আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ, কিন্তু আমার জন্ম মরুভূমির দেশে। যেদিকে তাকাও ধূ-ধূ বালুর সাগর, কোথাও একফোঁটা জল নেই, নেই একটুকরো সবুজ। বহু দূরে তাকালে চোখে পড়ে পাহাড়ের চূড়া। দুপুরে আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরে, তাতে গায়ে ফোসকা পড়ে। শুধু ভালো লাগে যখন বাড়ীর আঙ্গিনায় বসে থাকি খেজুর- বীথিকার ছায়ায়। মরুর তপ্ত আবহাওয়ায় ঐটুকু শীতল ছায়ায় আমার বড় হওয়া এবং বেড়ে ওঠা।
আববুর কাছে শুনতাম আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশের কথা, মাটি ও মানুষের কথা, ফল-ফুল ও ফসলের কথা, নদীর ঢেউ ও পালতোলা নাওয়ের কথা, দীঘির জলে ফুটে থাকা পদ্মফুলের কথা। আববু বলতেন, আমার দেশে পাখীরা গান গায়, বিষণ্ণ দুপুরে রাখাল বাঁশী বাজায়, কৃষক ঘাম ঝরিয়ে সোনার ফসল ফলায় এবং ...। আববুর কথায় অবাক হতাম, আর কল্পনার চোখে দেখতে পেতাম বাংলার ছবি, বাংলার প্রকৃতি। আমি যেন দাঁড়িয়ে আছি বাংলাদেশের কোন নদীর তীরে কাশবনের কাছে, কিংবা পলস্নীগাঁয়ে ফসলের মাঠে, যেখানে মৃদুমন্দ বাতাসে ধানের শীষ আন্দোলিত হয় এবং ...।
তখন মন আমার ব্যাকুল হতো মাতৃভূমির মাটি স্পর্শ করার জন্য, বুকভরে বাংলার বাতাস গ্রহণ করার জন্য।
তারপর একদিন আমার স্বপ্ন পূর্ণ হলো এবং তখনই আমার স্বপ্নভঙ্গ হলো। আমি এসেছিলাম সবুজ বাংলার ছবি বুকে নিয়ে, কিন্তু দেখতে পেলাম মানুষের বুক থেকে ঝরা লালা রক্ত। আমি শুনেছিলাম সোনালী ফসলের কথা, কিন্তু দেখতে পেলাম ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের নির্মম চিত্র। শুনেছিলাম পাখীর গান, আর রাখালের বাঁশীর সুরের কথা, কিন্তু শুনতে পেলাম, হুঙ্কার ও আর্তনাদ। হায়, কল্পনার মাতৃভূমি! হায়, বাস্তবের বাংলাদেশ!