আরাকান সংখ্যা (৩/১)

টেকনাফ/তেতুলিয়া

মুহাজিরীনের সেবায় আলিম সমাজ

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

শতাব্দীর ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে বিতাড়িত কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুহাজিরীন এখন বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা যেন পূর্ণ মর্যাদা ও নাগরিক অধিকারসহ নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারেন সে জন্য যা যা করণীয় তা আমাদের অবশ্যই করতে হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেই জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেমুহাজিরশিবিরে এখন আশু প্রয়োজন হলো পর্যাপ্ত বৈষয়িক সহায়তা। আমরা আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাধারণ মুসলিম জনতা বিপর্যস্ত অসহায় রোহিঙ্গা মুহাজিরীনের সাহায্যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ গরীব দেশ, তবু তারা বিপদগ্রস্ত মুসলিম ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে শুধু ঈমানের দাবীতে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের মুসলিম জনতার এ সাহায্যতৎপরতা একই ধারায় অব্যাহত থাকবে, যতদিন না আমাদের রোহিঙ্গা ভাইয়েরা স্বমর্যাদায় নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।এ প্রসঙ্গে শোকর ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে যে বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই তা হলো, দেশের আলেম সমাজই সর্বপ্রথম আরাকানী মুহাজিরীনের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। কারো অপেক্ষায় না থেকে তারা তাদের সাধ্যের মধ্যে যা ছিলো তাই নিয়ে মুহাজিরীনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সর্বোপরি বিভিন্ন প্রকার বাধাবিপত্তির মধ্যেও এখনো তারা তাদের সেবাতৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।দেশের ছোট বড় প্রতিটি মাদরাসা থেকে তালিবানে ইলমের কাফেলা নিয়ে আলিমগণ আশ্রয়শিবিরগুলোতে  যাচ্ছেন এবং সেবা প্রদান করে চলেছেন। একদিকে তারা সাধ্যের ভিতরে নগদ অর্থ যেমন বিতরণ করছেন, তেমনি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিশুদ্ধ পানিসরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছেন। সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের এবং তাদের শিশুদের দ্বীনী শিক্ষার জন্য মসজিদ ও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্যও নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন।দ্বীনের খিদমত বলুন, আর সমাজ-সেবাই বলুন, আলেমসমাজের যাবতীয় কর্মের চিরকালীন বৈশিষ্ট্যই হলো ‘ইখফা’ তথা প্রচারবিমুখতা।  নিজেদের কোন কাজের বা কৃতিত্বের  প্রচার চালানো এবং ঢাকঢোল পেটানো তাদের অপছন্দই শুধু নয় এটাকে তারা রীতিমত ঘৃণা করেন এবং ইখলাছ ও লিল্লাহিয়াতের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন। তাদের চিন্তায় পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ উপদেশবাণী জাগরূক থাকে যে, ‘এমনভাবে দান করো যে, তোমার বাঁ হাত জানবে না তোমার ডান হাত কী খরচ করলো। আলিমসমাজ বিশ্বাস করেন যে, আমাদের চাহিদা কোন মানুষের কাছে নয়, কারো প্রশংসা বা সুখ্যাতিও আমাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের সমস্ত চাওয়া ও পাওয়া আল্লাহর কাছে। আমাদের আমলের আজর তো দান করবেন আল্লাহ তা‘আলা। তাই তারা খুব সতর্ক থাকেন যে, কোন প্রকার ত্রুটির কারণে তাদের আমল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বিশেষ করে লোকদেখানোর সামান্য ইচ্ছাও যেন আমল বরবাদ না করে দেয়। তাই দুনিয়ার মানুষ যেখানে সামান্য সামান্য কাজেরও ব্যাপক প্রচার চায় এবং প্রচারণায় তৎপর হয় সেখানে আলেমগণ তাদের বড় কাজকেও লোকচক্ষুর আড়ালে রাখার জন্য সযত্গ্রহণ করেন।এবারের রোহিঙ্গা মুহাজিরীনের খিদমতের ক্ষেত্রে আলেমসমাজের  এ দ্বীনী চরিত্র ও জাতীয় বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে প্রকাশ পেয়েছে। একথাগুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও লিখতে হলো এজন্য যে, আমাদের কিছু জাতীয় পত্রিকা বিষয়টি সম্যকরূপে জানা সত্ত্বেও বেশ দুঃখজনক আচরণ করেছে। একটি পত্রিকা লিখেছে ... থাক এসব লিখে কী ফায়দা। আমরা শুধু আন্তরিকভাবে অনুরোধ করবো। নিজেদের জীবনাচারে আলিমসমাজকে অনুসরণ করুন এবং বিপন্ন দুর্গত ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সেবা যা করার শুধু আল্লাহর সন্তু অর্জনের নিয়তে করুন। প্রচারপ্রচারণার উদগ্রতা পরিহার করুন। তাতে অপরিসীম আত্মিক প্রশান্তি অর্জিত হবে। এতকিছু দেখার পরো কি মনে হয় না, অন্তত এই নিরীহ মানুষগুলোর নিরর্থক সমালোচনা থেকে বিরত থাকি?!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা