আরাকান সংখ্যা (৩/১)

কিশোর পাতা

কিশোর বন্ধুরা!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

কিশোর বন্ধুরা! 

 সালাম গ্রহণ করো। কত দিনের প্রতীক্ষা আজকের এই দিনটির জন্য, এই আনন্দঘন মুহতূর্টির জন্য! কল্পনা ছিলো, পরিকল্পনা ছিলো কত রকম প্রস্তুতি নেয়ার! কত রকম আনন্দ উদ্যাপন করার! কে জানতো, দেখতে হবে রোয- কেয়ামতের এরূপ বীভৎসতা! মানুষের তো পারার কথা না! নেকড়ে, হায়েনা, সাপ, বিচ্ছু, হাঙ্গর পারে কি এমন হিংশ্র হতে! মানুষের তো পারার কথা না! বনের পশুরা কি পারে পশুদের বিপদে আর্তনাদে এমন নির্লিপ্ত হতে!! সারা পৃথিবী কেন এমন নির্লিপ্ত নির্বিকার!! মানুষের বিপদে মানুষের এ কেমন হৃদয়হীনতা!! এত খুন ঝরতে পারে মানুষের দেহ থেকে! এত আগুন জ্বলতে পারে মানুষের জনপদে!! এত লাশ ভেসে যেতে পারে ছোট্ট একটি নদীর পানি দিয়ে!! নদীর পানি হতে পারে এত লাল! হয়েছে কখনো অতীতে!! হবে কখনো ভবিষ্যতে!! এ লাল কিসের? খুনের! আগুনের!! কৃষ্ণচূড়ার! আগামী দিনের সম্ভাবনার!! মাফ করো ভাই, কিছুক্ষণের জন্য কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম! যা বলতে চেয়েছি সব ভুলে গেলাম। আচ্ছা! জানো তো এরা সকলে আমাদেরই ভাই! রক্তের বন্ধনে নয়, ঈমানের বন্ধনে! বিশ্বাসের বন্ধনে!! ‘ইন্নামাল মুমিনূনা ইখওয়াতুন’-এর বন্ধনে!! সেই বন্ধনের দাবী রক্ষা করার জন্য কী করতে পারি আমি, তুমি, আমরা!! হে আল্লাহ, তুমি আমাদের পথ দেখাও!! তুমি তাদের সাহায্য করো!! যাদের কেউ থাকে না তাদের তুমি তো থাকো!!

 ***
কামনা করি, পুষ্পের এ নতুন যাত্রা কল্যাণ বয়ে আনুক আমাদের সবার জীবনে!! পুষ্পের এ নতুন যাত্রা যেন আলো ছড়ায় তোমাদের চলার পথে!! সুখে দুঃখে, আনন্দে বেদনায় কখনো ভুলতে পারি না যে, তোমরাই আমাদের স্বপ্ন! আমাদের ভবিষ্যত!!
একটি হাসির প্রতি কৃতজ্ঞতা
শৈশব থেকে চেয়েছি, আমার চারপাশে যারা, তাদের আমি সুন্দর হাসি উপহার দেবো। তখনো পারিনি, এখনো পারি না। তবে সেই দূর শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত অনেকের কাছ থেকে আমি সুন্দর হাসি উপহার পেয়েছি। প্রতিটি মুখের প্রতিটি সুন্দর হাসির জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সুন্দর হাসি হৃদয়ের গভীরে আশ্চর্য এক প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। কোন হাসি কোমল অনুভূিত দান করে, কোন হাসি কাশফুলের শুভ্রতা দান করে। কোন হাসি অন্তরে অপূর্ব এক রিনিঝিনি সৃষ্টি করে। সবাই হাসে, তবে সব হাসি সৌন্দর্য ধারণ করে না। একটি সুন্দর হাসির জন্য হৃদয়ের গভীরে রয়েছে আমার ব্যাকুল তৃষ্ণা!! দূর শৈশবের একটি হাসির কথা এখনো ভুলতে পারি না। হাসির মুখটি, হাসির মানুষটি হারিয়ে গেছে স্মৃতি থেকে। হাসিটি আমার হৃদয়ে এখনো উজ্জ্বল। সেই হাসিটি সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করে সুন্দর হওয়ার জন্য। হয়ত পারিনি, তবু সেই হাসিটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ইস্তাম্বুেলর সেই শিশুটি! তার মুখের হাসিটি! র্কিসের সঙ্গে 
তুলনা করি! চাঁদের জোসনা! ভোরের রাঙ্গা আলো!! ফিরেশতার নূর!! জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি ভুলতে পারবো না সেই নিষ্পাপ হাসির পবিত্রতা। সেই হাসি এখনো আমাকে হাতছানি দেয় পবিত্র হওয়ার জন্য। হয়ত পারিনি, তবু সেই হাসিটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সব হারিয়ে, শুধু কোলের শিশুটিকে বুকে করে আমার দেশে আসা সেই রিক্ত নিঃস্ব মায়ের মুখের হাসিটি! কী বলবো, করুণ হাসি! সুখের হাসি!! মাতৃত্বের গৌরবের হাসি!! কিংবা সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় ক্লিষ্ট হাসি!! সব যেন একাকার হয়ে ছিলো ছবিতে আলোছায়ার মধ্যে দেখা সেই মায়ের মুখের হাসি। সেই হাসি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো, অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে। না দেখা, না চেনা সেই মায়ের মুখের হাসিটির কাছে আমি চিরকালের জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে থাকলাম। কামনা করি, প্রতিটি মুখের হাসি জান্নাতের বাগানে গিয়ে জান্নাতি ফুলের সঙ্গে যেন এক হয়ে যায়।
এক ফোঁটা অশ্রুবিন্দু! এক ফোঁটা রক্তবিন্দু!!
সেখানে এখন অশ্রুর নোনা দরিয়া! মানুষের চোখ থেকে এত অশ্রু ঝরতে পারে! শুধু চোখের অশ্রুতে সৃষ্টি হতে পারে নোনা দরিয়া!! বিশ্বাস হতো না, নিজের চোখে যদি দেখা না হতো। কোথায় অশ্রুর এ নোনা দরিয়া?! আমাদের দক্ষিণের সীমান্তে, যেখানে পড়ে আছে অসংখ্য জীবন্ত কঙ্কাল!! এও আরেক বিস্ময়! জানা ছিলো না, কঙ্কাল নড়তে পারে! কঙ্কাল কাঁদতে পারে!! জানা ছিলো না কঙ্কাল একটুকরো রুটি চাইতে পারে!! সেখানে আছে নর-কঙ্কাল! নারীকঙ্কাল!! বুড়ো কঙ্কাল!! শিশুকঙ্কাল!! শুধু কঙ্কাল, আর কঙ্কাল!! হাঁ, এই কঙ্কালগুলো আবার বাঁচতে পারে, আবার হতে পারে সজীব, ফিরে পেতে পারে জীবনের সজীবতা, যদি দিতে পারো তাদের হাড়সর্বস্ব মুখে একটুকরো রুটি! কয়েক ফোঁটা পানি!! আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে, অশ্রুর নোনা দরিয়া থেকে তোমাদের জন্য এনেছি একফোঁটা অশ্রু, যাদি তোমাদের বুকে মায়া আসে! যদি তোমাদের হৃদয়ে মমতার তরঙ্গ জাগে!! যদি একটু ইচ্ছা হয়, একটু প্রতিজ্ঞা হয়, ‘এই কঙ্কালগুলোর মুখে আমরা দিতে যাবো একটুকরো রুটি! কয়েক ফোঁটা পানি!!
***
সেখানে এখন রক্তের ¯্রােত! এত রক্ত ঝরতে পারে মানুষের দেহ থেকে, হৃদয় থেকে!! কঙ্কাল থেকে ঝরা রক্তে হতে পারে এমন ‘লোহিত সাগর!!’
বিশ্বাস হতো না, নিজের চোখে যদি দেখা না হতো!! কোথায় রক্তের এ লোহিত সাগর?! আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে যেখানে এসে জড়ো হয়েছে অসংখ্য জীবন্ত কঙ্কাল! অবাক হওয়ার মত দৃশ্যই তো! কঙ্কাল নড়ছে! কঙ্কাল কাঁদছে!! কঙ্কালের বুক থেকে, হৃদয় থেকে, হৃদয়ের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে! আমাদের রক্তের মতই লাল!! এই কঙ্কালগুলো বাঁচতে চায়! আবার ফিরে যেতে চায় জীবনের সজীবতার কাছে! কিন্তু ভেবে পায় না, কীভাবে!! তাই কঙ্কাল হয়েও তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরে! তাদের বুক থেকে রক্ত ঝরে। আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে লাল রক্তের সাগর থেকে তোমাদের জন্য এনেছি একফোঁটা রক্ত! এই কঙ্কালগুলোর শরীর থেকে, হৃদয় থেকে রক্ত ঝরা বন্ধ হতে পারে! আবার তারা হাসতে পারে!! আবার তারা গাইতে পারে জীবনের গান!! আবার তারা মানুষ হতে পারে, যদি তাদের তুমি দিতে পারো একটু হাসির ছোঁয়া! একটু সান্তন¦ার পরশ!! যদি তাদের দিতে পারো একটু আশ্বাস, একটুখানি সান্তন¦া!! যদি তাদের বলতে পারো, ভয় কি, আমরা তো আছি তোমাদের পাশে!! আমাদের দক্ষিণের সীমান্তে রক্তের লাল সাগর থেকে তোমাদের জন্য এনেছি একফোঁটা রক্ত। তোমাদের বুকে, হৃদয়ে, শিরায় আছে যে রক্ত, ঠিক সেই রক্ত!! অভিন্ন রক্তের টানে তোমাদের অন্তরে যদি একটু মায়া আসে! একটু যদি মমতা জাগে!! তোমাদের একটু যদি ইচ্ছা হয়, একটু যদি প্রত্যয় সৃষ্টি হয়, ‘যাবো আমরা কঙ্কালগুলোর কাছে, একটুকরো রুটি নিয়ে, কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে এবং একটুখানি আশ্বাস ও সান্তন¦া নিয়ে!! আমার বিশ্বাস ছিলো তোমাদের কৈশোরের প্রতি, তারুণ্যের প্রতি!! আমার আস্থা ছিলো তোমাদের জীবনের শুভ্রতার প্রতি, তোমাদের দিনরাতের এবং সকাল-সন্ধ্যার পবিত্রতার প্রতি!! আমি ভুল করিনি তো হে কিশোর! হে অরুণ! হে তরুণ!!

এতগুলো শুকনো ক্ষুধার্ত মুখ, 
এতগুলো বেদনাক্লিষ্ট মুখ! কী করতে পারি এই মুখগুলোর জন্য! কীভাবে আনতে পারি একটুখানি সজীবতা, একটুখানি হাসির আভা! কীভাবে দিতে পারি ঐ ক্ষুধার্ত মুখে একটুকরো শুকনো রুটি?! এতগুলো ভয়ার্ত চোখ! আশাহীন, স্বপহœীন চোখ!! দৃষ্টি আছে আলো নেই! প্রত্যাশা ও প্রত্যয় নেই!! কী করতে পারি এই আলোহীন, প্রত্যাশাহীন আতঙ্কিত চোখগুলোর জন্য!! কী ভাবে জাগাতে পারি একটু আশার আলো!! স্বেপ্নর একটু ঝিলিমিলি!! একটু নির্ভয়তা! একটু নির্ভরতা!! এতগুলো ফুলের কলি! শুকিয়ে ঝরে যাবে, চোখের সামনে!! কী করতে পারি এই শুকনো কলিগুলোর জন্য!! জল দিয়ে, ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে বাঁচাতে কি পারি, অন্তত কিছু কলি। অন্তত একটি কলিকে ফুল হয়ে ফোটার জন্য একটু মমতা!! কিছুই পারি না। পারি শুধু কামনা করতে, আল্লাহ তোমাদের....


 

 

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা