জুমাদাল উলা ১৪৩২ হিঃ (২০)

তোমাদের পাতা

স্বপ্নে আনন্দের এক ভ্রমণ

লিখেছেনঃ ফারুক হোসাইন ফারুকী (দড়াটানা মাদরাসা, যশোর)

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

বন্ধুরা মিলে আনন্দভ্রমণে যাচ্ছে। আম্মুর অনুমতি পেলাম না, তাই আমার যাওয়া হলো না। মনে যে একটা আনন্দ উঁকি দিয়েছিলো তা মিলিয়ে গেলো। কী আর করা ভাগ্যকে মেনে নেয়া ছাড়া!

কিন্তু তারপর হলো এক অবাক কা-! কাউকে কিছু না বলে আমি একাই অজানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লাম। একা একা হাঁটছি; হাঁটছি তো হাঁটছিই। মাঠ-ঘাট পেরিয়ে, তেপান্তর ছাড়িয়ে কত দূর যে এসেছি নিজেই বলতে পারি না।

 আশ্চর্য, এত হেঁটেও কোন ক্লান্তি নেই, একদম সতেজ, তাজাদম!

সবুজ ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু। ভোরের রাঙ্গা আলোতে যেন ঝলমল করছে। চারদিকে সবুজ, আর সবুজ। এর পর যে দিগন্ত- হীন মাঠটা পার হলাম সেটা যেন কবি জসিমুদ্দীনের নকশিকাঁথার মাঠ! তখন মনে হলো আমি যেন আমার পরিচিত পৃথিবী পার হয়ে চলে এসেছি অন্য কোন জগতে। যেখানে আলো-বাতাস আছে, ধূলোবালি নেই। ছবির মত সুন্দর পলস্নী-গ্রাম আছে, কিন্তু সেই চিরপরিচিত দারিদ্র্য নেই। কৃষক আছে, কৃষাণী আছে, তাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আছে, কিন্তু পলস্নীকবির ‘রসুলপুর’ নেই এবং নেই আসমানিদের কুঁড়েঘর। নতুন নতুন ঘর, উঠোন-প্রাঙ্গণ সব কেমন ঝকঝকে তকতকে। পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান। আহা, আমাদের দেশের গ্রামগুলো যদি এমন সুন্দর হতো!  কৃষক-কৃষাণীরা যদি এমন সুখী হতো, তাদের ছেলে-মেয়েরা যদি এমন স্বাস্থ্যবান আনন্দ-উচ্ছল হতো!

পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা কুলকুল রবে বয়ে চলেছে। তারই পাশে ছায়াঘেরা একটি সুন্দর জনবসতি। এখানে সবকিছু যেন আমারই জন্য! সব আয়োজন যেন আমাকেই কেন্দ্র করে! প্রজাপতিরা উড়ে বেড়ায় আমাকে অভিনন্দন জানাতে! পাখীরা মধুর সুরে গান গায় আমাকে আনন্দ দিতে! আমি যেন দূরের কোন দেশ থেকে পঙ্খিরাজে করে বেড়াতে আসা এক যুবরাজ!

আবার শুরু হলো আমার পথ চলা। সে চলার যেন আর শেষ নেই। চলতে চলতে একসময় পৌঁছে গেলাম আশ্চর্য সুন্দর এক শহরে। এমন শহরের কথা শুধু রূপকথাতেই শোনা যায়। আমি কি তাহলে রাজকুমার সেজে রূপকথার কোন শহরে এসে পড়েছি! শহরটি অচেনা, তবু যেন চিরচেনা! দেশের রাজা ও রাণী এখানেই বাস করেন। বড় বড় দালান-কোঠা, আর আলিশান সব ইমারত! কোন শিল্পী যেন জাদুর তুলি দিয়ে এঁকেছেন।

রাজা-রাণী, আর প্রজারা আমাকে পেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা! সবাই যেন আমার কত আপন!

শহরের রাস্তাগুলো যেমন প্রশস্ত তেমনি আয়নার মত স্বচ্ছ ও মসৃণ। অসংখ্য গাড়ী চলছে, কিন্তু যানজট নেই এবং নেই কালো ধোঁয়া। আরেকটা জিনিস নেই, খুন-খারাবি, সন্ত্রাস, আর ছিনতাই। রাজার ন্যায়শাসনে প্রজারা সব সুখে শান্তিতে বাস করে। সবাই নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা মেনে চলে। বাজারে কেউ মাপে কম দেয় না, খাদ্যে ভেজাল মেশায় না। সারা শহর ভ্রমণ করে আমার মন যেমন প্রফুলস্ন হলো, তেমনি হলো বিষাদগ্রস্ত। কারণ আমার তখন মনে পড়ে গেলো আমাদের রাজধানী ঢাকা শহরের কথা। আহা, এমন সুন্দর যদি হতো আমাদের রাজধানী ঢাকা! এমন শান্তির দেশ যদি হতো আমাদের বাংলাদেশ!

হঠাৎ আযান শোনা গেলো। দূরে একটি মসজিদের মিনার দেখা গেলো। ওখান থেকেই আসছে আযানের সুমধুর আওয়ায। ভ্রমণের আনন্দে এমন বিভোর ছিলাম যে, বুঝতেই পারিনি, কখন যোহরের সময় হয়ে গেছে। যাই, নামায পড়ে আসি। ওদিকে রাজা ও রাণী আমার সম্মানে মধ্য‎হ্নভোজের আয়োজন করেছেন। তাতে শরীক হতে হবে। ক্ষুধাও লেগেছে বেশ।

হঠাৎ আমার মাথায় একটি কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। কী অপূর্ব মমতার স্পর্শ! তাহলে কি রাণী আমাকে নিতে এলেন ভোজসভায়! চোখ মেলে দেখি, মাথায় হাত বুলিয়ে কেমন আদর করে মা ডাকছেন, বাবা ওঠো, যোহরের আযান হয়ে গেছে।

মুখ ভার করে বললাম, যাও আমি রাগ করেছি। ডাকলে কেন? আমি তো নামায পড়তে যাচ্ছিলাম। ইস, রাজা-রাণীর ভোজসভায় আর যাওয়া হলো না। মা মিষ্টি হেসে বললেন, রাণীর ভোজসভা বুঝি মায়ের হাতের রান্নার চেয়ে সুস্বাদু!

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা