ওরা বলে, আমি ভুলে গেছি আপনাকে! ওরা বলে, আমি অকৃতজ্ঞ! আমার কলমে নেই আপনার লেখা!
ওদের হাতে ছুরি আছে, আমার বুকে ওরা কত আঁচড় কাটে! একবার যদি ওরা আমার বুকটা চিরে দেখতো, তাহলে দেখতে পেতো, সেখানে আছে একটি আলোকিত ছবি। ওরা অবাক হতো, এ কার ছবি?! আমি বলতাম, এ আমার প্রিয়তমের ছবি!
আমার বুকটা চিরে ওরা দেখতে পেতো আলোর বর্ণমালায় অনেক লেখা। ওরা অবাক হতো, এ কার লেখা?! আমি বলতাম, এ আমার প্রিয়তমের লেখা!
আমি ভুলে যাবো আপনকে! নিজের অসি-ত্বকে! আমার দেহে যখন কাঁটা বিঁধে এবং এক ফোঁটা রক্ত ঝরে তখন আপনাকে আমার মনে পড়ে, অভিন্ন রক্তের গন্ধে। অভিন্নতা শুধু কি বর্ণে ও গন্ধে!
আমার কলম থেকে যখন কালি ঝরে এবং শব্দের ফুল ফোটে তখন আপনাকে আমার মনে পড়ে। আমার কলমে যে রয়েছে আপনারই কলমের কালি! কালির সাদৃশ্য কি শুধু রেখায়, লেখায়, আঁচড়ে!
পৃথিবীর কাছে আপনি এক বিস্মৃত অতীত, কিন' আমার কাছে?! আমার কাছে আপনি সজীব, জীবন-, প্রেরণার অফুরন-এক উৎস। আপনি ছিলেন তাই আমি আছি। আপনি পথ চলেছেন তাই আমি পথ চিনেছি। আপনাকে দেখিনি তবু আপনাকে দেখি আমার জন্য রেখে যাওয়া লেখার দর্পণে, আপনার বাণী ও বক্তব্যের আলোতে। আপনাকে আমি ভুলি কী করে! মানুষ কি ভুলতে পারে নিজের অসি-ত্বকে!
আপনার কলমের সাধনা ছিলো অনেক কঠিন, পথ ছিলো অনেক দুর্গম। চড়াই ছিলো, উৎরাই ছিলো, বাঁক ছিলো, আঁকা-বাঁকা ছিলো, অনেক কিছু ছিলো; ছিলো না শুধু পথের পাথেয়। তবু আপনি পথ চলেছেন আমাদের চলার পথ মসৃণ করার জন্য। আপনাকে আমি ভুলতে পারি! এমন অকৃতজ্ঞতার জন্য যত ছোট হতে হয়, আমি কি তা হতে পারি!
আপনাকে আমি দেখিনি। শুনেছি মায়ের কাছে। মোমের আলোতে আপনার রাত জাগা আমি দেখিনি, শুনেছি মায়ের কাছে।
আপনার বিষণ্নতা, অবষণ্নতা, আঘাতে আঘাতে আপনার বিপর্যস- হওয়া আমি দেখিনি শুনেছি মায়ের কাছে। তাতে আমার হৃদয়ে আপনার যে ছবি আঁকা হয়েছে সেই ছবি থেকে আমি বেদনা পাই এবং সান-্বনা পাই; সেই ছবি থেকে আমি আলো পাই এবং লেখা পাই। আপনার ছবি থেকেই আমার কলমের আসে ব্যথা ও বেদনার প্রতিচ্ছবি। আপনাকে আমি ভুলতে পারি! এমন অকৃতজ্ঞতার জন্য যত ক্ষুদ্র হতে হয়, আমি কি তা হতে পারি!
জীবনের দীর্ঘ পথের শেষ পর্যন- আপনার পদচিহ্ন দেখে দেখে আমি পথ চলতে চাই। আমি পেতে চাই উদ্যম, উদ্দীপনা এবং প্রেরণা ও অনুপ্রেরণা; আমি পেতে চাই প্রাণ ও সজীবতা আপনার জীবনের সবুজ থেকে!