতে ইহুদিদের দেয়া ‘গিফট’।
যেহেতু জেরুসালেম সম্মিলিতভাবে তিনটি ধর্মসম্প্রদায়েরই পবিত্র ভুমি সেজন্য জাতিসঙ্ঘ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, জেরুসালেম হবে আন্তর্জাতিক শহর। ....
কিন্তু ইসরাইল একতরফা-ভাবে তার অবৈধ দখল জারি রাখে। এমনকি পশ্চিম ও পূর্ব উভয় অংশ নিয়ে পুরো জেরুসালেমকে নিজের রাজধানী বলে ঘোষণা করে। অথচ জেরুসালেম সবদিক থেকে ফিলিস্তীনী ভূখ- হলেও ফিলিস্তীনীরা তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রজধানীরূপে শুধু পূর্ব অংশকে দাবী করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের (কাগুজে) অনুমোদন সত্ত্বেও ইহুদিবাদী ইসরাইল তাও মানতে প্রস্তুত নয়।
***
বর্তমান তো আরো তিক্ত। এখন একবিংশ শতাব্দী এবং ২০১৭ সালের বিদায় লগ্ন। গত ৬ই ডিসেম্বর মুসলিম উম্মাহর উপর বজ্রপাতের মত ঘটে গেলো একটা ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সমগ্র জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানীরূপে স্বীকার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এবং ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান রাজধানী তেল আবীব থেকে তার দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার। আপাতত মনে হচ্ছে ফিলিস্তীনীদের পূর্বজেরুসালেমকে ফিলিস্তীনরাষ্ট্রের রাজধানী করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, যদি না কুদরতের ফায়ছালা নেমে আসে।
এখানে মূল আলোচনার পরিশিষ্টরূপে একটি প্রশ্ন আসে। ইতিহাসের শুরু থেকে ইহুদিসম্প্রদায়ের উপর এত দুর্গতি কেন এবং তাদের ভবিষ্যত কী?
উত্তর এই যে, স্বভাবগতভাবে তারা নাফরমান, অহঙ্কারী ও অর্থলোভী জাতি। যুগে যুগে তারা আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছে এবং বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছে। কোরআনের ভাষ্যমতে আল্লাহর নবী দাউদ এবং ঈসা ইবনে মারয়ামের যবানে তারা অভিশাপ লাভ করেছে। অভিশপ্ত জাতির জন্য দুর্গতিই তো হতে পারে ভাগ্যলিপি।
প্রশ্ন হলো এ জাতির ভবিষ্যত কী? উত্তর এই যে, মুসলিম উম্মাহর আকীদা ও বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত যে, কেয়ামত এখন নিকটবর্তী। আর আমাদের নবী ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ইহুদীরা ইমাম মেহদীর নেতৃত্বে মুসলিম শক্তির হাতে পর্যুদস্ত হবে। এমনকি গাছের আড়ালে লুকিয়েও ইহুদী রেহাই পাবে না। এটা সম্পন্ন হওয়ার আগে কেয়ামত হতে পারে না।
এ ভবিষ্যদ্বাণী যে অঞ্চলে সম্পন্ন হবে, সরা বিশ্ব থেকে ইহুদিরা সেখানেই তো জড়ো হচ্ছে!
আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে। ইহুদীরা যে দাবী করছে জন্মগতভাবে এবং ধর্মীয়ভাবে জেরুসালেমে বসবাসের অধিকার একমাত্র তাদের অন্য কোন সম্প্রদায়ের নয়, মুসলিমদের তো নয়ই। এ দাবীর যৌক্তিকতা কতটুকু।
ততটুকুই যতটুকু চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহের উপর তাদের একক অধিকারের দাবী!
জেরুসালেমের বসতি তো গড়ে উঠেছে তাদের জাতীয় অস্তিত্বেরও হাজার দু’হাজার বছর আগে। এ অঞ্চলে তো হযরত ইবরাহীম আ.এর আগেও বসতি ছিলো, আর তাঁর সঙ্গে তো তিন ধর্মই সম্পর্কের দাবীদার। কোরআন বলছে, তিনি না ইহুদি ছিলেন, না খৃস্টান, তিনি ছিলেন নির্ভেজাল মুসলিম। তো অপর দু’টি সম্প্রদায় প্রমাণ করুক, তিনি ...।
তাছাড়া তাদের এ উদ্ভট দাবী মানবজাতির বসতি গড়ে ওঠার যে প্রাকৃতিক গতিধারা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ শূন্যভূমি নতুন বসতি অবশ্যই গ্রহণ করবে এবং তাতে তাদের অধিকার স্বয়ংক্রিয় ভাবেই সাব্যস্ত হয়ে যাবে। এভাবেই চলে আসছে সভ্যতার অব্যাহত ঠিকানা বদলের ধারা। কিন্তু আসল কথা হলো। এখানে তো যুক্তি কাজ করছে না। কোথাও করে না। কাজ করে শক্তি এবং শক্তিসমর্থিত যুক্তি। এর কোন বিকল্প নেই।
সর্বশেষ যে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হলো, মুসলিম উম্মাহর কোন অধিকার নেই আজকের পরিস্থিতির জন্য নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ করার। বিশেষ করে তাকদীরের বিপক্ষে তার কোন শেকায়েতের সুযোগ বিলকুল নেই। হিসাব করে দেখুন, ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে কত বছর ফিলিস্তীন ও জেরুসালেম মুসলিম অধিকারে ছিলো, আর কত বছর খৃস্টানজতির অধিকারে? পক্ষান্তরে ইহুদিদের অধিকারে তো ...!
ভেবে দেখুন এবং ইনছাফের সঙ্গে বলুন, তাকদীর তো আমাদের পক্ষে প্রায় একতরফা আচরণই করে গিয়েছে। কিন্তু আমরা ...
শেষ করছি কোরআনের সেই অমোঘ ঘোষণা উল্লেখ করার মাধ্যমে।
আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা ...