আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

টেকনাফ/তেতুলিয়া

ইস্তাম্বুলসম্মেলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ভূমিকা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

আলকুদস (যাকে ইহুদি-খৃস্টানরা বলে জেরুসালেম) সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৬ই ডিসেম্বর যে হঠকারী ঘোষণা দিয়েছেন তাতে সারা মুসলিমবিশ্বের মত বাংলাদেশেও নিন্দাপ্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। যদিও বাংলাদেশ এর আগেই আরাকানের মযলূম মুহাজিরীনের সঙ্কট মোকাবেলা করতেই দিশেহারা, তবু ইস্তাম্বুলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)এর শীর্ষ সম্মেলনকে বাংলাদেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। ওআইসির গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো যেখানে সম্মেলনের গুরুত্ব খাটো করে দেখাতে শীর্ষ পর্যায়ের অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে সেখানে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব এডভোকেট আব্দুল হামীদ স্বয়ং সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন।

সম্মেলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বেশ ক’টি ওজনদার আরবরাষ্ট্রের চেয়ে যথেষ্ট জোরালো ভূমিকা রেখেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান, যিনি সম্মেলন সফল করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম এবং সাধ্যমত দৌড়ঝাঁপ করেছেন, তিনি বাংলাদেশ ও তার রাষ্ট্রপতির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

সম্মেলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, ‘আমাদের সামনে আজ জেরুসালেমের জ্বলন্ত ইস্যু উপস্থিত। জেরুসালেম ইস্যুতে ওআইসি নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আলকুদস  (জেরুসালেম) বিষয়ে এ পর্যন্ত গৃহীত ওআইসির বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আমাদের বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে যেতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন যে, এই জরুরি শীর্ষসম্মেলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ মর্মে জোরালো বার্তা পৌঁছে দেবে যে, আমরা ফিলিস্তীনিদের ন্যায্য অধিকারের লড়াইয়ে তাদের পিছনে ইস্পাতকঠিন প্রত্যয়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ এবং আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও শক্তি যুগিয়ে যাবো।

ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান মুসলিম রাষ্ট্রবর্গের প্রতি আবেদন জানিয়েছিলেন, তারা যেন আলকুদ্সকে ফিলিস্তীনরাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো চাপ প্রয়োগ করে, এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি উপরের কথাগুলো বলেন। তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ফিলিস্তীনী রাষ্ট্রের পক্ষে তার বলিষ্ঠ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ জেরুসালেম সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্টের সাম্প্রতিক ঘোষণা কিছুতেই মেনে নেবে না।’

তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আরব-ইসরাইল শান্তি-প্রক্রিয়ায় সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্য করেছে। ৬ই ডিসেম্বরের ঐ ঘোষণায় মুসলমানদের পবিত্র শহর আলকুদস-এর মর্যাদা ভূলণ্ঠিত হয়েছে এবং ইসরাইলের অবৈধ দখলকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। এতে ঐ শহরের ঐতিহাসিক ও আইনী পরিচয়, অধিবাসীদের জাতীয়তার ধরন এবং এর আরব-ইসলামী চরিত্র বদলে যাবে, যা মুসলিম উম্মাহ কিছুতেই মেনে নেবে না।’

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের ৪৬৭ নম্বর প্রস্তাবে  জেরুসালেমের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিলো। তারপর ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবে ইসরাইলকে ঐ ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন বন্ধ করে তার আইনি পরিচয় ও জনমিতিক বৈশিষ্ট্য বদলে দেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিলো। এখন ইসরাইলকে ঐ প্রস্তাব মেনে চলতে বাধ্য করার সময় এসেছে। 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা