জুমাদাল উলা ১৪৩২ হিঃ (২০)

রোযনামচার পাতা

হারিয়ে গেছে জোসনা!

লিখেছেনঃ মাহমূদা বিনতে শহীদ / টাঙ্গাইল

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

রাতের খাবার খেয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো, কিন্তু আঁধার হলো না। কারণ আকাশে চাঁদ ছিলো এবং চাঁদের আলো ছিলো। জোসনার আলো এত মিষ্টি! এত স্ণিগ্ধ! অবাক চোখে       তাকিয়ে আছি চাঁদের দিকে চাঁদের সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে; এমন সময় আমার বান্ধবী পিছন থেকে এসে বললো, কী দেখছিস রে এমন তন্ময় হয়ে?! বললাম, দেখ্ না, চাঁদটা কত সুন্দর!

 

আমার হেসে বললো, তোর কি দরকার একটি চাঁদ?!

আমি বললাম, দরকারই তো, পৃথিবীর সব মানুষেরই দরকার এমন একটি চাঁদ।

যেমন হঠাৎ গিয়েছিলো তেমনি হঠাৎ বিদ্যুৎ ফিরে এলো, আর  জোসনাটা হারিয়ে গেলো। এখন চাঁদ আছে, চাঁদের আলো নেই। আমাদের জীবনে বিদ্যুতের আলো এসেছে, কিন্তু চাঁদের জোসনা হারিয়ে গেছে।

                                                                            ***

সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছু ভালো লাগছিলো না; মনের পর্দায় বারবার উদিত হচ্ছে নানাজানের নূরানি চেহারাটা। আজ নানাজানকে স্বপ্নে দেখেছি। আমরা তো মৃতকে স্বপ্নে দেখি, তারা কি আমাদের দেখতে পায়? আমার নানাজান কি আমাকে দেখতে পান? তার মেয়েকে দেখতে পান? আমাদের কথা কি তাঁর মনে পড়ে? আমাদের দেখতে কি তাঁর ইচ্ছে করে?

আমাকে বিষণ্ণ দেখে আম্মু জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে তোমার?

আমি স্বপ্নের কথা বললাম না। তাতে তো আম্মুরও মনটা বিষণ্ণ হয়ে যাবে!

                                                                            ***

বিকেলে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছিলাম। কাছে শিমুলগাছ, দূরে অনেক গাছের ছায়া; পাখিদের উড়ে যাওয়া, খন্ড খন্ড মেঘের ভেসে যাওয়া, এই সব।

শিমুলগাছের পাখিগুলো ফিরে এসেছে। ওদের দেখতে খুব ভালো লাগছে। সন্ধ্যার পাখিদের দেখলে আমার মন কেমন করে! তখন আমি যেন অন্য জগতে চলে যাই। মাগরিবের আযান হলো। এখন আমাকে আল্লাহর ডাক শুনতে হবে। জানালা বন্ধ করে নামাযের প্রস্ত্ততি নিলাম, নামায পড়লাম। আমার মনে তখনো পাখিদের ছবি। শিমুলগাছে ওরা হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। ওরা আমাদের আগে ঘোমায়, আমাদের আগে জাগে।



শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা